জিজ্ঞাসা-১২৭১৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আলবুরহানের বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের কাছে সবিনয়ে ফতওয়া চাাচ্ছি। ।অামাতের মসজিদের সামনের দেওয়ালের ডানপাশে কাবা ঘর আর বাম পাশে মসজিদে নববী খুব বড় করে (৭ ফিট *৭ফিট) টাইলস লাগানো আছে। ।অামার অধিনায়ক স্যারের আশংকা হচ্ছে নবাীজির রওজা মনে করে কেউ আবার তাতে চুমু খায়:/মাথা নুয়ে সম্মান করে কি না? তাই তার প্রশ্ন হলো, এগুলো মসজিদের সেট করা জায়েজ কি না? এখন যেহেতু লাগায়ে ফেলেছে , তাই রাখা ঠিক হবে ? নাকি ভেংগে ফেলা ভাল হবে? দলিলসহ ফতোয়া দিয়ে আমাদেরকে ফেতনা থেকে বাচান।
جزال الله خيرا في الدنيا و الاخرۃ
তারিখ: ১১/০৮/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, দেয়ালে কাবা, মসজিদে নববি, রওজায়, আয়াত বা অন্যান্য বৈধ নকশা/ছবি লাগানোর দুটি ছুরত হতে পারে।
প্রথম ছুরত: যদি নামাজির একাগ্রতা নষ্ট হয় এমন জিনিস মসজিদের দেওয়ালে বা ফ্লোরে লাগানো উচিত নয়, মাকরুহ। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، وَسَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَمُسَدَّدٌ، قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَنْصُورٍ الْحَجَبِيِّ، حَدَّثَنِي خَالِي، عَنْ أُمِّي، صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ الأَسْلَمِيَّةَ، تَقُولُ قُلْتُ لِعُثْمَانَ مَا قَالَ لَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ دَعَاكَ قَالَ " إِنِّي نَسِيتُ أَنْ آمُرَكَ أَنْ تُخَمِّرَ الْقَرْنَيْنِ فَإِنَّهُ لَيْسَ يَنْبَغِي أَنْ يَكُونَ فِي الْبَيْتِ شَىْءٌ يَشْغَلُ الْمُصَلِّيَ " . قَالَ ابْنُ السَّرْحِ خَالِي مُسَافِعُ بْنُ شَيْبَةَ .
ইবনে আল সারহ্ ..... মানসূর আল হাজারী (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মামা আমার মাতা (সাফিয়া) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি আসলামিয়্যাকে এরূপ বলতে শুনেছি যে, আমি একদা উসমানকে জিজ্ঞাসা করি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে কী বলেন, যখন তিনি তোমাকে আহবান করেন। জবাবে তিনি (উসমান) বলেন, আমি আপনাকে এতদসম্পর্কে অবহিত করতে ভুলে যাই যে, আপনি (দুম্বার) ঐ শিং দুটি ঢেকে রাখুন (যা ফিদয়া স্বরূপ ছিল ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর জন্য)। কেননা, বায়তুল্লাহর মধ্যে এমন কিছু থাকা উচিত নয়, যা মুসল্লীকে তার নামায হতে অন্যমনস্ক করে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০২৬ (আন্তর্জাতিক নং ২০৩০)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسٍ، كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَمِيطِي عَنَّا قِرَامَكِ هَذَا، فَإِنَّهُ لاَ تَزَالُ
আবু মা’মার ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাহঃ) .... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আয়েশা (রাযিঃ)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করছিলেন। নবী (ﷺ) বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ নামায আদায় করার সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে।
তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৭ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭৪)
উপরোক্ত হাদিসদ্বয় দ্বারা বুঝা নামাজীর অন্যমনস্ক করে এমন জিনিস রাখা বাঞ্ছনীয় নয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, কোন মুসলমান মহব্বতে কাবা বা মসজিদে নববি, রওজায় চুমু খাওয়া দোষের কিছু নয়।
সিজদা তো গ্রহণযোগ্য নয়, সাধারণত কেউ সিজদা করে না, তাই এ ধরণের ধারণা অমূলক।
দ্বিতীয় ছুরত: যদি কাবা,রওজা শরীফের ছবি/কারুকার্য এত উঁচুতে, মসজিদের ডানে বামে যা নামাজির স্বাভাবিক ভাবে দৃষ্টি গোচর হয় না, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। দলিল:
ولا بأس بنقشه خلا محرابه)
فإنه يكره، لأنه يلهي المصلي. ويكره التكلف بدقائق النقوش ونحوها خصوصا في جدار القبلة
অর্থাৎ (এবং এর মিহরাব ব্যতীত এটি খোদাই করাতে কোন দোষ নেই) কারণ এটি অপছন্দনীয়, কারণ এটি নামাজিকে বিভ্রান্ত করে। শিলালিপি এবং এর মতো বিস্তৃত করা অপছন্দ করা হয়, বিশেষ করে কিবলা দেয়ালে। সূত্র: দুররুল মুখতার-১/৭০৯
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে
আল্লাহর ঘর মসজিদে এমন কিছু রাখা বা স্থাপন করা, যা নামাজির একাগ্রতা নষ্ট করে, এমন কিছু থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে নামাজির সামনে না হলে অসুবিধা নেই।
পরামর্শ: রওজা শরীফ যদি নিচের দিকে হয়, যা নামাজির একাগ্রতা নষ্ট করে, তাহলে টাইলসটি ভাঙ্গার প্রয়োজন নেই, এর উপর কোন ভাল রং করে দিলেই চলবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক