জিজ্ঞাসা-২৯৭: আসসালামু আলাইকুম। ঈদে মিলাদুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা দিয়েন? তারিখ-০৮/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নুরুল হক সাউদ সুদান থেকে -----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত উপস্থিতি! আমরা সবাই অবগত আছি যে, আজ ১২ রবিউল আউয়াল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩০টি (প্রায়) মুসলিম রাষ্ট্র ১২ রবিউল আউয়ালকে সরকারি বন্ধ ঘোষণা করেছেন। গত ১৫ ফেব্রয়ারি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার ১২ রবিউল আউয়ালকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। (সরকারি-বেসরকারি ভবন-অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে)।
ভূমিকা: হজরত মুহাম্মাদ (ﷺ) –এর আগমন হলো বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ.
অর্থ: আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। সূরা আম্বিয়া- ১০৭
ব্যাখ্যা:
أن الله أرسل نبيه محمدا صلى الله عليه وسلم رحمة لجميع العالم، مؤمنهم وكافرهم. فأما مؤمنهم فإن الله هداه به، وأدخله بالإيمان به، وبالعمل بما جاء من عند الله الجنة. وأما كافرهم فإنه دفع به عنه عاجل البلاء الذي كان ينزل بالأمم المكذّبة رسلها من قبله.
অর্থাৎ নবী কারীম (ﷺ) জগতের সকলের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত। মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকল মাখলুকই কিয়ামত পর্যন্ত এই মহান রহমতের মাধ্যমে উপকৃত হতে থাকবে। মুমিনকে তো আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে হিদায়াত দান করেছেন। তাঁর উপর ঈমান আনা এবং তিনি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে পয়গাম নিয়ে এসেছেন সে অনুযায়ী আমল করার কারণে তাকে জান্নাত দেবেন। আর এই উম্মতের অবিশ্বাসীকে তাঁর কারণে পূর্ববর্তী উম্মতের অবিশ্বাসীর মতো নগদ শাস্তি দেবেন না। সূত্র: তাফসীরে ত্ববারী-১৮ খণ্ড, ৫৫২পৃ.
সংক্ষিপ্ত উল্লেখ যোগ্য ঘটনাবলী:
(ক) জন্ম: ২৯ আগস্ট, ৫৭০ খৃ. মোতাবেক ৮/৯/১২ রবিউল আউয়াল। এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মতভেদ রয়েছে। তবে আমাদের সমাজে ১২ তারিখই প্রসিদ্ধ।
(খ) ৫৬৯ সালে পিতা আবদুল্লাহ'র মৃত্যু।
(গ) ৫৭৬ সালে মাতা আমিনার মৃত্যু।
(ঘ) ১২ বছরে চাচা খাজা আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়া গমন এবং পাদ্রি বুহাইরার সাথে সাক্ষাত।
(ঙ) ১৮/২৫ বয়সে তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠন করেন।
(চ) ৫৯৫ খৃ. খাদিজার (রা.) সাথে বিয়ে ।
(ছ) ৬০৫ খৃ. ৩৫ বছর বয়সে কাবা নির্মাণ করেন।
(জ) ৬১০ খৃ. ওহি নাজিল শুরু হয় অর্থৎ নবুয়ত লাভ করেন।
(ঝ) ৬২২ খৃ. হিজরত করেন।
(ঞ) ১৫ মার্চ ৬২৪ খৃ. বা ২ হিজরি ১৭ রমজান বদর যুদ্ধ।
(ত) ২৩ মার্চ ৬২৫ খৃ, বা ৩ হিজরি উহুদ যুদ্ধ।
(থ) ৬২৭ খৃ. মোতাবেক ৫ হিজরি খন্দক যুদ্ধ।
(দ) হুদাইবিয়ার সন্ধি ৬২৮ খৃ. ,৬ হিজরি।
(ধ) খায়বার বিজয়-৬২৮ খৃ., ৬হি.
(ণ) মুতার যুদ্ধ-৬২৯ খৃ.,৭ হি.
(ট) মক্কা বিজয়-৬৩০ খৃ. ১১ ডিসেম্বর ৮ হিজরি
(ঠ) হুসাইন-৬৩০ খৃ.
(ন) মৃত্যু- ৮ জুন ৬৩২ খৃ. মোকাবেক ১২ রবিউল আউয়াল ১১ হিজরি।
(প) চারবার বক্ষ বিদারণ: (১) চার বছর বয়সে (২) দশ বছর বয়সে (৩) চল্লিশ বছর বয়সে ও (৪) ৫৩ বছর বয়সে মিরাজ রজনিতে।
উম্মতের জন্য তার দয়ামায়া:
হাদিস নং-০১
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: تَلَا قَوْلَ اللهِ عَزّ وَجَلّ فِي إِبْرَاهِيمَ: رَبِّ اِنَّهُنَّ اَضْلَلْنَ كَثِیْرًا مِّنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِیْ فَاِنَّهٗ مِنِّیْ، وَقَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السّلَامُ: اِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَاِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَ اِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَاِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: اللهُمّ أُمّتِي أُمّتِي، وَبَكَى، فَقَالَ اللهُ عَزّ وَجَلّ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمّدٍ، وَرَبّكَ أَعْلَمُ، فَسَلْهُ مَا يُبْكِيكَ؟ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصّلَاةُ وَالسّلَامُ، فَسَأَلَهُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِمَا قَالَ، وَهُوَ أَعْلَمُ، فَقَالَ اللهُ: يَا جِبْرِيلُ، اذْهَبْ إِلَى مُحَمّدٍ، فَقُلْ: إِنّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمّتِكَ، وَلَا نَسُوءُكَ.
অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. বলেছেন নবী কারীম (ﷺ) এই আয়াত পাঠ করলেন, যাতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ আছে : “হে আমার রব! এসব প্রতীমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত হবে।” (আর সেই আয়াতও পড়লেন যেখানে আছে) (তরজমা) “(এবং ঈসা আলাইহিস সালাম বললেন,) যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয়ই আপনার ক্ষমতাও পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ।” অতপর নবীজী (ﷺ) দু’হাত তুলে কেঁদে কেঁদে বললেন,
اللهُمّ أُمّتِي أُمّتِي.
‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’ তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর সে কেন কাঁদে? যদিও তোমার রবই ভালো জানেন। অতপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম নবীজীর কাছে এসে তা জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সব খুলে বললেন। যদিও আল্লাহ তাআলা সব জানেন। অতপর আল্লাহ তাআলা বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে বলো, আমি অচিরেই তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, ব্যথিত করব না। তাখরিজ: মুসলিম-২০২
হাদিস নং-০২
لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ يَدْعُو بِهَا فَيُسْتَجَابُ لَهُ، فَيُؤْتَاهَا، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থাৎ, নবী কারীম (ﷺ)বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে এমন একটি বিশেষ দুআর অধিকার দেয়া হয়েছে, যা কবুল করা হবে। তারা (দুনিয়াতে) সে দুআ করেছেন এবং তা কবুলও করা হয়েছে। আর আমি আমার দুআ কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের উদ্দেশ্যে মূলতবী রেখেছি। তাখরিজ: মুসলিম-১৯৯
হাদিস নং-০৩
مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا، فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا، وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا، وَأَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ، وَأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدِي.
অর্থাৎ, আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত, যে আগুন জ্বালালো, ফলে ফড়িংদল পতঙ্গরাজি তাতে পড়তে লাগল। আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। অনুরূপ আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমর ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ। তাখরিজ: মুসলিম-২২৮৫
প্রাণের চেয়েও প্রিয় রাসূল (ﷺ): এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَلنَّبِیُّ اَوۡلٰی بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ অর্থ: নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। সূরা আহজাব-০৬
হযরত আনাস রা. বলেছেন
قَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। তাখরিজ: বুখারী-১৫
নবি (ﷺ)-এর প্রতি সাহাবিদের অকৃম-অদম্য ভালবাসা:
আসার-০১
হজরত আবু সুফিয়ান রা. ইসলাম গ্রহণের আগেই এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন,
ما رأيت من الناس أحدا يحب أحدا كحب أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم محمدا
অর্থাৎ, আমি কাউকে এতটা ভালবাসতে দেখিনি, মুহাম্মদ (ﷺ)-কে তাঁর সঙ্গীরা যতটা ভালবাসে। সূত্র: সীরাতে ইবনে হিশাম ২/১৭২; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৬৫
আসার-০২
এমনিভাবে হযরত উরওয়া ইবনে মাসঊদ রা. ইসলাম গ্রহণের আগে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তিনি নিজ কওমের নিকট এই অনুভূতি পেশ করেছিলেন,
وَاللهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنّجَاشِيِّ، وَاللهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ مُحَمّدًا، وَاللهِ إِنْ تَنَخّمَ نُخَامَةً إِلّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ.
অর্থাৎ, আমি অনেক রাজা বাদশাহদের কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়সার কিসরা ও নাজাশীর কাছেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনি তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুথু ফেললেই তাদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারায় ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদেরকে আদেশ করেন তখন তারা তাঁর আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি অযু করেন তখন তাঁর ওযুতে ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়। তাখরিজ: বুখারি-২৫৮১
আসার-০৩
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. মৃত্যুশয্যায় আয়েশা সিদ্দীকা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
فِي أَيِّ يَوْمٍ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ؟ قَالَتْ: يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، قَالَ: فَأَيّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالَتْ: يَوْمُ الِاثْنَيْنِ، قَالَ: أَرْجُو فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللّيْلِ.
নবীজি (ﷺ)কোন্ দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা রা. জানালেন, সোমবার। তিনি বললেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বললেন, হায় যদি আমার মওত রাতের আগেই হতো! তাখরিজ: বুখারি- ১৩৮৭
আসার-০৪
হজরত জাবের রা. বলেন, উহুদ যুদ্ধের সময় এই উহুদ যুদ্ধেরই ভয়াবহ মুহূর্তে আরেক সাহাবী হযরত আবু তালহা রা. নিজে ঢাল হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন। একপর্যায়ে যখন নবীজী উঁকি দিয়ে দেখতে উদ্যত হলেন তখন আবু তালহা রা. বলে উঠলেন,
يَا نَبِيّ اللهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، لاَ تُشْرِفْ يُصِيبُكَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ القَوْمِ، نَحْرِي دُونَ نَحْرِكَ.
ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার মা-বাবা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি উঁকি দেবেন না; পাছে আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগে। আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত। তাখরিজ: বুখারি-৩৮১১
রাসূল র-এর সৌন্দর্য: عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي لَيْلَةٍ إِضْحِيَانٍ فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِلَى الْقَمَرِ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ فَإِذَا هُوَ أَحْسَنُ عِنْدِي مِنَ الْقَمَرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি চাঁদনি রাতে নবী (সা.) -কে দেখলাম। অতঃপর একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে তাকাতাম আর একবার চাঁদের দিকে। সে সময় তিনি (ﷺ) লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তখন তাকে আমার কাছে চাঁদের তুলনায় অধিকতর সুন্দর মনে হলো। তাখরিজ: তিরমিজি-২৮১১; দারিমি-৫৭
রাসূল (ﷺ)-এর চুল মুবারক:
لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَالْحَلّاقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلّا فِي يَدِ رَجُلٍ.
অর্থ: হযরত আনাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখেছি, তাঁর চুল মুবারক মুন্ডানো করা হচ্ছে আর তাঁর সাহাবীরা তাঁকে ঘিরে আছে। তাঁরা চাইছিলেন তাঁর একটি চুলও যেন মাটিতে না পড়ে। বরং কারো না কারো হাতেই পড়ে। তাখরিজ: মুসলিম-২৩২৫
রাসূল (ﷺ)-এর শরীরের সুগন্ধি :
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَزْهَرَ اللَّوْنِ كَانَ عَرَقُهُ اللُّؤْلُؤُ إِذَا مَشَى تَكَفَّأَ وَمَا مَسَسْتُ دِيبَاجَةً وَلَا حَرِيرًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا شمَمتُ مسكاً وَلَا عَنْبَرَةً أَطْيَبَ مِنْ رَائِحَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গৌরবর্ণের ছিলেন। তাঁর ঘর্ম ছিল মুক্তার মতো। হাঁটার সময় তিনি (সা.) সম্মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন এবং আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাতের তালুর তুলনায় অধিকতর নরম কোন রেশম কিংবা কোন গরদ স্পর্শ করিনি। আর নবী (ﷺ) -এর শরীরের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ কস্তুরী কিংবা মিশকে আম্বার আমি কখনো শুকিনি। তাখরিজ: বুখারী-৫৭৮৭; মুসলিম
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَسْلُكْ طَرِيقًا فَيَتْبَعُهُ أَحَدٌ إِلَّا عرفَ أَنه قد سلكه من طيب عرقه - أَوْ قَالَ: مِنْ رِيحِ عَرَقِهِ - رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
জাবির (রা.)হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) যে পথ দিয়ে চলে যেতেন, পরে কেউ সে পথে গেলে সে সহজে বুঝতে পারত যে, নবী (ﷺ) উক্ত পথে গমন করেছেন। আর তা তাঁর গায়ের সুগন্ধির কারণে অথবা (রাবী বলেছেন) তাঁর ঘামের সুগন্ধির কারণে। তাখরিজ: মুসলিম-২৩৩০ তিরমিজি-৩৬৩৭
রাসূল (ﷺ) এর ঘাম মুবারক:
عَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟» قَالَتْ: عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا قَالَ: «أصبت» . مُتَّفق عَلَيْهِ
হযরত উম্মে সুলাইমান (রা.) বলেন, হুযুরে আকরাম (ﷺ) দ্বিপ্রহরে আমাদের ঘরে তশরীফ এনে বিশ্রাম নিতেন । বিশ্রামকালে তাঁর দেহ মোবারক থেকে ঘাম মুবারক নির্গত হয়ে বিছানা ভিজে যেত।আর আমি সে ঘাম মুবারক একত্রিত করতাম, একদা নবীজী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-
হে উম্মে সুলাইমান তুমি কি করছো ? আমি বললাম-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনার পবিত্র ঘাম মুবারক হতে আমাদের চেহারা বরকত হাসিল করবে।আমাদের কাছে যত সুগন্ধি রয়েছে তন্মধ্যে অধিক সুগন্ধি হচ্ছে আঁপনার ঘাম মুবারক।একথা শুনে নবীজী জবাব দিলেন,হে উম্মে সুলাইমান তুমি সত্যিই বলেছ। তাখরিজ: মুসলিম-৫৮৪৯
অমুসলিম মনীষীর দৃষ্টিতে মুহাম্মাদ(ﷺ) -এর সম্মান-মর্যাদা : পৃথিবীর অসংখ্য খ্যাতনামা অমুসলিম বিজ্ঞানী-মনীষীগণ মহানবি (ﷺ) সম্পর্কে প্রশংসার বাণী উচ্চারণ করেছেন। তারমধ্যে কয়েকজনের বাণী উল্লেখ করলাম:
(১) Annie Besant in ‘The Life and Teachings of Mohammad,’ Madras, 1932. ‘যে কেউ আরবের মহান নবির জীবন এবং চরিত্র অধ্যয়ন করেন তার হৃদয়ে মহান নবির প্রতি শ্রদ্ধার উদ্রেক না হয়ে পারে না,------- তথাপি যখনই আমি মুহাম্মদের জীবনি পুনরায় পাঠ করি প্রতিবারই আরবের মহান শিক্ষকের প্রতি আমার মনে মুগ্ধতা ও শ্রদ্ধার নতুন ভাব জাগ্রত হয়।’
(২) ইংরেজ কবি জন কিটস বলেন, ‘পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবি মুহাম্মাদ (ﷺ).। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।’
বিশ্বনবিকে নিয়ে অমুসলিমের লেখা বইসমূহ : এই পৃথিবীতে বিশ্বমানবতার কাণ্ডারি আখেরি নবি হজরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে নিয়ে, তাঁর সম্পর্কে বই রচিত হয়েছে, সমকক্ষ আর কেউ নেই। শুধু মুসলিম লেখকগণই নয় বহু অমুসলিম লেখক-গবেষক, কবি-সাহিত্যিক, রাজনৈতিক-বিজ্ঞানীগণ তাঁর সুমহান আদর্শ, মহত্ব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সম্মান-ইজ্জত বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। নিম্নে কয়েকটি নাম উল্লেখ করা হল :
১.দ্য হান্ড্রেড : লেখক, মাইকেল এইচ হার্ট;১৯৭৮ সালে প্রকাশিত, ১৯৯২ সালে পূণর্মূদ্রিত।
২.তোমাকে ভালবাসি হে নবি : লেখক, গুরুদত্ত সিং, অনুবাদ মাও.আবু তাহের মিসবাহ
৩.দ্য ফাস্ট মুসলিম : দ্য স্টোরি অব মুহাম্মাদ, লেখক; দ্য লেসলি হাজলেটন; প্রকাশ ২০১৩
৪.ইন সার্চ অব মুহাম্মাদ(মুহাম্মাদের খোঁজে): লেখক,ক্লিন্টন বেনেট
বিস্তারিত দেখুন, মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য-১০৫ পৃষ্ঠা; লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব) ধর্ম শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শেষ কথা: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। তাখরিজ: তিরমিজি-২৭২৬
আমরা প্রিয় রাসূল (ﷺ) কে মনের ভালবাসার সাথে আমলের ভালবাসাও প্রকাশ করবো। রুওয়াইম ইবনে আহমাদ আল বাগদাদী রাহ. মহব্বতকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন,
المحبة الموافقة في جميع الأحوال (كلمة الإخلاص للحافظ ابن رجب ص৩২)
অর্থাৎ, ভালোবাসা হল প্রেমাষ্পদের সাথে সর্বাবস্থায় একাত্ম থাকা। সূত্র: কালেমাতুল ইখলাস ৩২ পৃ.হাফেজ ইবনে রজব রহ.
হাকীম মাহমূদ ওয়াররাক রাহ. বলেছেন
لو كان حبك صادقا لأطعته
إن المحب لمن يحب مطيع
অর্থাৎ, যদি তোমার প্রেম খাঁটি হতো তবে তো তুমি তার অনুগত হতে। কারণ প্রেমিক তো প্রেমাষ্পদের অনুগত থাকে। সূত্র: শরহুয যুরকানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ, পৃ. ১১৮
والله اعلم بالصواب
সংকলনে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক