আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৭১: দাফন করার পূর্বে জানাজার পরে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা জায়েজ?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৭৭১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

اسلام عليكم! سوال: الدعاء للميت بعد صلاة الجنازة قبل الدفن جائز ام لا؟ بين بالادلة! 

محمد عبد الحليم، من افريقية الوسطى.

অর্থাৎ দাফনের পূর্বে জানাজা নামাজের পরে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া জায়েজ, না নাজায়েজ। দলিলসহ বর্ণনা করলে ভালো হয়।

তারিখ:  ২২/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আব্দুল হালীম, সেন্ট্রাল আফ্রিকা  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

দাফনের পর দুআর বিষয়ে মতভেদ নেই। তবে জানাযা নামাজের পর দাফনের পূর্বে দুআ মোনাজাত নিয়ে মতভেদ আছে। অধিকাংশ ফুকাহার মতে জায়েজ নেই, বিদআত আর দুএক জনের মতে জায়েজ। যেমন,


وأما الدعاء للميت بالمغفرة ولأهله بالصبر والمثوبة قبل الدفن فقد نص عليه بعض أهل العلم، وذكروا أنه سنة ومنهم الشربيني في مغني المحتاج والغمراوي في السراج الوهاج

অর্থাৎ, দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনা করে দুআ করা, এবং তার স্বজন-পরিজনের জন্য ধৈর্য ধারণ তাওফিক লাভের জন্য প্রার্থনা করা- এজাতীয় দুআ'র বিষয়ে কতক আলেমের সম্মতি পাওয়া গেছে। এবং তারা এও উল্লেখ করেছেন যে, এটি সুন্নাহ। তাদের মাঝে অন্যতম হলেন, আল্লামা শারবিনী যিনি "মুগনিল মুহতাজ" কিতাবে বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। এছাড়া আল্লামা গামরাবী (রাহি.) "আস-সিরাজুল ওয়াহহাজ" কিতাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। দলিল:


وعبد الله ابن سلام رضي الله عنه فاتته الصلاة علي جنازة عمر فلما حضر قال ان سبقتموني با الصلاة عليه فلا تسبقوني بالدعاء

হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা:) আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা:) এর জানাযার নামাজ পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “তোমরা জানাযার নামাজ যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছ, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হয়ো না। তাখরিজ: আল মাবসূত লিস সারাখসী; ২য় জি: ৬৭ পৃষ্ঠা


এ বিষয়ে  সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ফতওয়া বোর্ড ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়েমাকে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে বলা হয়-

الدعاء عبادة من العبادات، والعبادات مبنية على التوقيف، فلا يجوز لأحد أن يتعبد بما لم يشرعه الله. ولم يثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أنه دعا بصحابته على جنازة ما بعد الفراغ من الصلاة عليها، والثابت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يقف على القبر بعد أن يسوى على صاحبه ويقول: استغفروا لأخيكم واسألوا له التثبيت، فإنه الآن يسأل- وبما تقدم يتبين أن الصواب: القول بعدم جواز الدعاء بصفة جماعية بعد الفراغ من الصلاة على الميت، وأن ذلك بدعة-

‘দোয়া অন্যতম ইবাদত। আর ইবাদত দলীলের উপর নির্ভরশীল। অতএব কারো জন্য শরী‘আত বহির্ভূত পন্থায় ইবাদত করা জায়েয হবে না। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয় নি যে, তিনি জানাযার নামাজের পরে সাহাবীদের নিয়ে দোয়া করেছেন। তাঁর থেকে যা সাব্যস্ত হয়েছে তা হল- তাঁর সাহাবীদের কবর সমান করা হলে তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ঈমানের উপর দৃঢ় রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া কর। কারণ এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’। পূর্বের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মাইয়েতের জন্য নামাজ আদায় করার পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা জায়েয না হওয়াই সঠিক। কারণ তা বিদ‘আত’।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৯/১৬, ফতওয়া নং ২২৫১)


দ্বিতীয় কথা হলো, জানাযা নামাজের হাকিকত হলো দুআ অর্থাৎ জানাযাই দুআ। দলিল-

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত,

قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول اذا صليتم علي الميت فاخلصوا له الدعاء

রাসূল (সা:) বলেছেন, যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়বে, তখন তার জন্য খাছ করে দোয়া কর। (আবু দাউদ শরীফ; ২/৪৫৬ পৃষ্ঠা)

 নবীজী ও সাহাবীদের  আমল দ্বারা প্রমাণিত নয়, উপরোক্ত আসারটিতে হজরত ওমর রা. দুআ করার সময় উল্লেখ নেই, তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মাত্র। 


সারকথা হলো,  মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজা নামাজের পর দাফনের পূর্বে দুআ করা জায়েজ নেই অর্থাৎ জমহুর এর মতের উপর  আমল করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক