আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৮২: মিকদাদ নামের অর্থ কী?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৭৮২: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।  মেকদাদ নামের ভাতিজার নামটি আমিই রেখেছিলাম,এর অর্থ টা জানতে চাই।আবুসুমাইয়া শাহজাহান শেখ।

তারিখ:  ২৬/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আবু সুমাইয়া শাহজাহান শেখ থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

"মিকদাদ" (مِقْداَد) একটি আরবী শব্দ। যা مِفْعَال এর ওজনে اسم الآلة এর সীগাহ বা উপকরণবাচক শব্দকাঠামো দিয়ে তৈরী।

শব্দটি قَدّ ক্রিয়ামূল থেকে নির্গত। মাসদারটির অর্থ হলো- কর্তন করা, সমূলে বিনাশ করা, দ্বিখণ্ডিত করা, ছেদ ঘটানো, ফালিফালি করে কাটা ইত্যাদি। 

আল কুরআনে ইউসুফ (আ.) এর ঘটনা বিবরণীতে এই ক্রিয়াটির প্রয়োগ হয়েছে।



فَلَمَّا رَاٰ قَمِیۡصَہٗ قُدَّ مِنۡ دُبُرٍ قَالَ اِنَّہٗ مِنۡ کَیۡدِکُنَّ ؕ اِنَّ کَیۡدَکُنَّ عَظِیۡمٌ ﴿۲۸﴾ 

অর্থাৎ, মহিলার স্বামী যখন ইউসুফের জামাটি পেছন থেকে ছেঁড়া দেখল তখন বলল, “(হে নারীরা!) নিশ্চয়ই এটা তোমাদের চক্রান্ত। তোমাদের চক্রান্ত তো বড়ই ভয়ানক।” (সূরা ইউসুফ - ২৮)


 সেই মোতাবেক উৎপত্তিগত অর্থ অনুসারে "মিকদাদ" শব্দের অর্থ হবে- তরবারী, ছেদনযন্ত্র, দ্বিখন্ডনযন্ত্র, কর্তনকারী,

আর উপমাগত অর্থ হবে, অকুতোভয় বীর সেনানী, অত্যন্ত দুঃসাহসী ইত্যাদি।


উল্লেখ্য যে, "মিকদাদ বিন আসওয়াদ" নামক একজন সাহাবী ছিলেন। ইসলামের সূচনালগ্নেই তিনি ইমান আনয়ন করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন অত্যন্ত প্রিয়ভাজন অকুতোভয় বীর সেনানী হিসেবে প্রায় সব কয়টি গাযওয়াতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচাতো বোনকে তার হাতে পাত্রস্থ করেন। বদরের যুদ্ধযাত্রার পূর্বমূহুর্তে তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে আবেগঘন ভাষায় তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। যার ফলে তিনি রাসূলের হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন, মুসলমানদের নজর কেড়েছিলেন, পাশাপাশি ইতিহাসের সোনার পাতায়ও স্থান করে নেন।

সেই প্রেরণাদায়ী ভাষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযি.) বলেন, 

 عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ شَهِدْتُ مِنَ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ مَشْهَدًا لَأَنْ أَكُوْنَ صَاحِبَهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا عُدِلَ بِهِ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَدْعُوْ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ فَقَالَ لَا نَقُوْلُ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى {اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا} وَلَكِنَّا نُقَاتِلُ عَنْ يَمِيْنِكَ وَعَنْ شِمَالِكَ وَبَيْنَ يَدَيْكَ وَخَلْفَكَ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَشْرَقَ وَجْهُهُ وَسَرَّهُ يَعْنِيْ قَوْلَهُ

ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদের এমন একটি বিষয় দেখেছি যা আমি করলে তা দুনিয়ার সব কিছুর তুলনায় আমার নিকট প্রিয় হত। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু’আ করছিলেন। এতে মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ (রাঃ) বললেন, মূসা (আঃ) এর কাওম যেমন বলেছিল যে, “তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর”- (সূরা আল-মায়িদাহ ৫/২৪)। আমরা তেমন বলব না, বরং আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে, পিছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করব। ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং তার কথা তাঁকে খুব আনন্দিত করল। (সহিহ বুখারী, হাদিস- ৩৯৫২)


সারকথা হলো, 

"মিকদাদ" একটি আরবী শব্দ, যা খুবই বরকতপূর্ণ একটি নাম। আল্লাহর রাসূলের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন একজন সাহাবীর নাম ছিল, মিকদাদ বিন আমর (রাযি.)। শব্দটির অর্থ হলো- ছেদনযন্ত্র, কর্তনকারী, তেজোদ্দীপ্ত, তরবারী, সাহসী, ইত্যাদি।


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক