আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৩৯: কালেমা পড়লেই বেহেশতে যাবে কিন্তু আত্নহত‍্যা কারীর জান্নাত হারাম। সহীহ বুখারীর বর্ণনা। সঠিক ব‍্যখ‍্যা কামনা করছি।

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-২৩৯: মুহতারাম আল্লাহ্ আপনাকে  তারাক্কি দান করুন,  প্রশ্ন  হলো - কালেমা  পড়লেই বেহেশতে  যাবে  কিন্তু আত্নহত‍্যা কারীর  জান্নাত হারাম।  সহীহ বুখারীর বর্ণনা। সঠিক  ব‍্যখ‍্যা কামনা করছি।   তারিখ-৩০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 মাওলানা আতিক বরিশাল থেকে---------------

জবাব

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

হামদ ও সানার পরকথা এই যে আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। যা আমাদের সাধরণ মানুষের একটি কৌতুহল। যাইহোক আপনার প্রশ্ন সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি

প্রশ্ন:    ক। কবিরা গুনাহ করলে কি মুমিন কাফের হয়?

উত্তর:   ক। না,  মুমিন যত বড়ই পাপ করুক না কেন কাফের হয় না। দলিল:

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ  

অর্থ: মুমিনের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেযতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার  করবে। নিশ্চয়ই  আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা হুজুরাত-০৯

 পরস্পর দ্বন্দ্বরত দুই দলের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যেদ্বন্দ্ব সংঘাত লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানদার আখ্যা দিয়েছেন। তাই এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে আলহে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মত পেশ করেছেন যেযত বড় পাপই  করুকতাতে মুমিন বে-ঈমান হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে খারিজি ও মুতাজিলাদের একাংশের মতে  কবিরা গুনাহ করলে ঈমান থাকে না।

হজরত আবু বকর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,  একদিন নবি কারিম () হাসান-কে নিয়ে বের হলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বারে আরোহণ করলেন। অত্ঃপর বললেনআমার এ ছেলেটি সরদার। নিশ্চয়ই  আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে বিবাদমান দুদল মুসলমানের মাঝে সমঝোতা মীমাংসা করিয়ে দিবেন। তাখরিজ : বুখারি-৩৬২৯;আবু দাউদ-৪৬৬২;তিরমিজি-৩৭৭৩;নাসায়ি-১৪১০;আহমদ-২০৩৯

 এ হাদিসেও প্রিয় নবি () বিবাদমান দুদলকে মুসলমানরূপে আখ্যা দিয়েছেন। পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার পরও মুমিন নামটি মুছে যায়নিবরং তারা সাংবিধানিক অর্থে মুমিন ছিলেন। যদি তারা কাফের হয়ে যেত কক্ষনোও তাদের মুমিন নামে ডাকা হত না। আর তাদের মাঝে সংশোধনের হুকুম করা হত না। অন্য এক হাদিসে  আরও স্পষ্টভাবে এসেছে- আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল ()  বলেছেনতিনটি বিষয় ঈমানের বুনিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। (১) যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমা পড়বেতার প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবেকোন গুনাহর দরুন তাকে কাফের মনে করবে না এবং কোন আমলের দরুন তাকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিবে না। (২) জিহাদ- যেদিন হতে আল্লাহ আমাকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন সেদিন হতে এই উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা দাজালের সাথে জিহাদ করতে থাকবেকোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার বা কোন সুবিচারকের সুবিচার জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাকদীরে বিশ্বাস করা। তাখরিজ : মিশকাতুল মাছাবিহ-কাবীরা গোনাহ ও মুনাফিকীর নিদর্শন অধ্যায়

সুতরাং প্রমাণিত হল মুমিন যত বড়ই গুনাহ করুক না কেসে কাফের হয় না।(তবে গুনাহ ঈমানকে দুর্বল করে এবং কিছু কিছু গুনাহ কুফরির দিকে ধাবিত করে। প্রত্যেক মুসলিমকে এ বিষয়ে আরও সতর্কতাবলম্বন করা উচিত)

সূত্র: মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা,৭৮ পৃষ্ঠালেখকমাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক        

                

প্রশ্ন:    খ।        যে ব্যক্তি তাওহিদের ওপর মৃত্যবরণ করবে এবং শিরক না করলে জান্নাতের সুসংবাদ  তার দলিল কি?

উত্তর:  খ।    যে ব্যক্তি তাওহিদের ওপর মৃত্যবরণ করবে এবং শিরক না করলে জান্নাতের সুসংবাদ  তার দলিল  নিম্নে তুলে ধরা হলো-

আয়াত-০১

আল্লাহ তাআলা বলেন

,وَيُنَجِّي اللَّهُ الَّذِينَ اتَّقَوْا بِمَفَازَتِهِمْ لَا يَمَسُّهُمُ السُّوءُ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ 

অর্থ: যারা শিরক থেকে বিরত থাকতআল্লাহ তাদেরকে সাফল্যের সাথে মুক্তি দেবেনতাদেরকে অনিষ্ট স্পর্শ করবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।[1] সূরা যুমার-৬১


হাদিস নং-০১

أَبَا ذَرٍّ يُحَدِّثُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ

অর্থ: আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত নবি (বলেনজিবরিল (আ.) আমার নিকট এসে সুসংবাদ দিলেন যেআপনার উম্মাতের যে কেউ শিরক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি (আবু জর) বললামযদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে। তিনি বললেনযদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে। তাখরিজ : বুখারি-৩২২২মুসলিম-৯৪তিরমিজি-২৬৪৪আহমদ -২১৩৪৭

 হজরত আবু জর যে বারবার যে প্রশ্ন করেছিলেন যেব্যভিচার এবং চুরি করলেও কি মানুষ জান্নাতে যেতে পারবেএর কারণ সম্ভবত এই ছিল যেচুরি ব্যভিচারকে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অপবিত্র গুনাহ মনে করার কারণে তিনি আশ্চর্যবোধ করছিলেন যেএমন গুনাহ করেও মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে? (সামনে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসছে)

হাদিস নং-০২

عَنْ عُثْمَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏”.‏

অর্থ: আবু বকর ইবনে আবু শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহ.) ওসমান (রা.) থেকে বর্ণনা করেনরসূলুল্লাহ (বলেছেনযে ব্যক্তি [لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ] -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ--এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তিকাল করবেসে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসলিম-২৬,৪৩ মুসনাদে আহমদ-৪৯৮

হাদিস নং-০৩

مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ

অর্থ: যে ব্যক্তি খাঁটি মনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর স্বাক্ষ্য দেবেআল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। তাখরিজ : সহীহ মুসলিম-৪৭

হাদিস নং-০৪

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  “ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏”‏ . 

 অর্থ: মুয়াজ ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনরসূলুল্লাহ () বলেছেন : যারা সর্বশেষ বাক্য হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহসে জান্নাতে প্রবেশ করবে।  তাখরিজ: আবু দাউদ-৩১১৬ইবনে মাজাহ-৩৭৯৬আহমদ-২১৯৯৮                                           

নোট : ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় শব্দের ভিন্নতা রয়েছে সারাংশ একই।

প্রশ্ন:  গ।  মৌলিক আপত্তি: উপরোক্ত হাদিসে আমরা দেখতে পাই যে,  

  ১। যে কেউ শিরক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে।                                                

 যার সর্বশেষ বাক্য হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহসে জান্নাতে প্রবেশ করবে।                          

  যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তিকাল করবেসে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

  কিন্তু এর বিপরীতে অসংখ্যা আয়াতে কারিমা ও হাদিসে নবুওয়া রয়েছে। যে ব্যক্তি এ পাপে লিপ্ত হবেসে জান্নাতে প্রবেশ করবে নাশুধু তাই নয়সে বেহেশতের বাতাস-ঘ্রাণও পাবে না। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। যেমন-

১। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ. قالَ ابنُ أَبِي عُمَرَ: قالَ سُفْيَانُ: يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ.

 বুখারি-৫৯৮৪              

২। সর্বদা মাদকদ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। ইবনে মাজাহ-৩৩৭৬                    

৩। যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত হয়েছেতা জান্নাতে যাবে না।  

لا يدخلُ الجنةَ جسدٌ غُذِّيَ بالحرامِ

বায়হাকি-৫৫২০          

৪। যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশি নিরাপদ নয়সে জান্নাতে যাবে না। মুসলিম-৬৬

৫। পিতা-মাতার অবাধ্যদাইয়ুস (যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-মেয়ে-বোন প্রমুখ অধীনস্থ নারীকে বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না), পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা। হাকেম-২২৬                       

৬। চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‏"‏‏ মুসলিম-১৫১                                                             

৭।  দুনিয়ার  উদ্দেশ্য এলমে দীন অর্জনকারীজান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। আবু দাউদ-৩১৭৯ 

৮। যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করেসে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। তিরমিজি-১১০৮                                                                                                          

৯। জাকাত আদায় না কারীর শাস্তি। সূরা ইমরান-১৮০বুখারি-১৪০৩                                            

১০। ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা। সূরা নিসা-১০

১১। আত্মহত্যাকারী জাহান্নামে ঐভাবেই আজবীন আজাব ভোগ  করবে। বুখারি


উত্তর:    গ।  সমাধান বা সমন্বয় :  যে ব্যক্তি  দীনে তাওহিদের ওপর আন্তরিক ঈমান রাখবেসে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। এখন সে যদি ঈমান সত্ত্বেও গুনাহ করে ফেলে থাকেতাহলে সে হয়তো আল্লাহর বিশেষ রহমতে অথবা কোন আল্লাহর পছন্দনীয় আমলের বরকতে অথবা আল্লাহর অনুমদিত ব্যক্তিবর্গের সুপারিশের দ্বারা অথবা যাদের নেকি-পাপ সমান সমান হবে তারা কিছুকাল আরাফে অবস্থান করে আল্লাহর কৃপায় জান্নাতে দাখিল হবে এবং সর্বশেষে পাপের শাস্তি ভোগ করার পর  আল্লাহর দয়ায়  ক্ষমা লাভের  অধিকারী  হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর স্বপক্ষে নিম্নে দলিল পেশ করছি :

শিরক না থাকলে সরাসরি ক্ষমা হতে পারে:

(আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ  

অর্থনিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এ ব্যতিত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। সূরা নিসা- ৪৮

 ()

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ مَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ  

অর্থযারা কুফরি করে ও আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করেঅতঃপর কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেআল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন নাসূরা মুহাম্মাদ-৩৪

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যেকুফরি অবস্থায় মৃত্যবরণ না করলেআল্লাহ চাইলে সরাসরি ক্ষমা হতে পারে

()

لَا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا  

অর্থ: যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেসে ব্যতিত অন্য কারও সুপরিশ করার ক্ষমতা থাকবে না সূরা মারইয়াম-৮৭  

 الا শব্দটি এখানে ইস্তিসনা মুনকাতি হিসেবে لكن  এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থাৎ যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্য প্রদান করে আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,عهد  এর অর্থ হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্য প্রদান করা অন্যের পূজা অর্চনা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহর নিকট হতে যাবতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবার কামনা করা[1] তাফসিরে ইবনে কাসির ৭ম খণ্ড;১৩১ পৃষ্ঠাঅধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারূক (রহ.) অনূদিত.ফা.

 

আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত আমলের বরকতে:

(হাদিস শরিফে এসেছে

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: غُفِرَ لِامْرَأَةٍ مُوْمِسَةٍ مَرَّتْ بِكَلْبٍ عَلى رَأْسِ رَكِيٍّ يَلْهَثُ كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَشُ فَنَزَعَتْ خُفَّهَا فَأَوْثَقَتْهُ بِخِمَارِهَا فَنَزَعَتْ لَه مِنَ الْمَاءِ فَغُفِرَ لَهَا بِذلِكَ . قِيلَ: إِنَّ لَنَا فِي الْبَهَائِمِ أَجْرًا؟ قَالَ: فِىْ كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رُطْبَةٍ أَجْرٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ 

অর্থাৎ একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেওয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহবা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (এ করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেওয়া হলো। তাখরিজ : বুখারি-৩৩২১মুসলিম-২২৪৫আহমদ -১০৬২১শারহুস সুন্নাহ-১৬৬৬

()

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ: جَاءَتْنِي مِسْكِينَةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأَطْعَمْتُهَا ثَلَاثَ تَمَرَاتٍ، فَأَعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً، وَرَفَعَتْ إِلَى فِيهَا تَمْرَةً لِتَأْكُلَهَا، فَاسْتَطْعَمَتْهَا ابْنَتَاهَا، فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ، الَّتِي كَانَتْ تُرِيدُ أَنْ تَأْكُلَهَا بَيْنَهُمَا، فَأَعْجَبَنِي شَأْنُهَا، فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللهَ قَدْ أَوْجَبَ لَهَا بِهَا الْجَنَّةَ، أَوْ أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ"  

অর্থ: হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেনএকজন গরিব স্ত্রীলোক তার দুটি কন্যাসহ আমার কাছে আসল  আমি তখন তাদের তিনটি খেজুর খেতে দিলামসে তার মেয়ে দুটিকে একটি করে দিল এবং অবশিষ্ট একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য তার মুখের দিকে তুলল কিন্তু এটিও তার মেয়েরা চাইল যে খেজুরটি সে নিজে খাওয়ার ইচ্ছা করল তাও দুভাগ করে তার মেয়ে দুটোকে দিয়ে দিল আয়েশা (রা.) বললেনব্যাপরটি আমাকে অবাক করল সে যা করল আমি তা রসূলুল্লাহ ()-কে বললাম তিনি বললেনএর বিনিময় মহান আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব (নির্ধারণকরে দিয়েছেন অথবা জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছেন তাখরিজ :  মুসলিম-২৬৩০সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৬৬৮আহমদ-২৪৬১১ নোট : বুখারির বর্ণনায় শব্দের ভিন্নতা রয়েছে

(রসূলুল্লাহ () বলেছেন:

  اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِه 

অর্থাৎতোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা এ কুরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হয়ে আবির্ভূত হবে [1] তাখরিজ : মুসলিম-৮০৪আহমদ -২২১৪৬

শাফায়ত পেয়ে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা যেমন নবি-শহিদ-আলেম-হাফেজ-নেককার  প্রমুখ:

()

 مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ 

অর্থ: কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তার অনুমতি ছাড়া সূরা বাকারা-২৫৫

()

 يَوْمَئِذٍ لَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا 

অর্থ: দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না সূরা তোহা-১০৯

 

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন,

  لَا يَمْلِكُونَ مِنْهُ خِطَابًا  اي لا يملكون ان يطالوه الا فيما اذن له   

কোন বিষয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলা সম্ভব হবে না-তবে যে বিষয়ে কথা বলার অনুমতি প্রমাণ করা হবে সে বিষয়ে বলতে সক্ষম হবে কুরতুবি-১৩/১৮৬  

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর মতেসক্ষম  হবে না ঘোষণাটি মুশরিকিন এবং বিদ্রোহীদের জন্য প্রযোজ্য রুহুল মাআনি-২০/৩০কেহ কেহ বলেছেন যেএই ঘোষণাটি ফেরেশতাদের জন্য প্রযোজ্য

তাফসিরে কাবির-/৩১৩বুরহানুল কুরআন-/৩৯

()

اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ 

অর্থ: (হে নবিআপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা আপনি সত্তরবার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না তা এই জন্য যেতারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করেছে আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না সূরা তওবা-৮০

 

  আলোচ্য আয়াতে মুনাফেক-কাফেররা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করানা করা সমান সত্তরবারও যদি ক্ষমা চায় তবুও তাদেরকে ক্ষমা হবে না সুতরাং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবুল হওয়ার বিষয় প্রমাণিত

 

(১০)  নবি () বলেছেনকিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন :

 ﺷَﻔَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺷَﻔَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴُّﻮﻥَ ﻭَﺷَﻔَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻖَ ﺇِﻻَّ ﺃَﺭْﺣَﻢُ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ ﻓَﻴَﻘْﺒِﺾُ ﻗَﺒْﻀَﺔً ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻓَﻴُﺨْﺮِﺝُ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻗَﻂُّ ‏»

ফেরেশতাগণ শাফাআত করেছেনবিগণ শাফাআত করেছেন এবং মুমিনগণও শাফাআত করেছেন। এখন সবচেয়ে দয়ালু আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও শাফাআত বাকি নেই। অতঃপর তিনি জাহান্নামের আগুন থেকে একমুষ্ঠি গ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে তিনি জাহান্নাম থেকে এমন একদল মানুষকে বের করবেনযারা কখনো কোন ভাল আমলই করেনি তাখরিজ : মুসলিম- ৪৭২

 (১১)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا"  

অর্থাৎ: প্রত্যেক নবির জন্য এমন একটি দোআ রয়েছে যা আল্লাহর কাছে মকবুল। আর আমি নিজ দোআটি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবেসে ইনশাল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে তাখরিজ : বুখারি-৬৩০৫মুসলিম-১৯৯                                         

 নোট : হাদিসের শেষাংশটুকু মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে

(১২আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিততিনি বলেনজিজ্ঞেস করা হলোহে আল্লাহর রাসূলকিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ধন্য কে হবেতিনি বললেন:

«لَقَدْ ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، أَنْ لَا يَسْأَلَنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ»

হে আবু হুরায়রাআমি ধারণা করেছিএ হাদীস সম্পর্কে তোমার চেয়ে আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। কারণহাদীসের ওপর আমি তোমার আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান সে হবেযে নিজের অন্তর অথবা মন থেকে খালিসভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তাখরিজ : বুখারি৯৯মুসনাদে আহমদ-৮০৭০

 (১৩)  شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِيঅর্থআমার উম্মতের কবিরা গুনাহে লিপ্তদের জন্য আমার শাফায়াত  তাখরিজ : আবু দাউদ-৪৭৩৯তিরমিজি-২৪৩৫আহমদ -১৩২২২

 (১৪)يَشْفَعُ الشَّهِيْدُ فِي سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِه  অর্থশহিদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করবে তাখরিজ : আবু দাউদ-২৫২২আহমদ -১৭১৮২তিরমিজি-১৬৬৩

(১৫)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا خَلَصَ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَمِنُوا، فَمَا مُجَادَلَةُ أَحَدِكُمْ لِصَاحِبِهِ فِي الْحَقِّ يَكُونُ لَهُ فِي الدُّنْيَا، بِأَشَدَّ مُجَادَلَةً لَهُ، مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِرَبِّهِمْ فِي إِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ أُدْخِلُوا النَّارَ» قَالَ: " يَقُولُونَ: رَبَّنَا إِخْوَانُنَا كَانُوا يُصَلُّونَ مَعَنَا، وَيَصُومُونَ مَعَنَا، وَيَحُجُّونَ مَعَنَا، فَأَدْخَلْتَهُمُ النَّارَ " قَالَ: فَيَقُولُ: " اذْهَبُوا فَأَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ، 

অর্থযখন মুমিন আল্লাহর ওলিগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেলো তখন তাঁদের মুমিন ভাইদের জন্য তাঁরা আল্লাহর কাছে আবেদন (দোআ বা কারো জন্য বলা তথা সুপারিশ) করবে : হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাইযাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়তআমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সৎকাজ করত তখন আল্লাহ্ বলবেন : যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমণ্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে  অতঃপর তাঁরা (অলিগণ) সেখানে জাহান্নামিদের নিকট যাবেন।  এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোঁড়ালি পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে।এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবেন। তাখরিজ : মুসনাদে আহমদ-১১৮৯৮

আর যদি সে ক্ষমার যোগ্য না হয়তাহলে গুনাহর শাস্তি ভোগ করার পর সে জান্নাতে যেতে পারবে:

(১৬)

 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ‏.‏ فَيُخْرَجُونَ مِنْهَا قَدِ اسْوَدُّوا فَيُلْقَوْنَ فِي نَهَرِ الْحَيَا ـ أَوِ الْحَيَاةِ، شَكَّ مَالِكٌ ـ فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي جَانِبِ السَّيْلِ، أَلَمْ تَرَ أَنَّهَا تَخْرُجُ صَفْرَاءَ مُلْتَوِيَةً ‏”‏‏.‏ قَالَ وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا عَمْرٌو ‏”‏ الْحَيَاةِ ‏”‏‏.‏ وَقَالَ ‏”‏ خَرْدَلٍ مِنْ خَيْرٍ  

অর্থ: হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিতনবি () এরশাদ করেন, যখন জান্নাতিগণ জান্নাতে ও দোজখিগণ দোজখে চলে যাবে তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও  তাদের অবস্থা এরূপ হবে যে, জ্বলে কালো বর্ণ হয়ে গেছে অতঃপর তাদেরকে নহরে হায়াতে ফেলা হবে তখন তারা এমনভাবে বের হয়ে আসবেযেমন ঢলের(বৃষ্টির কারণে) আবর্জনাতে দানা অঙ্কুরিত হয় (গাছ জন্মায়) তোমরা কি দেখ না যেতা কেমন সোনালী ও কোঁকড়ানো অবস্থায় বের হয়ে আসে তাইব (রহঃ) বলেনআমর (রহঃ) আমাদের কাছে حيا এর স্থলে حياة এবং خردل من ايمان এর স্থলে خردل من خير বর্ণনা করেছেন। বুখারি-২২মুসলিম-১৮২তিরমিজি-২৫৯৮ইবনে মাজাহ-৬০নাসায়ি-১১৪০দারেমি-২৮৫৯

عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ ‏”‏‏.‏ قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ قَالَ أَبَانُ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ حَدَّثَنَا أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مِنْ إِيمَانٍ ‏”‏‏.‏ مَكَانَ ‏”‏ مِنْ خَيْرٍ

(১৭) অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবি ()বলেছেন: যে লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবেতাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকি থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে

(১৮) আবু আবদুল্লাহ বলেনআবান (রহঃ) বর্ণনা করেছেনআনাস (রা.) হতে এবং তিনি রসূলুল্লাহ () হতে নেকি এর স্থলে ঈমান শব্দটি বর্ণনা করেছেন। বুখারি-৪৪মুসলিম-১৯৩তিরমিজি-২৫৯৩ইবনে মাজাহ-৪৩১২দারেমি-৫৩আহমদ -২৬৯২

ইমাম গাজালি (রহ.)-এর গবেষণা:

 أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ 

(যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও)  হাদিস থেকে রিচার্স করেছেন যেঐ ব্যক্তিও মুক্তি প্রাপ্ত হবেযে অন্তর দিয়ে ঈমান এনেছেকিন্তু কালেমা পড়ার সময় পায়নি এমতাবস্থায় তার  মৃত্যু হয়ে গেছে কাশফুল বারি শরহুল সহিহিল বুখারি-/১৯৯ ; তাফসিরে মাজহারি-১০খণ্ড১৯২-১৯৩ পৃষ্ঠাতাফসিরে জালালাইন ৫ম খণ্ড৫৮৭পৃষ্ঠাআইছারুত্তাফাসিরবুরহানুল কুরআন-/১২২

 যা হোকইসলামের প্রতি আন্তরিকভাবে ঈমান পোষণকারী প্রত্যেকটি মানুষ জান্নাতে অবশ্যই  যাবেযদিও জাহান্নামে গোনাহের শাস্তি ভোগ করার পরেই যাক না কেন।


প্রশ্ন:    ঘ।   এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিমত কি?

উত্তর:  ঘ।  আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিমত হলো গুনাহের শাস্তি হওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিরি ইচ্ছা করলে গুনাহ মাফ করতে পারেনআবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। গুনাহ মাফ হয় তওবার মাধ্যমে অথবা প্রিয় নবি ()-এর শাফায়াতের মাধ্যমে কিংবা কোনো ওলি আল্লাহ তাআলার সুপারিশ ক্রমে অথবা শুধু আল্লাহ তাআলার রহমতে। যদি আল্লাহ তাআলা কোনো গুনাহগার মুমিনকে আজাব দেওয়ার ইচ্ছাও করেন। তবে তা স্থায়ী আজাব হবে নাবরং সাময়িক হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নেক আমলের ছওয়াব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনযেমন কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছেفَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ  অর্থাৎযে ব্যক্তি সামান্য নেক আমলও করবে সে তার বিনিময় অবশ্যই দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল-০৭আর ঈমান হলো সবেচেয়ে বড় নেক আমল এবং সকল নেক আমল কবুল হওয়া নির্ভর করে ঈমানের ওপরআল্লাহ তাআলা ওয়াদার বরখেলাফ  হওয়া সম্ভব নয়। আখেরাতে ছওয়াব প্রদানের স্থানই হলো জান্নাত। অতত্রবমুমিন মাত্রই জান্নাত যাবে। আজাব ভোগ করার পর অথবা কোনো আজাব ব্যতিতই আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত নসিব করবেন। তাফসিরে মাজহারি-১০খণ্ড১৯২-১৯৩ পৃষ্ঠাতাফসিরে জালালাইন ৫ম খণ্ড৫৮৭পৃষ্ঠাআইছারুত্তাফাসিরবুরহানুল কুরআন-

তথ্যসূত্র: মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য৮০-৯৪ পৃষ্ঠা

লেখকমাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসিরদাওরায়ে হাদিসআততাখাস্সুস লিলআদবধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তাবাংলাদেশ সেনাবাহিনী

والله اعلم بالصواب