আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৪৪৭: পারা বণ্টন করে কুরআন খতম জায়েজ আছে?

No Comments

 





জিজ্ঞাসা-১২৪৪৭:

 

মোহতারাম,আমার প্রশ্ন হলো এভাবে শেয়ারে কুরআন কারীম খতমের নিয়ম সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ছিল কিনা। দলীলসহ জানালে খুশি হবো। তারিখ৮/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

 মাওলানা নুরুল ইসলাম খুলনা  থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,  আমরা আল-হামদুলিল্লাহ ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসা-১৫৮ শিরোনামে আলোচনা করেছি যে, দুনিয়াবী মাকসুদ হাসিলের জন্য কুরআন খতম করা জায়েজ।

 

দ্বিতীয় কথা হলো, শেয়ারে কুরআন খতম তথা পারা ভাগ/বণ্টন  করে  খতম করা শরিয়ত সমর্থিত কি না? বিভিন্ন হাদিস/আসার এবং ফুকাহায়ে কেরামের ফতোয়া অনুযায়ী এভাবে কুরআন খতম জায়েজ আছে। 

 

দলিল:

 

হাদিস/আসার-০১

ما اجتمَعَ قومٌ في بيتٍ من بيوتِ اللَّهِ يتلونَ كتابَ اللَّهِ ، ويتدارسونَهُ فيما بينَهم إلَّا نزلَت عليهِم السَّكينةُ ، وغشِيَتهُمُ الرَّحمةُ ، وحفَّتهُمُ الملائكَةُ ، وذكرَهُمُ اللَّهُ فيمَن عندَهُ

الراوي : أبو هريرة | المحدث : النووي | المصدر : التبيان | الصفحة أو الرقم : 128 | خلاصة حكم المحدث : رواه مسلم وأبو داود بإسناد صحيح على شرط البخاري ومسلم | التخريج : أخرجه مسلم (2699)

অর্থ: যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর ঘর সমূহের কোন একটিতে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তার পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। রহমতের (শামিয়ানা) তাদের আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেশতাগণ তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নৈকট্যধারীদের (ফেরেশতাগণের) মাঝে তাদের স্মরণ (আলোচনা) করেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেবে তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবে না।

তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬০৮

ব্যাখ্যা: এবং তারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং নিজেদের মধ্যে অধ্যয়ন করে) ] এর অর্থ: তারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, এই পাঠটি একজন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো এবং পড়ার এবং ব্যাখ্যা করার জন্য হোক বা অন্য কেউ ব্যাখ্যা করুক বা তারা একত্রিত হোক। যাতে তাদের মধ্যে একজন কুরআনের একটি অংশ পড়ে এবং বাকিরা শোনে । অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত একজন ব্যক্তি পড়ুক, ভাগ করে সম্মিল্লিত করে পড়ুন, সব কিছুই يدرسون এর অন্তর্ভুক্ত হবে। সূত্র: কিতাবু শারহু সুনানে আবি দাউদ লিল ইবাদ-১৭৫/২৪

হাদিস/আসার নং-০২

اقْرَءُوا عَلَى مَوْتَاكُمْ يس. رواه أحمد وأبو داود والنسائي وابن ماجه وابن حبان والحاكم.

অর্থ:  রাসূলুল্লাহ  ইরশাদ করেন- তোমরা তোমাদের মৃতদের সামনে সুরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করো। তাখরিজ: আহমদ হাদীস নং- ১৯৭৮৯আবু দাউদ হাদীস নং- ৩১২১ নাসাঈইবনু মাজাহ

 

নোট:  ইবনে হিব্বান ও হাকিম হাদীসটির সনদ সহীহ বলেছেন

 

হাদিস/আসার-০৩

عن ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ

অর্থ: ইবনে উমর রাযি. বলেন: রাসূল  ইরশাদ করেছেনযখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়তখন তাকে আটকে রেখো নাবরং দ্রুত তাকে কবরস্থ করো। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত করো। তাখরিজ: আল-মুজামুল কাবীর তাবরানীহাদীস নং-১৩৬১৩শুয়াবুল ঈমান বায়হাকীহাদীস নং- ৮৮৫৪

 

নোট:  ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে এর সনদ হাসান বলেছেন

 

হাদিস/আসার-০৪

عن الشعبي، قال: كانت الأنصار يقرؤون عند الميت بسورة البقرة.

