জিজ্ঞাসা-২৩৯: মুহতারাম আল্লাহ্ আপনাকে তারাক্কি দান করুন, প্রশ্ন হলো - কালেমা পড়লেই বেহেশতে যাবে কিন্তু আত্নহত্যা কারীর জান্নাত হারাম। সহীহ বুখারীর বর্ণনা। সঠিক ব্যখ্যা কামনা করছি। তারিখ-৩০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আতিক বরিশাল থেকে---------------
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর, কথা এই যে আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। যা আমাদের সাধরণ মানুষের একটি কৌতুহল। যাইহোক আপনার প্রশ্ন সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি
প্রশ্ন: ক। কবিরা গুনাহ করলে কি মুমিন কাফের হয়?
উত্তর: ক। না, মুমিন যত বড়ই পাপ করুক না কেন ? কাফের হয় না। দলিল:
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থ: মুমিনের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা হুজুরাত-০৯
পরস্পর দ্বন্দ্বরত দুই দলের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যে, দ্বন্দ্ব সংঘাত লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানদার আখ্যা দিয়েছেন। তাই এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে আলহে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মত পেশ করেছেন যে, যত বড় পাপই করুক, তাতে মুমিন বে-ঈমান হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে খারিজি ও মুতাজিলাদের একাংশের মতে কবিরা গুনাহ করলে ঈমান থাকে না।
হজরত আবু বকর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবি কারিম (ﷺ) হাসান-কে নিয়ে বের হলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বারে আরোহণ করলেন। অত্ঃপর বললেন, আমার এ ছেলেটি সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে বিবাদমান দুদল মুসলমানের মাঝে সমঝোতা –মীমাংসা করিয়ে দিবেন। তাখরিজ : বুখারি-৩৬২৯;আবু দাউদ-৪৬৬২;তিরমিজি-৩৭৭৩;নাসায়ি-১৪১০;আহমদ-২০৩৯
এ হাদিসেও প্রিয় নবি (ﷺ) বিবাদমান দুদলকে মুসলমানরূপে আখ্যা দিয়েছেন। পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার পরও মুমিন নামটি মুছে যায়নি; বরং তারা সাংবিধানিক অর্থে মুমিন ছিলেন। যদি তারা কাফের হয়ে যেত কক্ষনোও তাদের মুমিন নামে ডাকা হত না। আর তাদের মাঝে সংশোধনের হুকুম করা হত না। অন্য এক হাদিসে আরও স্পষ্টভাবে এসেছে- আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তিনটি বিষয় ঈমানের বুনিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। (১) যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমা পড়বে, তার প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে; কোন গুনাহর দরুন তাকে কাফের মনে করবে না এবং কোন আমলের দরুন তাকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিবে না। (২) জিহাদ- যেদিন হতে আল্লাহ আমাকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন সেদিন হতে এই উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা দাজালের সাথে জিহাদ করতে থাকবে, কোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার বা কোন সুবিচারকের সুবিচার জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাকদীরে বিশ্বাস করা। তাখরিজ : মিশকাতুল মাছাবিহ-কাবীরা গোনাহ ও মুনাফিকীর নিদর্শন অধ্যায়
সুতরাং প্রমাণিত হল মুমিন যত বড়ই গুনাহ করুক না কে? সে কাফের হয় না।(তবে গুনাহ ঈমানকে দুর্বল করে এবং কিছু কিছু গুনাহ কুফরির দিকে ধাবিত করে। প্রত্যেক মুসলিমকে এ বিষয়ে আরও সতর্কতাবলম্বন করা উচিত)
সূত্র: “মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা”,৭৮ পৃষ্ঠা, লেখক, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
প্রশ্ন: খ। যে ব্যক্তি তাওহিদের ওপর মৃত্যবরণ করবে এবং শিরক না করলে জান্নাতের সুসংবাদ তার দলিল কি?
উত্তর: খ। যে ব্যক্তি তাওহিদের ওপর মৃত্যবরণ করবে এবং শিরক না করলে জান্নাতের সুসংবাদ তার দলিল নিম্নে তুলে ধরা হলো-
আয়াত-০১
আল্লাহ তাআলা বলেন
,وَيُنَجِّي اللَّهُ الَّذِينَ اتَّقَوْا بِمَفَازَتِهِمْ لَا يَمَسُّهُمُ السُّوءُ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
অর্থ: যারা শিরক থেকে বিরত থাকত, আল্লাহ তাদেরকে সাফল্যের সাথে মুক্তি দেবেন, তাদেরকে অনিষ্ট স্পর্শ করবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।[1] সূরা যুমার-৬১
হাদিস নং-০১
أَبَا ذَرٍّ يُحَدِّثُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ
অর্থ: আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি (ﷺ) বলেন, জিবরিল (আ.) আমার নিকট এসে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ শিরক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি (আবু জর) বললাম, যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে। তিনি বললেন, যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে। তাখরিজ : বুখারি-৩২২২; মুসলিম-৯৪; তিরমিজি-২৬৪৪; আহমদ -২১৩৪৭
হজরত আবু জর যে বারবার যে প্রশ্ন করেছিলেন যে, ব্যভিচার এবং চুরি করলেও কি মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে? এর কারণ সম্ভবত এই ছিল যে, চুরি ব্যভিচারকে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অপবিত্র গুনাহ মনে করার কারণে তিনি আশ্চর্যবোধ করছিলেন যে, এমন গুনাহ করেও মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে? (সামনে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসছে)
হাদিস নং-০২
عَنْ عُثْمَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ”.
অর্থ: আবু বকর ইবনে আবু শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহ.) ওসমান (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি [لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ] -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ--এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তিকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসলিম-২৬,৪৩ মুসনাদে আহমদ-৪৯৮
হাদিস নং-০৩
مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ
অর্থ: যে ব্যক্তি খাঁটি মনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর স্বাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। তাখরিজ : সহীহ মুসলিম-৪৭
হাদিস নং-০৪
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ” .
অর্থ: মুয়াজ ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : যারা সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাখরিজ: আবু দাউদ-৩১১৬; ইবনে মাজাহ-৩৭৯৬; আহমদ-২১৯৯৮
নোট : ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় শব্দের ভিন্নতা রয়েছে সারাংশ একই।
প্রশ্ন: গ। মৌলিক আপত্তি: উপরোক্ত হাদিসে আমরা দেখতে পাই যে,
১। যে কেউ শিরক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে।
২। যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩। ‘যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তিকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
কিন্তু এর বিপরীতে অসংখ্যা আয়াতে কারিমা ও হাদিসে নবুওয়া রয়েছে। যে ব্যক্তি এ পাপে লিপ্ত হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, শুধু তাই নয়, সে বেহেশতের বাতাস-ঘ্রাণও পাবে না। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। যেমন-
১। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ. قالَ ابنُ أَبِي عُمَرَ: قالَ سُفْيَانُ: يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ.
বুখারি-৫৯৮৪
২। সর্বদা মাদকদ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। ইবনে মাজাহ-৩৩৭৬
৩। যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত হয়েছে, তা জান্নাতে যাবে না।
لا يدخلُ الجنةَ جسدٌ غُذِّيَ بالحرامِ
বায়হাকি-৫৫২০
৪। যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশি নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে যাবে না। মুসলিম-৬৬
৫। পিতা-মাতার অবাধ্য, দাইয়ুস (যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-মেয়ে-বোন প্রমুখ অধীনস্থ নারীকে বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না), পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা। হাকেম-২২৬
৬। চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ " মুসলিম-১৫১
৭। ‘দুনিয়ার উদ্দেশ্য এলমে দীন অর্জনকারী, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। আবু দাউদ-৩১৭৯
৮। যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। তিরমিজি-১১০৮
৯। জাকাত আদায় না কারীর শাস্তি। সূরা ইমরান-১৮০; বুখারি-১৪০৩
১০। ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা। সূরা নিসা-১০
১১। আত্মহত্যাকারী জাহান্নামে ঐভাবেই আজবীন আজাব ভোগ করবে। বুখারি
উত্তর: গ। সমাধান বা সমন্বয় : যে ব্যক্তি দীনে তাওহিদের ওপর আন্তরিক ঈমান রাখবে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। এখন সে যদি ঈমান সত্ত্বেও গুনাহ করে ফেলে থাকে, তাহলে সে হয়তো আল্লাহর বিশেষ রহমতে অথবা কোন আল্লাহর পছন্দনীয় আমলের বরকতে অথবা আল্লাহর অনুমদিত ব্যক্তিবর্গের সুপারিশের দ্বারা অথবা যাদের নেকি-পাপ সমান সমান হবে তারা কিছুকাল আরাফে অবস্থান করে আল্লাহর কৃপায় জান্নাতে দাখিল হবে এবং সর্বশেষে পাপের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় ক্ষমা লাভের অধিকারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর স্বপক্ষে নিম্নে দলিল পেশ করছি :
শিরক না থাকলে সরাসরি ক্ষমা হতে পারে:
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এ ব্যতিত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। সূরা নিসা- ৪৮
(২)
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ مَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ
অর্থ: যারা কুফরি করে ও আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।সূরা মুহাম্মাদ-৩৪
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুফরি অবস্থায় মৃত্যবরণ না করলে, আল্লাহ চাইলে সরাসরি ক্ষমা হতে পারে।
(৩)
لَا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
অর্থ: যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতিত অন্য কারও সুপরিশ করার ক্ষমতা থাকবে না। সূরা মারইয়াম-৮৭
الا শব্দটি এখানে ইস্তিসনা মুনকাতি হিসেবে لكن এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ –এর সাক্ষ্য প্রদান করে আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,عهد এর অর্থ হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ –এর সাক্ষ্য প্রদান করা অন্যের পূজা অর্চনা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহর নিকট হতে যাবতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবার কামনা করা।[1] তাফসিরে ইবনে কাসির ৭ম খণ্ড;১৩১ পৃষ্ঠা; অধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারূক (রহ.) অনূদিত, ই.ফা.
আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত আমলের বরকতে:
(৪) হাদিস শরিফে এসেছে-
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: غُفِرَ لِامْرَأَةٍ مُوْمِسَةٍ مَرَّتْ بِكَلْبٍ عَلى رَأْسِ رَكِيٍّ يَلْهَثُ كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَشُ فَنَزَعَتْ خُفَّهَا فَأَوْثَقَتْهُ بِخِمَارِهَا فَنَزَعَتْ لَه مِنَ الْمَاءِ فَغُفِرَ لَهَا بِذلِكَ . قِيلَ: إِنَّ لَنَا فِي الْبَهَائِمِ أَجْرًا؟ قَالَ: فِىْ كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رُطْبَةٍ أَجْرٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
অর্থাৎ একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেওয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহবা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (এ করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেওয়া হলো। তাখরিজ : বুখারি-৩৩২১; মুসলিম-২২৪৫; আহমদ -১০৬২১; শারহুস সুন্নাহ-১৬৬৬
(৫)
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ: جَاءَتْنِي مِسْكِينَةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأَطْعَمْتُهَا ثَلَاثَ تَمَرَاتٍ، فَأَعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً، وَرَفَعَتْ إِلَى فِيهَا تَمْرَةً لِتَأْكُلَهَا، فَاسْتَطْعَمَتْهَا ابْنَتَاهَا، فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ، الَّتِي كَانَتْ تُرِيدُ أَنْ تَأْكُلَهَا بَيْنَهُمَا، فَأَعْجَبَنِي شَأْنُهَا، فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللهَ قَدْ أَوْجَبَ لَهَا بِهَا الْجَنَّةَ، أَوْ أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ"
অর্থ: হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন গরিব স্ত্রীলোক তার দুটি কন্যাসহ আমার কাছে আসল । আমি তখন তাদের তিনটি খেজুর খেতে দিলাম, সে তার মেয়ে দুটিকে একটি করে দিল এবং অবশিষ্ট একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য তার মুখের দিকে তুলল। কিন্তু এটিও তার মেয়েরা চাইল। যে খেজুরটি সে নিজে খাওয়ার ইচ্ছা করল তাও দুভাগ করে তার মেয়ে দুটোকে দিয়ে দিল। আয়েশা (রা.) বললেন, ব্যাপরটি আমাকে অবাক করল। সে যা করল আমি তা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বললাম। তিনি বললেন, এর বিনিময় মহান আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব (নির্ধারণ) করে দিয়েছেন অথবা জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছেন। তাখরিজ : মুসলিম-২৬৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৬৬৮; আহমদ-২৪৬১১ নোট : বুখারির বর্ণনায় শব্দের ভিন্নতা রয়েছে।
(৬) রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِه
অর্থাৎ- তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা এ কুরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হয়ে আবির্ভূত হবে। [1] তাখরিজ : মুসলিম-৮০৪; আহমদ -২২১৪৬
শাফায়ত পেয়ে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা যেমন নবি-শহিদ-আলেম-হাফেজ-নেককার প্রমুখ:
(৭)
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ
অর্থ: কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তার অনুমতি ছাড়া। সূরা বাকারা-২৫৫
(৮)
يَوْمَئِذٍ لَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا
অর্থ: দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না। সূরা তোহা-১০৯
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন,
لَا يَمْلِكُونَ مِنْهُ خِطَابًا اي لا يملكون ان يطالوه الا فيما اذن له
কোন বিষয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলা সম্ভব হবে না-তবে যে বিষয়ে কথা বলার অনুমতি প্রমাণ করা হবে সে বিষয়ে বলতে সক্ষম হবে। কুরতুবি-১৩/১৮৬
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর মতে, “সক্ষম হবে না” ঘোষণাটি মুশরিকিন এবং বিদ্রোহীদের জন্য প্রযোজ্য। রুহুল মাআনি-২০/৩০, কেহ কেহ বলেছেন যে, এই ঘোষণাটি ফেরেশতাদের জন্য প্রযোজ্য।
তাফসিরে কাবির-৮/৩১৩; বুরহানুল কুরআন-৪/৩৯
(৯)
اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
অর্থ: (হে নবি) আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা। আপনি সত্তরবার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না। তা এই জন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। সূরা তওবা-৮০
আলোচ্য আয়াতে মুনাফেক-কাফেররা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা; না করা সমান। সত্তরবারও যদি ক্ষমা চায় তবুও তাদেরকে ক্ষমা হবে না। সুতরাং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবুল হওয়ার বিষয় প্রমাণিত।
(১০) নবি (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন :
ﺷَﻔَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺷَﻔَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴُّﻮﻥَ ﻭَﺷَﻔَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻖَ ﺇِﻻَّ ﺃَﺭْﺣَﻢُ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ ﻓَﻴَﻘْﺒِﺾُ ﻗَﺒْﻀَﺔً ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻓَﻴُﺨْﺮِﺝُ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻗَﻂُّ »
“ফেরেশতাগণ শাফাআত করেছে, নবিগণ শাফাআত করেছেন এবং মুমিনগণও শাফাআত করেছেন। এখন সবচেয়ে দয়ালু আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও শাফাআত বাকি নেই। অতঃপর তিনি জাহান্নামের আগুন থেকে একমুষ্ঠি গ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে তিনি জাহান্নাম থেকে এমন একদল মানুষকে বের করবেন, যারা কখনো কোন ভাল আমলই করেনি”। তাখরিজ : মুসলিম- ৪৭২
(১১)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا"
অর্থাৎ: প্রত্যেক নবির জন্য এমন একটি দোআ রয়েছে যা আল্লাহর কাছে মকবুল। আর আমি নিজ দোআটি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে। তাখরিজ : বুখারি-৬৩০৫; মুসলিম-১৯৯
নোট : হাদিসের শেষাংশটুকু মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে।
(১২) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ধন্য কে হবে? তিনি বললেন:
«لَقَدْ ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، أَنْ لَا يَسْأَلَنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ»
হে আবু হুরায়রা, আমি ধারণা করেছি, এ হাদীস সম্পর্কে তোমার চেয়ে আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। কারণ, হাদীসের ওপর আমি তোমার আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান সে হবে, যে নিজের অন্তর অথবা মন থেকে খালিসভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। তাখরিজ : বুখারি- ৯৯; মুসনাদে আহমদ-৮০৭০
(১৩) شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِيঅর্থ: আমার উম্মতের কবিরা গুনাহে লিপ্তদের জন্য আমার শাফায়াত। তাখরিজ : আবু দাউদ-৪৭৩৯; তিরমিজি-২৪৩৫; আহমদ -১৩২২২
(১৪)يَشْفَعُ الشَّهِيْدُ فِي سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِه অর্থ: শহিদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করবে। তাখরিজ : আবু দাউদ-২৫২২, আহমদ -১৭১৮২; তিরমিজি-১৬৬৩
(১৫)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا خَلَصَ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَمِنُوا، فَمَا مُجَادَلَةُ أَحَدِكُمْ لِصَاحِبِهِ فِي الْحَقِّ يَكُونُ لَهُ فِي الدُّنْيَا، بِأَشَدَّ مُجَادَلَةً لَهُ، مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِرَبِّهِمْ فِي إِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ أُدْخِلُوا النَّارَ» قَالَ: " يَقُولُونَ: رَبَّنَا إِخْوَانُنَا كَانُوا يُصَلُّونَ مَعَنَا، وَيَصُومُونَ مَعَنَا، وَيَحُجُّونَ مَعَنَا، فَأَدْخَلْتَهُمُ النَّارَ " قَالَ: فَيَقُولُ: " اذْهَبُوا فَأَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ،
অর্থ: যখন মুমিন আল্লাহর ওলিগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেলো তখন তাঁদের মুমিন ভাইদের জন্য তাঁরা আল্লাহর কাছে আবেদন (দোআ বা কারো জন্য বলা তথা সুপারিশ) করবে : হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত, আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সৎকাজ করত। তখন আল্লাহ্ বলবেন : যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমণ্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে । অতঃপর তাঁরা (অলিগণ) সেখানে জাহান্নামিদের নিকট যাবেন। এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোঁড়ালি পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে।এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবেন। তাখরিজ : মুসনাদে আহমদ-১১৮৯৮
আর যদি সে ক্ষমার যোগ্য না হয়, তাহলে গুনাহর শাস্তি ভোগ করার পর সে জান্নাতে যেতে পারবে:
(১৬)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ. فَيُخْرَجُونَ مِنْهَا قَدِ اسْوَدُّوا فَيُلْقَوْنَ فِي نَهَرِ الْحَيَا ـ أَوِ الْحَيَاةِ، شَكَّ مَالِكٌ ـ فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي جَانِبِ السَّيْلِ، أَلَمْ تَرَ أَنَّهَا تَخْرُجُ صَفْرَاءَ مُلْتَوِيَةً ”. قَالَ وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا عَمْرٌو ” الْحَيَاةِ ”. وَقَالَ ” خَرْدَلٍ مِنْ خَيْرٍ
অর্থ: হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, নবি (ﷺ) এরশাদ করেন, যখন জান্নাতিগণ জান্নাতে ও দোজখিগণ দোজখে চলে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও। তাদের অবস্থা এরূপ হবে যে, জ্বলে কালো বর্ণ হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে নহরে হায়াতে ফেলা হবে। তখন তারা এমনভাবে বের হয়ে আসবে, যেমন ঢলের(বৃষ্টির কারণে) আবর্জনাতে দানা অঙ্কুরিত হয় (গাছ জন্মায়)। তোমরা কি দেখ না যে, তা কেমন সোনালী ও কোঁকড়ানো অবস্থায় বের হয়ে আসে। তাইব (রহঃ) বলেন, ‘আমর (রহঃ) আমাদের কাছে حيا এর স্থলে حياة এবং خردل من ايمان এর স্থলে خردل من خير বর্ণনা করেছেন। বুখারি-২২; মুসলিম-১৮২; তিরমিজি-২৫৯৮; ইবনে মাজাহ-৬০; নাসায়ি-১১৪০; দারেমি-২৮৫৯
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ ”. قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ قَالَ أَبَانُ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ حَدَّثَنَا أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ” مِنْ إِيمَانٍ ”. مَكَانَ ” مِنْ خَيْرٍ
ইমাম গাজালি (রহ.)-এর গবেষণা:
أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ
(যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও) হাদিস থেকে রিচার্স করেছেন যে, ঐ ব্যক্তিও মুক্তি প্রাপ্ত হবে, যে অন্তর দিয়ে ঈমান এনেছে, কিন্তু কালেমা পড়ার সময় পায়নি এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হয়ে গেছে। কাশফুল বারি শরহুল সহিহিল বুখারি-২/১৯৯ ; তাফসিরে মাজহারি-১০খণ্ড; ১৯২-১৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসিরে জালালাইন ৫ম খণ্ড; ৫৮৭পৃষ্ঠা; আইছারুত্তাফাসির; বুরহানুল কুরআন-৩/১২২
যা হোক, ইসলামের প্রতি আন্তরিকভাবে ঈমান পোষণকারী প্রত্যেকটি মানুষ জান্নাতে অবশ্যই যাবে, যদিও জাহান্নামে গোনাহের শাস্তি ভোগ করার পরেই যাক না কেন।
প্রশ্ন: ঘ। এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিমত কি?
উত্তর: ঘ। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিমত হলো গুনাহের শাস্তি হওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিরি ইচ্ছা করলে গুনাহ মাফ করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। গুনাহ মাফ হয় তওবার মাধ্যমে অথবা প্রিয় নবি (ﷺ)-এর শাফায়াতের মাধ্যমে কিংবা কোনো ওলি আল্লাহ তাআলার সুপারিশ ক্রমে অথবা শুধু আল্লাহ তাআলার রহমতে। যদি আল্লাহ তাআলা কোনো গুনাহগার মুমিনকে আজাব দেওয়ার ইচ্ছাও করেন। তবে তা স্থায়ী আজাব হবে না; বরং সাময়িক হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নেক আমলের ছওয়াব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেমন কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে- فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ অর্থাৎ‘যে ব্যক্তি সামান্য নেক আমলও করবে সে তার বিনিময় অবশ্যই দেখতে পাবে।’ (সূরা যিলযাল-০৭) আর ঈমান হলো সবেচেয়ে বড় নেক আমল এবং সকল নেক আমল কবুল হওয়া নির্ভর করে ঈমানের ওপর, আল্লাহ তাআলা ওয়াদার বরখেলাফ হওয়া সম্ভব নয়। আখেরাতে ছওয়াব প্রদানের স্থানই হলো জান্নাত। অতত্রব, মুমিন মাত্রই জান্নাত যাবে। আজাব ভোগ করার পর অথবা কোনো আজাব ব্যতিতই আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত নসিব করবেন। তাফসিরে মাজহারি-১০খণ্ড; ১৯২-১৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসিরে জালালাইন ৫ম খণ্ড; ৫৮৭পৃষ্ঠা; আইছারুত্তাফাসির; বুরহানুল কুরআন-৩
তথ্যসূত্র: মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য, ৮০-৯৪ পৃষ্ঠা
লেখক, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব) ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
والله اعلم بالصواب