পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও মহান আসলাফ-আকাবিরের আমল বনাম আমাদের জিন্দেগি-০৩
পরকালের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করা
পবিত্র কুরআন:
আয়াত নং-০১
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা’আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। সূরা হাশর-১৮
আয়াত নং-০২
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। সূরা বাকারা-২৫৪
হাদিস শরিফ:
হাদিস নং-০১
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثٍ: صَدَقةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ». رواه مسلم
অর্থাৎ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস নয়; (১) সাদকা জারিয়াহ, (২) যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দোআ করে।’’ তাখরিজ: মুসলিম ১৬৩১, তিরমিযি ১৩৭৬, নাসায়ি ৩৬৫১, আবু দাউদ ২৮৮০,৩৫৪০, আহমদ ৮৬২৭, দারেমি ৫৫৯
হাদিস নং-০২
عَنْ أبي يَعْلَى شَدَّادِ بْن أَوْسٍ t عن النَّبيّ ﷺ قَالَ: الكَيِّس مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِما بَعْدَ الْموْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَه هَواهَا، وتمَنَّى عَلَى اللَّهِ رواه التِّرْمِذيُّ وقالَ: حديثٌ حَسَنٌ،
অর্থাৎ প্রকৃত বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি যে নিজের নফসকে দমন করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। তাখরিজ: জামে তিরমিজি-২০৪৮,ইবনে মাজাহ
নোট: ইমাম তিরমিজি রহমতুল্লাহি বলেন হাদীসটির সনদ হাসান।
*আসলাফ-আকাবেরদের আমল:
ঢাকাকে শুধু মসজিদের শহর বলা হয় না, মাদ্রাসার শহরও বলা হয়, এর পিছনে যার অবদান সর্বাগ্রে ( ঢাকার বুকে প্রথম কওমি মাদ্রাসা বড় কাটরা, লালবাগ, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা) তিনি হলেন, মুজাহিদে আজম হজরত শামসুল হক ফরিদপুরি রহ.(সদর সাহেব হুজুর রহ. নামে পরিচিত)
হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী
রহমাতুল্লাহ আলাইহির কিতাব সর্বপ্রথম ( বৃটিশ-পাকিস্তান আমলে) বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার পদক্ষেপ নেন এমদাদিয়া লাইব্রেরী চকবাজার ঢাকা। এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন সদর সাহেব হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি।
একদিন এমদাদিয়ার মালিক সদর সাহেব হুজুর কে ডেকে বললেন, হুজুর। আপনি তো কোন কিছুই করলেন না। আপনাকে আমি এক/তিন লক্ষ টাকা দিচ্ছি একটি ঢাকাতে বাড়ি করেন।
পরে তিনি ঐ টাকা দিয়ে ফরিদাবাদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুদিন পর এমদাদিয়ার মালিক সদর সাহেব হুজুরকে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর বাড়ি বানালেন না। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, বানিয়েছি। ( আখেরাতের জন্য সদকায়ে জারিয়ার কাজ হিসেবে মাদ্রাসা তৈরি করেছেন) সূত্র: রুমিয়ে জামানা আরিফ বিল্লাহ শাহ আব্দুল মাতিন বিন হোসাইন দা.বা.-এর বয়ান থেকে।
নিরীক্ষণ:
প্রিয় বন্ধুগণ! পবিত্র কুরআন- হাদিস ও আমাদের মহান পূর্বসূরীদের আমলের সাথে সাথে একটু আমাদের আমল যাচাই-বাছাই, ওজন ও নিরক্ষণ করি।
চিরস্থায়ী আবাসস্থল আখেরাতের জন্য আমরা কি পাথেয় সংগ্রহ করেছি/অগ্রে প্রেরণ করেছি/সদকায়ে জারিয়ার কাজ করেছি, যা মৃত্যুর পরও সওয়াব অব্যাহত থাকবে?
*আবেদন/পরামর্শ:
লক্ষ্য করুন/একটু খেয়াল করুন। এই পৃথিবীতে এক দেশের টাকা অন্য দেশে চলে না অর্থাৎ আপনি যখন হজে বা বিদেশে গমন করবেন তখন আমাদের টাকাকে ডলার বানিয়ে নিতে হবে। সুতরাং দুনিয়ার এক দেশের টাকা যদি অন্য দেশে না চলে তাহলে দুনিয়ার টাকা-পয়সা ধন সম্পদ আখেরাতে কিভাবে চলবে, তাই বুযুর্গানেদ্বীন পরামর্শ দেন যে, তোমার টাকা পয়সা-ধন-সম্পদকে আল্লাহর জন্য ব্যয় কর(ফরজ যাকাত,ফিতরা,নফল দান-সদকা ইত্যাদি) তাহলেই তোমার টাকাগুলো ডলারের রূপান্তরিত হবে অর্থাৎ আখেরাতে ও প্রকৃত হওয়া যাবে পাওয়া যাবে।