অর্থ: শাবী থেকে বর্ণিতআনসার (সাহাবীগণ) মাইয়িতের কাছে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন (অর্থাৎ ভাগ করে সম্মিল্লিতভাবে) । তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস নং- ১০৯৫৩

  

 

হাদিস/আসার-০৫

الأنصار اذا حضروا عند المیت قروٴا سورة البقرة

অর্থ: আনসারীগণ যখন কোনো মায়্যিতের কাছে উপস্থিত হতেনতখন তারা সুরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন৷ (আত-তিবইয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন)

 

উপরোক্ত হাদিস ও আসার থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা পারা ভাগ করে সম্মিল্লিত কুরআন খতম জায়েজ প্রমাণিত হয়।

 

ফকিহদের মতামত:

 

ইমাম ইবনে কুদামা রাহ. সম্মিল্লিত খতম ও  তিলাওয়াতের সওয়াব রেসানির বৈধতার দলীল আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,

وأنه إجماع المسلمين، فإنهم في كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير

এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছে। এতে কেউ কোনো আপত্তি করে নি। সূত্র: আলমুগনী ৩/৫২২


 وقال النووي في التبيان ص: 103: ” فصل في الإدارة بالقرآن : وهو أن يجتمع جماعة يقرأ بعضهم عشرا أو جزءا أو غير ذلك ثم يسكت ويقرأ الآخر من حيث انتهى الأول ثم يقرأ الآخر وهذا جائز حسن وقد سئل مالك رحمه الله تعالى عنه فقال لا بأس به”.

 অর্থাৎ  ইমাম নববি রহ. বলেন, যখন একটি দল একত্রিত হয় এবং তাদের কেউ কেউ দশটি পাঠ করে। অথবা একটি অংশ বা অন্য অংশ, তারপর নীরব থাকুন এবং যেখানে প্রথমটি শেষ হয়েছে সেখান থেকে অন্যটি পাঠ করুন, তারপর শেষটি পাঠ করুন। এটি জায়েজ, উত্তম। ইমাম মালেক রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সমস্যা নেই। সূত্র: আততিবইয়ান-১০৩,  কোরআন পরিচালনার একটি অধ্যায় 


সারকথা হলো, এটি একটি জায়েজ পদ্ধতি বলা যায়। জরুরি মনে করলে বিদআত হবে। তাছাড়া কুরআন তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। খতম মূল কথা নয়, উদ্দেশ্য তেলাওয়াত করা হয়। তাছাড়া খতমের পরে দুআ কবুল হয়। কুরআন তিলাওয়াত করে বা খতম করে দুআ করাও জায়েয আছে৷ হাদীসে এসেছে-


مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فليسأل الله بِهِ فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ أَقوام يقرؤون الْقُرْآنَ يَسْأَلُونَ بِهِ النَّاسَ

অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে সে যেন বিনিময়ে আল্লাহর কাছে কিছু চায়। খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে যারা কুরআন পড়ে বিনিময়ে মানুষের কাছে হাত পাতবে। তাখরিজ: তিরমিযী হাদীস নং- ২৯১৭ইবনু আবী শায়বাহ হাদীস নং- ৩০০০২আহমাদ হাদীস নং- ১৯৮৮৫

 

নোট: আলবানী র. এর সনদ হাসান বলেছেন


 روى الدرا: كانوعن ثابت قال: كان أنس إذا ختم القرآن جمع ولده وأهل بيته، فدعا لهم. أثر صحيح: رواه الدارمي في السنن (2/560)، ورواه الطبراني في الكبير (1/242)، والبيهقي في الشعب (2/368

অর্থাৎ হজরত আনাস রা. কুরআন খতম করলে পরিবারের লোকদের একত্রিত করে দু’আ করতেন।’ তাখরিজ: তাবারানি-১/২৪২; বায়হাকি -২)৩৬৮; সুনানে দারিমি-৩৫১৭


নোট: হাদিস/আসারটির সনদ সহিহ।



والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক