আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৮৬: পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে কি?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৭৮৬: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

২জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রী অভিভাবককে না জানিয়ে গোপনে ৫/৬ জন মানুষের সামনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গোপনে ৫ বছর যাবত পড়াশোনার পাশাপাশি দাম্পত্য সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারি চাকুরী হওয়ায় মেয়ের পরামর্শে ছেলেটি মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তিনি সম্মত হয়েছেন। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হবে। উল্লেখ্য যে, গোপন বিয়ের কথা প্রকাশ করা হলে মেয়ের প্রচন্ড একগুঁয়ে স্বভাবের বাবা কোনভাবেই সেটা মানবেননা এবং সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। প্রশ্ন হলো পূর্ব বিবাহিত দম্পতির এভাবে আনুষ্ঠানিক বিয়ে কি شريعه সম্মত হবে?

তারিখ:  ৩০/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা নূরুল আমীন, নীলফামারী  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, একটি স্বার্থক বিয়ে বাস্তবায়নের ষোলকলা পূর্ণ হওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়। তার মাঝে অন্যতম হলো-

উভয়পক্ষের অভিভাবকদের পূর্বানুমতি। ইমাম সুফিয়ান সাওরি, আওযায়ী, শাফেয়ী, মালেক (রাহি.) সহ একদল যুগশ্রেষ্ঠ আলেমের নিকট এটি বরং বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্তও বটে। কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কঠোর নির্দেশনা হলো-


عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ‏"‏ ‏.‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ (رواه أبو داؤد ‏)

অর্থাৎ, হযরত ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তার সে বিয়ে বাতিল। তিনি একথাটি তিনবার বলেছেন। (সুনানে আবু দাউদ- ২০৮৩)


বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অপরিহার্যতার বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে তিনি অন্যত্র বলেন- 

عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِيٍّ ‏"‏ ‏.

অর্থা, হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবক ব্যতীত বিয়ে সম্পন্ন হতে পারে না। (জামে তিরমিজি- ১১০১)

এই মতানুসারে পূর্বের আকদে নিকাহ সুসম্পন্ন হয়নি বিধায় অভিভাবকের অনুমতিগ্রহণপূর্বক স্বাভাবিকভাবেই নতুনভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা লাগবেই।

তবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী হানাফী ফিকহ-কে অনুসরণ করেন বিধায় (দম্পতিযুগলও যদি হানাফী মাজহাবের অনুসারী হয়ে থাকে, তাহলে) তাদের পূর্বেকার বিয়ের আকদটিও শুদ্ধ হবে, ইনশা আল্লাহ। তাদের বিগত পাঁচ বছরের সংসার জীবনটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বলে বিবেচিত হবেনা। কারণ ইসলামী শরীয়াহ প্রত্যেক সুস্থমস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীকে সকল প্রকার আকদ (চুক্তিভিত্তিক কার্যক্রম) বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দিয়েছে। বিয়ে-শাদির বিষয়টিও এর বাইরে নয়। আকদে নিকাহ এর ক্ষেত্রেও প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র-পাত্রীদেরই পূর্ণাঙ্গ ইচ্ছাধিকার থাকবে। তারাই এক্ষেত্রে সর্বেসর্বা। পবিত্র কুরআনের ভাষ্যই একথা প্রমাণ করে। 


{ فَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ أَن یَنكِحۡنَ أَزۡوَ ٰ⁠جَهُنَّ إِذَا تَرَ ٰ⁠ضَوۡا۟ بَیۡنَهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِۗ }

অর্থাৎ, নিজেদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্মতি পাওয়ার পর স্ত্রীরা নিজ স্বামীকে বিবাহ করতে চাইলে তোমরা তাদেরকে বাধা প্রদান করোনা। (সূরা বাকারা -২৩২)


আলোচ্য আয়াতে বিয়ে সংঘটনের ব্যাপারে স্ত্রীদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণী প্রচলিত প্রেম-ভালোবাসাকে " না" বলে স্রোতের বাহিরে গিয়ে হালাল সম্পর্ক স্থাপন করেছে। নিজেদের চারিত্রিক অধঃপতনকে রোধ করেছে। তাদের এই ইতিবাচক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো দরকার।


আলোচ্য মাসআলায় ইমামগণের মতভেদের কারণঃ

 এটা সর্বস্বীকৃত যে, বিবাহ বন্ধন এমন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যাতে কনের স্বার্থ যেমন বিজড়িত, ঠিক তেমনভাবে অলি-অভিভাবকদের স্বার্থও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলে অযাচিত পরিস্থিতিতে উভয়েরই স্বার্থহানীর সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান থাকে। কনের স্বার্থ বিজড়িত হওয়া তো সুস্পষ্ট। কেননা, তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ-দুঃখ, ভালোমন্দ সবকিছু বিবাহের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তার জীবন-যৌবন, মঙ্গল-অমঙ্গল ইত্যাদি বিবাহের অনুকূল বা প্রতিকূল হওয়ার উপর নির্ভর করে। কেবলমাত্র বৈষয়িক বা দৈহিক কল্যাণ-অকল্যাণই নয়, বরং মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-শান্তি এমনকি ধর্মীয় কার্যকলাপ, নৈতিক অবস্থাসহ সব কিছুই বিবাহের ভালোমন্দের উপরই বহুলাংশে নির্ভর করে থাকে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন কিছু ঘটলে কনেকেই সরাসরি এর মন্দ প্রতিফল ভোগ করতে হবে। কন্যা অপাত্রে অর্পিত হলে অনেক সময় তার কবল হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য ভয়াবহ পরিণামের দিকে অগ্রসর হতেও সে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না।


অপর দিকে অলি বা অভিভাবকের স্বার্থকেও খাটো করে দেখা যায় না। কেননা, বিবাহের ফলাফল শুধুমাত্র বর-বধূর দাম্পত্য জীবনের মাঝেই সীমিত নয়; বরং এর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক, নিজের ও বংশের মর্যাদার প্রশ্নও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মেয়ে যদি অনভিজ্ঞতার ফলে কিংবা প্রেমের মোহে সাময়িক উত্তেজনার বশে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসে, এর চরম খেসারত তার অভিভাবককেই দিতে হবে। নিচু বংশে বিবাহ করলে বংশমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। এর বিরূপ প্রভাব ভুক্তভোগী কন্যাকে ছাড়িয়ে পরিবারের, বংশের অন্যান্য মেয়েদের বিবাহের মাঝেও প্রকট হয়ে দেখা দেবে। এমনকি অভিভাবক না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে বিবাহের নামে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে অভিভাবকগণ সামাজিক, বৈষয়িক ও মানসিকভাবে নানারকম ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হয়ে পড়েন। তাই ইসলাম অভিভাবককে বলেছে, তুমি তোমার নিজের ব্যক্তিস্বার্থে অথবা জেদের বশবর্তী হয়ে খামখেয়ালিবশত নিজ কন্যাকে তার ইচ্ছার বাইরে গিয়ে যারতার কাছে পাত্রস্থ করতে পারবেনা , ঠিক তেমনিভাবে কনেকেও বলেছে- সাবধান! অলির মতের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছামতো বিবাহ করলে তা নাকচ করার ক্ষমতাও অলির আছে। মোটকথা, ইসলাম উভয় দিকের ভারসাম্য বজায় রেখে এ কাজটি সমাধা করতে পরামর্শ দিয়েছে। আর এটাই হলো প্রকৃত ইনসাফ। এরই ভিত্তিতে ইসলামী আইনজ্ঞদেএ দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক পৃথক হয়ে পড়েছে।


হানাফি ফিকহের মতানুসারে আলোচ্য বিবাহটি সুসম্পন্ন হলেও বিয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু এই বিয়েতে ছুটে গিয়েছে। সেটা হলো ঘটা করে সকলকে জানিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ে সম্পন্ন করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

أعلنوا هذا النكاح واضربوا عليه بالدفوف (رواه الترمذي -١٠٨٩)

অর্থাৎ, তোমরা বেশ প্রচার-প্রসার সহকারে বিয়ে অনুষ্ঠান করো। এবং ব্যাপক প্রচারের সুবিধার্থে দোফ (একধরনের বাদ্যযন্ত্র) বাজাও। ( তিরমিজি -১০৮৯)

সুতরাং ই'লান ও ইশতিহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছুটে যাওয়াতে তা আদায়ের লক্ষ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান পুনর্বার করাতে কোন সমস্যা নেই। 

এছাড়া বলবৎ বিয়ের পুনরাবৃত্তিতেও কোন সমস্যা নেই। এই প্রসঙ্গে মিশরীয় বংশোদ্ভূত সুদানী দায়ী, আফ্রিকা ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডীন ড.আব্দুল হাই ইউসুফ (হাফি.) বলেন, 

فلا مانع من تكرار العقد على امرأة واحدة؛ وذلك لتحقيق غرض شرعي من إعلان النكاح مثلاً، أو حضور من يرغب في حضوره ونحو ذلك، وقد نص على ذلك الفقهاء رحمهم الله تعالى

অর্থাৎ, একই স্ত্রীকে কেন্দ্র করে পুনর্বার আকদে নিকাহ করাতে কোন সমস্যা নেই। শরয়ী দৃষ্টিকোণের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এজাতীয় একই বর-কনের মধ্যকার একাধিক আকদে নিকাহ'র প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যেমন- বিয়ের খবর ব্যাপকভাবে জানান দেয়া, অথবা বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিদের সুযোগ করে দেয়া, ইত্যাদি। ফকীহ আলেমগণ এজাতীয় কর্মপ্রথার বৈধতার স্বপক্ষে নিরংকুশ সমর্থন দিয়েছেন।


قد يلجأ البعض إلى تكرار عقد النكاح في وقتنا الحالي للعديد من الأسباب؛ منها اختلاف جنسية الزوجين وموطنهما، فيُسجل عقد زواج في بلاد الزوج، ومن الممكن تسجيل عقد زواج آخر في بلاد الزوجة، خاصة إذا كانت المحاكم المعنية بين البلدين مختلفة من حيث الأصول، مثل المحاكم المدنية والشرعية واختلاف المعاملات بينهما، أو في حال كتابة عقد زواج دون شهود، لكن القاضي قد وافق عليه وأقرّ بصحته، ثم أراد الزوجان لاحقًا كتابة عقد جديد بحضور الشهود على العقد.[١]

অর্থাৎ, হাল জামানায় অনেক দম্পতির মাঝেই নানাবিধ কারণে পুনর্বিবাহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যেমন- দম্পতিযুগলের জাতিগত ভিন্নতা থাকার কারণে প্রত্যেকেই নিজনিজ দেশে নিবন্ধনভুক্তির জন্য বিবাহের নবায়ন করে থাকে। এছাড়া পূর্বেকার মৌখিক বিয়েকে সাক্ষীর উপস্থিতিতে কাগজে-কলমে দস্তায়িত করার নিমিত্তে বিয়ের পৌনপুনিকতা ঘটানো হয়ে থাকে।


সুতরাং পূর্বেকার সংঘটিত বিবাহকে নতুন মোড়কে উপস্থাপন করাতে শরয়ী কোন বাধা নেই।

এবার বাকী রইলো, অভিভাবকদের কাছে পূর্বেকার বিয়ের কথা সন্তর্পণে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি। যেহেতু এ বিষয়টি সামনে আনলে হিতে বিপরীত হয়ে লংকাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার আশংকা রয়েছে, বিভেদের লেলিহান অগ্নিশিখা দুটি পরিবারকে মূহুর্তেই ভস্মীভূত করে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এবিষয়টি নিয়ে নিরবতাই কাম্য। কারণ বিপরীতমুখী দুইপক্ষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধন রক্ষার খাতিরে সত্যের কিঞ্চিৎ অপলাপ করার অবকাশ শরীয়াহ আমাদেরকে দিয়েই রেখেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْجِيزِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَسْوَدِ، عَنْ نَافِعٍ، - يَعْنِي ابْنَ يَزِيدَ - عَنِ ابْنِ الْهَادِ، أَنَّ عَبْدَ الْوَهَّابِ بْنَ أَبِي بَكْرٍ، حَدَّثَهُ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أُمِّهِ أُمِّ كُلْثُومٍ بِنْتِ عُقْبَةَ، قَالَتْ مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُرَخِّصُ فِي شَىْءٍ مِنَ الْكَذِبِ إِلاَّ فِي ثَلاَثٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ أَعُدُّهُ كَاذِبًا الرَّجُلُ يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ يَقُولُ الْقَوْلَ وَلاَ يُرِيدُ بِهِ إِلاَّ الإِصْلاَحَ وَالرَّجُلُ يَقُولُ فِي الْحَرْبِ وَالرَّجُلُ يُحَدِّثُ امْرَأَتَهُ وَالْمَرْأَةُ تُحَدِّثُ زَوْجَهَا ‏"‏ ‏.‏

. উম্মু কুলসুম বিনতু ‘উকবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, শুধু তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে আমি শুনিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ যে ব্যক্তি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যেসব কথা বলে থাকে সে কারণে তাকে আমি মিথ্যাবাদী মনে করি না। অনুরূপভাবে যুদ্ধের সময় কৌশল হিসেবে যেসব কথা বলা হয় এবং স্বামী স্ত্রীকে যা বলে এবং স্ত্রী স্বামীকে যা বলে। ( সুনানে আবী দাঊদ- ৪৯২১)

এছাড়া উভয় পক্ষের মাঝে কলহের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়ে দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটানোকে শয়তান নিজের কর্মযজ্ঞের সর্বোচ্চ স্বার্থকতা বলে মনে করে থাকে। তাই দম্পতিযুগলের স্থায়ী বিচ্ছেদ হয়ে গেলে ইবলীস শয়তানই সবচাইতে বেশী আনন্দিত হয়ে থাকে, পরম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দীর্ঘ হাদীসে শয়তানের কীর্তিকলাপের বর্ণনা দিয়েছিলেন। যেখানে সে তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকে বিভিন্ন অপারেশনে প্রেরণ করে ।যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো, মানুষকে বিপথে পরিচালিত করা। দিনশেষে সবাই ফেরত এসে নিজনিজ কার্যবিবরণী রিপোর্ট পেশ করলে কারো কর্মই শয়তানের মন ভরাতে পারেনি, তাকে পুলকিত করতে পারেনি। সবশেষে শয়তানের এক চ্যালা এসে বললো, 

تركتُه حتى فرَّقتُ بينَه وبين أهلِه ، فيُدْنِيه منه ، ويقولُ : نعم أنتَ !

অর্থাৎ, আমি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া লাগিয়েই ক্ষান্ত হইনি, বরং তাদের মাঝে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তবেই ফিরেছি।তখন ইবলীস পরম আনন্দে তাকে একান্ত কাছে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, "বাহ! তুমিই কাজের মতো একটা কাজ করেছো।" ( সহীহ মুসলিম-২৮১৩)


পক্ষান্তরে আল্লাহর কাছে সবচাইতে নিন্দনীয় বৈধ কর্ম হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিচ্ছেদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ ‏"‏ ‏.‏( رواه أبو داؤد -٢١٧٨)

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচাইতে ঘৃণ্যতম বৈধ কাজ হচ্ছে, তালাক (সুনানে আবি দাঊদ-২১৭৮)


এছাড়া বৃহৎ স্বার্থ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জনের অসংখ্য নজীর ইসলামী শারীয়াহ'তে মেলে। উসূলুল ফিকহের পরিভাষায় একে ِأهْوَنُ البَلِيَّتَيْن বলে। ইলমে ফিকহ ও উসুলে হাদীসের অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রবাদ পুরুষ আল্লামা আমীমুল ইহসান আল মুজাদ্দেদী (রাহি.) বলেন, 

 إذا تعارض مفسدتان روعي أعظمهما ضررا بارتكاب أخفهما( قواعد الفقه -٥٦)

অর্থাৎ, একটি কর্ম সাধন করা কিংবা না করা নিয়ে কেউ যদি উভয় সংকটে নিপতিত হয়, তাহলে তুলনাকমূলক অধিক গুরুতর বিষয়টি নিবারণের জন্য লঘুকর্ম সাধনে কোন সমস্যা নেই। (কাওয়ায়েদুল ফিকহ- ৫৬)

 

 ইলমুল বালাগাতের পরিভাষায় একে تَوْرِيَة বলা হয়ে থাকে। বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি বৈধ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধনীতির কূটকৌশল হিসেবে তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্যবার তাওরিয়ার আশ্রয় নিয়েছিলেন। সিরিয়ান বংশোদ্ভূত সৌদি আরবের প্রখ্যাত দায়ী, বিশিষ্ট ইসলামী পুরোধা ব্যক্তিত্ব, প্রথিতযশা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ আল্লামা সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) বলেন, 

وتصح التورية من القائل إذا دعت الحاجة أو المصلحة الشرعية لها ، ولا ينبغي أن يكثر منها بحيث تكون ديدناً له ، ولا أن يستعملها لأخذ باطل أو دفع حق .( آفات اللسان -٥٦)

অর্থাৎ, বিশেষ প্রয়োজন কিংবা শরয়ী কল্যাণ বিবেচনায় তাওরিয়ার আশ্রয় গ্রহণ করা বৈধ। তবে এতো অধিক পরিমাণে তা করা উচিত নয়, যা একপর্যায়ে মানূষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তবে কোন অন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করা কিংবা কোন ধ্রুব সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অপকৌশল হিসেবে এটিকে প্রয়োগ করা বৈধ নয়। (জিহবার আপদ-৫৬)


সারকথা হলো, এহেন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাদের বিয়ে নবায়নে কোন সমস্যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন পূর্বেকার বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবকদের অবগত করানোরও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে 'বিবাহ' যেহেতু সমগ্রজীবনব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি একটি সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা, তাই কোন প্রকার লুকোচুরি ব্যতিরেকে সকলের কাছে প্রতিটি বিষয় crystal clear বা স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ থাকাটা বাঞ্চনীয়। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা দেখা দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সে বিষয়টির অবতারণা ঘটানো থেকে বিরত থাকাটাই হলো অধিকতর নিরাপদ ও প্রজ্ঞানির্ভর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত।


  والله اعلم بالصواب