আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

মোটিভেশন ক্লাস -২১: জিজ্ঞাসা -১২৭৫১: মিতব্যয়ীতার গুরুত্ব

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৭৫১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন।আমার একটা লেসন প্ল্যান প্রয়োজন।

"আয় বুঝে ব্যয় করা এবং মিতব্যয়ীতার গুরুত্ব।"

তারিখ:  ০৫/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা নুরুল আলম খুলনা  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

। ভূমিকা: 

মিতব্যয়িতা মানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম-সতর্কতা অবলম্বন করা। কিংবা 'আয় বুঝে ব্যয় করা'। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাকেও মিতব্যয়িতা বলা হয়। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর 'বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস' পালন করা হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই তা পবিত্র কুরআনে বলে দিয়েছেন। যেমন,

وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا

এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। সূরা ফুরকান -৬৭


। মিতব্যয়ীতা বলতে কী বুঝায়?

মিতব্যয়ী /বিশেষণ পদ/ যে পরিমাণ মত ব্যয় করে; অল্পব্যয়ী, হিসাবী।


মিতব্যয়ী /adjective/ economical; frugal; forehand; sparing; canny; thrifty; parsimonious; saving; provident; husbandly; forehanded; Economical; /প্রতিশব্দ/ মিতব্যয়ী; হিসাবী; যথাসময়ে কৃত; আতিশয্যবিমুখ; চতুর; সঁচয়ী; অর্থব্যয়ে সতর্ক; বিচক্ষণ; কালোচিত

আয় বুঝে ব্যয় কর ইংরেজি হলো Cut your coat according to your cloth.


গ। আয় বুঝে ব্যয় করা বা মিতব্যয়ীতার গুরুত্ব:


সমাজে অনেক লোক আছে যারা আয়-ব্যয়ের সমন্বয় সাধন করে না বিধায়, পরর্ভিরশীলতা থাকতে হয়। অতএব বলা যায় স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অপব্যয় না করা ও মিতব্যয়ী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।


وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا 

 আর যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। সূরা ফুরকান-৬৭


অপরিমিত সম্পদ ব্যয় পরনির্ভরশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ। । রাসূল (ﷺ) তাই সম্পদ ব্যয়ে মিতাচারী হবার নির্দেশ দিয়েছেন।


عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ.

 অর্থ: যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-৪২৬৯


হাদিস নং-০৪

,لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ، রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় তার রবের নিকট হ’তে একটুকুও নড়বে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হ’তে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? আর সে যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছিল সে অনুযায়ী আমল করেছে কি-না’। তাখরিজ: তিরমিযী হা/২৪১৬; মিশকাত হা/৫১৯৭;


ঘ। মিতব্যয়ী তথা অপচয়-অপব্যয় না করা সম্পর্কে ইসলামি নির্দেশনা:

আয়াত নং-০১

 وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ 

এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। সূরা আরাফ-৩১


আয়াত নং-০২

كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ،

‘তোমরা এগুলির ফল খাও যখন তা ফলবন্ত হয় এবং এগুলির হক আদায় কর ফসল কাটার দিন। আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’। সূরা আন‘আম-১৪১


আয়াত নং-০৩

,وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا، 

‘আর তুমি তোমার হাত গলায় বেড়ী করে রেখ না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহ’লে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে’। সূরা বনী ইসরাঈল-২৯


 

আয়াত নং-০৪

وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ، فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ، وَظِلٍّ مِنْ يَحْمُومٍ، لَا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ، إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُتْرَفِين، 

‘আর বাম পাশের দল। কতই না হতভাগ্য তারা! তারা থাকবে উত্তপ্ত বায়ু ও ফুটন্ত পানির মধ্যে। যা শীতল নয় বা আরামদায়ক নয়। ইতিপূর্বে তারা ছিল ভোগ-বিলাসে (অপব্যয়ে) মত্ত’। সূরা ওয়াক্বি‘আ-৪১-৪৫


হাদিস নং-০১

إِنّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلاَثًا قِيلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السّؤَالِ 

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা ২. সম্পদ নষ্ট করা, ৩. অধিক প্রশ্ন করা। তাখরিজ: বুখারি-১৪৭৭; মুসলিম-৫৯৩


হাদিস নং-০২

,كُلُوا وَاشْرَبُوا وَتَصَدَّقُوا وَالْبَسُوا غَيْرَ مَخِيلَةٍ وَلاَ سَرَفٍ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘তোমরা খাও, পান কর, দান-ছাদাক্বাহ কর এবং পরিধান কর, তবে অহংকার ও অপচয় ব্যতীত’। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-৬৬৯৫


হাদিস নং-০৩

,فِرَاشٌ لِلرَّجُلِ وَفِرَاشٌ لاِمْرَأَتِهِ 

وَالثَّالِثُ لِلضَّيْفِ وَالرَّابِعُ لِلشَّيْطَانِ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একটি বিছানা স্বামীর জন্য,র আরেকটি স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানের জন্য আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য’। তাখরিজ: মুসলিম-৫৫৭৩

ব্যাখ্যা: এর উদ্দেশ্য হ’ল খরচ কম করা, যাতে করে ঋণ করতে অন্যের দারস্থ হ’তে না হয়। নিজের সম্পদ দ্বারাই যেন নিজের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয়।

আসার নং-০১

,إياكم والبطنة في الطعام والشراب فإنها مفسدة للجسد مورثة للفشل مكسلة عن الصلاة وعليكم بالقصد فيهما فإنه أصلح للجسد وأبعد من السرف- 

ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা সীমাতিরিক্ত পানাহার থেকে সাবধান থাক। কেননা অতিরিক্ত পানাহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর, অকর্মন্যতা আনয়ন কারী ও ছালাত থেকে অলসকারী। তোমরা পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। কেননা পরিমিত পানাহার শরীরের জন্য উপকারী এবং অপচয় থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে’। তাখরিজ: ইবনু মুফলিহ আল- মাকদিসি, আল আদাবুশ শারইয়্যাহ-২/২০১


আসার নং-০২

من أنفق درهما في غير حقه فهو سرف 

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে এক দিরহামও খরচ করল সেটাই অপচয়’। তাখরিজ: আলজামি লি আহকামিল কুরআন-১৩/৭৩, ইমাম কুরতুবি রহ.


উপসংহার: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা পৃথিবীকে আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তু দ্বারা সুশোভিত করেছেন। তিনি অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বস্তুর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করতে বলেছেন। ইসলামে সব কিছুর ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন তথা আয় বুঝে ব্যয় করতে করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।



  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক