জিজ্ঞাসা-১২৭২৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয় হলো, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিরাজে গিয়ে জাহান্নাম দেখলেন সেখানে যাদের আযাব হচ্ছিল তারা কারা ছিলো?? কেননা এখনও হিসাব নিকাশ হয়নি। আমরা জানি যে,জান্নাতের নিয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে হিসাব নিকাস শেষ হওয়ার পর। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
তারিখ: ১৮/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শফিউল ইসলাম সিরাজগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রজনীতে বিভিন্ন গুনাহের শাস্তি অবলকন করেছেন। দলিল:
حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُصَفَّى، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، وَأَبُو الْمُغِيرَةِ، قَالاَ حَدَّثَنَا صَفْوَانُ، قَالَ حَدَّثَنِي رَاشِدُ بْنُ سَعْدٍ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ جُبَيْرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ حَدَّثَنَاهُ يَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ عَنْ بَقِيَّةَ لَيْسَ فِيهِ أَنَسٌ .
حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ أَبِي عِيسَى السَّيْلَحِينِيُّ، عَنْ أَبِي الْمُغِيرَةِ، كَمَا قَالَ ابْنُ الْمُصَفَّى .
ইবনে মুসাফফা (রাহঃ) .... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ শবে মি’রাজে যখন আমি আসমানের উপর গমন করি, তখন এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে তাদের চেহারা ও মুখমণ্ডল আচঁড়াতে ছিল। তখন আমি জিজ্ঞাসা করিঃ হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বলেনঃ এরা তারা, যারা অন্য লোকের গোশত ভক্ষণ করতো, (অর্থাৎ গীবত করতো।) এবং মানুযের ইযযাত নষ্ট করতো। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৪৮৭৮; মুসনাদে আহমদ -১৩৩৪০
প্রশ্ন: ক।
والسؤال: هل هناك عذاب قبل يوم القيامة غير عذاب القبر؟
অর্থাৎ এখানে একটি প্রশ্নের উদয় হয়। সেটা হলো, কিয়ামতের আগে কবরের আজাব ব্যতীত অন্যকোনো আযাব কি রয়েছে? না থাকলে, মিরাজ রজনীর আযাবগুলো কোন ধরণের আযাব ছিলো?
উত্তর: ক।
فاجاب: " هذا يُفسَّر بأنَّ هؤلاء صُوّروا له يُعذَّبون بسبب أعمالهم الخبيثة المنكرة، ويحتمل أن هذا العذاب لهم في الدنيا، ويحتمل أنه مثال لعذابهم الذي يكون يوم القيامة، فإنه ﷺ رأى في نومه ملكين أخذا بيده وأرياه جماعةً من المعذَّبين: من آكل الربا، ومن الزُّناة والزَّواني، ومن الذي ينام عن الصلاة حتى تطلع الشمس ولا يُصلي، ويحفظ القرآنَ ولا يعمل به، فهو يحتمل أمرين
এর উত্তর হলো, মিরাজ রজনীতের দৃশ্যমান আযাবগুলো প্রকৃত আযাব নয়। বরং মানব জগতে বহুল প্রচলিত গর্হিত ও অন্যায় কাজসমূহের জন্য পরকালে বরাদ্দকৃত শাস্তিগুলোকে চিত্রায়ন করা হয়েছে।
সুতরাং মিরাজ রজনীতে প্রত্যক্ষ আজাবগুলো হতে পরে কিয়ামতের পূর্বসময়কাল পর্যন্ত (বারযাখ জগতের) আযাব, আবার হতে পারে এগুলো বাস্তবিক শাস্তি প্রদান নয়, বরং আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তির নিছক চিত্রায়ন মাত্র।
কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায়ও এরূপ ঘটনা ঘটেছে যে, তিনি স্বপ্নযোগে দেখেছেন যে, দুইজন ফিরিশতা এসে তাঁর হাত ধরে তাঁকে একদল সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে নিয়ে গেলেন, যাদের কেউ কেউ ছিলো, সুদখোর। কেউ কেউ ছিলো, ব্যভিচারী। কেউ কেউ ছিলো, আলসেমি করে ফজরের সালাত না পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তি । কেউ কেউ ছিলো, যারা কোরআন মুখস্ত করেছে, কিন্তু তদনুযায়ী আমল করেনি।
সুতরাং মেরাজ রজনীর ঘটনার শাস্তিগুলোও (আলামুল মেছাল) চিত্রায়নের প্রেক্ষিতে হতে পারে।
وهذا مثل ما صور الله له النار والجنة وهو في صلاة الكسوف، ورأى في النار بعض المعذبين، ومعلوم أنهم لم يدخلوا نار الآخرة الآن، وإنما هو تصوير لما سيقع لهم، ففي حديث جابر: قَالَ: " انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّاسُ: إِنَّمَا انْكَسَفَتْ لِمَوْتِ إِبْرَاهِيمَ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَصَلَّى بِالنَّاسِ .
অর্থাৎ, সূর্যগ্রহণের সালাত আদায়কালে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যেভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্রায়ন করা হয়েছিলো, এই ঘটনাটিও তার অনুরূপ দৃষ্টান্ত। তিনিও সেখানে কতক আযাব ভোগকারীকে দেখেছিলেন। আর একথা তো সুস্পষ্ট যে, তারা সে সময় পরকালের জাহান্নামে প্রবেশ করেনি। বরং সেটি ছিলো, অনাগত ভবিষ্যতের চিত্রায়িত রূপ।
হজরত জাবির (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুত্র ইব্রাহীমের মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ দেখা দিয়েছিলো। তখন লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, " ইব্রাহীমের মৃত্যুর কারণেই আজ সূর্যগ্রহণ দেখা দিয়েছে।" তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে গিয়ে মানুষদেরকে নিয়ে "সালাতুল কুসূফ" ( সূর্যগ্রহনের সালাত) আদায় করলেন। সূত্র: আল-ইসলাম সুওয়াল ওয়া জবাব,কাইফা রয়ান নাবিয়্যু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকওয়ামা ইউয়াজ্জিবুনা ফিননারি লাইলাতুল ইসরা ওয়াল মিরাজ -৩৬৩২৮৫ ( জিজ্ঞাসা নং)
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক,
সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম