জিজ্ঞাসা-১২৭৮৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সালাতের ওয়াজিব গুলো দলীল সহ বিস্তারিত জানার ইচ্ছা।
তারিখ: ০১/১০/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবুসুমাইয়া শাহজাহান শেখ। কুমিল্লা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নামাজের ওয়াজিবগুলোর সংখ্যা কুরআন হাদিসে নির্ধারিত হয়নি, ইমামদের দ্বারা নির্ধারিত, তাই এর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নিচে ১৪টি ওয়াজিব এর বিবরণ দেওয়া হলো:
নামাজের ওয়াজিব ১৪টি:
১। আলহামদু শরীফ সম্পূর্ণ পড়া। দলিল:
756 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:152] قَالَ: «لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ»
আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... উবাদা ইবনে সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামায হল না।* তাখরিজ: বুখারী ৭৫৬
নোট:
*এ হাদীস দ্বারা বাহ্যত বুঝা যায়, সূরা ফাতিহা পড়া ছাড়া নামায় হয় না। সুতরাং যে কেউ নামায আদায় করবে, তাকে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। তবে কুরআনে কারীম ও অন্যান্য বহু সহীহ হাদীসের বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, জামা'আতের নামাযে ইমামের ফাতিহা পাঠ দ্বারা মুক্তাদীর পড়া হয়ে যায়। উদাহরণত- এক. কুরআন মজীদে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন : “যখন কুরআন পড়া হয়, তোমরা মনোযোগের সাথে তা শুনবে এবং নীরব থাকবে। এতে তোমাদের উপর রহমত বর্ষিত হবে” (সূরা আরাফঃ ২০৪) । এ আয়াতে ইমাম ও মুক্তাদীর দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ইমামের কাজ কুরআন পড়া আর মুক্তাদীর কাজ নীরবে তা শোনা। ইমামের সাথে মুক্তাদীও যদি পড়তে থাকে তবে তা এ নির্দেশের পরিপন্থি হবে। নিম্নোক্ত হাদীসে বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ، فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ»
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১২৯৪, লিলবায়হাকী,হাদীস নং-২৮৯৭, মুসন্নাফ ইবনে আবীশাইবা, হাদীস নং-৩৭৭৯, মুসনাদে আবীহানীফা, হাদীস নং-২৫}
পরিস্কার বুঝা গেল উপরোক্ত হাদীসটি সহীহ হাদীস। আর উক্ত সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমরা বলি ইমামের পিছনে কোন কিরাত পড়বে না। চাই তা সূরা ফাতিহা হোক বা অন্য কোন সূরা।
২। সূরা ফাতিহার পর যেকোনো একটি সূরা মিলানো। ( তিন আয়াত পরা, অথবা ১আয়াত তিন আয়াত সমপরিমাণ পড়া।) দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ، بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ
আবুল ওয়ালীদ ..... আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমরা যেন নামাযের মধ্যে সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে আল-কুরআনের সহজপাঠ্য কোন আয়াত পাঠ করি। তাখরিজ: আবু দাউদ-৮১৮
হাদিস নং-০২
أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ، أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ» وَحَدَّثَنَاهُ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالَا: أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، بِهَذَا الْإِسْنَادِ مِثْلَهُ وَزَادَ فَصَاعِدًا
উবাদা বিন সামেত রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না, [আরেক বর্ণনায় এসেছে] এবং অতিরিক্ত সূরা না পড়লেও নামায হবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৯৪]
৩। রুকু সিজদায় দেরি করা। দলিল:
إنَّ أسوأَ النَّاسِ سرقةً الَّذي يسرِقُ من صلاتِه : لا يُتمُّ ركوعَها ولا سجودَها
أخرجه أحمد (22642) واللفظ له، والدارمي (1328)، وابن خزيمة (663)
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সবচেয়ে জঘন্য চোর হলো যে তার নামাজে চুরি করে। সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে নামাজে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু ও সিজদা পুরা করে না। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ -২২৬৪২; দারেমি-১৩২৮
৪। রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া হয়ে দেরি করা। দলিল:
6251 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا» وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ، فِي الأَخِيرِ: «حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا» ،
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে নামায আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করল। নবী (ﷺ) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে নামায আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নামায শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার নামাযের বাকী সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবু উসামা বর্ণনার শেষে বলেন, (দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠে) এমনকি তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তাখরিজ: বুখারি-৬২৫১
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকু-সিজদায় স্থির হওয়া ওয়াজিব। রুকু-সিজদায় গিয়ে সর্বনি্ম কতটুকু সময় অপেক্ষা করলে ওয়াজিব আদায় হয় এ ব্যাপারে উপরিউক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, مِقْدَارُ الرُّكُوعِ أَنْ يَرْكَعَ حَتَّى يَسْتَوِيَ رَاكِعًا وَمِقْدَارُ السُّجُودِ أَنْ يَسْجُدَ حَتَّى يَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، فَهَذَا مِقْدَارُ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ الَّذِي لَا بُدَّ مِنْهُ . রুকু এবং সিজদায় যে পরিমাণ দেরি না করলেই নয় তা হলো, রুকু-সিজদায় গিয়ে স্থির হওয়া। (ত্বহাবী শরীফ-১৩৯২ নং হাদীসের আলোচনায়, খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৭) ইমাম ত্বহাবীর এ বক্তব্য থেকেও সর্বসাধারণের নিকট ধীরস্থিরের পরিমাণ নির্ধারণ করা কষ্টকর হতে পারে। তাই তাদের জন্য আরো সহজ করে বলা যেতে পারে যে, একবার তাসবীহ পাঠ করা যায় এই পরিমাণ সময় রুকু-সিজদায় অপেক্ষা করলে সেটাকে স্থিরতা বলা যায় এবং এর দ্বারা রুকু-সিজদা পূর্ণ হয়ে যায়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ৪৬৪) তবে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতে এ ধরণের তাড়াহুড়া কোনক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করার মতো সময় অপেক্ষা করা উচিত।
৫। দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে দেরি করা। দলিল:
6251 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا» وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ، فِي الأَخِيرِ: «حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا» ،
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে নামায আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করল। নবী (ﷺ) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে নামায আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নামায শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার নামাযের বাকী সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবু উসামা বর্ণনার শেষে বলেন, (দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠে) এমনকি তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তাখরিজ: বুখারি-৬২৫১
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকু-সিজদায় স্থির হওয়া ওয়াজিব। রুকু-সিজদায় গিয়ে সর্বনি্ম কতটুকু সময় অপেক্ষা করলে ওয়াজিব আদায় হয় এ ব্যাপারে উপরিউক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, مِقْدَارُ الرُّكُوعِ أَنْ يَرْكَعَ حَتَّى يَسْتَوِيَ رَاكِعًا وَمِقْدَارُ السُّجُودِ أَنْ يَسْجُدَ حَتَّى يَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، فَهَذَا مِقْدَارُ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ الَّذِي لَا بُدَّ مِنْهُ . রুকু এবং সিজদায় যে পরিমাণ দেরি না করলেই নয় তা হলো, রুকু-সিজদায় গিয়ে স্থির হওয়া। (ত্বহাবী শরীফ-১৩৯২ নং হাদীসের আলোচনায়, খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৭) ইমাম ত্বহাবীর এ বক্তব্য থেকেও সর্বসাধারণের নিকট ধীরস্থিরের পরিমাণ নির্ধারণ করা কষ্টকর হতে পারে। তাই তাদের জন্য আরো সহজ করে বলা যেতে পারে যে, একবার তাসবীহ পাঠ করা যায় এই পরিমাণ সময় রুকু-সিজদায় অপেক্ষা করলে সেটাকে স্থিরতা বলা যায় এবং এর দ্বারা রুকু-সিজদা পূর্ণ হয়ে যায়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ৪৬৪) তবে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতে এ ধরণের তাড়াহুড়া কোনক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করার মতো সময় অপেক্ষা করা উচিত।
৬। চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে, প্রথম দুই রাকাতের পর বৈঠক করা। দলিল:
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَقَ يُحَدِّثُ، عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: كُنَّا لَا نَدْرِي مَا نَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ غَيْرَ أَنْ نُسَبِّحَ وَنُكَبِّرَ وَنَحْمَدَ رَبَّنَا، وَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَ فَوَاتِحَ الْخَيْرِ وَخَوَاتِمَهُ، فَقَالَ: " إِذَا قَعَدْتُمْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، فَقُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَلْيَتَخَيَّرْ أَحَدُكُمْ مِنَ الدُّعَاءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ فَلْيَدْعُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ "
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমরা জানতাম না, আমরা প্রত্যেক দু’রাকআতে কি বলব এ ব্যতীত যে, আমরা তাসবীহ পড়তাম তাকবীর বলতাম, আর আমাদের প্রভুর প্রশংসা করতাম এবং বলতাম যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন কথা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যার শুরু ও শেষ কল্যানময়। তখন তিনি বললেন দু’রাকআতের পর তোমরা বসে বলবে- (আরবি) আর যার যে দোয়া ভাল লাগে সে দোয়া (পড়ার জন্য) গ্রহণ করবে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট দোয়া করবে। তাখরিজ: সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১১৬৩
৭। দুই বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া। দলিল:
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَقَ يُحَدِّثُ، عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: كُنَّا لَا نَدْرِي مَا نَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ غَيْرَ أَنْ نُسَبِّحَ وَنُكَبِّرَ وَنَحْمَدَ رَبَّنَا، وَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَ فَوَاتِحَ الْخَيْرِ وَخَوَاتِمَهُ، فَقَالَ: " إِذَا قَعَدْتُمْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، فَقُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَلْيَتَخَيَّرْ أَحَدُكُمْ مِنَ الدُّعَاءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ فَلْيَدْعُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ "
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমরা জানতাম না, আমরা প্রত্যেক দু’রাকআতে কি বলব এ ব্যতীত যে, আমরা তাসবীহ পড়তাম তাকবীর বলতাম, আর আমাদের প্রভুর প্রশংসা করতাম এবং বলতাম যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন কথা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যার শুরু ও শেষ কল্যানময়। তখন তিনি বললেন দু’রাকআতের পর তোমরা বসে বলবে- (আরবি) আর যার যে দোয়া ভাল লাগে সে দোয়া (পড়ার জন্য) গ্রহণ করবে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট দোয়া করবে। তাখরিজ: সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১১৬৩
৮। ইমামের জন্য কেরাত আস্তে এবং জোরে পড়া। (অর্থাৎ ফজর মাগরিব এশার নামাজে কেরাত জোরে পড়তে হবে। আর যোহর ও আসরের নামাজে কেরাত আস্তে পড়া ওয়াজিব। দলিল:
والنبي صلى الله عليه وسلم قال : ( صلوا كما رأيتموني أصلي) ، وقد كان النبي صلى الله عليه وسلم يجهر في صلاة الفجر والركعتين الأوليين من صلاة المغرب والعشاء ، ويسر فيما عداهما .
ومن النصوص الدالة على الجهر :
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সেরূপ নামাজ আদায় কর, যেরূপ আমাকে আদায় করতে দেখো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর, মাগরিব ও ঈশার নামাজে উচ্চ আওয়াজে কেরাত পাঠ করতেন। দলিল-
ফজর নামাজে:
حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ مَا قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الْجِنِّ وَمَا رَآهُمُ انْطَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي طَائِفَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ عَامِدِينَ إِلَى سُوقِ عُكَاظٍ وَقَدْ حِيلَ بَيْنَ الشَّيَاطِينِ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ وَأُرْسِلَتْ عَلَيْهِمُ الشُّهُبُ فَرَجَعَتِ الشَّيَاطِينُ إِلَى قَوْمِهِمْ فَقَالُوا مَا لَكُمْ قَالُوا حِيلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ وَأُرْسِلَتْ عَلَيْنَا الشُّهُبُ . قَالُوا مَا ذَاكَ إِلاَّ مِنْ شَىْءٍ حَدَثَ فَاضْرِبُوا مَشَارِقَ الأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا فَانْظُرُوا مَا هَذَا الَّذِي حَالَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ . فَانْطَلَقُوا يَضْرِبُونَ مَشَارِقَ الأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا فَمَرَّ النَّفَرُ الَّذِينَ أَخَذُوا نَحْوَ تِهَامَةَ - وَهُوَ بِنَخْلٍ - عَامِدِينَ إِلَى سُوقِ عُكَاظٍ وَهُوَ يُصَلِّي بِأَصْحَابِهِ صَلاَةَ الْفَجْرِ فَلَمَّا سَمِعُوا الْقُرْآنَ اسْتَمَعُوا لَهُ وَقَالُوا هَذَا الَّذِي حَالَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ . فَرَجَعُوا إِلَى قَوْمِهِمْ فَقَالُوا يَا قَوْمَنَا ( إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا * يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا) فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى نَبِيِّهِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم ( قُلْ أُوحِيَ إِلَىَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ) .
শায়বান ইবনে ফাররুখ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জ্বীনদের নিকট কুরআন পাঠ করেন নি এবং তাদের দেখেন নি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদল সাহাবীর সঙ্গে উকায বাজারে গমন করেন তখন শয়তানদের জন্য আকাশের সংবাদ সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তানদের উপর অগ্নিশিখা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। তাই একদল শয়তান তাদের নিকট গিয়ে বলল, যে, আকাশের খবরাখবর জ্ঞাত হওয়া আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং আমাদের উপর আগুনের শিখা বর্ষিত হচ্ছে। তারা বলল, নিশ্চয়ই কোন নতুন ঘটনা ঘটে থাকবে। তোমরা দুনিয়ার পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত খোজ নিয়ে দেখ, কি কারণে আমাদের নিকট আকাশের খবর আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তারা দুনিয়ার পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে বেড়াতে লাগল।
তাদের কিছু সংখ্যক লোক তেহামার পথে উকায বাজারে গমন করছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন ‘নাখল’ নামক স্থানে স্বীয় সাহাবীগণ সহ ফজরের নামায আদায় কর ছিলেন। তারা (জ্বীন সম্প্রদায়) যখন কুরআন পাঠ শুনল, তখন তাতে মনোনিবেশ করল এবং বলল আকাশের খবরাখবর বন্ধ হওয়ার কারণ একমাত্র এটাই। এরপর তারা তাদের কওমের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমাদের কওম। আমরা এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সত্য পথ-নির্দেশক। আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। তখন আল্লাহ তাঁর নবী (ﷺ) মুহাম্মাদ এর উপর (এ ওহী) অবতীর্ণ করেনঃقُلْ أُوحِيَ إِلَىَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নযিল হয়েছে যে, জ্বীনদের একটি দল শুনেছে ......।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯০ (আন্তর্জাতিক নং ৪৪৯)
মাগরিব নামাজে:
ما رواه البخاري (735) ، ومسلم (463) عن جبير بن مطعم رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم قرأ في المَغْرِب بِالطّورِ
অর্থাৎ হজরত জাবের ইবনে মুতআম রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিব নামাজে সূরা তুর পাঠ করতে শুনেছি। তাখরিজ: বুখারি-৭৩৫; মুসলিম-৪৬৩
ঈশার নামাজে:
وما رواه البخاري (733) ، ومسلم (464) عن البراء رضي الله عنه قال : سمعتُ النبي صلى الله عليه وسلم يقرأ " والتينِ وَالزيتُون " في العشاء ، وما سمعت أحداً أحسنَ صوتاً منه .
হজরত বারা রা. বলেন, আমি ঈশার নামাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সূরা তীন পাঠ করতে শুনেছি। তার চেয়ে সুন্দর তেলাওয়াত আমি শুনিনি। তাখরিজ: বুখারি-৭৩৩; মুসলিম-৪৬৪
যোহর ও আসর নামাজে:
760 - حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، قَالَ: حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ: سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالعَصْرِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْنَا: بِأَيِّ شَيْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ؟ قَالَ: «بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ»
উমর ইবনে হাফস (রাহঃ) ......... আবু মা’মার (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী (ﷺ) কি যোহর ও আসরের নামাযে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনরা কি করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির (মুবারকের) নড়াচড়ায়। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, আন্তর্জাতিক নং ৭৬০
৯। বিতরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ جَوَّاسٍ الْحَنَفِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ بُرَيْدِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ أَبِي الْحَوْرَاءِ، قَالَ قَالَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ رضى الله عنهما عَلَّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَلِمَاتٍ أَقُولُهُنَّ فِي الْوِتْرِ قَالَ ابْنُ جَوَّاسٍ فِي قُنُوتِ الْوِتْرِ " اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ " .
কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও আহমাদ ইবনে জাওয়াস আল্-হানাফী (রাহঃ) ..... আবুল হাওরা (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, যা আমি বিতরের নামাযে পাঠ করি।
তাখরিজ: আবু দাউদ-১৪২৫
হাদিস নং-০২
عن إبراهيمَ، عن عَلقمةَ، قال: (إنَّ ابنَ مسعودٍ وأصحابَ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم كانوا يَقنُتونَ في الوترِ قبلَ الرُّكوعِ)
অর্থাৎ হজরত আলকামা রহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা এবং নবির সাহাবারা বিতর নামাজে রুকুর পূর্বে কুনুত পাঠ করতেন। তাখরিখ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা-২/৩০২
১০। দুই ঈদের নামাজে ছয় ছয় তাকবীর বলা। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের ও ঈদুল আজহায় দু’রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর তিনবার তাকবীর বলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তিনবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। দলিল:
قال الشافعي سمعت سفيان بن عيينة يقول سمعت عطاء ابن ابي رباح يقول سمعت عبد الله بن عباس يقول اشهد علي رسول الله صلي الله عليه وسلم انه كبر في صلاة العيدين في الأولي سبعا سوي تكبيرة الاحرام وفي الثانية خسما سوي تكبيرة القيام ـ وهذا اصح اسنادا ـ واوثق رجالا واثبت لفظا لانه جاء بقوله سمعت اخرجه الشافعي في الام ـ
অর্থঃ ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন- আমি সুফিয়ান বিন উয়াইনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন ঃ আমি আতাআ বিন আবু রাবাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ বিন আব্বাসকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি দু’ঈদের সালাতের প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত সাত তাকবীর দিয়েছেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে দাঁড়ানোর তাকবীর ব্যতীত পাঁচ তাকবীর দিয়েছেন।
এ হাদীসের সনদ অধিক ছহীহ এবং রাবীগণ অধিক নির্ভরযোগ্য এবং অধিক প্রতিষ্ঠিত শব্দে বর্ণিত কেননা এ হাদীস সামিতু (আমি নিজে শুনেছি) শব্দ-দ্বারা এসেছে (কিতাবুল উম, ১ম খন্ড, ২৩৬ পৃঃ)।
১১। প্রত্যেক ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতকে কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা। দলিল:
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى الْعَنَزِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنِ الْحَجَّاجِ، - يَعْنِي الصَّوَّافَ - عَنْ يَحْيَى، - وَهُوَ ابْنُ أَبِي كَثِيرٍ - عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، وَأَبِي، سَلَمَةَ عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِنَا فَيَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَتَيْنِ وَيُسْمِعُنَا الآيَةَ أَحْيَانًا وَكَانَ يُطَوِّلُ الرَّكْعَةَ الأُولَى مِنَ الظُّهْرِ وَيُقَصِّرُ الثَّانِيَةَ وَكَذَلِكَ فِي الصُّبْحِ .
আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিয়ে নামায আদায় করতেন যোহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও দুটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও কখনও আমরা আয়াত শুনতে পেতাম। আর যোহরের প্রথম রাকআত লম্বা করতেন এবং দ্বিতীয় রাকআত খাটো করতেন। অনুরূপ ফজরের নামাযেও। তাখরিজ: মুসলিম-৪৫১
১২। প্রত্যেক রাকাতের ফরজ গুলির তারতিব ধারাবাহিক ঠিক রাখা। দলিল:
6251 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا» وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ، فِي الأَخِيرِ: «حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا» ،
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে নামায আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করল। নবী (ﷺ) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে নামায আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নামায শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার নামাযের বাকী সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবু উসামা বর্ণনার শেষে বলেন, (দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠে) এমনকি তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তাখরিজ: বুখারি-৬২৫১
ব্যাখ্যা:
أنَّ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم علَّمَ المسيءَ في صلاتِه الصَّلاةَ بقولِه: «ثم... ثم... ثم...» و«ثم» تدُلُّ على
অর্থাৎ এ হাদিসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুম্মা ছুম্মা অতঃপর অতঃপর দ্বারা তারতিব প্রমাণিত হয়।
১৩। সিজদার অঙ্গ গুলো জমিনে রাখা। দলিল:
812 - حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ عَلَى الجَبْهَةِ، وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَاليَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ، وَأَطْرَافِ القَدَمَيْنِ وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ»
মু’আল্লা ইবনে আসাদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭৫ (আন্তর্জাতিক নং ৮১২)
১৪। আসসালামুয়ালাইকুম বলে নামাজ শেষ করা। দলিল:
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنِ ابْنِ عَقِيلٍ، عَنْ مُحَمَّدِ ابْنِ الْحَنَفِيَّةِ، عَنْ عَلِيٍّ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ " .
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা। ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সলাত শুরু করার দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। আর সলাতের সালাম ফিরানোর দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হালাল হয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক