শুক্রবার বিশেষ আমলের আহবান
আমল নং-০১ (দুআ)
إنَّ في الجُمُعَةِ لَساعَةً، لا يُوافِقُها مُسْلِمٌ، يَسْأَلُ اللَّهَ فيها خَيْرًا، إلَّا أعْطاهُ إيَّاهُ، قالَ: وهي ساعَةٌ خَفِيفَةٌ. وفي رواية: ولَمْ يَقُلْ: وهي ساعَةٌ خَفِيفَةٌ.
الراوي : أبو هريرة | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 852 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অর্থ: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। মুসলিম-৮৫২; আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ " الْتَمِسُوا السَّاعَةَ الَّتِي تُرْجَى فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ إِلَى غَيْبُوبَةِ الشَّمْسِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
আবদুল্লাহ ইবনুল সাববাহ আল-হাশিমী আল-আত্তার (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দুআ কবূলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ কর। - মিশকাত ১৩৬০, তালীকুর রাগীব ১/২৫১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৮৯
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই সনদে হাদীসটি গারীব। সাহাবী এবং পরবর্তী যুগের কতিপয় আলিমের অভিমত হল, এই দুআ করার মুহূর্তটি বাদ আসর থেকে সূর্যান্ত সময় আশা করা যায়। ইমাম আহমদ ও ইসহাক (রহঃ)-এর অভিমত এ-ই। ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেনঃ দুআ করার মুহূর্তটি সম্পর্কে অধিকাংশ হাদীসই বাদ আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের কথা উল্লেখিত হয়েছে। তবে যাওয়াল বা সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার পর থেকেও তা আশা করা যায়।
دَّثَنَا زِيَادُ بْنُ أَيُّوبَ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ الْمُزَنِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ فِي الْجُمُعَةِ سَاعَةً لاَ يَسْأَلُ اللَّهَ الْعَبْدُ فِيهَا شَيْئًا إِلاَّ آتَاهُ اللَّهُ إِيَّاهُ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَّةُ سَاعَةٍ هِيَ قَالَ " حِينَ تُقَامُ الصَّلاَةُ إِلَى الاِنْصِرَافِ مِنْهَا " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي مُوسَى وَأَبِي ذَرٍّ وَسَلْمَانَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلاَمٍ وَأَبِي لُبَابَةَ وَسَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ وَأَبِي أُمَامَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
যিয়াদ ইবনু আয়্যূব আল-বাগদাদী (রহঃ) ..... আমর ইবনু আওফ আল-মুযানী থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জুমুআর দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে। কোন বান্দা যদি সেই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে কিছু দুআ করে, তবে অবশ্যই তিনি তার দুআ বাস্তবায়িত করেন। সাহাবীগণ আরয করলেন : হে আল্লাহর রাসূল! কোনটি এই মুহূর্ত? তিনি বললেন, জুমুআর ইকামতে সালাত (নামায/নামাজ) থেকে নিয়ে তা শেষ হওয়া পর্যন্ত। ইবনু মাজাহ ১৩৮৪, তিরমিজী- ৪৯০
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির সনদ হাসান-গারীব।
নোট: দুই খুতবার মাঝেও সেই মূহুতের কথা মুহাদ্দিসে কেরামগণ বলেছেন।
আমল নং-০২ (সলাত)
“হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” সুরা বাকারা : ১৫৩
হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) এর অভ্যাস ছিল, যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন সামনে আসত, তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আবু দাউদ : ১৩২১
রাসুল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তির আল্লাহর নিকট অথবা কোনো মানুষের নিকট কোনো প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন উত্তমরূপে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেয়। তারপর যেন সে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী করিম (সা.) এর প্রতি দরুদ পাঠ করে। তিরমিজি : ৪৮১
আমল নং-০৩ (এস্তেগফার)
“হে মুমিনগণ তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে।” সূরা নূর-৩১
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায় (ক্ষমা চাওয়া নিজের প্রতি আবশ্যক করে) আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে মুক্তি দেন. আর তাকে রিযিক দান করেন যেখানে হত সে কখন ও ভাবেনি। মুসনাদে আহমদ-২২৩৪; সুনানে আবু দাউদ-১৫১৮, কিতাবুস সালাত; ইবনে মাজাহ-৩৮১৯
একটি ঘটনা:
প্রখ্যাত তাবেয়ী হাসান বাসরি রহ. একদিন তাঁর মজলিসে বসে আছেন। এক লোক এসে নিজের অভাব অনটনের কথা বলল তাঁর কাছে।
হাসান বাসরি বললেন, 'বেশি বেশি ইস্তিগফার করো।'
কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমার ফসলী জমি শুকিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির অভাবে। আমাকে একটা আমল বাতলে দিন।
তাকেও তিনি বললেন, বেশি বেশি ইস্তিগফার করো।
কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলল, অনেক চেষ্টা করেও আমার সন্তান হচ্ছে না। কী করা যায় হুজুর?
তাকেও বললেন, বেশি বেশি ইস্তিগফার করো।
এরপর চতুর্থবার, এক লোক এসে বলল, দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে। এখন আমরা কী করতে পারি?
হাসান বাসরি রহ. বললেন, বেশি বেশি ইস্তিগফার করো।
পাশেই ছিল হাসান বাসরির এক শিষ্য। এতক্ষণ সে চারজনকে দেওয়া উস্তাদের সমাধান শুনেছিল। প্রত্যেককে একই সমাধান দিতে দেখে সে অবাক। জিজ্ঞেস করল, 'শায়খ, আপনি ভিন্ন ভিন্ন চারটি সমস্যার একটি মাত্র সমাধান দিলেন যে? এর রহস্য কী?'
হাসান বাসরি রহ. বললেন: 'এই সমাধান তো আমি দিই নি। খোদ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।' এরপর তিনি এ আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলেন:
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارًا
يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا
وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوٰلٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنّٰتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهٰرًا
"তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।" [সূরা নুহ,আয়াত ১০-১২]
আমি যা বলেছি তা কুরআনের কথা বলেছি। মনগড়া নয়। ইস্তেগফার এমন একটা আমল যা মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে৷
সূত্র: মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস-১১৬ পৃষ্ঠা হতে সংকলিত। লেখক, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব), ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী