আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৮৫: ওয়াজিব ও সুন্নাতের মধ্যে পার্থক্য কী?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৭৮৫: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ওয়াজিব ও সুন্নাতের মধ্যে পার্থক্য কী?

তারিখ:  ২৭/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা আবু সুমাইয়া শাহজাহান শেখ কুমিল্লা  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত মুস্তাহাব, নফল, হালাল-হারাম মাকরুহ তাহরিমি তানজিহ ইত্যাদি এসব পরিভাষা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্ধারিত করে যাননি। বরং এসব পরিভাষা কুরআন ও সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস সম্পর্কে বিজ্ঞ মুজতাহিদগণ নির্ধারিত করেছেন। উম্মাহর আমলের সহজ স্তরের জন্য।


প্রশ্ন: ক। ওয়াজিব কাকে বলে?

উত্তর: ক। পবিত্র কোরআন সুন্নায় ওয়াজিব বলতে কখনও কখনও ফরজ বুঝিয়েছেন। তবে ফিকহি ভাষায় ওয়াজিব বলতে -

واجب: وهو ما ثبت بدليل فيه شبهة، (قمر الأقمار حاشية نور الأنوار-166)

وأما الحنفية فيقولون……. والواجب، فهو ما ثبت بدليل ظنى فيه شبهة، (أصول الفقه الإسلامى-1/47)

অর্থাৎ যা করার আদেশটি জন্নী/সন্দেহজনক/ধারণামূলক দলীল তথা ফরজের তুলনায় দুর্বল দলীল দ্বারা প্রমাণিত। সূত্র: কমারুল আকমার হাশিয়াতুল নুরুল আনওয়ার-১৬৬ পৃষ্ঠা; উসূলুল ফিকহিল ইসলামি-১/৪৭


প্রশ্ন: খ। সুন্নাত কাকে বলে?

উত্তর: খ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প আনীত পুরো দ্বীনকে সুন্নত বলা হয়। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে সুন্নাত শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।


তবে ফিকহের দৃষ্টিকোণ থেকে সুন্নত হল, এমন আমল যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমল করেছেন এবং তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন কিন্তু তা ফরজ বা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোন দলিল পাওয়া যায় না।


সুন্নতের দুটি স্তর রয়েছে। 

যথা:-


(০১) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা:

السنة المؤكدة القريبة من الواجب وهي من مكملات الواجب وشعائره

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হলো ওয়াজিবের কাছাকাছি এবং এটি ওয়াজিবের পরিপূরক ও নিদর্শন। 

অর্থাৎ সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদত হিসেবে পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছাড়া ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো ছাড়েননি কিন্তু যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে ভর্ৎসনা করেননি। এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়। সূত্র:বাহরুল রায়েক-১/৩১৯; আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮, আলমুজিজ ফি উসুলিল ফিক্বহ-৪৩৯-৪০}


এর হুকুম:

وحكمها كالواجب—- إلا أن تارك الواجب يعاقب وتاركها لا يعاقب- (التعريفات للجرجانى-138

সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে। সূত্র: আততারিফাতুল জুরজানি-১৩৮ পৃষ্ঠা


 (০২) সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদাহ বা জায়েদা(অতিরিক্ত সুন্নত):

পরিভাষায় বলা হয়,

سنة الزوائد وهي ( ما واظب عليه النبي صلى الله عليه وسلم حتى صار عادة له ولم يتركه إلا احياناً

 সুন্নাতে গয়রে মুয়াক্কাদা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতেন যতক্ষণ না এটি তার জন্য অভ্যাসে পরিণত হয় এবং মাঝে মাঝে তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন, ওজর ছাড়া। সূত্র: হাশিয়ায়ে ইবনে আবিদীন -১/২১৮;২৪০


প্রশ্ন: গ। ওয়াজিব ও সুন্নাতের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: গ। অনেক আলেম সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং ওয়াজের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি। তারা বলেছেন দুটি একই জিনিস। আবার কেউ কেউ বলছেন,

هي سنة وليست واجبة ويثاب الإنسان على فعلها ولا يعاقب على تركها، أما الواجب فهو ما يثاب الإنسان على فعله ويعاقب على تركه.

অর্থাৎ সুন্নত ও ওয়াজিব এক নয় এবং একজন ব্যক্তি এটি করার জন্য সওয়াব পায় এবং এটি ত্যাগ করার জন্য শাস্তি দেওয়া হয় না, তাহলো সুন্নাত। 

আর  ওয়াজিব হলো যা করার জন্য একজন ব্যক্তি পুরস্কৃত হয় এবং এটি ত্যাগ করার জন্য শাস্তি হয়। সূত্র: কিতাবু মিন উসূলিল ফিকহি আলা মানহাজিল আহলিল হাদিস-১৪৭ পৃষ্ঠা


(০২) ওয়াজিব ছাড়া কোন ইবাদত হবে না এবং পুনরায় পড়তে হবে।

 সুন্নত ছাড়া এবাদতটি হয়ে যাবে তবে অপূর্ণতা রয়ে যাবে এবং পুনরায় আদায় করতে হয় না।

(০৩) সকল ইমামের মধ্যে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে গুনাগার হবে তবে সুন্নত ছেড়ে দিলে মতভেদ আছে, ফিকহি হানাফির মতে হঠাৎ বা ওজরের কারণে ছেড়ে দিলে কোন গুনাহ হবে না, তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস করলে গুনাগার হবে।

رجل ترك سنن الصلاة ان لم ير السنن حقا فقد كفر، لأنه تركها استخفافا (رد المحتار-2/492، بدائع الصنائع- 1/644

তবে কেউ যদি সুন্নতকে সহীহ তো মনে করে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়। তাহলে সে গোনাহগার হবে। সূত্র: রদ্দুল মুহতার-২/৪৯২


সারকথা হলো,  কোন কোন আলেম সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং ওয়াজিবকে একই নজরে দেখেছেন আবার কোন কোন আলেম পার্থক্য করেছেন। মুসলিম উম্মাহর আমল সহজ করার জন্য মুজতাহিদগণ এটা করেছেন হুকুমের/গুরুত্ব তারতম্য/পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য।


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক