আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৬১: আবুল কাবিউ আজাদ"এই নামের অর্থ কি

No Comments

 

















জিজ্ঞাসা-১২৭৬১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

"আবুল কাবিউ আজাদ"এই নামের অর্থ কি হবে? অনুগ্রহ করে জানাবেন।

তারিখ:  ১৫/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ রাজন্দ্রপুর  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

আপনার জিজ্ঞাসিত নাম ( আবুল কাবিউ আজাদ)  তিনটি বিদেশী শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।

   অনুসন্ধিৎসু পাঠক মহলের অনুধাবনের সুবিধার্থে  ভিন্নভিন্ন অংশে প্রতিটি শব্দের আলাদা আলাদা বিশ্লেষণ করা হলো।


* আবূ = أبو  একটি আরবী শব্দ।  এটি أسماء ستة مكبرة  ( অর্থাৎ সেই বিশেষ ছয়টি শব্দের অন্যতম একটি শব্দ, যেগুলো মুযাফ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ায়-ওয়াও, আলিফ,ইয়া- এর মাধ্যমে ই'রাব গ্রহণ করে থাকে।) 


  আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দটির অর্থ হলো -  পিতা, জনক, বাবা ইত্যাদি। তবে শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র জন্মদাতা পিতা'কেই  বুঝায়না, বরং বংশপরম্পরায় ঊর্ধতন পূর্বপুরুষগণের উপরও শব্দটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হয়ে থাকে।  আর এই অর্থেই  মানবজাতির আদি পিতা আদম (আ.) কে "আবুল বাশার" বলা হয়ে থাকে। 


   তবে ব্যবহারিকভাবে শব্দটির অর্থ হলো- صاحب  তথা কর্ণধার /মালিক/ স্বত্বাধিকারী ইত্যাদি। যেমন - আবুল খায়ের অর্থ হলো - কল্যাণের ধারকবাহক। আবুল ফাতহ অর্থ হলো - বিজয়ের অধিকারী, ইত্যাদি।


   উল্লেখ্য যে, আরবগণ كُنْيَة (কুনইয়াত) বা উপনাম / ডাকনাম হিসেবে "আবু" শব্দটি ব্যাপকহারে ব্যবহার করে থাকেন। তারা নিজেদের জন্মগত নামের থেকে সন্তানের নামে পরিচিত হতে বেশী পছন্দ করেন। আবহমানকাল ধরে  তারা এই ঐতিহ্য লালন করে আসছেন। যার ফলে তারা নিজের বড় সন্তানের নামের শুরুতে "আবু" যোগ করে, সেই অনুসারে নিজেরা পরিচিতি লাভ করে থাকেন। যেমনঃ আবু উবায়দা, আবু মূসা আল আশআরী, আবু মুহাম্মাদ, ইত্যাদি।

 অনুরূপভাবে মহিলাগণ নিজ সন্তানের নামের অগ্রভাগে "উম্মু" অংশ যুক্ত করে নিজেরা পরিচিত হয়ে থাকেন। যেমনঃ উম্মে কুলসুম,  উম্মে হাবীবা, উম্মে আয়মান।

 

বড় সন্তানের নাম ধারণ করে কুনিয়াত বা উপনাম গ্রহণের রেওয়াজ স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও সুপ্রমাণিত। জনৈক সাহাবীকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, 

فَمَا لَكَ مِنَ الْوَلَدِ ؟ ". قَالَ : لِي شُرَيْحٌ وَمُسْلِمٌ وَعَبْدُ اللَّهِ. قَالَ : " فَمَنْ أَكْبَرُهُمْ ؟ ". قُلْتُ : شُرَيْحٌ. قَالَ : " فَأَنْتَ أَبُو شُرَيْحٍ ". (رواه ابو داؤد - ٤٩٥٥)

অর্থাৎ, তোমার সন্তানদের নাম কী? তিনি বললেন, তাদের নাম হলো, যথাক্রমে- শুরাইহ, মুসলিম ও আব্দুল্লাহ। তখন নবীজি  জিজ্ঞেস করলেন, " তাদের মাঝে সবচেয়ে বড় কে? সাহাবী বললেন, " শুরাইহ"। তখন নবীজি বললেন, " আজ থেকে তোমার ডাকনাম আবু শুরাইহ"। (আবূ দাউদ- ৪৯৫৫)


   তবে সন্তানের নাম ধারণ করেই যে উপনাম গ্রহণ করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়।সন্তানদের নাম ছাড়াও অনেক আরবীয় নাগরিক ( এমনকি অনারবগণও) "আবু" শব্দের সমন্বয়ে কুনইয়াত বা উপনাম ধারণ করে থাকেন। যেমন- আবু হুরাইরা, আবু বকর, আবু হাফস ওমর, আবু তুরাব ( আলী রাযি. এর উপনাম), আবুল হাসান আলী নদভী, আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহয়া, আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ইত্যাদি।


* কাবিউ -  এটি আরবী ٌقَوِيّ (কওয়ীয়্যুন) শব্দের অপভ্রংশীয় রূপ। যেখানে "ওয়াও" বর্ণটি পরবর্তিত হয়ে "ব" তে পরিণত হয়েছে।    একটি ভাষার শব্দ আরেক ভাষায় স্থানান্তরিত  হলে কখনো কখনো  কিঞ্চিত বিকৃতিসহ সেটির আগমন ঘটে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় "ওয়াও" বিশিষ্ট  কিছু আরবী শব্দ বাংলায় ব্যবহারকালে সহজায়নের উদ্দেশ্য সেটি বাংলা "ব " তে পর্যবসিত হয়। যেমন আরবীতে ছিল, نَحْو مِيْر

বাংলায় এসে হয়ে গেল নাহবেমীর। আরবীতে ছিলো, شَرْحُ الوِقايَة বাংলায় বলা হয় শরহে বেকায়া। আরবীতে বলে وِفَاقُ المَدَارِس আর বাংলায় বলে বেফাকুল মাদারিস। আরবিতে বলে وِقَار النِّسَاء (নারীদের মর্যাদা) বাংলায় বলে ভিকারুননেসা। আরবীতে, وِلَايَة বাংলায়,  বেলায়েত, আরবীতে ْنَدْوِي  বাংলায় নদবী, ইত্যাদি।


  আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে  قَوِيّ শব্দটির অর্থ হলো - শক্তিশালী, বলবান, ক্ষমতাবান, সবল, প্রবল ইত্যাদি।


এছাড়া আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি গুণবাচক নামের অন্যতম একটি নাম হলো, قَوِيّ

পবিত্র কুরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা আপন সত্তাকে এই নামের অভিধায় ভূষিত করেছেন। তিনি বলেন-


{ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ ٱلۡقَوِیُّ ٱلۡعَزِیزُ }

অর্থাৎ,  নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।  (সূরা হূদ- ৬৬) 


এবার স্বাভাবিকভাবেই মনে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে,  আল্লাহর গুণবাচক নামের  অনুকরণে মানুষের নাম রাখা যাবে কিনা?


এর উত্তর খানিকটা ব্যখ্যাসাপেক্ষ। সংক্ষিপ্ত পরিসরে সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ  আলোকপাত করার আগে পাঠকে মহলের অনুধাবনের সুবিধার্থে আল্লাহর গুণবাচক নিরানব্বই নাম সম্বলিত হাদীসটি প্রথমে উল্লেখ করা হলো। 


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً غَيْرَ وَاحِدةٍ، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ؛ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ الْغَفَّارُ الْقَهَّارُ الْوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الْخَافِضُ الرَّافِعُ الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ الْحَكَمُ الْعَدْلُ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ الْحَلِيمُ الْعَظِيمُ الْغَفُورُ الشَّكُورُ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ الْحَفِيظُ الْمُقِيتُ الْحَسِيبُ الْجَلِيلُ الْكَرِيمُ الرَّقِيبُ الْمُجِيبُ الْوَاسِعُ الْحَكِيمُ الْوَدُودُ الْمَجِيدُ الْبَاعِثُ الشَّهِيدُ الْحَقُّ الْوَكِيلُ الْقَوِيُّ الْمَتِينُ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ الْمُحْصِي الْمُبْدِئُ الْمُعِيدُ الْمُحْيِي الْمُمِيتُ الْحَيُّ الْقَيُّومُ الْوَاجِدُ الْمَاجِدُ الْوَاحِدُ الصَّمَدُ الْقَادِرُ الْمُقْتَدِرُ الْمُقَدِّمُ الْمُؤَخِّرُ الْأَوَّلُ الْآخِرُ الظَّاهِرُ الْبَاطِنُ الْوَالِي الْمُتَعَالِي الْبَرُّ التَّوَّابُ الْمُنْتَقِمُ الْعَفُوُّ الرَّءُوفُ مَالِكُ الْمُلْكِ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ الْمُقْسِطُ الْجَامِعُ الْغَنِيُّ الْمُغْنِي الْمَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّورُ الْهَادِي الْبَدِيعُ الْبَاقِي الْوَارِثُ الرَّشِيدُ الصَّبُورُ ". (رواه الترمذي -٣٥٠٧)


    হাদীসে উল্লিখিত গুণবাচক নামগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, প্রতিটি নাম "আল" অব্যয়যোগে গঠিত। এটিকে আরবী বালাগাত বা অলংকার শাস্ত্রের পরিভাষায় ال للعهد الخارجي বলে। অর্থাৎ বিশিষ্টতা জ্ঞাপক আলিফ লাম, যা নির্দিষ্ট সত্তাকে বুঝায়।

বক্ষমান হাদীসটির আদ্যপান্ত পঠনপূর্বক এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হলো যে, আল্লাহর প্রতিটি গুণবাচক নাম হলো, ْمُحَلّٰى بِأل বা আলিফ লাম সম্বলিত। সুতরাং হাদীসে বিদ্যমান গুণবাচক শব্দগুলো যদি "আলিফ লাম" ব্যতিরেকে ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে আল্লাহর গুণবাচক নাম হিসেবে বিবেচিত হবেনা। একারণেই আমরা সূরা তাওবায় দেখতে পাই, সেখানে আল্লাহর কতিপয় গুণবাচক নাম "আলিফ লাম" ব্যতিরেকে ব্যবহার করা হয়েছে। এবং সেই গুণাবলী দ্বারা আল্লাহ তায়ালাকে নয়, বরং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সূরা তাওবায় ইরশাদ করেন,


{ لَقَدۡ جَاۤءَكُمۡ رَسُولࣱ مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ عَزِیزٌ عَلَیۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیصٌ عَلَیۡكُم بِٱلۡمُؤۡمِنِینَ رَءُوفࣱ رَّحِیمࣱ }


অর্থাৎ, তোমাদের নিকট আগমন করেছেন তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাংখী, মু’মিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুণাপরায়ণ। ( সূরা তাওবাহ - ১২৮)


আলোচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একাধারে "আযীয" "রউফ" ও "রহীম" অভিধায় ভূষিত  করা হয়েছে।  এর কারণ হলো,যদিও শব্দগুলো আল্লাহর গুণবাচক নামের অন্তর্ভুক্ত, কিন্ত শব্দগুলো "আলিফ লাম" বিহীন হওয়াতে আল্লাহ তায়ালা ছাড়াও অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। আলোচ্য আয়াতই এর জ্বলন্ত প্রমাণ।


 আরব বিশ্বের প্রখ্যাত ইলমী পুরোধা ব্যক্তিত্ব শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (রাহি.) কে বক্ষমাণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,  

 التسمي بأسماء الله عز وجل يكون على قسمين:


القسم الأول: أن يُحلَّى بـ"أل"، ففي هذه الحالة لا يُسمَّى به غير الله عز وجل، كما لو سميت أحدًا بالعزيز والحكيم، وما أشبه ذلك، فإن هذا لا يُسمَّى به غير الله.

অর্থাৎ, আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো দিয়ে অন্যকারো নামকরণের বিষয়টি দু'ভাবে হতে পারে। 

প্রথম প্রকার হলো, গুণবাচক নামের সাথে مُعَرَّف باللام  বা আলিফ লাম যোগে নামকরণ করা। যেমন- আল আযীয, আল হাকীম প্রভৃতি। এভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্যকারো নাম রাখা যাবেনা। 



 

القسم الثاني: أن يتسمى بالاسم غير محلى بـ"أل" وليس المقصود معنى الصفة،  بل قصد به مجرد العلمية، فهذا لا بأس به؛ مثل: "حكيم" "مجيد"، ومن أسماء بعض الصحابة: "حَكِيم بن حِزَام" ( كذا في فتاوى العقيدة مع تغيير يسير - ٣٧) 


অর্থাৎ  দ্বিতীয় প্রকার হলো, "আলিফ লাম" ব্যতিরেকে গুণবাচক নামগুলো দিয়ে কারো নাম রাখা। সেই নামকরণে যদি নামের অন্তর্নিহিত গুণ উদ্দেশ্য না হয়ে নিছক নামবিশেষ্য বা ব্যক্তিনাম উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে নামকরণে কোন সমস্যা নেই। যেমন কারো নাম রাখা হলো, মজিদ (আল-মাজীদ নয়) কিংবা হাকীম (আল হাকীম নয়)। অধিকন্তু জনৈক সাহাবীর নামও ছিলো, হাকীম বিন হিযাম। অনুরূপভাবে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচাতো ভাই ও জামাতা, ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী (রাযি.) এর নামটিও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ عَلِيّ  (আলী) আল্লাহ তায়ালার অন্যতম একটি গুণবাচক নাম। ( কিঞ্চিৎ সম্পাদনা সমেত ফাতাওয়া আল আক্বীদাহ -৩৭)



    তবে মিশর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ফতোয়া বোর্ড এক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

তাঁদের মতে- আল্লাহর সিফাতি নামগুলোর মাঝে যেসকল বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের মাঝে সামান্য মাত্রায় হলেও বিদ্যমান, সে সকল গুণবাচক নামগুলো অনুসারে মানুষের নাম রাখা যাবে। যেমন ঃ রহিম (কারণ মানুষের মাঝেও দয়াদ্র মনোভাব থাকে), আদল ( মানুষের মাঝেও সুবিচারের দেখা মেলে), সামী' ( মানুষ শ্রবণ গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে) , বাসীর (মানুষ দৃষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে),  কওয়ী ( মানুষের মাঝেও শক্তিমত্তা গ্রথিত থাকে) ইত্যাদি।


পক্ষান্তরে যে সকল গুণবাচক নামের মধ্যকার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিরংকুশভাবে একমাত্র আল্লাহর সাথেই খাস বা বিশেষায়িত, যার সাথে অন্য কারো নূন্যতম অংশীদার সাব্যস্ত করামাত্রই শিরকের অতল গহবরে নিমজ্জিত হওয়াটাকে অবধারিত করে তোলে, এমন  নামগুলোর অনুসরণে  অন্য কারো নামকরণ করা যাবেনা। সেই বিশেষ নামগুলোর  মাঝে অন্যতম হলো- আল্লাহ, রব,  রহমান, খালেক, সামাদ, আহাদ, মুতাকাব্বির, রাজ্জাক প্রভৃতি।

 

উল্লেখ্য যে, এই প্রকারের শব্দগুলো দ্বারা নামকরণ করতে হলে নামে অগ্রভাগে ُعَبْد (আবদু) অংশটি আবশ্যিকভাবে যোগ করে নিতে হবে।


*আজাদ ঃ বাংলা ভাষায় শব্দটি বহুল প্রচলিত হলেও ব্যুৎপত্তিগতভাবে آزاد  শব্দটি একটি ফার্সি  শব্দ। উর্দুভাষার  সুপ্রাচীন অভিধান فيروز اللغات এ শব্দটির ব্যখ্যা এভাবে করা হয়েছে।

بے قید، ناپابند، بے نیاز، نڈر،خود مختار


অর্থাৎ বন্ধনহীন, বিমুক্ত, স্বাধীনচেতা, অকুতোভয় ব্যক্তিকে আযাদ বলা হয়ে থাকে।


  ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি বুলালে আমরা দেখতে পাই, "আযাদ" শব্দটি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও বাংলার ভাষা আন্দোলনের  সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারতে "দৈনিক আজাদ" নামীয় একটি  বাংলা পত্রিকার বেশ প্রচলন ছিলো। মাওলানা মুহাম্মাদ আকরাম খাঁ সম্পাদিত পত্রিকাটি ১৯৩৬ সালে চালু হয়ে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। "আজাদ" ঢাকার প্রথম দৈনিক পত্রিকা ছিল। পত্রিকাটি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় বাংলা ভাষার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


এছাড়া ভারত উপমহাদেশ থেকে বৃটিশ বেনিয়াদের উচ্ছেদকল্পে যে ঐতিহাসিক বিল্পবের উন্মেষ ঘটেছিলো, তার নাম  আযাদী আন্দোলন। এই আযাদী আন্দোলনের অমর গাঁথা হিসেবে শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান ( রাহি.) এর রেশমী রুমাল আন্দোলন ইতিহাসের সোনালীপাতায় যুগযুগ ধরে চিরভাস্বর হয়ে রইবে।


  সার কথা হলো, উপর্যুক্ত শব্দত্রয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে বলা যেতে পারে, আপনার জিজ্ঞাসিত নাম  "আবুল কাবিউ আজাদ" এর সামষ্টিক অর্থ হলো,

 স্বাধীনচেতা অফুরন্ত শক্তির অধিকারী (ব্যাক্তিত্ব)।


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক