জিজ্ঞাসা-১২৭৬৮:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ مَسَحَ ظَهْرَهُ فَسَقَطَ مِنْ ظَهْرِهِ كُلُّ نَسَمَةٍ هُوَ خَالِقُهَا مِنْ ذُرِّيَّتِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَجَعَلَ بَيْنَ عَيْنَىْ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ وَبِيصًا مِنْ نُورٍ ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى آدَمَ فَقَالَ أَىْ رَبِّ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ ذُرِّيَّتُكَ فَرَأَى رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَعْجَبَهُ وَبِيصُ مَا بَيْنَ عَيْنَيْهِ فَقَالَ أَىْ رَبِّ مَنْ هَذَا فَقَالَ هَذَا رَجُلٌ مِنْ آخِرِ الأُمَمِ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ يُقَالُ لَهُ دَاوُدُ . فَقَالَ رَبِّ كَمْ جَعَلْتَ عُمْرَهُ قَالَ سِتِّينَ سَنَةً قَالَ أَىْ رَبِّ زِدْهُ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعِينَ سَنَةً . فَلَمَّا انْقَضَى عُمْرُ آدَمَ جَاءَهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ أَوَلَمْ يَبْقَ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعُونَ سَنَةً قَالَ أَوَلَمْ تُعْطِهَا ابْنَكَ دَاوُدَ قَالَ فَجَحَدَ آدَمُ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَنَسِيَ آدَمُ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَخَطِئَ آدَمُ فَخَطِئَتْ ذُرِّيَّتُهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তার পিঠ মাসেহ করলেন। এতে তাঁর পিঠ থেকে তাঁর সমস্ত সন্তান বের হলো, যাদের তিনি ক্বিয়ামাত পর্যন্ত সৃষ্টি করবেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের দুই চোখের মাঝখানে নূরের ঔজ্জল্য সৃষ্টি করলেন, অতঃপর তাদেরকে আদম (আঃ) এর সামনে পেশ করলেন। আদম (আঃ) বললেনঃ হে প্রভু! এরা কারা? আল্লাহ বললেন, এরা তোমার সন্তান। আদমের দৃষ্টি তার সন্তানদের একজনের উপর পড়লো যাঁর দুই চোখের মাঝখানের ঔজ্জল্যে তিনি বিস্মিত হলেন। তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! ইনি কে? আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ শেষ যামানার উম্মাতের অন্তর্গত তোমার সন্তানদের একজন। তার নাম দাউদ (‘আঃ)। আদম (‘আঃ) বললেনঃ হে আমার রব! আপনি তাঁর বয়স কত নির্ধারণ করেছেন? আল্লাহ বললেনঃ ৬০ বছর। আদম (‘আঃ) বললেনঃ পরোয়ারদিগার! আমার বয়স থেকে ৪০ বছর (কেটে) তাকে দিন। আদম (‘আঃ) এর বয়স শেষ হয়ে গেলে তাঁর নিকট মালাকুত মউত _ আযরাইল) এসে হাযির হন। আদম (‘আঃ) বললেনঃ আমার বয়সের কি আরো ৪০ বছর অবশিষ্ট নেই? তিনি বললেনঃ আপনি কি আপনার সন্তান দাউদকে দান করেননি? রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আদম (‘আঃ) অস্বীকার করলেন, তাই তার সন্তানরাও অস্বীকার করে থাকে। আদম (‘আঃ) ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তাঁর সন্তানদেরও ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকে। তাখরিজ: ৩০৭৬
এই হাদিসের বর্ণনা মোতাবেক সে সময়ই কী হযরত আদম আলাই সালাম এর জান কবজ করা হয়েছিল ? নাকি ৪০ বছর পরে করা হয়েছিল। জানতে চাই।
তারিখ: ১৯/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মনজুরুর রহমান থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আল্লামা ইবনে কাসির রহ. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে মুসনাদে আহমদ, সহিহ ইবনে হিব্বান ও ইবনে খুজাইমা বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত আদম আলাইহিস সালাম কে আল্লাহ তাআলা ১০০০ হাজার বছর পূর্ণ করার পর মৃত্যু দান করেন এবং হজরত দাউদ আলাইহিস সালামও ১০০ বছর হায়াত পেয়েছিলেন। দলিল:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن أول من جحد آدم قالها ثلاث مرات إن الله عز وجل لما خلقه مسح ظهره فأخرج ذريته فعرضهم عليه فرأى فيهم رجلا يزهر ، فقال : أي رب زد في عمره . قال : لا إلا أن تزيده أنت من عمرك . فزاده أربعين سنة من عمره فكتب الله تعالى عليه كتابا وأشهد عليه الملائكة ، فلما أراد أن يقبض روحه ، قال : إنه بقي من أجلي أربعون سنة . فقيل له : إنك قد جعلتها لابنك داود . قال : فجحد . قال : فأخرج الله الكتاب ، وأقام عليه البينة فأتمها لداود مائة سنة ، وأتم لآدم عمره ألف سنة
অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, " সর্বপ্রথম অস্বীকারকারী হলেন, আদম।" তিনি এই কথাটি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, " যখন আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি তার পৃষ্ঠদেশে স্পর্শ করলেন / মৃদু বুলিয়ে দিলেন। সেখান থেকে তার পরবর্তী বংশধরদের বের করে আনলেন।এবং আদমের সামনে তাদেরকে উপস্থাপন করলেন। তখন তিনি দেখতে পেলেন, তাঁর অজস্র বংশধারার মাঝে একজনকে তার ঔজ্জ্বল্যের কারণে সবার চাইতে একটু আলাদা লাগছিলো। তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরজ করে বললেন, "হে আমার প্রতিপালক! তার হায়াতকে বৃদ্ধি করে দিন।" তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, "না, তা হবেনা। তবে তুমি চাইলে তোমার নিজের হায়াতের জন্য বরাদ্দ সময়সীমা হতে কিছু অংশ তাকে দিয়ে তার হায়াত বৃদ্ধি করে নিতে পারবে।" তখন আদম ( আ.) নিজের বয়সের সময়সীমা হতে চল্লিশ বছর তার হায়াতে দান করে দিলেন। তখন আল্লাহ এ বিষয়টি কিতাবে লিখে রাখলেন। এবং ফিরিশতাদেরকে এবিষয়ে সাক্ষ্যও রাখলেন।
যখন আদমের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো, তখন তাঁর রূহ কবয করতে গেলে তিনি বলে উঠলেন, " আমার তো এখনো চল্লিশ বছর হায়াত অবশিষ্ট আছে! তখন তাঁকে বলা হলো, আপনি তো আপনার হায়াতের সেই অংশটুকু আপনার সন্তান দাঊদকে দিয়ে ফেলেছেন। তখন তিনি সেই বিষয়টি অস্বীকার করে বসলেন। তখন আল্লাহ পূর্বে লিখিত কিতাবখানা বের করে তার এই অস্বীকৃতির বিরুদ্ধে প্রমাণ বেশ করেন। তবে তিনি দাঊদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একশত বছর হায়াত বরাদ্দ করেন। এবং আদম (আ.) এর জন্যও পরিপূর্ণ একহাজার বছর হায়াত বরাদ্দ করে দেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-২৩১৭
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত হাদিসের বর্ণনা মোতাবেক সে সময়ই হযরত আদম আলাই সালাম এর জান কবজ করা হয়নি। ৪০ বছর পরে তথা ১০০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর করা হয়েছিল। সূত্র: আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-১ খণ্ড,৯৯ পৃষ্ঠা
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক