আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৪৬৮: হজরতে সাহাবায়ে কেরাম কি সত্যের মাপকাঠি, কুরআন সুন্নাহর আলোকে?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৪৬৮:


معيار حق

সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক বিস্তারিত আলোকপাত করার জন্য বিজ্ঞ মুফতি মহোদয় কে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি। আগাম ধন্যবাদ।

جزاك ا لله تعالي خيرا في ا لدارين

نورالامين غفرله ولواديه(نيلفاماري) তারিখ: ১৬/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজী 

হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম নীলফামরী থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, 

ইসলামে  হজরত সাহাবা কেরামের গুরুত্ব  সমধিক। দ্বীনঈমান ও ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী। নবি কারিম ()  এর সকল সাহাবিগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। প্রকাশ থাকে যেপরবর্তীকালে খারিজীরাফিজীমুতাজিলাজায়েদিয়াআশারিয়াইসমাঈলিয়া তথা শিয়া মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নবি কারিম ()  এর সম্মানিত সাহাবিদের  বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ দেয়ার মত ধৃষ্টতা ও অপরাধপূর্ণ সমালোচনায়  হয় মুসলিম জতিকে  পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা দিয়েছে। ইমাম ও হাক্কানি আলমগণ শত্রুদের  ঐ কৌশল ব্যর্থ করার জন্য পূর্ব  যুগ হতেই সাহাবিদের সম্পর্কে ইসলামের (Dimad) দাবী নির্ধারিত করে  দিয়ে  গিয়ছেনযাতে শত্রুরা তাদের অপচেষ্টায় কৃতকার্য হওয়ার ছিদ্র পথ পেতে না পারে।


 প্রশ্ন: ক।  সাহাবায়ে কেরামের সম্মান- মর্যাদা কি ঐতিহাসিক না কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত?

উত্তর: ক।  সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা কুরআন ও হাদিস দ্বারা জানা যায় ঐতিহাসিক বর্ণনা দ্বারা নয় : হযরতে সাহাবায়ে-কেরাম সাধারণ উম্মতের ন্যায় নয়। তাঁরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) ও উম্মতের মাঝেখানে আল্লাহর তৈরি সেতু। তাঁদের মাধ্যম ব্যতিত উম্মতের কাছে কুরআন ও রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর শিক্ষা পৌঁছার কোনো পথ নেই। তাই ইসলামে তাঁদের একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাঁদের এই মর্যাদা ইতিহাস গ্রন্থের সত্য-মিথ্যা বর্ণনা দ্বারা নয়; বরং পবিত্র কুরআন-হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়। শুধু মাগফেরাতেরই নয় رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ বলে তাঁর সন্তুষ্টিরও নিশ্চিত আশ্বাস দান করেছেন। তাই তাঁদের পারস্পরে যেসব মতবিরোধ ও বাদানুবাদের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ভিত্তিতে তাঁদের মধ্যে কাউকে মন্দ বলা অথবা দোষারোপ করা নিশ্চিতরূপে হারাম, রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর উক্তি অনুযায়ী অভিশপ্ত হওয়ার কারণ এবং নিজের ঈমানকে বিপন্ন করার শামিল। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৫৯১পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)


প্রশ্ন:  খ।  সাহাবি কেরাম রা. কি  সত্যের মাপকাঠি?

 

উত্তর: খ।  তাবেয়িতাবা-তাবেয়িআইম্মায়ে মুজতাহিদগণ এবং যুগে যুগে তাদের  লক্ষ কোটি ওলামায়ে অনুসারী দ্বীনমুহাদ্দিসগণবিখ্যাত মুসলিম মনীষীগণ সকলেই হজরতে সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মেনেছেনস্বীকার করেছেন। তবে মুষ্টিমেয়  দুজনের মতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের  মাপকাঠি নয়।  নিম্নে উভয় পক্ষের দলিল উল্লেখ করে পর্যালোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।

 

প্রশ্ন:   গ। যারা  সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানেন না তাদের দলিল কি?


উত্তর: গ। হজরতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নয় তাদের এর দলিল:

 

প্রথম যুক্তি/দলিল:

 

যারা সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানেন না তাদের প্রধান যুক্তি হল।

সাহাবা কেরাম ওহি কেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ ছিল নাতাই তাদের ফাতওয়া ১০০ ভাগ সঠিক বলা যায় না। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নয়। দলিল:

 

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহীযা প্রত্যাদেশ হয়। সূরা নজম-৩,

 

ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ব্যতিত  কেউ ওহি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।

 

দ্বিতীয় যুক্তি/ দলিল :

 

 সত্যের মাপকাঠি কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য কেউ নয়।

 

Surah Al-Ahzab, Verse 21:

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

 

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করেতাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। সূরা আহযাব-২১

 

ব্যাখ্যা:  এ আয়াতের শুরুতে দুটি (لام و قد লাম এবং কদ তাকিদ হরফ এসেছেএতে প্রমাণিত হয় একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্যের মাপকাঠি।

 

তৃতীয় দলিল/যুক্তি:

 

কোন কোন সাহাবার  দ্বারা কবিরা গুনাহ ও ভুল সিদ্ধান্ত সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং তারা সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না।

 

প্রশ্ন: ঘ।  যারা হজরতে সাহাবায়ে কেরাম  সত্যের মাপকাঠি মানেন  তাদের দলিল কি?

 

উত্তর: ঘ। যারা হজরতে সাহাবায়ে কেরাম  সত্যের মাপকাঠি মানেন  তাদের দলিল নিম্নরূপ:

 


কুরআনুল কারিম দ্বারা প্রমাণ:

 

আয়াত নং-০১

Surah Al-Baqara, Verse 13:

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ

 অর্থ: তোমরা ঈমান আনয়ন করযেমন ঈমান এনেছে ঐ লোক সকল (সাহাবা কেরাম) সূরা বাকারা-১৩

 

তাফসির: «وإذا قيل لهم آمنوا كما آمن الناس» أصحاب النبي «قالوا أنؤمن كما آمن السفهاء» الجهال أي لا نفعل كفعلهم. قال تعالى ردا َعليهم: «ألا إنهم هم السفهاء ولكن لا يعلمون» ذلك.

অর্থাৎ   যখন যখন তাদেরকে বলা হয় তোমরা ঈমান আনয়ন করো যে রূপ ঈমান তারা এনেছে অর্থাৎ নাস হলো নবীর সাহাবীরা। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন

 

تفسير الميسر

وإذا قيل للمنافقين: آمِنُوا -مثل إيمان الصحابة، وهو الإيمان بالقلب واللسان والجوارح-، جادَلوا وقالوا: أَنُصَدِّق مثل تصديق ضعاف العقل والرأي، فنكون نحن وهم في السَّفَهِ سواء؟ فردَّ الله عليهم بأن السَّفَهَ مقصور عليهم، وهم لا يعلمون أن ما هم فيه هو الضلال والخسران

আর যখন মুনাফিকদের বলা হলো তোমরা ঈমান আনো সাহাবীদের ঈমানের মত।  এটি হৃদয়জিহ্বা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি ঈমান। সূত্রতাফসিরুল মাইসির

 

عن ابن عباس في قوله: ( وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ )، يقول: وإذا قيل لهم صدِّقوا كما صدَّق أصحاب محمد, قولوا: إنَّه نبيٌّ ورسول, وإنّ ما أنـزل عليه حقّ, وصدِّقوا بالآخرة, وأنَّكم مبعوثون من بعد الموت (81) .

وإنما أدخِلت

হযরত আব্বাস রাঃ বলেন যখন তাদেরকে বলা হলো তোমরা বিশ্বাস করো যেরকম বিশ্বাস করেছে মুহাম্মাদের সাহাবীরা। নিশ্চয়ই তিনি নবী। তার কাছে সত্য সহ কিতাব নাযিল হয়েছে। তাফসিরে তাবারি-২৯১ পৃষ্ঠা


সাহাবিদের ঈমানের মত ঈমান আনয়ন করার নির্দেশ থেকে প্রমাণিত হয় সাহাবা কেরাম ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি। ঈমান সবার আগেএতেই যদি মাপকাঠি হয় বাকি অন্যক্ষেত্রে মাপকাঠি তা সহজে অনুমেয়।

 

আয়াত নং-০২

فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنذم بِهِ فَقَدِ اهْذدَوا ۖ وَّإِن ذوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّـهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿١٣٧﴾

অর্থঃ(সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে) তারা যদি তোমাদের মত ঈমান আনয়ন করে তাহলে হেদায়াত পাবে আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারিকতায় রয়েছে। সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৩৭


 

আয়াত নং-০

Surah At-Taubah, Verse 100:

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

 মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা (ঈমান গ্রহণের দিক থেকে) প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছেনআল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। সূরা তাওবা-১০০

 

তাফসির:

يخبر تعالى عن رضاه عن السابقين من المهاجرين والأنصار والتابعين لهم بإحسان ، ورضاهم عنه بما أعد لهم من جنات النعيم ، والنعيم المقيم .

অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার সন্তুষ্টির খবর দিয়েছেন মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছেন। এবং তাদের জন্য জান্নাতুন নাঈম প্রস্তুত করে রেখেছেন। তাফসিরে ইবনে কাসির -২০৩ পৃষ্ঠা

 

আয়াত নং-

সাহাবায়ে কেরাম শ্রেষ্ঠ উম্মতঃ

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ

অর্থঃ তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মতমানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। সুরা আলে-ইমরান-১১০

 

তাফসীরে তাবরীতে আয়াতের ব্যাখায় হযরত ওমরের (রাঃ) একটি উক্তি তুলে ধরেছেন

 

لو شاء الله لقال انتم فكنا كلنا ولكن قال كنتم فى خاصة من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسل

অর্থাৎ যদি আল্লাহপাক ইচ্ছা করতেন তাহলে কুনতুম না বলে আনতুম খায়রা উম্মাতিনবলতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে আমরা সকলেই এ আয়াতের আওতায় চলে আসতাম। কিন্তু! আল্লাহপাক এখানে সাহাবাদের মধ্যে বিশেষ জামায়াতকে সম্বোধণ করেছেন। সূত্রঃ তাফসীরে তবারী খন্ডঃ ৭ পৃষ্টাঃ ১০১ তাফসীরে শাওকানী খ:১ পৃ:৩০৩ হায়াতুস সাহাবাহ খ:১ পৃ:৫২

 

আয়াত নং-০৫

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّ‌سُولَ مِن بَعْدِ مَا تبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتبِعْ غَيْرَ‌ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا توَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَت مَصِيرً‌ا ﴿١١٥﴾

অর্থঃ আর যে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমনিদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা হল নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান। (সূরায়ে নিসা -আয়াত ১১৫)

এই আয়াতে মুমনিদের পথ বলতে প্রথমতঃ যারা উদ্দেশ্য তারা হলেন জামায়াতে সাহাবা।

 

আয়াত নং-০

Surah Al-Fath, Verse 18:

لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

 আল্লাহ তাআলা সেই মুমিনের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেনযখন তারা (হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়) বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। সূরা ফাতাহ-১৮

ব্যাখ্যা: যাদের ওপর মহান আল্লাহ খুশি/সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন তারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।

 

আয়াত নং-০

Surah Aal-e-Imran, Verse 194:

رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلَىٰ رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ

হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাওযা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে তুমি অপমানিত করো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না। সূরা ইমরান -১৯৪

 

 আয়াত নং-০৮

Surah Al-Hadid, Verse 10:

ا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

 আর তাদের (মুহাজির ও আনসারগণ) প্রত্যেকের জন্যই আল্লাহ তাআলা কল্যাণের (ক্ষমা ও জান্নাতের) ওয়াদা দিয়েছেন। সূরা হাদীদ-১০


 

আয়াত নং-০৯

Surah Al-Fath, Verse 10:

إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا

 নিশ্চয় যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করেতারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের উপর রয়েছে।---এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেআল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহা পুরস্কার দান করবেন। সূরা ফাতাহ-১০


 

আয়াত নং -১০

Surah Aal-e-Imran, Verse 152:

وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِ حَتَّىٰ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَعَصَيْتُم مِّن بَعْدِ مَا أَرَاكُم مَّا تُحِبُّونَ مِنكُم مَّن يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ الْآخِرَةَ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْ وَلَقَدْ عَفَا عَنكُمْ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সাথে তার কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেনযখন তোমরা আ্লাহর অনুমতিক্রমে তাদেরকে প্রচুরহারে হত্যা করছিল  এমনকি তোমরা যখন নিজেরাই দুর্বল হয়ে  পড়লে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে পরস্পর মতভেদ করতে লাগলে। ...আর অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৫২

 

 

আয়াত নং-১১

Surah At-Tahrim, Verse 8:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ

 সেদিন আল্লাহ নবি এবং তার বিশ্বাসী সহচরদেরকে (সাহাবিদেরকে) অপদস্থ করবেন না। (সূরা আত-তাহরীম) অপদস্থ করবেন না মানে জাহান্নামে দিবেন না।

 

এর ব্যাখ্যা অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-হে আমাদর প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন তাকে তো সবসময় অপদস্থ/অপমানিত করলেন আর জালেমদের জন্যে তো সাহয্যকারী নেই। সূরা আলে ইমরান-১৯২

 

ব্যাখ্যা: সকল সাহাবি জান্নাতিজাহান্নামের আগুন তাদেরকে কখনও স্পর্শ করবে না।  তারা ক্ষমা প্রাপ্ত দল। ৭নং আয়াতে কতিপয় সাহাবের মতানৈক্যর কথা উল্লেখ করার পরপরই তাদের প্রতি ক্ষমার ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে। অতত্রবক্ষমা প্রাপ্তজান্নাতি জামাআত অবশ্যই সত্যের মানদণ্ড।

 

 

আয়াত নং-১২

Surah Al-Ahzab, Verse 23:

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

অর্থ মুমিনগণের মধ্যে এমন কতক ব্যক্তি রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যু বরণ করেছে আবার কেউ প্রতীক্ষায় রযেছে। সূরা আহযাব-২৩

 

ব্যাখ্যা: যাদের ওয়াদা পূর্ণ করার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন। সুতরাং ওয়াদা পূর্ণকারী দল অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।

 

আয়াত নং-১৩

Surah Al-Hajj, Verse 78:

وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ

অর্থআল্লাহ তাআলা (দ্বীনের জন্য) তোমাদেরকে বাছাই করেছেন এবং তোমাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা রাখেন নি। সূরা হজ-৭৮

 

আয়াত নং-১৪

Surah Fatir, Verse 32:

ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِينَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ وَمِنْهُم مُّقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللَّهِ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيرُ

অর্থ তারপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে আমি মনোনীত করলাম। সূরা ফাতির-৩২

 

এক হাদিসে আছেনবি কারিম ()  বলেছেন- আল্লাহ তাআলা নবি-রাসূলগণের পর সমস্ত বিশ্ব ভূ-মণ্ডলে আমার সাহাবিগণকে মনোনীত করেছেন। মুসনাদে বাযযারসূত্র: মাকামে সাহাবা-৬০ মুফতি শফি রহ. আল জামি লিআহকামিল কুরআনইমাম কুরতবি রহ.-৮/১৯৬

ব্যাখ্যা: যাদেরকে আল্লাহ তাআলা নিজে নির্বাচনমনোনীত করেছেনতারা সত্যের মাপকাঠি হবে না কেন ?

 

আয়াত নং-১৫

Surah Aal-e-Imran, Verse 174:

فَانقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ

অর্থ অতঃপর তারা আল্লাহর মহা নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে ফিরে এলএমতাবস্থায় যেকোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত রয়েছে। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৭৪

 

এ আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে যেতারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসনন্ধান করতেন। খারাপি তাদেরকে ষ্পর্শ করেনি। সুতরাং তারা সত্যর মাপকাঠি।

 

আয়াত নং-১৬

Surah Al-Hujraat, Verse 7:

وَلَٰكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَٰئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ

অর্থ কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। তারাই সৎপথ অবলস্বনকারী। সূরা হুজুরাত-০৭

 

আয়াত নং-১৭

Surah Al-Hujraat, Verse 3:

إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

অর্থ আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন,পরীক্ষা করেছেন। সূরা হুজুরাত-০৩  

                                                     

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তাআলা নিজে তাঁদের ঈমানের দৃঢ়তা ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার আন্তরিক আগ্রহের কথা ঘোষণা করেছেন এবং তাদের অন্তর নিজে যাচাইপরীক্ষা করেছেন। সুতরাং এ জামাত অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।


আয়াত নং-১৮

Surah An-Nisa, Verse 115:

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا

অর্থ কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনর পথ ব্যতীত অন্য  পথ অনুসরণ করে তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব,আর তা কত মন্দ আবাস। সূরা নিসা-১১৫

 

ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মুমিন বলতে সাহাবায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁরাই মুমিনের সর্বপ্রথম এব সর্বশ্রেষ্ঠ জামাআত। তাদের অনুসরণ না করলে বরং জাহান্নামের শাস্তির ঘোষণা এসেছেঅতত্রব তাঁরা তো সত্যের মাপকাঠি তো বটেইতাদের অনুসরণ করা উম্মতের জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।

 

হাদিসে নববি দ্বারা প্রমাণ:

 

এ সম্পর্কে স্বয়ং নবি কারিম ()  বলেছেন-


হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمَ الإِفْرِيقِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .

অর্থ বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত হবে তিয়াত্তর দলে। আর তাঁদের একটি দল ব্যতীত সবাই জাহান্নামে যাবে। সাহাবা কেরাম জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রাসূল! সেদল কোনটিউত্তরে তিনি বললেনআমি ও আমার সাহাবাগণ যে দলে আছিতার উপর যারা কায়েম থাকবে তারা। তাখরিজ: জামেউত তিরমিজি-২৮৫৩কিতাবুল; ইবনে মাজাহ-৪৪

 

হাদিস নং-০২

فإنَّه مَن يَعِشْ منكم فسيَرَى اختِلافًا كثيرًا، فعليكم بسُنَّتي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عليها بالنَّواجِذِ، وإيَّاكم ومُحدَثاتِ الأُمورِ؛ فإنَّ كُلَّ بِدعةٍ ضَلالةٌ

الراوي : العرباض بن سارية | المحدث : محمد ابن عبد الوهاب | المصدر : الرسائل الشخصية لابن عبد الوهاب | الصفحة أو الرقم : 179 | خلاصة حكم المحدث : صحيح | التخريج : أخرجه مطولاً أبو داود (4607)، والترمذي (2676)، وابن ماجه (44)، وأحمد (17144) باختلاف يسير، وابن عبدالبر في ((جامع بيان

অর্থ আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা নানান রকম মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত আঁকড়ে ধরবে এবং দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। আবু দাউদ-৪৬০৯কিতাবুস সুন্নাহ; তিরমিজি-২৬৭৬

 

হাদিস নং-০৩

عن عمران بن الحصين قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خَيْرُ أُمَّتي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিতরাসূল সঃ বলেনআমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগণ) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎতাবয়ে তাবেয়ীণ) । তাখরিজবুখারি-২৬৫২,২৬৫১

 

হাদিস নং-০৪

 قال رسول الله صلي الله عليه وسلم أوحي الله يا محمد ان اصحابك عندي كالنجوم بعضها اضوأ من بعض ولكل نور فمن اخذ بشي مماهم عليه من اختلافهم فهو عندي علي الهدي – رواه الدارقطني-

অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ! আপনার সাহাবীগণ আমার নিকট নক্ষত্রতুল্য, কেউ অতি উজ্জল কেউ তার চেয়ে কম, তবে সকলেরই আলো আছে। অতএব, তাদের মতবিরোধের ক্ষেত্রেও যে কোন এক পক্ষকে অনুসরণ করলেই সে অনুসারী আমার নিকট হেদায়াত প্রাপ্ত বলে গণ্য হবে।


নোট: কেননা, তাদের বিরোধ হবে ইজতেহাদী, আর সঠিক ইজতেহাদের কোন অংশকেই নিশ্চিত ভুল বলা যাবে না) হাদীসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও এমর্মে আরো অনেক হাদীস থাকায় এবং হাদীসটি বিষয় বস্তু কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অপরাপর হাদীস সমর্থিত হওয়ায় হাদীসটি সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য(অবশ্য কারো মতে কুরআন-হাদীসের সমর্থন গ্রহণযোগ্য না হয়ে নিজের মনের সমর্থন গ্রহণ যোগ্য হলে তা ভিন্ন কথা)তাফসীরে মাযহারী ২য় খন্ড পৃঃ ১১৬



উম্মাতের ইজমা:

এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন,

قال ابنُ كثيرٍ: (الصَّحابةُ كُلُّهم عُدولٌ عِندَ أهلِ السُّنَّةِ والجَماعةِ؛ لِمَا أثنى اللهُ عليهِم في كِتابِه العَزيزِ، وبِما نَطَقَتْ به السُّنَّةُ النَّبَويَّةُ في المَدحِ لهم في جَميعِ أخلاقِهِم وأفعالِهِم، وما بذَلوه مِنَ الأموالِ والأرواحِ بَينَ يَدَي رَسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّيُنظر: ((اختصار علوم الحديث)) (ص: 181).

অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট সকল সাহাবি ন্যায়পরায়ণ, সত্যের মাপকাঠি। সূত্র: ইখতিছারু উলুমিল হাদিস-১৮১পৃ.

এ বিষয়ে ইমামা নববী রহ. বলেনঃ الصحابة كلهم عدول من لابس الفتن وغيرهم باجماع من يعتد به-

অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য সকলের এ ব্যাপারে ইজ্‌মা যে সকল সাহাবী ন্যায়পরায়ণ, নিরপরাধীএমনকি যারা পরস্পর বিগ্রহে পতিত হয়েছেন তাঁরাও। সূত্র : তাক্বরীব সূত্রঃ মাকামে সাহাবা - পৃঃ৭৭


 

আসার দ্বারা প্রমাণ:

 

(০১)  عن عمر بن الخطاب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أكرموا أصحابِي فإنهم خيارُكم

অর্থঃ হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত নবিজি সঃ বলেনতোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব। সূত্রঃ সুনানে তিরমিযি হাদিস-২১৬৫ ইবনে মাযা-২৩৬৩

 

(০২الأثر المشار إليه قول عبد الله بن مسعود رضي الله عنه :

عن ( مَن كانَ مُسْتَنًّا ، فَلْيَسْتَنَّ بمن قد ماتَ ، فإنَّ الحيَّ لا تُؤمَنُ عليه الفِتْنَةُ ، أولئك أصحابُ محمد - صلى الله عليه وسلم - ، كانوا أفضلَ هذه الأمة : أبرَّها قلوبًا ، وأعمقَها علمًا ، وأقلَّها تكلُّفًا ، اختارهم الله لصحبة نبيِّه ، ولإقامة دِينه ، فاعرِفوا لهم فضلَهم ، واتبعُوهم على أثرهم ، وتمسَّكوا بما استَطَعْتُم من أخلاقِهم وسيَرِهم ، فإنهم كانوا على الهُدَى المستقيم ) .

والأثر رواه ابن عبد البر في "جامع بيان العلم وفضله" (2/947ـ رقم 1810) ، وفي إسناده ضعف ، إلا أنه أثر مشهور متداولفي مصنفات أهل السنة ، ومعناه صحيح مستقر عندهم

অর্থ:  আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. বলেনতোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে জন্য মুহাম্মদ () -এর সাহাবিগণেরই অনুসরণ করে। কারণতাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচে বেশি নেককারএলেমের দিক থেকে গভীরতরলৌকিকতার দিক থেকে সল্পতমআদর্শের দিক থেকে সঠিকতমঅবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবি () -এর সংস্পর্শ ধন্য হবার জন্য এবং তার দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে বাছাই করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণতাঁরা ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাখরিজ: জামেউ বায়ানিল ইলমি-১৮১০; আবু নাঈমহিলইয়াতুল আওলিয়া : ৩০৫/১

 

(০৩সূরা ইমরানের -১১০ নং আায়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,

كنتم خير أمة أخرجت للناس قال هم الذين هاجروا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم من مكة إلى مدينة

অর্থাৎ- খায়রে উম্মত দ্বারা ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা মক্কা হতে মদিনাতে হিজরত করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা সাহাবায়ে কেরাম। সূত্রঃ জামিউল মাসানিদি ওয়াস সুনান খঃ ৩০ পৃঃ ২৬৭ তাফসীরে ইবনে কাসীর খন্ড: ৩ পৃষ্টা: ১৪২ উমদাতুত তাফসীর খ:৩ পৃ:২০

 

(০৪ শ্রেষ্ঠতম তাবিঈ হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ.সাহাবা কেরামের মর্যাদা সম্বন্ধে বলেনসাহাবা কেরামের অনুসৃত পথ গ্রহণ করাই সকল মুসলিমের কর্তব্য। সুনানে আবু দাউদসূত্র: মাকামে সাহাবামুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ.

 

মনীষীদের দৃষ্টিতে সাহাবা কেরাম:

 

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাহাবা কেরামের নির্ধারিত এ মর্যাদা সম্পর্কে সর্ব যুগে উলামায়ে কেরাম একমত পোষণ করে আসছেন। যেমন,

 

 (০১আল্লামা ইবন সলাহ রহ. উলূমুল হাদিস গ্রন্থে লিখেছেন- সাহাবায়ে কেরামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যেতাদের কারোই আদালত ও ন্যায় পরায়ণতা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তা কুরআনসুন্নাহ ও উম্মতের উজমার দ্বারা সুপ্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্বন্ধে ইরশাদ করেন- তোমরা মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত শ্রেষ্ঠ উম্মাত।

 

(০২মাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম আবু যুরআ রহ. বলেন,

 اذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فاعلم انه زنديق .

অর্থাৎ  যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ () -এর সাহাবিগণের কোনো একজনের মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে সে একজন ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যেরাসূলুল্লাহ ()  আমাদের কাছে সত্যকুরআন সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ () -এর ছাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায় আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা হলো ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়। খতীব বাগদাদিআল-কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়ায়াহ-১১৯/১

 

(০৩)

قال الإمام ابن أبي زيد القيرواني في رسالته: "واللجأ إلى كتاب الله عزوجل وسنة نبيه، واتباع سبيل المؤمنين، وخير القرون من خير أمة أخرجت للناس نجاة، ففي المفزع إلى ذلك العصمة، وفي اتباع السلف الصالح النجاة".

"ইমাম ইবনে আবি যাইদ বলেনআল্লাহর কিতাবের বিধান পালনতার রাসুলের জীবনাদর্শ বাস্তবায়নএকনিষ্ঠ মুমিনগণের পদাংক অনুসরণ এবং মানুষের কল্যাণে উদ্দেশ্যে সৃষ্ট সর্বত্তোম উম্মাতের মধ্য হতে যারা হলেন সর্বত্তোম প্রজন্মের ধারক বাহকতাদেরকে অনুকরণের মাঝেই রয়েছে নাজাতের একমাত্র উপায়। এসকল পথ অবলম্বনের মাঝেই রয়েছে নিরাপত্তা। সত্যাশ্রয়ী পূর্বসূরিগণের অনুসরণেই মিলবে নিশ্চিত পরকালীন মুক্তি।"

 

(০৪)

وقال ابن حجر العسقلاني: "فالسعيد من تمسك بما كان عليه السلف واجتنب ما أحدثه الخلف". [6] وقال الشيخ أحمد بن عبد الرحيم الدهلوي المعروف بشاه ولي الله: "والملة إنما تثبت بالنقل والتوارث، ولا توارث إلا بأن يعظم الذين شاهدوا مواقع الوحي وعرفوا تأويله وشاهدوا سيرة النبي صلى اللّه عليه وسلم ولم يخلطوا معها تعمقًا ولا تهاونًا ولا ملة أخرى" [7].

ইবনে হাজার আসকালানী (রাহি) বলেন, " প্রকৃত সৌভাগ্যশালী হলেন সেই ব্যাক্তিযিনি পূর্বসুরীদের (সাহাবা-তাবেয়িদেরজীবনাচারকে আঁকড়ে ধরেছেন এবং পরবর্তী যুগের লোকদের শেঁকড়বিহীন নব্য উদ্ভাবিত বিষয়কে সযত্নে পরিহার করেছে।"

 

(০৫)

قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى: "وقد دل الإجماع على أن خير هذه الأمة في الأقوال والأعمال والاعتقاد، وغيرها من كل فضيلة، القرن الأول، ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم، وأنهم أفضل من كل خلف في كل فضيلة من علم وإيمان وعقل ودين وبيان وعبادة، وأنهم أول للبيان من كل مشكل، هذا لا يدفعه إلا من كابر المعلوم بالضرورة من دين الإسلام وأضله الله على علم"[9]

শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রাহি) বলেন, "আইম্মায়ে উম্মাতের একতাবদ্ধ সিদ্ধান্ত একথাই প্রমাণ করে যে- কথাবার্তাকাজকর্মআচার-আচরণবিশুদ্ধ আকীদা লালনসহ সকল উত্তম গুণাবলির বিকাশের দিক বিবেচনা করে এই জাতির সর্বোত্তম মানুষ হলেন তাঁরাইযাঁর ছিলেন প্রথমযুগের ব্যক্তিবর্গ  তাঁদের পরে সর্বোত্তম হলেন তৎপরবর্তী যুগের ব্যক্তিবর্গ। অতঃপর সর্বোৎকৃষ্ট হলেন তৎপরবর্তীকালের ব্যক্তিবর্গ। অর্থাৎ প্রত্যকেই নিজ পরবর্তী যুগের লোকদের থেকে  ইলম-আমলধর্মচর্চাবিশুদ্ধ আকীদা পোষণ,  চিন্তা-চেতনার পরিশীলতা প্রভৃতি বিষয়ে বহুগুণে অগ্রগামী ছিলেন। প্রথম যুগের ব্যক্তিবর্গ ছিলেনউদ্ভুত যেকোন সমস্যার সমধান প্রদানে অতুলনীয়প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূলে পরিণত করার ক্ষেত্রে  অদ্বিতীয়ইলমে ওয়াহির সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানে অনন্য। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত এই ধ্রুব সত্যটির দিকে একমাত্র সেই  হতভাগাই সন্দেহের অংগুলি উত্থাপন করতে পারেযে ইসলাম ধর্মের স্বতসিদ্ধ ও সুবিদিত বিষয়গুলোতে হঠকারিতার ছলে সংশয়ের অবতারণা ঘটায়। যার ফলে আল্লাহ জেনেশুনেই তাকে পথহারা করে ছেড়েছেন।"


(০৬)

وقال العلامة ابن القيم رحمه الله تعالى: "ولا ريب أنهم أئمة الصادقين، وكل صادق بعدهم فيهم يأتم من صدقه، بل حقيقة صدقه اتباعه لهم، وكونه معهم"[8].

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রাহি) বলেন, " এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যেতাঁরা ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সর্বমান্য সত্যাশ্রয়ী মহাপুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁদের পরবর্তীকে আরও যত মহামনীষীর আবির্ভাব ঘটেছেতারা সকলেই ছিলেন,পূর্বসূরিদের নিছক পরিপূরক মাত্র। বরং তাদের প্রকৃত সাধুতা তখনই সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবেযখন তারা পূর্বসূরিগণের যথাযথ অনুসরণ করবে ও তাঁদের সাহচর্য গ্রহণ পিয়াসী হবে।"

 

যারা সাহাবা কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানেন না তাদের যুক্তি খণ্ডন:

 

প্রথম যুক্তিসাহাবা কেরাম ওহি কেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ ছিল নাতাই তাদের ফাতওয়া ১০০ ভাগ সঠিক বলা যায় না। তার তাদেরকে  সত্যের মাপকাঠি বলা যাবে না।

 

খণ্ডন: হজরতে সাহাবা কেরাম ওহি দ্বারা নিয়ন্ত্রনীত ছিল না কথা সত্য।  তবে ওহি দ্বারা যদি তাদের ঈমান-তাকওয়া তথা ন্যায়পরায়ণতার  সত্যায়ন করে, তাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়, তাহলে মানতে সমস্যা কোথায়?

দলিল: 

আয়াত নং-০১

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ

অর্থ: তোমরা ঈমান আনয়ন কর, যেমন ঈমান এনেছে ঐ লোক সকল (সাহাবা কেরাম)। সূরা বাকারা-১৩


 আয়াত নং-০২

فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنذم بِهِ فَقَدِ اهْذدَوا ۖ وَّإِن ذوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّـهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿١٣٧﴾

অর্থঃ(সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে) তারা যদি তোমাদের মত ঈমান আনয়ন করে তাহলে হেদায়াত পাবে আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারিকতায় রয়েছে। -সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৩৭

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে  সাহাবিদের ঈমানের মত ঈমান আনয়ন করার নির্দেশ এবং হেদায়েত পাবার  থেকে প্রমাণিত হয় সাহাবা কেরাম ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি। ঈমান সবার আগে, এতেই যদি মাপকাঠি হয় বাকি অন্যক্ষেত্রে মাপকাঠি তা সহজে অনুমেয়। 

তাছাড়া উপরোক্ত ৩-১৮ নং আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করা যায়। 

 

দ্বিতীয় যুক্তি:

Surah Al-Ahzab, Verse 21:

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করেতাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। সূরা আহযাব-২১

 

  এ আয়াতের শুরুতে দুটি (لام و قد লাম এবং কদ তাকিদ হরফ এসেছেএতে প্রমাণিত হয় একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্যের মাপকাঠি।


 খণ্ডন: আরবি ব্যাকরণ রীতিমতে লাক্বদ (لقد) অবশ্যই তাকিদের শব্দ। কিন্তু এ আয়াত দ্বারা যে শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে এবং অন্য কেউ সত্যের মাপকাঠি নয়।এ রকম নস বা বিখ্যাত তাফসিরকারকদের ব্যাখ্যা পেশ করুন।

অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার সাহাবা তথা খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত কে আঁকড়ে ধরতে আদেশ দিয়েছেন। দলিল:

فإنَّه مَن يَعِشْ منكم فسيَرَى اختِلافًا كثيرًا، فعليكم بسُنَّتي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عليها بالنَّواجِذِ، وإيَّاكم ومُحدَثاتِ الأُمورِ؛ فإنَّ كُلَّ بِدعةٍ ضَلالةٌ

الراوي : العرباض بن سارية | المحدث : محمدباختلاف يسير، وابن عبدالبر في ((جامع بيان

অর্থ: আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা নানান রকম মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত আঁকড়ে ধরবে এবং দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। আবু দাউদ-৪৬০৯, কিতাবুস সুন্নাহ; তিরমিজি-২৬৭৬

তাছাড়া উপরোক্ত ১,৩,৪ নং হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করা যায়।


তৃতীয় যুক্তি: কোন কোন সাহাবার  দ্বারা কবিরা গুনাহ ও  ভুল সিদ্ধান্ত সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং তারা সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না।


খণ্ডন:  

(ক) 

সকল সাহাবির জন্যে মাগফেরাত ও রহমতের সুসংবাদ এবং অবশিষ্ট উম্মত থেকে তাঁদের স্বাতন্ত্র্য : এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে। তবে আল্লাহ তাআলা উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সূরা হাদিদ-১০

   উল্লেখিত আয়াতে সাহাবায়ে-কেরামকের মর্যাদা পারস্পরিক তারতম্য উল্লেখ করে শেষে বলা হয়েছেঃ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى অর্থাৎ পারস্পরিক তারতম্য সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা কল্যাণ অর্থাৎ জান্নাত ও মাগফেরাতের ওয়াদা সবার জন্যেই করেছেন। তাঁদের মধ্যে এরূপ ব্যক্তি খুবই দুর্লভ, যিনি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর পথে কিছুই ব্যয় করেননি এবং ইসলামের শত্রুদের মোকাবেলায় অংশ গ্রহণ করেননি (রসূলের অনুমতিক্রমে কেউ কেউ রয়ে গিয়েছিলেন)। তাই মাগফেরাত ও রহমতের এই কুরআনি ঘোষণা প্রত্যেক সাহাবিকে শামিল করেছেন।


 আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.) বলেন,এর সাথে সূরা আম্বিয়ার অপর একটি আয়াতকে মিলাও, যাতে বলা হয়েছে-لَا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنْفُسُهُمْ خَالِدُونَ إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِنَّا الْحُسْنَى أُولَئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ অর্থাৎ যাদের জন্য আমি পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত করে দিয়েছি, তারা জাহান্নাম থেকে দূরে অবস্থান করবে। জাহান্নামের কষ্টদায়ক আওয়াজও তাদের কানে পৌঁছবে না। সেখানে তাদের মন যা চাইবে,তারা চিরকাল তা ভোগ করবে। সূরা আম্বিয়া, ১০১-১০২ :    

আলোচ্য আয়াতে وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى বলা হয়েছে এবং সূরা আম্বিয়ার এই আয়াতে যাদের জন্য কল্যাণের ওয়াদা করা হয়েছে, তাদের জাহান্নাম থেকে দূরে থাকার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর সারমর্ম এই দাঁড়ায় যে, কুরআন পাক এই নিশ্চয়তা দেয় যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কেই যদি সারা জীবনে কোনো গুনাহ করেও ফেলেন, তবে তিনি তার ওপর কায়েম থাকবেন না, তওবা করে নেবেন। নতুবা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সংসর্গ, সাহায্য, ধর্মের মহান সেবামূলক কার্যক্রম এবং তাঁর অসংখ্য পুণ্যের খাতিরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা করে দেবেন। গুনাহ মাফ হয়ে পূত-পবিত্র হওয়া অথবা পার্থিব বিপদাপদ ও সর্বোচ্চ কোনো কষ্টের মাধ্যমে গুনাহের কাফফারা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘটবে না।

কতক হাদিসে কোনো কোনো সাহাবির মৃত্যুর পর আজাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই আজাব পরকাল ও জাহান্নামের আজাব নয়; বরং বরযখ তথা কবর জগতের আজাব। এটা অসম্ভব নয় যে, কোনো সাহাবি কোনো গুনাহ করে ঘটনাচক্রে তওবা ব্যতিতই মৃত্যুবরণ করলে তাকে কবর-জগতে আজাব দ্বারা পবিত্র করে নেওয়া হবে, যাতে পরকালের আজাব ভোগ করতে না হয়। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন-৬/৩৭৮ ইসলামিয়া কুতুবখানা; তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন ১৩৩৪পৃ.সংক্ষিপ্ত



মুহাম্মাদ ইবনে কাআব কুরবি (রা.)-কে কোনো এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিল যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবিগণ সম্পর্কে আপনি কী বলেন ? তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের সবাই জান্নাতবাসী হবেন-যদি দুনিয়াতে তাঁদের কারও দ্বারা কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েও থাকে তবুও। সে লোকটি জিজ্ঞেস করল, একথা আপনি কোত্থেকে বলছেন (এর প্রমাণ কী) ? তিনি বললেন, কুরআনুল কারিমের আয়াত পড়ে দেখ। وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ এতে শর্তহীনভাবে সমস্ত সাহাবা সম্পর্কে বলা হয়েছে رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ অবশ্য তাবেয়িনদের(অথবা সকল মুসলমান) ব্যাপারে اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ –এর শর্তারোপ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরামের সবাই কোনো রকম শর্তাশর্ত ছাড়াই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ধন্য হবেন। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৫৯১পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)


  

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে নবীরা ব্যতিত কেউ মাসুম নয়।  সাহাবায়ে কেরামের দ্বারা মাঝে মাঝে ভূল সিদ্ধান্ত হয়েছে। শরিয়াতের পরিভায়ায়  তাকে  এজতিহাদি খতা বলে। 

ইমাম বুখারি একটি বাব কায়েম করেছেন, ‘বিচারক/মুজতাহিদ ইজতিহাদে সঠিক কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও তার প্রতিদান রয়েছে।’ দলিল


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا حَيْوَةُ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي قَيْسٍ، مَوْلَى عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ ". قَالَ فَحَدَّثْتُ بِهَذَا الْحَدِيثِ أَبَا بَكْرِ بْنَ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ فَقَالَ هَكَذَا حَدَّثَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ. وَقَالَ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ الْمُطَّلِبِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ.

 আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) ... আমর ইবনে আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এই কথা বলতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজতিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। রাবী বলেন, আমি হাদীসটি আবু বকর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হায়িম (রাহঃ) এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন এবং আবদুল আযীয ইবনে আবদুল মুত্তালিব আবু সালামা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।  তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৫০ (আন্তর্জাতিক নং ৭৩৫২)

 সুতরাং প্রমাণিত সাহাবাদের দ্বারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলেও তারা সওয়াব পাবে। 


 সারকথা হলো, হাদীসের কিতাবের মাঝে যে সনদ আছে। মুহাদ্দিসীনে কেরাম সনদের প্রতিটি রাবীদের বিষয়ে কালাম করলেও সাহাবাগণের ক্ষেত্রে জারাহ তা’দীলের কিতাবে কোন কালাম নেই। বরং সকলের ঐক্যমত্ব হলো, সকল সাহাবীগণই ন্যায়নিষ্ঠ তথা সত্যের মানদণ্ড। [মিরকাত-৫/৫১৭, উমদাতুল কারী-২/১০৫]

সুতরাং সকল সাহাবাগণই সত্যের মাপকাঠি। দ্বীন বুঝার মানদণ্ড। হকের উপর চলার আলোকবর্তিকা।


والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক 

সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম