আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৪৮৯: কত মাইল বা কিলো রওনা করলে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে? মুসাফির

No Comments

 

















জিজ্ঞাসা-১২৪৮৯:

আসসালামু আলাইকুম। বিজ্ঞজনের নিকট জানার আগ্রহ, মুসাফির সফরের নিয়ত করার পর হুকুম কখন থেকে শুরু হবে, নিজ মহল্লা অতিক্রম করার পরে নাকি ৭২কিলোমিটার অতিক্রমের পরে? বিস্তারিত আদেল্লা এবং হানাফি মাজহারদের বারাহিন সহ জানতে চাই। হাফিজাকুমুল্লাহ। 

তারিখ:  ০৫/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       


মাওলানা সাদেকুল ইসলাম, রংপুর থেকে


   জবাব

 وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

يُشترَطُ في قَصْر الصَّلاة في السَّفَر أنْ يكونَ قد خرَج من بيوتِ بلدِه، وفارَق عمرانَها، وترَكها وراءَ ظَهرِه، وهذا باتِّفاقِ المذاهبِ الفِقهيَّةِ الأربعةِ: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والشافعيَّة، والحَنابِلَة، وحُكيَ الإجماعُ على ذلك

অর্থাৎ সফরের সময় নামায সংক্ষিপ্ত করার জন্য শর্ত রয়েছে যে, সে তার দেশের বাড়ি-ঘর, শহরাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পিছনে ছেড়ে গেছে। এটি আইনশাস্ত্রের চারটি মাযহাবের সাথে একমত: হানাফী মাযহাব, এবং মালিকি, এবং শাফিঈগণ, এবং হাম্বলীএবং এ বিষয়ে চার ইমামের ইজমা হয়েছে। সূত্র: আলমুগনি -২/১৯১, ইবনে কুদামা রহ.


দ্বিতীয় কথা হলো, সফরের দূরত্বে যাবার নিয়তে নিজ এলাকা থেকে বের হলেই ব্যক্তি মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।


বর্তমানে ‘নিজ এলাকা’ বলতে উদ্দেশ্য হলো, যদি শহরে বসবাস করে, তাহলে স্বীয় শহর অতিক্রম করলে ব্যক্তি মুসাফির। আর গ্রাম থেকে সফরে বের হলে, স্বীয় গ্রাম অতিক্রম করলে ব্যক্তি মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবে। সেই হিসেবে গ্রামের সীমানা পাড় হবার পর থেকেই কসর পড়বে।


দলিল:

আয়াত নং-০১

Surah An-Nisa, Verse 101:

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا

অর্থ: যখন তোমরা কোন দেশ সফর কর, তখন নামাযে কিছুটা হ্রাস করলে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে। নিশ্চয় কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা নিসা-১০১


হাদিস নং-০১

 حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، وَإِبْرَاهِيمَ بْنِ مَيْسَرَةَ، سَمِعَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الظُّهْرَ بِالْمَدِينَةِ أَرْبَعًا وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ

অর্থ: যুহায়ের ইবনে হারব (রাহঃ) .... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে (সফরে রওয়ানা হয়ে) মদীনাতে চার রাকআত যোহরের নামায আদায় করেছি এবং যুল-হুলায়ফাতে গিয়ে আসরের নামায দুই রাকআত আদায় করি। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১২০২ (আন্তর্জাতিক নং ১২০২)


হাদীসের ব্যখ্যা:

মদীনা শহরের বাইরেই জুল হুলাইফা অবস্থিত। রসূল স. হজ্বের সফরে রওনা হয়ে মদীনা শহরের বাইরে গিয়ে কসর নামায পড়তে শুরু করলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, সফরের নিয়তে নিজ শহরের সীমানা পার হলেই কসর শুরু হবে। এটাই হানাফী মাহাবের মত। (শামী: ২/১২১)

কারো আবাসন শহরের বাইরে হলে যে সীমানার মধ্যে তার সামাজিক যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ থাকে বা দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণে যতটুকু এলাকা জুড়ে সে সচরাচর চলাফেরা করে থাকে সেটা তার নিজ এলাকা হিসেবে গণ্য হবে। সফরের নিয়তে এ এলাকা ছেড়ে বাইরে গেলে তার কসরের বিধান শুরু হবে। এমনিভাবে সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় ঐ এলাকায় ঢুকে পড়লে সে নামায পুরা পড়া শুরু করবে।


হাদিস নং -০২

عن ابن عمر رضى الله عنه أنه كان يقصر الصلاة حين يخرج من بيوت المدينة، ويقصر إذا رجع حتى يدخل بيوتها (مصنف عبد الرزاق، باب المسافر متى يقصر إذا خرج مسافرا-2\530، رقم-4323)

অর্থাৎ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি যখন শহরের বাড়ি থেকে বের হতেন তখন নামায সংক্ষিপ্ত করতেন এবং যখন তিনি ফিরে আসেন তখন নামায সংক্ষিপ্ত করতেন যতক্ষণ না তিনি তার ঘরে প্রবেশ করেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ আবদ আল-রাজ্জাক, অধ্যায়। ভ্রমণকারী: ভ্রমণে বের হলে কখন কসর করবেন - 2/530, নং 4323



এ বিষয়ে শায়খ ইবনে বাজ রহ. কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাবে বলেন,


أما ما دام في البلد فإنه يصلي أربعًا، فإذا غادر البلد وخرج عن بنيانها وعن عمارتها فإنه يصلي ركعتين في طريقه إلى جهته التي يريد.. وهكذا

অর্থাৎ যতক্ষণ সে শহরে থাকে ততক্ষণ সে চারটি সালাত আদায় করে এবং যদি সে শহর ত্যাগ করে এবং এর দালান-কোঠা থেকে বেরিয়ে যায়, সে তার ইচ্ছামত পথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে। একজন আবাসিক ইমামের পিছনে নামায পড়েন, তিনি তার সাথে চারটি সালাত আদায় করেন। এটাই সুন্নাহ। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কোন মুসাফির বাসিন্দা চারজনের সাথে সালাত আদায় করে? সূত্র: ফাতওয়ায়ে নূরুন আলাল দারব, শায়েখ ইবন বাজ রহ এরওয়েবসাইট থেকে।


সারকথা হলো, যদি কোন ব্যক্তি ৭৮ কিলোমিটার দূরে ১৫ দিনের কম নিয়তে সফরে বের, তাহলে নিজ বসবাস করা গ্রাম বা শহরের সীমানা অতিক্রম হলেই কসর শুরু করবে।

 

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক