জিজ্ঞাসা-১২৭৫৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
السلام عليكم.
بسم الله العلى العظيم. الحمد لله وعلى دين الاسلام. السلام حق والكفر باطل.الاسلام نور والكفر ظلمة.
ايها الشيخ المفكر-
هذه الكلمات ذكرت فى বেহেশতি জেওর. قيل انها تتلى عند الوضوء.ما ذا الاصل؟
অর্থাৎ বেহেশতি জেওরে বর্ণিত অজুর শুরুতে দোয়াটি কোন ভিত্তি আছে কি?
তারিখ: ১২/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা তাহের শরফুদ্দিন চাঁদপুর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আপনার প্রদত্ত দুআটি বেহেশতি জেওরের মূল উর্দূ সংস্করণে বিদ্যমান নেই। বরং তার অনুদিত বাংলা সংস্করণে (৭৮ নং পৃষ্ঠায়) রয়েছে। এটি অনুবাদকের পক্ষ থেকে নিজস্ব সংযোজন। উল্লেখ্য যে, পাঠকের প্রয়োজন বিবেচনা করে চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনের এখতিয়ারের বিষয়টি তিনি ভূমিকাতেই উল্লেখ করে দিয়েছেন। এছাড়া তিনি এই সংযোজনীর পূর্বাংশে বন্ধনীতে লিখে দিয়েছেন যে, ( নিম্নের দোআগুলি মূল কিতাবে নাই। তবে শিখিয়া লইয়া আমল করা ভালো। ) অর্থাৎ, তিনি এগুলোকে বিধানগতভাবে সুন্নাত, ওয়াজিব কিংবা ফরজ হিসেবে অভিহিত করেননি। বরং নিছক ভালো বা মানদূব বলেছেন মাত্র।
প্রকাশ থাকে যে, ছারছীনা দারুছছুন্নাত লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত মাওলানা শাহ ছুফি নেছারুদ্দীন আহমদ (রহ.) কর্তৃক সংকলিত গ্রন্থ "তরীকুল ইসলাম"এর ১ম খণ্ডের ৬২ নং পৃষ্ঠাতেও বক্ষমান দুআটি সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
এবার আসা যাক দু'আটির শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় প্রসঙ্গে। দুআটি চারটি বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত। যারমধ্যে প্রথম দুটি বাক্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। শেষ দুটি বাক্য আমাদের অনুসন্ধান মোতাবেক এখনো পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
প্রথমত:
অজুর শুরুতে তাসমিয়া বা বিসমিল্লাহ বলা জমহুরের মতে সুন্নাহ আর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর একটি মত হলো অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ফরজ/ওয়াজিব। দলিল:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُوسَى، عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لاَ وُضُوءَ لَهُ وَلاَ وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ " .
কুতায়বা ইবনে সাঈদ .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ ঐ ব্যক্তির নামায আদায় হয় না যে সঠিক ভাবে উযু করে না এবং ঐ ব্যক্তির উযু হয় না যে আল্লাহর নাম স্মরণ করে না (অর্থাৎ বিসমিল্লাহ্ বলে না)। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ১০১
হাদীসের ব্যখ্যা:
অযূ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলার বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে এটা কি সুন্নাত, মুস্তাহাব না ওয়াজিব, সে সম্পর্কে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। ইমাম আযম আবূ হানীফা, ইমাম শাফিঈ, ইমাম মালিক ও হাম্বলীদের পক্ষ থেকে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায় ১. সুন্নাত, ২. মুস্তাহাব।
হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাব আল-হিদায়ার লেখক শায়খ বুরহানুদ্দীন মুরগীনানী (মৃ. ৫৯৩ হি./১১৯৭ খৃ.) একে সুন্নাতের মধ্যে উল্লেখ করলেও মুস্তাহাব হবার বর্ণনাটিকে প্রাধান্য দিয়ে বলেছেন والاصح انها مستحبة অর্থাৎ অধিকতর সঠিক হল, অযূতে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হানাফী মাযহাবের অপর এক বিজ্ঞ আলিম শায়খ ইব্ন হুমাম (মৃ. ৮৬১/১৪৫৭) অযূতে বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব বলে মত প্রকাশ করেছেন, কিন্তু তাঁরই বিশিষ্ট ছাত্র আল্লামা কাসিম ইন কুত্-লুবুগা (মৃ. ৮৭৯/১৪৭৪) এটাকে তাঁর শায়খের স্বতন্ত্র অভিমত, যা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন।
ইমাম মালিক (র) থেকে সুন্নাত ও মুসতাহার হবার মত বর্ণিত আছে; ইমাম শাফিঈ ও মালিক (র)-এর সঠিক মত হল, অযূর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর দুই রিওয়ায়াতের মধ্যে ইবন কুদামা (মৃ. ৬২০ / ১২২৩) যিনি হাম্বলী ফিক্হ-এর সবচে নির্ভরযোগ্য রাবী তিনি মুসতাহাব হওয়ার রায়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। কেউ কেউ ইমাম আহমদ-এর প্রতি ওয়াজিব হবার মত আরোপ করলেও তা সঠিক নয়। কারণ ইবন কুদামা দু'টি রিওয়ায়াতই উল্লেখ করেছেন, অতঃপর শেষোক্তটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসহাক ইব্ন রাহওয়ায়াহ (মৃ. ৩৩৭/৯৪৯) ও কোন কোন আহলে যাহের একে ওয়াজিব বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাদের দলীল হল 'অযূর মাসনূন তরীকা' শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীস لا وضوء لمن لم يذكر اسم الله যে বিসমিল্লাহ বলবে না, তার অযূ হবে না।”
তাদের মতে কেউ জেনে শুনে, ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ ত্যাগ করলে তাঁর অযু হবে না, পুনরায় অযূ করতে হবে। আর ভুলবশত না পড়লে তা মাফ হয়ে যাবে।
জমহুর উলামায়ে কিরাম অন্যান্য হাদীসের আলোকে উল্লিখিত হাদীসের এই অর্থ করেন যে, "বিসমিল্লাহ না বললে অযূ হবে না অর্থ পূর্ণাঙ্গ অযু হবে না, যেমন এক হাদীসে বলা হয়েছে عن أبي هريرة قال قال رسول الله ﷺ لا صلوة لجار المسجد الا في المسجد
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : মসজিদের প্রতিবেশীর জন্য মসজিদে ছাড়া সালাত হয় না।
এর বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :
১. অযূর শুরুতে বিস্-মিল্লাহ বলা ওয়াজিব হওয়া কোন শক্তিশালী দ্বারা প্রমাণিত নয়। উল্লিখিত হাদীসটি সনদের দিক থেকে দুর্বল। যেমন ইমাম আহমদ (র)-এর মন্তব্য ইমাম তিরমিযী (র) উদ্ধৃত করেছেন যে,
قال أحمدُ بنُ حَنْبَلٍ لَا أَعْلَمُ في هذا الباب حديثا لَهُ اسْنَادُ. جيد
আহমাদ ইব্ন হাম্বাল (র) বলেন, এ বিষয়ে এমন কোন হাদীস আমার জানা নেই, যে হাদীসটির সনদ জায়্যিদ বা উত্তম বলা যেতে পারে।
হাদীস দুর্বল হবার কারণ হল, এ হাদীসের মূলভিত্তি রাবাহ ইব্ন আবদুর রাহমান-এর উপর। হাফিয ইব্ন হাজার আসকালানী (মৃ. ৮৫২/১৪৪৯) তাঁর التلخيص الحبير গ্রন্থে তাকে মাজহূল বা অজ্ঞাত পরিচয় রাবী বলে উল্লেখ করেছেন। উপরন্তু তিনি আবূ যুর'আ (মৃ. ৮২১/১৪২৩) ও আবূ হাতিম (মৃ. ৩২২/৯৩৩) এর উক্তি ও বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা রাবাহকে মাজহূল বলেছেন।
ইব্ন হিব্বান (মৃ. ৩৫৪.৯৬৫) অবশ্য তাঁর 'কিতাবুস সিকাত' (كتاب الثقات) গ্রন্থে রাবাহকে স্থান দিয়েছেন। কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লামা সুয়ূতী (মৃ. ৯১১/১৫০৫) তাঁর তাদরীবুর রাবী (تدريب الراوى) গ্রন্থে এ কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ইব্ন হিব্বানের পরিভাষা জমহূর মুহাদ্দিসের পরিভাষা থেকে ভিন্ন। তাঁর মতে কোন বিশ্বস্ত রাবী কারো কাছ থেকে হাদীস রিওয়ায়াত করলে সে ব্যক্তি (তার কাছ থেকে রিওয়ায়াত করা হচ্ছে) মাজহূল থাকা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত রাবী বলে বিবেচিত হবেন। তাই ইব্ন হিব্বান-এর কিতাবুস সিকাত-এ উল্লেখ থাকলেই সে রাবী প্রকৃত বিশ্বস্ত হয়ে যাবেন না।
হাদীসটিতে দ্বিতীয় দুর্বলতা হল, তাতে আবূ ছিফাল আল-মুরবীর নাম উল্লিখিত হয়েছে। তার সম্পর্কে আল-হায়সামী (১.৮০৭ হি.) স্বীয় গ্রন্থ 'মাজমাউয যাওয়াইদ' এ লিখিছেন যে قال البخارى فى حديثه نظر অর্থাৎ ইমাম বুখারী (র) বলেছেন তার হাদীসে দুর্বল ও আপত্তি রয়েছে ।
২. বহু সাহাবী অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অযূর বিবরণ দিয়েছেন। এসবের কোথাও 'বিসমিল্লাহ' বলার উল্লেখ পাওয়া যায় না। ‘উযূর মাসনূন তরীকা' শীর্ষক আলোচনা উল্লিখিত হযরত উসমান ও হযরত আলী (রা)-এর বর্ণিত হাদীসদ্বয় ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন যায়িদ (রা) থেকেও এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ঃ
عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي حَسَن سَأَلَ عَبْدُ اللهِ بْنُ زَيْدٍ عَنْ وَضَوْءِ النَّبِيِّ ﷺ فَدَعَا بِتَوْرٍ مِّنْ مَّاءٍ فَتَوَضَّاءَ لَهُمْ وَضَوْءَ النَّبِيِّ ﷺ فَأَكْفَا عَلَى يَدِهِ مِنْ التَّوْرِ فَغَسَلَ يَدَيْهِ ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فِي التَّوْرِ فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَق وَاسْتَنْثَرَ ثَلَاثَ غُرْفَات ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَمَسَحَ رَأسَهُ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ مَرَّةً وَاحِدَةً ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَينِ
আমর উব্ন আবূ হাসান (র) থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইব্ন যায়িদ (রা) কে নবী (সা)-এর অযূ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি তখন এক পাত্র পানি আনালেন এবং তাদের (দেখাবার) জন্য নবী (সা)-এর মত অযূ করলেন। তিনি পাত্র থেকে দু'হাতে পানি ঢাললেন।। তা দিয়ে হাত দু'টি তিনবার ধুলেন। তারপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিন আঁজলা পানি নিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তারপর আবার হাত ঢুকালেন। তিনবার তাঁর মুখমণ্ডল মুবারক করলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) দুই হাত কনুই পর্যন্ত দু'বার ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত দিয়ে সামনে এবং পিছনে একবার মাত্র মাথা মাসেহ করলেন । তারপর দু' পা গিরা পর্যন্ত ধুলেন।
সুতরাং 'বিসমিল্লাহ' বলা যদি ওয়াজিবই হত তবে এ সব হাদীসে অবশ্যই তার উল্লেখ থাকত ।
দ্বিতীয়ত প্রথম অংশ তথা
بِاسْمِ اللَّه الْعَظِيمِ وَالْحَمْدِ لِلَّهِ عَلَى دِينِ الْإِسْلَامِ
বাক্যটি সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। যেমন,
قَالَ الطَّحَاوِيُّ وَالْأُسْتَاذُ الْعَلَّامَةُ مَوْلَانَا فَخْرُ الدِّينِ الْمَايَمُرْغِيُّ الْمَنْقُولُ عَنْ السَّلَفِ فِي تَسْمِيَةِ الْوُضُوءِ بِاسْمِ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَالْحَمْدِ لِلَّهِ عَلَى دِينِ الْإِسْلَامِ وَفِي الْخَبَّازِيَّةِ هُوَ الْمَرْوِيُّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ كَذَا فِي مِعْرَاجِ الدِّرَايَةِ. ( الفتاوى العالمكيرية ٦/١)
অর্থাৎ, ইমাম ত্বহাবী বলেন, " সত্যনিষ্ঠ পূর্বসূরি সালাফে সালেহীনগণ হতে যুগপরম্পরায় অজু শুরুর প্রাক্কালে এই দুআটি পাঠের প্রচলন অব্যাহতভাবে চলে আসছে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি -৬/১)
وكذا قال البخاري: هو المروي عن رسول الله ﷺ. ( البناية شرح الهداية ١٩٤ / ١)
ইমাম বুখারী (রাহি.) বলেন, উল্লিখিত হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে। ( বিনায়াহ - ১৯৪/১)
আল্লামা ঊহাবাতুয যুহাইলি বলেন,
والوارد عنه فيما رواه الطبراني عن أبي هريرة بإسناد حسن - باسم الله العظيم، والحمد لله على دين الإسلام. ( الفقه الإسلامي وأدلته - ٣٩٤ /١)
এই হাদীসটি ইমাম ত্ববরানী হজরত আবূ হুরায়রা (রাযি.) হতে হাসান সনদে বর্ণনা করেন। ( আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু - ৩৯৪ /১)
আল্লামা আব্দুর রহমান আল জুযাইরি বলেন,
فيقول في ابتداء الوضوء: باسم الله العظيم، باسم الله العظيم، والحمد لله على دين الإسلام، ( الفقه على المذاهب الأربعة - ٧٠/١)
অর্থাৎ, অজুর প্রারম্ভিক মুহুর্তেই এই দুআটি পাঠ করবে- (যার অর্থ হলো, " মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। ইসলাম ধর্মে (অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ( আল-ফিকহু আলা-ল মাযাহিবিল আরবা'আ - ৭০/ ১)
এবার আসা যাক দুআটির শেষাংশের প্রসঙ্গে, যেটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এজাতীয় দুআগুলোর প্রসঙ্গে শায়খ বিন বায (রাহি.) জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
لا يؤثر، يدعو بما حضره، وما أحب، والحمد لله، يدعو بما حفظ، ويدعو بما أحب من الدعوات الطيبة، ولو كانت غير واردة، والحمد لله.
অর্থাৎ, তাতে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বেনা। প্রত্যেকেরই উচিত প্রাণখুলে হৃদয় উজাড় করে আল্লাহর কাছে চাওয়া। যদিও তার চাওয়ার ভাষা বা মর্মটা হাদীসের বর্ণিত সরাসরি অর্থ বহন না করে, তাতেও কোন সমস্যা নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা হলো,
لا يزَالُ يُسْتَجَابُ للعبدِ ما لم يَدْعُ بإثمٍ أو قَطِيعةِ رَحِمٍ ، ما لم يَسْتَعْجِلْ ( رواه البخاري - ٦٣٤٠)
অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাড়াহুড়ো বিহীন কোন প্রার্থনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় যদি আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন কিংবা পাপাচারকেন্দ্রিক কোন বিষয় না হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ সকল প্রকার দুআগুলোকে সুনিশ্চিতভাবে কবুল করে নেন। ( সহীহ বুখারী- ৬৩৪০)
আলোচ্য হাদীসে দুআয়ে মা'সুরা-এর কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, ব্যাপকভাবে সকলের মনের চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করে দিবেন।
لا مانع شرعا أن يدعو المسلم بما تيسر له من الأدعية التي ينشئها من تلقاء نفسه، لأن باب الدعاء واسع فللمسلم أن يدعو بما شاء من خير الدنيا والآخرة ما لم يشتمل دعاؤه على إثم أو قطيعة رحم أو شرك أو سوء أدب أو نحو ذلك.
অর্থাৎ, মানুষ নিজের সাজানো শব্দমালার গাঁথুনি দিয়ে রচিত বাক্য দিয়ে প্রার্থনা করাতে শরয়ী কোন বাঁধা নেই। কারণ মুনাজাতের পরিমণ্ডল ব্যাপক ও সুবিস্তৃত। প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে আল্লাহর কাছে মন খুলে যা খুশি, তাই চাইতে পারবে। তবে পাপাচার, শিরক, শিষ্টাচার বহির্ভূত কোন কর্মকাণ্ড কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন সংক্রান্ত কোন কাজের জন্য দুআ করা চলবেনা।
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত দুআগুলো প্রার্থনা কবুলের ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
অতএব মুনাজাতের সময় দুআয়ে মা'সুরাগুলোই অধিক পরিমাণে উচ্চারণ করা চাই।
উল্লেখ্য যে, দুআয়ে উল্লেখিত দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ
السلام حق والكفر باطل.الاسلام نور والكفر ظلمة.
বাক্যদ্বয় সরাসরি কোরআন হাদিসে না থাকলেও কোরআন সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত এবং নির্যাস। যেমন,
Surah Al-Baqara, Verse 257:
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। সূরা বাকারা-২৫৭
তাফসির:
فلهذا الله يقود المؤمنين إلى جانب النور،
والكفار يقودهم الطاغوت إلى جانب الظلام.
الولي هنا الناصر والمعين أو المحب أو متولي أمورهم ، ومعنى ( آمنوا ) أرادوا أن يؤمنوا ، و ( الظلمات ) هنا الكفر ، و ( النور ) الإيمان
অর্থাৎ জুলমত হলো কুফর আর নূর হলো ঈমান। সূত্র: তাফসিরে আল-বাহরুল মুহিত - ২য় খণ্ড; ২৮১ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, উল্লিখিত দুআটির প্রথমাংশ সুসাব্যস্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আর শেষাংশের অর্থ অনুধাবনপূর্বক দুআয়ে মাসনূন না মনে করে নিয়মিত রুটিন না বানিয়ে মাঝে মধ্যে পড়াতে কোন সমস্যা নেই।
তবে দুআ কবুলের নিশ্চয়তা লাভের জন্য মুনাজাতের সময় আদয়ায়ে মাসনুনাহকে প্রাধান্য দেয়াটাই হলো অধিকতর নিরাপদ ও আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির জন্য সর্বাধিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম