জিজ্ঞাসা-১২৩১৫
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ
অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করার বিধান জানিয়ে কৃতার্থ করবেন
যাঝাকুমুল্লাহু খাইরান। তারিখ: ২১/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মহিউদ্দিন সিলেট থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, দুএকটি বিচ্ছিন্ন মত ব্যতিত পৃথিবীর সমস্ত ওলামা-ফোকাহা সম্মানিত চারসহ সবার ঐক্যমতে পবিত্র ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,
قال ابن عبد البر في الاستذكار (8/10): ((أجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا طاهر
অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর সকল ফক্বীহগণ ও তাদের অনুসারীগণ একমত এবং এর উপরই সকলে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন যে, কুরআনে কারীম পবিত্র হওয়া ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। সূত্র: আল ইসতিজকার-১০ খণ্ড; ৮পৃ.
দলিল:
আয়াত নং-০১
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। সূরা ওয়াকিয়া-৭৯
হাদিস নং-০১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেন, রাসূল ﷺ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না। তাখরিজ: মুয়াত্তা মালিক-৬৮০, কানযুল উম্মাল ২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার-২০৯, আল মুজামুল কাবীর-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর-১১৬২, সুনানে দারেমি-২২৬৬
হাদিস নং-০২
عن عبد الله بن عمر أن رسول الله ﷺ قال:لا يمس القرآن إلا طاهر
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। তাখরিজ: মাযমাউজ যাওয়ায়েদ ৫১২
নোট: আল্লামা হাফেজ নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী বলেন, ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিকা তথা গ্রহণযোগ্য।
হাদিস নং-০৩
كان رسول الله ﷺ يقضي حاجته, ثم يخرج فيقرأ القرآن ويأكل معنا اللحم, ولا يحجبه ” وربما قال لا يحجزه ” من القرآن شيء ليس الجنابة
আলী রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ পায়খানা হতে বের হয়ে কোরআন পড়তেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন। গোসল ফরয হওয়া ছাড়া কোরআন হতে তাঁকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ-৬৪০
প্রশ্ন: ক। যারা ওজুবিহীন কুরআন শরিফ স্পর্শ করা জায়েজ বলে তাদের দলিল কি?
উত্তর: ক। তাদের দলিল হলো,
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। সূরা ওয়াকিয়া-৭৯
ব্যাখ্যা: কতিপয় গবেষকগণ বলেন যে, আয়াতে ‘মুতাহহারুন’ দ্বারা ফেরেশতা উদ্দেশ্য আর ‘হু’ দ্বারা লাওহে মাহফুজ সংরক্ষিত কুরআন উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সম্মানিত ফেরেশতাগণ ব্যতিত কেহই সেখানে স্পর্শ করতে পারবে না। দুনিয়ার কুরআন উদ্দেশ্য নয়।
প্রশ্ন: খ। বিশুদ্ধ/শক্তিশালী মত কোনটি?
উত্তর: খ। আমরা উপরে তাদের যুক্তি দেখলাম যে, দুনিয়ার কিতাব/কুরআন উদ্দেশ্য নয়। তাদেরকে একটি প্রশ্ন যদি তাই হয়, তাহলে পবিত্র কুরআনের শুরুতে সূরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা দূরবর্তী শব্দ (এসমে ইশারা বায়িদ) ব্যবহার করে বলেছেন-
ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ অর্থাৎ ঐ কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। সূরা বাকারা-২
এ আয়াতে দূরবর্তী শব্দ ذَلِكَ ব্যবহার করার কারণে অর্থ কি এই যে, শুধুমাত্র ঐ দূরে লৌহে মাহফুজে সংরক্ষিত কুরআনেই কেবল কোন সন্দেহ নেই। আর জমিনে অবস্থিত কুরআনে সন্দেহ আছে [নাউজুবিল্লাহ]?
নাকি আমরা বলে থাকি যে, এখানে দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার করা হলেও এখানে আসমান ও জমিনের উভয় কুরআনকেই সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে? নিশ্চয় আমরা এ ব্যাখ্যাই করে থাকি। আর সুনিশ্চিতভাবে ব্যাখ্যা এটাই যে, দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার করা হলেও এখানে আসমান ও জমিনের উভয় কুরআনই এখানে উদ্দেশ্য। যেমন ইমাম বায (রহ.) বলেন,
لا يجوز للمسلم مس المصحف وهو على غير وضوء عند جمهور أهل العلم وهو الذي عليه الأئمة الأربعة وهو الذي كان يفتي به أصحاب النبي عليه الصلاة والسلام، قد ورد في ذلك حديث صحيح لا بأس-مجموع فتاوى ومقالات الشيخ ابن باز: 4/383)
অর্থাৎ কোন মুসলমানের জন্য ওজুবিহীন মাসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করা জায়েজ নেই, এটাই জমহুর আহলে এলমদের মত। আর চার ইমাম ও নবি (ﷺ) সাহাবিদের ফতোয়া। সূত্র: মাজমাউল ফাতওয়া ; মাকালাতুশ শায়েখ ইবনে বায-৪/৩৮৩ (ইবনে বায (রহ.) এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত)
وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রা., হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬
সাহাবিদের পক্ষ থেকে যেহেতু বিপরীত কোন মত নেই, সুতরাং ইজমায়ে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত হলো, ওজু ছাড়া ধরা জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: গ। যদি কোন কুরআন শরিফে আরবি বাংলা/অন্য ভাষা মিশ্রিত থাকে, সেটা কি ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে?
উত্তর: গ। এ বিষয়ে বিধান হলো, যদি কোনো কিতাবে কুরআনুল মাজিদের সাথে অন্য লিখা সংযোজিত থাকে এবং অন্যান্য লিখার তুলনায় কুরআন বেশী থাকে, তাহলে সে কিতাবকে স্পর্শকে করা যাবে না। আর কম থাকলে ধরা যাবে, তবে মূল আরবি মতনের উপর হাত রাখা যাবে না। সূত্র: ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৪৫
শেষ কথা হলো, যে মুসলমান কুরআন স্পর্শ করতে ও তা পাঠ করতে ইচ্ছুক- তাকে অবশ্যই দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে। অন্যথায় তাকে গুনাহগার হতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক