আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

মোটিভেশন ক্লাস -১৭: জিজ্ঞাসা -১২৭১২:গর্ব অহংকার ও ক্রোধ সম্পর্কে ইসলাম :

No Comments

 




জিজ্ঞাসা-১২৭১২:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গর্ব অহংকার ও ক্রোধ সম্পর্কে ইসলাম এই বিষয়ে লিসনপ্লান থাকলে শেয়ার করুন।


তারিখ:  ০৩/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা আতিকুর রহমান, রংপুর  থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে মোটিভেশন ক্লাসটিকে  দুটি স্তরে ভাগ করছি।

প্রথম স্তর অহংকার দ্বিতীয় স্তর ক্রোধ বা রাগ।


। প্রথম স্তর: অহংকার।

০১. ভূমিকা : অহংকার সম্পর্কে বিজ্ঞ মাশায়েখগণ বলেন, অহংকার হলো উম্মুল আমরাজ তথা রোগের মা। মানব চরিত্রের এ নেতিবাচক গুণ যার মধ্যে থাকে, তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্চিত করেই ছাড়ে। তাই সবাইকে এ মহামারি থেকে পরিত্রাণ জরুরি।


০২. অহংকারের আভিধানিক অর্থ:

 معنى الكِبْر لغةً:  

الكِبْر: العَظَمَة والتَّجَبُّر، كالكِبْرِياء، وقد تَكَــبَّرَ واسْتَكْبَرَ وَتَكابَرَ، والتَّكَبُّر والاسْتِكْبار: التَّعَظُّم، والكِبْر بالكسر: اسم من التكبر

অর্থাৎ, "কিবর" হলো একটি আরবি শব্দ। যা আরবী ক্রিয়াবিশেষ্য "তাকাব্বুর" - এর ইসমে মাসদার ( নামধাতু)। 


আরবী শব্দ "কিবর" এর আভিধানিক অর্থ হলো- বড়াই, গর্ব, অহংকার, দম্ভ আত্মঅহমিকা, হামবড়াই, দর্প ইত্যাদি। 

শব্দটি আরবীতে বাবে تفعل، استفعال، تفاعل থেকে ব্যবহৃত হয়।

  আল্লাহ তায়ালার সুন্দরতম নামসমূহের মাঝে অন্যতম একটি নাম হলো, কিবরিয়া। যার অর্থ হলো, শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী মহান সত্তা। সূত্র: তাজুল উরূস -৮/১৪; আলমিসবাউল মুনির -২/৫২৩


০৩. অহংকারের পারিভাষিক সংজ্ঞা:

معنى الكِبْر اصطلاحًا:

معنى الكِبْر جاء تعريفه في حديث النبي صلى الله عليه وسلم فقد قال: ((الكِبْر بطر الحق، وغمط الناس  ))

وقال الزَّبيدي: (الكِبْر: حالةٌ يتخصَّص بها الإنسان من إعجابه بنفسه، وأن يرى نفسَه أَكْبَر من غيره)

وقيل الكِبْر هو: (استعظام الإنسان نفسه، واستحسان ما فيه من الفضائل، والاستهانة بالناس، واستصغارهم، والترفع على من يجب التواضع له)

"কিবর" শব্দের পারিভাষিক অর্থঃ 

সহীহ হাদীসে "কিবর" শব্দের পারিভাষিক অর্থের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে-  


عن عبد بن مسعود رضى الله هنه  قال فال رسول الله صلى الله عليه سلم -لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَفِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَيُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً قَالَإِنَّاللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ- مسلم-275‘ 

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার   থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতো পরিধান করতে ভালবাসে? তখন নবি কারিম (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। অহংকার  মানে হল সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। সহিহ মুসলিম-৯১,কিতাবুল ঈমান; আবু দাউদ-৪০৯১; তিরমিজি-১৯৯৮; ইবনে মাজাহ-৫৯; আহমদ-৩৬৪৪


আল্লামা মুরতাযা হুসাইন আয-যাবেদী তার রচিত কালজয়ী আরবী অভিধানে "কিবর" - এর সংজ্ঞা এভাবে প্রদান করেছেন-  "অহংকার হলো মানুষের আভ্যন্তরীণ সত্তায় সৃজিত এমন এক বিশেষ অবস্থার নাম, যার কারণে সে নিজেকে নিয়েই আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। এবং অন্যসকলের চাইতে নিজেকে শ্রেষ্ঠতম মনে করে বসে। সূত্র: তাজুল উরূস -৮/১৪


কারো কারো মতে- "বড়াই হলো, নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা, নিজের কার্যকলাপকেই সর্বোত্তম মনে করা, অন্য ব্যক্তিকে অপমান-অপদস্ত ও  তুচ্ছজ্ঞান করা, যে সকল ক্ষেত্রে বিনয় প্রদর্শন করা দরকার, সেসকল জায়গাতেও বেপরোয়াভাব দেখিয়ে নিজের ঠাট-বাট বজায় রেখে চলা।" সূত্র: তাহযিবুল আখলাক -৩২ পৃষ্ঠা, আল্লামা জাহেজ রহ. 



০৪. আল-কুরআনের আলোকে অহংকারের ক্ষতিসমূহ

পবিত্র কুরআনে অহংকারের ভয়াবহতা সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

আয়াত নং -০১

﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَآ أَلَمۡ يَأۡتِكُمۡ رُسُلٞ مِّنكُمۡ يَتۡلُونَ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِ رَبِّكُمۡ وَيُنذِرُونَكُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَاۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَلَٰكِنۡ حَقَّتۡ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧١ قِيلَ ٱدۡخُلُوٓاْ أَبۡوَٰبَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَاۖ فَبِئۡسَ مَثۡوَى ٱلۡمُتَكَبِّرِينَ ٧٢﴾ ]الزمر: 71,72[

অর্থ, আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত’? তারা বলবে, ‘অবশ্যই এসেছিল’; কিন্তু কাফিরদের উপর আযাবের বাণী সত্যে পরিণত হল। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর চিরকাল তোমরা সেখানে অবস্থান করবে। অহংকারীদের বাসস্থান কতই না মন্দ।[সূরা যুমার, আয়াত: ৭১,৭২]


আয়াত নং -০২

﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ﴾ ]غافر: 60[

অর্থ, আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ [সূরা গাফের, আয়াত: ৬০]


আয়াত নং -০৩

Surah An-Nahl, Verse 23:

لَا جَرَمَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। সূরা নাহল -২৩


০৫. হাদিস শরিফের আলোকে অহংকারের ক্ষতিসমূহ:


 হাদিস নং -০১

4918 - حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَعْبَدِ بْنِ خَالِدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ الخُزَاعِيَّ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الجَنَّةِ؟ كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ: كُلُّ عُتُلٍّ، جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ "

بَابُ {يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ} [القلم: 42]


 আবু নুআঈম (রাহঃ) ......... হারিসা ইবনে ওয়াহাব খুযা‘য়ী (রাযিঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তারা যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে শপথ করে বসেন, তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? যারা রুঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী। তাখরিজ: বুখারি -৪৮১৮



জাহান্নামীদের কিছু বৈশিষ্ট্য


তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামীদের পরিচয় দান করেন- كل عتل جواظ مستكبر (তারা হচ্ছে প্রত্যেক রূঢ়, উদ্যত, অহংকারী ব্যক্তি)। ইমাম নববী রহ. عتل -এর অর্থ করেছেন কঠোর-কঠিনপ্রাণ। তিনি جواظ -এর অর্থ করেছেন, এমন ব্যক্তি, যে ধন-সম্পদ খুব সঞ্চয় করে কিন্তু তা থেকে গরীব-দুঃখীকে কিছু দেয় না । তিনি বলেন, কারও মতে এর অর্থ মোটাতাজা শরীরের এমন লোক, যে দর্পিত ভঙ্গিতে চলাফেরা করে। কেউ বলেন, খাটো ভুঁড়িওয়ালা লোক।

শব্দদু'টির এছাড়া আরও ব্যাখ্যা আছে। যেমন কেউ বলেন, عتل অর্থ কাফের। দাউদী রহ. বলেন, মোটাতাজা শরীরের এমন লোক, যার ঘাড় মোটা ও পেট বড়। হারাবী রহ. বলেন, এমন ব্যক্তি, যে ধন-সম্পদ খুব সঞ্চয় করে কিন্তু তা থেকে গরীব দুঃখীকে কিছু দেয় না। আবার কেউ বলেন, খাঁটো দেহের স্থূলোদর ব্যক্তি। কারও মতে, এমন লোক, যে খুব বেশি পানাহার করে ও অন্যদের উপর জুলুম-অত্যাচার চালায়। কারও মতে এর অর্থ অত্যধিক কলহ-বিবাদকারী ও হীন স্বভাববিশিষ্ট। আবার কেউ বলেন, এমন কঠোর-কঠিন চরিত্রের লোক, যে ভালো কিছু মানতে চায় না। শব্দটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেন هو الشديد الخلق المصحح، الأكول الشروب، الواجد للطعام والشراب، الظلوم للناس، رحيب الجوف ‘পরিপুষ্ট, শক্ত-সমর্থ, সুস্থ-সবল লোক, যে খুব বেশি পানাহার করে, পানাহার সামগ্রী যার হস্তগত, মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচারকারী ও স্থূলোদর ব্যক্তি।

جواظ -এর অর্থ ইমাম নববী রহ. যা বলেছেন, বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে এর সমর্থনে হাদীছও উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এর অর্থ কী? তিনি বলেন, এমন লোক, যে খুব অর্থ-সম্পদ জমা করে, কিন্তু সে কৃপণ, তা থেকে কাউকে কিছু দেয় না।

ইমাম খাত্তাবী ও জাওহারী রহ. শব্দটির অর্থ করেছেন স্থূলদেহী ও চালচলনে অহংকারী। নেহায়া গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, এর অর্থ খাটো, লোভাতুর ও স্থূলোদর, পেট ভরে খাওয়া ছাড়া যার অন্য কোনও চিন্তা নেই।

এ শব্দদু'টির যেসকল অর্থ বর্ণিত হয়েছে তা সবই নিন্দনীয় স্বভাবের পরিচায়ক। এর কোনওটিই ইসলাম পসন্দ করে না। বিভিন্ন হাদীছে এর নিন্দা জানানো হয়েছে ও মুমিনদেরকে এর ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। যেমন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, কঠোর-কঠিন স্বভাবের লোক আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। লোভ-লালসাবশে অর্থ সঞ্চয় করা এবং তা থেকে গরীব-দুঃখীকে কিছু না দেওয়া কাফের-মুনাফিকের স্বভাব। অহংকারী ও দর্পিত স্বভাবের লোক জান্নাতে যাবে না। ভোগ-বিলাসিতায় মেতে থাকার কারণে মোটাতাজা হয়ে যাওয়াটা আখেরাতবিমুখিতার লক্ষণ। তর্কপ্রবণতা ও সত্যগ্রহণে অস্বীকৃতি ছিল ঘোর কাফেরদের খাসলাত। কুরআন মাজীদে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দদু'টির উল্লেখ করে আমাদের সাবধান করেছেন যে, এর দ্বারা যে নিন্দনীয় স্বভাব বোঝানো হয়ে থাকে তা থেকে তোমরা দূরে থাকবে। কেননা এ স্বভাবের লোক জাহান্নামে যাবে।

এ হাদীছে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের যে স্বভাব উল্লেখ করা হয়েছে তা দ্বারা এ কথা বোঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, কেবল এই স্বভাবের লোকেরাই জান্নাতে বা জাহান্নামে যাবে, এছাড়া আর কেউ যাবে না। বরং বোঝানো উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসকল সৎগুণের কারণে মানুষ জান্নাতে যাবে এবং যেসকল অসৎগুণের কারণে জাহান্নামে যাবে, এগুলোও তার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও এমন অনেক সৎগুণ আছে, জান্নাতলাভের জন্য যা জরুরি এবং এমন অনেক মন্দ স্বভাব আছে, যা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তাই সেসব গুণের ব্যাপারেও মুমিনদের সচেতন থাকা অবশ্যকর্তব্য।

এ হাদীছে জাহান্নামীদের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে যে, তারা অর্থাৎ অহংকারী। অহংকার অত্যন্ত নিন্দনীয় স্বভাব। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন لا يدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر ‘যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, অহংকার কী? অনেকে সুন্দর পোশাক পরা, ভালো খাওয়া-দাওয়া করা ও পরিপাটি চলাফেরাকে অহংকার মনে করে থাকে। এ ধারণা ঠিক নয়। জীবনমাণে আপন সামর্থ্যের প্রকাশ দূষণীয় নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা কাম্যও। আল্লাহ তাআলা যাকে যে সামর্থ্য দান করেছেন, কাজকর্মে তা প্রকাশ করা শোকরেরও অন্তর্ভুক্ত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إن الله يحب أن يرى أثر نعمته على عبده “আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার উপর নিজ নিআমতের প্রকাশ দেখতে পসন্দ করেন।

চালচলন ও বেশভূষায় সামর্থ্যের প্রকাশ দোষের হয় তখনই, যখন তুলনামূলক কম সামর্থ্যবানকে হেয়জ্ঞান করা হয়। সেটা অহংকারের মধ্যে পড়ে। সুতরাং উল্লিখিত হাদীছটি শুনে এক সাহাবী বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোনও কোনও মানুষ এমন আছে, যে ভালো জামা-জুতা পসন্দ করে, সুন্দর হয়ে চলাটা তার প্রিয়। এর উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অর্থাৎ তুমি যা বলছ তা অহংকার নয়। তারপর তিনি অহংকারের সংজ্ঞা দান করলেন যে الكبر بطر الحق وغمط الناس ‘অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।

এর দ্বারা অহংকার কী তা বোঝা গেল। সুতরাং কোনও বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে মতভিন্নতা দেখা দিলে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা চাই কার মত সত্য ও সঠিক। যদি স্পষ্ট হয়ে যায় প্রতিপক্ষের মত সঠিক, তবে সে যে-ই হোক না কেন তা মেনে নেওয়া চাই। সে গরীব, শিক্ষা-দীক্ষায় কম বা সামাজিক অবস্থান নিচে, সে তুলনায় আমি উপরে, এ জাতীয় চিন্তাভাবনার কারণে যদি তার মত মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ হয়, তবে নিঃসন্দেহে তা অহংকার। এমনিভাবে কাউকে কোনওদিক থেকে নিজের চেয়ে কম মনে হলে সে কারণে তাকে তুচ্ছ করা হলে তা অহংকার বটে। আর আলোচ্য হাদীছ দ্বারা যখন জানা গেল অহংকার জাহান্নামীদের বৈশিষ্ট্য, তখন অবশ্যই এ জাতীয় আচরণ পরিহার করে চলতে হবে। এটাই এ হাদীছের দাবি।


হাদিস নং -০২

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادٌ، - يَعْنِي ابْنَ السَّرِيِّ - عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، - الْمَعْنَى - عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، قَالَ مُوسَى عَنْ سَلْمَانَ الأَغَرِّ، - وَقَالَ هَنَّادٌ عَنِ الأَغَرِّ أَبِي مُسْلِمٍ، - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - قَالَ هَنَّادٌ - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ " .

 মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... হান্নাদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, ‘‘অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার লুঙ্গী স্বরূপ। তাই, যে ব্যক্তি এ দু’টি জিনিসে আমার শরীক হতে চায়, আমি তাকে দোজখে নিক্ষেপ করবো।’’

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস আন্তর্জাতিক নং ৪০৯০

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)



হাদিস নং -০৩

عن عبد بن مسعود رضى الله هنه  قال فال رسول الله صلى الله عليه سلم -لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَفِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَيُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً قَالَإِنَّاللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ- مسلم-275‘ 

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার   থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতো পরিধান করতে ভালবাসে? তখন নবি কারিম (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। অহংকার  মানে হল সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। সহিহ মুসলিম-৯১,কিতাবুল ঈমান; আবু দাউদ-৪০৯১; তিরমিজি-১৯৯৮; ইবনে মাজাহ-৫৯; আহমদ-৩৬৪৪


হাদিস নং -০৪

وَعَن عمر

قَالَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ تَوَاضَعُوا فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَوَاضَعَ لِلَّهِ رَفَعَهُ اللَّهُ فَهُوَ فِي نَفْسِهِ صَغِيرٌ وَفِي أَعْيُنِ النَّاسِ عَظِيمٌ وَمَنْ تَكَبَّرَ وَضَعَهُ اللَّهُ فَهُوَ فِي أَعْيُنِ النَّاسِ صَغِيرٌ وَفِي نَفْسِهِ كَبِيرٌ حَتَّى لَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِمْ مِنْ كَلْبٍ أَوْ خنزيرٍ

উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা বিনয়ী হও। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। সে নিজেকে নিজে ছোট মনে করে কিন্তু মানুষের চোখে খুবই মহান ও সম্মানিত হয়। যে ব্যক্তি অহংকার করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে হেয় করে দেন। সে মানুষের দৃষ্টিতে ছোট- অপাংক্তেয় এবং সে নিজেকে নিজে খুব বড় মনে করে। এমনকি সে শেষ পর্যন্ত মানুষের চোখে কুকুর ও শূকরের চেয়েও অধিক ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয়। তাখরিজ: বায়হাক্বী ৮১৪০


হাদিস নং -০৫

عن أبي هريرة قال: «قال النبي صلى الله عليه و سلم  بَيْنَمَا رَجُلٌ مِمنّْ كَانَ قَبْلكُمْ يمْشِي فِي حُلَّةٍ تُعْجُبهُ نَفْسُهُ، مُرَجِّلٌ جُّمتَهُ، إذِْ خَسَفَ الله بهِِ الْأرَض فَهُو يَتَجْلَجُل فيِهَا إلِى يَوِْم الْقِيَاَمِة»

অর্থ, আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তোমাদের পূর্বের যুগের এক লোক একটি কাপড় ও লুঙ্গি পরিধান করে ও তার চুল গুলো তার কাঁধের উপর ঝুলিয়ে অহংকার করে হাঁটছিল। কাপড়দ্বয় লোকটিকে অহংকারের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা লোকটিকে যমিনের অভ্যন্তরে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত পুঁততে থাকবে। আর সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এ দিক সেদিক নড়াচড়া করতে থাকবে।

তাখরিজ: বুখারী ৫৭৮৯ মুসলিম ২০৮৮


হাদিস নং -০৬

عن فضالة بن عبيد قال: «قال النبي صلى الله عليه و سلم ثلاَثةٌ لا تَسْألَ عَنْهُمْ: رَجٌل يُناَزِعُ الله فِي كبِريَاءِهِ، فَإنَ رِدَاءَُه الْكبِريَاءُ، وَإزارهُ الِعَّزُة، وَرُجلٌ يَشُك فِي أَمْرِ الله، وَالْقَنُوطُ مِنْ رَحَمةِ الله »

অর্থ, ফুযালা ইবনে উবাইদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তিন ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে তোমরা আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। এক-যে ব্যক্তি আল্লাহ বড়ত্ব নিয়ে আল্লাহর সাথে ঝগড়া করে। কারণ, বড়ত্ব হল আল্লাহর চাদর আর তার পরিধেয় হল ইজ্জত। দুই- যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তিন. যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়। তাখরিজ: ইবনে হাব্বান ৪৫৫৯


হাদিস নং -০৭

عن ابن عمر قال: «سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم    يقول :مَن تَعَّظمَ فِي نَفْسِهِ أَوْ اخْتَالَ فِي مِشْيَتهِِ لِقيَ الله وَهُوَ علَيْهِ غَضْبَانُ»

অর্থ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মনে মনে নিজেকে বড় মনে করে এবং হাঁটার সময় অহংকার করে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে যে অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তার উপর রাগান্বিত। তাখরিজ: আহমদ: ৫৯৫৯


০৭. অহংকার সম্পর্কে মনীষীদের বাণী: 

# হাকিমুল উম্মত মোজাদ্দেদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেন, শয়তানকে শয়তান বানালো কে? (নেককার আজাজিল ইবলিস হলো কিভাবে। আমরা জানি শয়তান অভিশাপ্ত হওয়ার পূর্বে নেককার ছিল।)


শয়তানকে শয়তান বানানোর জন্য আরেক শয়তান আসেনি বরং অহংকারের ভূত তাকে শয়তান বানিয়েছে। দলিল: 


 এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيْسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ، قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ، قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيْهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِيْنَ-

অতঃপর ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর। তারা সকলে সিজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। আল্লাহ বললেন, এ স্থান থেকে তুমি নেমে যাও। এখানে তুমি অহংকার করবে, তা হবে না। অতএব তুমি বের হয়ে যাও। তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত। সূরা আরাফ, ১১-১৩

ইবলীসের মধ্যে উপরোক্ত ঘৃণিত দোষগুলি থাকার কারণে আল্লাহ বললেন,اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُوْمًا مَدْحُوْرًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِيْنَ- তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। (জেনে রেখো) তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নামকে পূর্ণ করব। সূরা আরাফ -১৮


# শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,التَّكَبُّرُ شَرٌّ مِنَ الشِّرْكِ فَإِنَّ الْمُتَكَبِّرَ يَتَكَبَّرُ عَنْ عِبَادَةِ اللهِ تَعَالَى، وَالْمُشْرِكَ يَعْبُدُ اللهَ وَغَيْرَهُ. ‘অহংকার শিরকের চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের বিরুদ্ধে অহংকার করে। আর মুশরিক আল্লাহর ইবাদত করে এবং সাথে অন্যেরও করে’। সূত্র: ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ৩য় প্রকাশ ১৯৯৬ খৃঃ) ২/৩১৬


# হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, أصُوْلُ الْخَطَايَا كُلِّهَا ثَلاَثَةٌ: الْكِبْرُ وَهُوَ الَّذِيْ أصَارَ إِبْلِيسَ إِلَى مَا أصاره، والْحِرْصُ وَهُوَ الَّذِي أخرج آدم من الْجنَّة، والْحَسَدُ وَهُوَ الَّذِي جرأ أحد بني آدم على أَخِيه، فَمن وقِي شَرَّ هَذِه الثَّلاَثَة فقد وقى الشَّرَّ كله- فالكفر من الْكبر والمعاصي من الْحِرْص وَالْبَغي وَالظُّلم من الْحَسَد-

অর্থাৎ সমস্ত পাপের উৎস হ’ল তিনটি : (১) অহংকার, যা ইবলীসের পতন ঘটিয়েছিল। (২) লোভ, যা জান্নাত থেকে আদম-কে বের করে দিয়েছিল। (৩) হিংসা, যা আদম (আঃ)-এর এক সন্তানের বিরুদ্ধে অপর সন্তানকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলেছিল। যে ব্যক্তি উক্ত তিনটি বস্ত্তর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে সে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। কেননা কুফরীর মূল উৎস হ’ল ‘অহংকার’। পাপকর্মের উৎস হ’ল ‘লোভ’। আর বিদ্রোহ ও সীমালংঘনের উৎস হ’ল ‘হিংসা’। সূত্র: ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৩৯৩/১৯৭৩) ৫৮ পৃঃ


০৮. অহংকারের  চিকিৎসা :

 শরীরে  রোগের জন্য যেমন ডাক্তর  প্রয়োজন, তেমনি আত্মার রোগ  নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য কামেল শায়েখ প্রয়োজন। তাই উম্মুল আমরায তথা অহংকার থেকে বাঁচার  জন্য কোন  কামেল শায়েখের হাতে ন্যস্ত হতে হবে। এ ছাড়া কিয়ামত  পর্যন্ত  কারো ইসলাহ হবে না।( কামেল শায়েখের পরিচয় সম্পর্কে আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. কসদুস সাবিল দেখুন।)

কয়েকটি মোরাকাবা, এটা করলে ইনশাল্লাহ ফায়দা হবে।

১. (এই ধ্যান  করবে যে, ) যদিও আমার মধ্যে এই গুণ বা  প্রতিভা রয়েছে, কিন্তু এ  তো আমার সৃষ্টি নয়,বরং নিছক আল্লাহর পাকের দান।

২. এই দান আল্লাহ  পাক যখন ইচ্ছা; তা  ছিনিয়ে নিতে পারেন। 

৩. অথবা বর্তমানেও হয়ত তার মধ্যে বড় কোন গুণ ও মর্যাদার বিষয় বর্তমান আছে, যা আমার কাছে অজ্ঞাত, কিন্তু অন্যদের কাছে তা স্পষ্ট।

৪. তার জন্য দুআ করা (যার সাথে অহংকার হয়)।

৫. হজরত থানভি রহ. বলেন-আমি বর্তমান হালতে সব মুসলমানের চেয়ে নিজেকে নিকৃষ্ট এবং ভবিষতের চিন্তা ভাবনায় কাফের-বেদ্বীনের চেয়েও খারাপ মনে করি; এমনকি কুকুর-শিয়াল-শুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে মুসলমানের বিভিন্ন ভাল আ্মলের বিনিময়ে জান্নাত  দিতে পারেন আর আমার একটি গুনাহের কারণেও আমাকে শাস্তি দিতে  পারেন। আর কাফের মুশরিকরাও তো ঈমানি আনার সুযোগ আছে,আমি কি  ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারব? যদি না পারি, তাহলে তে কুকুর-শুকুরে চেয়েও জঘন্য, কেননা তাদের শাস্তি নাই, মাটির সাথে মিশে যাবে। আমার শাস্তি আছে।


বিস্তরিত জানার জন্য পড়ুন- তারবিয়াতুস সালিকীন, আশরাফ  চরিত-মাকতাবতুল আশরাফ প্রকাশনী, আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম আখতার রহ. এর কিতাব, অহংকার ও প্রতিকার, আত্মার ব্যাধি ও তার প্রতিকার


দ্বিতীয় স্তর: খ। রাগ বা ক্রোধ


০১. ভূমিকা: মানব চরিত্রের একটি মারাত্মক মন্দ দোষ হলো, রাগ বা গোস্বা। এই রাগ কত মানুষ, কত সংসার, কত সমাজ ও কত দেশ ধ্বংস করে দিল, তা বর্ণনা বাহুল্য। নিচে রাগের সংজ্ঞা, তা দমনের উপকারিতা, দমন পদ্ধতি আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

০২. রাগের আভিধানিক অর্থ:

معنى الغَضَب لغةً:

الغَضَب: بالتَّحْرِيكِ، ضدُّ الرِّضَا. والغَضْبة: الصَّخرة الصلبة. قالوا: ومنه اشتُقَّ الغَضَب؛ لأنَّه اشتدادُ السُّخط. يقال: غَضِب يَغْضَبُ غَضَبًا، وهو غضبان وغَضُوب

অর্থ: আরবী "গযব" শব্দের আভিধানিক অর্থঃ

    শব্দটি আরবী শব্দ "রিযা"( সন্তুষ্টি) - এর বিপরীতার্থক শব্দ। যার অর্থ হলো - রাগ, ক্রোধ, ক্ষোভ, উষ্মা, অসন্তুষ্টি ইত্যাদি। 

আরবী " গাযবাহ" শব্দের অর্থ হলো নিরেট শক্ত পাথর। সেখান থেকেই "গযব" শব্দটি উৎকলিত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, প্রচণ্ড ক্রোধ। এই নামধাতু থেকেই উৎসারিত আরো দুইটি আরবী শব্দ হলো- গাযবান, গাযূব। তাদের অর্থ হলো,প্রচণ্ড ক্রোধে উন্মত্ত ব্যক্তি। সূত্র: মাকায়িসুল লুগাত -৪/৪২৮


০৩. রাগের পারিভাষিক সংজ্ঞা:

معنى الغَضَب اصطلاحًا:

الغَضَبُ: هو ثورَانُ دم القلب لقصد الانتقام

وقال الجرجاني: (الغَضَبُ: تغير يحصل عند غليان دم القلب، ليحصل عنه التشفي للصَّدر)

وقيل: (هو غليانُ دم القلب، طلبًا لدفع المؤذي عند خشية وقوعه، أو طلبًا للانتقام ممن حصل له منه الأذى بعد وقوعه)

  অর্থ:   শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হলো, প্রতিশোধের নেশায় বুকের রক্ত টগবগিয়ে ওঠা।

   প্রখ্যাত ভাষাবিদ আল্লামা আলী বিন হুসাইন আল-জুরজানী তাঁর রচিত শব্দকোষ "তা'রিফাত" গ্রন্থে উল্লেখ করেন, "ক্রোধ হলো, বুকের রক্ত টগবগিয়ে উঠার মুহূর্তে এমন ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো, যার মাধ্যমে তার হৃদয়ের উম্মত্ততা ক্রমেক্রমে প্রশমিত হয়ে ওঠে।"


কারো কারো মতে, " রাগ বলা হয়, কষ্টদায়ক বস্তুতে পতিত হওয়ার আশংকায় তা নিবারণের উদ্দেশ্যে, রুধির ধারার বাঁধাভাঙা স্ফুরণ, কিংবা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হবার পর দুশমন থেকে প্রতিশোধ গ্রহণে অদম্য স্পৃহার প্রবল উজ্জীবন। " সূত্র: তাজুল উরূস -৩/৪৮৫; সূত্র: আততারিফাত -২০৯ প


০৪. নবীজীর নসিহত: 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصِنِي قَالَ لَا تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لَا تَغْضَبْ

হজরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবি (ﷺ)  এর কাছে আরজ করলো, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলবে, তুমি রাগ কর না। লোকটি কয়েকবার একই কথা জিজ্ঞেস করলো। রাসূল (ﷺ)  ও প্রত্যেক বারই বলবেন, তুমি রাগ কর না। বুখারি-৬১১৬,কিতাবুল আদাব; তিরমিজি-২০২০; আহমদ-৮৭৪৪


 ০৫. আসল বাহাদুর কে? 

وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أنّ رَسولَ الله ﷺ قَالَ لَيْسَ الشَّدِيدُ بالصُّرَعَةِ إنَّمَا الشَدِيْدُ الَّذِيْ يَملكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  বলেছেন-মল্লযুদ্ধে পরাজিত করতে পারে সেই প্রকৃত বীর নয়, প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারে। বুখারি-৬১১৪ ও মুসলিম-৬৮০৯


০৬. রাগ সংবরণের ফযিলত:

আয়াত নং -০১

Surah Aal-e-Imran, Verse 134:

الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। সূরা ইমরান -১৩৪


আয়াত নং -০২

Surah Ash-Shura, Verse 37:

وَالَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا هُمْ يَغْفِرُونَ

যারা বড় গোনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাম্বিত হয়েও ক্ষমা করে। সূরা শুরা -৩৭


হাদিস নং -০১

حَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ، - يَعْنِي ابْنَ أَبِي أَيُّوبَ - عَنْ أَبِي مَرْحُومٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ كَظَمَ غَيْظًا - وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ - دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ مَا شَاءَ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ اسْمُ أَبِي مَرْحُومٍ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَيْمُونٍ .

. ইবনে সারহ (রাহঃ) .... সাহল ইবনে মুআয (রাহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করে, অথচ সে কাজ করতে সে সক্ষম; (তার এ সবরের কারণে) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকলের সামনে ডেকে বলবেনঃ তুমি যে হুরকে চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও। তাখরিজ: আবু দাউদ -৪৭৭৭

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)


হাদিস নং -০২

حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ أَخْزَمَ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ يُونُسَ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ مَا مِنْ جُرْعَةٍ أَعْظَمُ أَجْرًا عِنْدَ اللَّهِ مِنْ جُرْعَةِ غَيْظٍ كَظَمَهَا عَبْدٌ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ‏"‏ ‏.‏

 যায়িদ ইবন আখযাম (রাহঃ)...... ইবন উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ ক্রোধান্বিত অবস্থায় কোন বান্দা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এক চুমুক ক্রোধ প্রশমণ করার চাইতে, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম চুমুক আর নেই। (অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ক্রোধ থেকে বিরত থাকা সর্বোত্তম কাজ)। তাখরিজ - সুনানে ইবনে মাজাহ -৪১৮৯


হাদিস নং -০৩

 حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، - يَعْنِي ابْنَ مَهْدِيٍّ - عَنْ بِشْرٍ، - يَعْنِي ابْنَ مَنْصُورٍ - عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلاَنَ، عَنْ سُوَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَبْنَاءِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَبِيهِ قَالَ - قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ قَالَ " مَلأَهُ اللَّهُ أَمْنًا وَإِيمَانًا " . لَمْ يَذْكُرْ قِصَّةَ " دَعَاهُ اللَّهُ " . زَادَ " وَمَنْ تَرَكَ لُبْسَ ثَوْبِ جَمَالٍ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ " . قَالَ بِشْرٌ أَحْسِبُهُ قَالَ " تَوَاضُعًا كَسَاهُ اللَّهُ حُلَّةَ الْكَرَامَةِ وَمَنْ زَوَّجَ لِلَّهِ تَعَالَى تَوَّجَهُ اللَّهُ تَاجَ الْمُلْكِ " .

. উকরা ইবনে মুকাররম (রাহঃ) .... সুওয়াদ ইবনে ওয়াহাব (রাহঃ), যিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জনৈক সাহাবীর পুত্র ছিলেন, তার পিতা থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন। এরপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেনঃ নবী (ﷺ )دَعَاهُ اللَّهُ অর্থাৎ ’আল্লাহ তাকে ডাকবেন, এ শব্দের পরিবর্তেঃ مَلأَهُ اللَّهُ أَمْنًا وَإِيمَانًا অর্থাৎ আল্লাহ তাকে শান্তি ও ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেবেন- বলেন।


এরপর রাবী এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও উত্তম বস্ত্র পরিধান করবে না এবং নম্রতা দেখাবে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের-চাদর পরিধান করাবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কোন নিঃস্ব ব্যক্তিকে বিবাহ করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন শাহী মুকুট পরাবেন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ৪৭৭৮; তাফসিরে রুহুল মাআনি , মাজমাউয যাওয়াইদ


হাদিস নং -০৪

من كَفَّ غضبَهُ كَفَّ اللهُ عنهُ عذابَهُ ، ومَنْ خزنَ لسانَهُ سترَ اللهُ عَوْرَتَهُ ، ومَنِ اعْتَذَرَ إلى اللهِ قَبِلَ اللهُ عُذْرَهُ

الراوي : أنس بن مالك | المحدث : الألباني | المصدر : السلسلة الصحيحة | الصفحة أو الرقم : 2360 | خلاصة حكم المحدث : إسناده حسن | التخريج : أخرجه ابن أبي عاصم في ((الزهد)) (10)، وأبو يعلى (4338)، والدولابي في ((الكنى والأسماء)) (1082) واللفظ له

যে ব্যক্তি তার জিহ্বার হেফাযত করে আল্লাহ তাআলাতার দোষ ঢেকে রাখবেন। আর যে ব্যক্তি নিজের রাগ দমন করবে আল্লাহ তাআলার নিকট ত্রুটির ক্ষমা চায়বে,আল্লাহ তাআলাতার ওযর কবুল করবেন। তাখরিজ: ইবনে আবু আসেম-১০; সুনানে বাইহাকি ফি শোয়াবুল ঈমান


০৭. রাগের ক্ষতি: 

বন্ধুগণ! রাগের ক্ষতি কত যে ভয়াবহ। আমরা সমাজের দিকে একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো। রাগের কারণে কত সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, খুনাখুনি, ঝগড়া-ঝাটি, মামলা-মোকদ্দামা ইত্যদি হচ্ছে। রাগের মাধ্যমে শয়তান তার কারসাজি হাসিল করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন অধিকতর উত্তম কথা বলে; কারণ শয়তান তাদের মধ্যে মনোমালিন্য-অশান্তি-শত্রুতা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট শত্রু। সূরা বাণী ইসরাঈল-৫৩ 

নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- রাগ/গোস্বা মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয় যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে দেয়। সুনানে বাইহাকি


 ০৮. রাগ/গোস্বার চিকিৎসা:

 কুরআন-হাদিস ও অভিজ্ঞতার আলোকে মাশায়েখগণ এ রোগের চিকিৎসা লিখেন-

 সর্ব প্রথম যার ওপর রাগ এসেছে, তাকে সামনে থেকে হটিয়ে দেয়া।

 আঊযু বিল্লাহিমিনাশ শাইত্বানির রজীম বার বার মুখে বলা। (যেমন হাদিস শরিফে এসেছে حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدَ، قَالَ اسْتَبَّ رَجُلاَنِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَجَعَلَ أَحَدُهُمَا تَحْمَرُّ عَيْنَاهُ وَتَنْتَفِخُ أَوْدَاجُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي لأَعْرِفُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا هَذَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِي يَجِدُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ " . فَقَالَ الرَّجُلُ هَلْ تَرَى بِي مِنْ جُنُونٍ

আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ..... সুলাইমান ইবনে সূরাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা দু’ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর সামনে পরস্পর গালাগালি করে; ফলে তাদের এক জনের চোখ লাল হয়ে যায় এবং গলার রগ ফুলে উঠে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আমি এমন একটা দুআ জানি, যদি কেউ রাগের সময় তা পাঠ করে, তবে তার ক্রোধ চলে যায়। তা হলোঃ ’আউযু বিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রজীম’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাই। তখন সে ব্যক্তি বলেঃ আপনি কি আমাকে পাগল মনে করেন? তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ৪৭৮১)

 পানি পান করবে।

 অজু করবে।

 দাঁড়িয়ে থাকলে বসবে, আর বসে থাকলে শুয়ে পড়বে।

 চুপ থাকবে।

 শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন হলে, রাগ প্রশমিত হলে দিবে।

 অতঃপর এ চিন্তা করবে যে, সে আমার নিকট যতটা অপরাধী, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধী। যেভাবে আমি এ কামনা করি যে, আল্লাহ তাআলা আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন, আমারও উচিত আমি তার অপরাধ ক্ষমা করে দিই।

একটি পরীক্ষিত আমল: কোন পরিবারের সবার বা স্বামী/স্ত্রীর রাগ বেশি

হয় তাহলে মহিলাগণ যখন খাবার রান্না করে, তা পরিবেশন করার আগে উক্ত খাবারে (ভাত, রুটি, তরকারি, পানি, ফল যাই হোক না কেন) তিনবার ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ বলে ফুঁ (ফুঁক) দিবে এবং এ খাবার সবাই খাবে ইনশাল্লাহ এভাবে (৪০ দিন বা তার বেশি) আমল করলে সবার রাগ কমে যাবে।

সূত্র: আত্মার ব্যাধি ও প্রতিকার, ক্রোধ দমন নূর অর্জন-হাকীম আখতার রহ.; মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ হাদিস - মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক 



সারকথা হলো, কারও ঘরের মধ্যে যদি সাপ ঢোকে, সেটা বের করা বা তাকে হত্যা করা পর্যন্ত কেউ টেনশন মুক্ত, শান্তি পায় না। কারও শরীরে যদি বিষফোঁড়া বা ক্যান্সার হয় সেটা চিকিৎসা করা পর্যন্ত কেউ স্বস্তি লাভ করে না, তাহলে আমাদের যাদের মধ্যে অহংকারের মত আত্মাধিক ব্যাধি রয়েছে, যা থাকলে জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি নেই।


এসব বিষয়ে আমরা একেবারেই বেখবর। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে সজাগ হওয়ার তৌফিক দান করুন।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক