জিজ্ঞাসা-১২৭৬৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।মুহতারাম,সালাতের ভিতর ও বাহিরের ১৪ টি ফরজের বাহিরের প্রস্তুতিমুলক ফরজগুলো কুরআনে কারীমের রেফারেন্স সহ জানতে চাই।
তারিখ: ১৮/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবু সুমাইয়া শাহজাহান শেখ কুমিল্লা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ফরজের সংখ্যা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিচে আমরা ১৩টি ফরজের দলিল উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।
নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ
১. শরীর পবিত্র হওয়া। দলিল:
Surah Al-Maeda, Verse 6:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। সূরা মায়েদা-০৬
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ " . قَالَ هَنَّادٌ فِي حَدِيثِهِ " إِلاَّ بِطُهُورٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا الْحَدِيثُ أَصَحُّ شَيْءٍ فِي هَذَا الْبَابِ وَأَحْسَنُ . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ عَنْ أَبِيهِ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَأَنَسٍ . وَأَبُو الْمَلِيحِ بْنُ أُسَامَةَ اسْمُهُ عَامِرٌ وَيُقَالُ زَيْدُ بْنُ أُسَامَةَ بْنِ عُمَيْرٍ الْهُذَلِيُّ .
কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও হান্নাদ (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ তাহারাত ছাড়া নামায কবুল হয় না আর খিয়ানতের মাল থেকে* সাদ্কা (কবুল) হয় না। তাখরিজ:০১
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্রতা ব্যতীত আল্লাহ তাআলা নামায কবুল করেন না। এ হাদীসটি শরীর পাক, কাপড় পাক এবং নামাযের জায়গা পাকসহ সব ধরণের পবিত্রতারই প্রমাণ বহন করে। নামায সহীহ হওয়ার জন্য এ সকল জিনিস পবিত্র হওয়া শর্ত। (শামী: ১/৪০২) শরীর বা কাপড়ে মজী লেগে থাকলে রসূল স. তা ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ-২১০, তিরমিযী-১১৫) হযরত আয়েশা রা. রসূলুল্লাহ স.-এর কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলার পরে তিনি কাপড়ে ভেজা চিহ্ন নিয়ে নামায আদায় করতেন। (বুখারী: ২২৯) কাপড়ে হায়েযের রক্ত লেগে থাকলে রসূলুল্লাহ স. সেটাকে ভালো করে ধুয়ে তারপর সেই কাপড়ে নামায আদায় করতে বলেছেন। (বুখারী: ২২৭) এ সকল হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মজী, বীর্য এবং হায়েযের রক্ত নাপাক।
২. কাপড় পবিত্র হওয়া। দলিল:
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ
আপন পোশাক পবিত্র করুন। সূরা মুদ্দাস্সির-০৪
৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। দলিল:
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। সূরা বাকারা-১২৫
৪. সতর ঢাকা :
عورةُ الرَّجُلِ ما بين السُّرَّةِ والرُّكبةِ، وهذا باتِّفاقِ المذاهب الفقهيَّة الأربعة: الحنفيَّة، والمالكيَّة، والشافعيَّة على الصَّحيح، والحنابلة، وبه قال أكثرُ الفُقهاءِ
يجِبُ على المرأةِ في الصَّلاةِ سَترُ جميعِ جِسمِها، ما عدَا الوجهَ والكفَّينِ
অর্থাৎ চার মাযহাবের ফকিহগণের ঐক্যমতে নামাজে পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ। নারীদের মুখমণ্ডল, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও টাখনুর নিচে পায়ের পাতা ছাড়া সব অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ। সূত্র: আলবিনায়া-২/১২২; আলমুগনি-১/৪৩০
দলিল -
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ سَوَّارٍ الْمُزَنِيُّ، بِإِسْنَادِهِ وَمَعْنَاهُ وَزَادَ " وَإِذَا زَوَّجَ أَحَدُكُمْ خَادِمَهُ عَبْدَهُ أَوْ أَجِيرَهُ فَلاَ يَنْظُرْ إِلَى مَا دُونَ السُّرَّةِ وَفَوْقَ الرُّكْبَةِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهِمَ وَكِيعٌ فِي اسْمِهِ وَرَوَى عَنْهُ أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ هَذَا الْحَدِيثَ فَقَالَ حَدَّثَنَا أَبُو حَمْزَةَ سَوَّارٌ الصَّيْرَفِيُّ .
যুহায়ের ইবনে হারব .... দাউদের সূত্রে হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। এই সূত্রে আরও আছেঃ তোমাদের কেউ যখন তার বাঁদীকে-দাসের সাথে বিয়ে দিবে তখন থেকে সে তার (দাসীর) নাভির নিম্নাংশ থেকে হাটুর উপরাংশ পর্যন্ত স্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ৪৯৬
হাদীসের ব্যখ্যা:
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পুরম্নষের নাভী থেকে হাঁটু পর্যনত্ম সতর। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪০৪)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ يَحْيَى الأُمَوِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمِ بْنِ عَبَّادِ بْنِ حُنَيْفٍ الأَنْصَارِيُّ، أَخْبَرَنِي أَبُو أُمَامَةَ بْنُ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، قَالَ أَقْبَلْتُ بِحَجَرٍ أَحْمِلُهُ ثَقِيلٍ وَعَلَىَّ إِزَارٌ خَفِيفٌ - قَالَ - فَانْحَلَّ إِزَارِي وَمَعِيَ الْحَجَرُ لَمْ أَسْتَطِعْ أَنْ أَضَعَهُ حَتَّى بَلَغْتُ بِهِ إِلَى مَوْضِعِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ارْجِعْ إِلَى ثَوْبِكَ فَخُذْهُ وَلاَ تَمْشُوا عُرَاةً " .
৬৬৬। সাঈদ ইবনে ইয়াহয়া আল উমাবী (রাহঃ) ......... মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি ভারী পাথর বয়ে নিয়ে আসছিলাম। আর তখন আমার পরনে ছিল একটি পাতলা লুঙ্গি। তিনি বলেন, এরপর আমার লুঙ্গি খুলে গেল। পাথরটি তখন আমার কাছে ছিল। তাই আমি লুঙ্গি তুলে নিতে পারলাম না। এমনিভাবে আমি পাথরটি যথাস্থানে নিয়ে গেলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমার কাপড়ের কাছে ফিরে গিয়ে তা নিয়ে এস। আর কখনো উলঙ্গ চলো না। তাখরিজ: মুসলিম -৩৪১
হাদীসের ব্যখ্যা:
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা সতর ঢাকা আবশ্যক প্রমাণিত হয়। এটা মানুষের জন্য সার্বক্ষণিক কর্তব্য। নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্যও সতর ঢাকা শর্ত। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪০৪) আর এ কারণে সতর খোলা থাকাবস্থায় নামাযে দাঁড়ালে নামায হবে না। অনুরূপভাবে যে সকল অঙ্গ ঢেকে রাখা আবশ্যক নামাযরত অবস্থায় তা খুলে গিয়ে কিছু সময় স্থায়ী থাকলেও নামায হবে না। তবে খোলার সাথে সাথে ঢেকে নিলে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ সামান্য বিষয় থেকে বেঁচে থাকা কঠিন। আর শরীআত এটা থেকে মানুষকে রেহাই দিয়েছে। (সূরা বাকারা-২৮৬, সূরা হজ্ব-৭৮)
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَاصِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُوَرِّقٍ، عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
১১৭৪. মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, নারী হল গোপন যোগ্য। সে যখন বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ১১৭৩ (আন্তর্জাতিক নং ১১৭৩)
নোট: ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ-গারীব।
হাদিস নং -০৪
حَدَّثَنَا مُجَاهِدُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، - يَعْنِي ابْنَ دِينَارٍ - عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّهَا سَأَلَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَتُصَلِّي الْمَرْأَةُ فِي دِرْعٍ وَخِمَارٍ لَيْسَ عَلَيْهَا إِزَارٌ قَالَ " إِذَا كَانَ الدِّرْعُ سَابِغًا يُغَطِّي ظُهُورَ قَدَمَيْهَا " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ وَبَكْرُ بْنُ مُضَرَ وَحَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ وَإِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ وَابْنُ أَبِي ذِئْبٍ وَابْنُ إِسْحَاقَ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ أُمِّهِ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ لَمْ يَذْكُرْ أَحَدٌ مِنْهُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَصَرُوا بِهِ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ رضى الله عنها .
৬৪০. মুজাহিদ ইবনে মুসা ..... উম্মে সালামা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করেন যে, মহিলারা পাজামা পরিধান ব্যতীত কেবলমাত্র ওড়না ও চাদর পরিধান করে নামায পড়তে পারে কি? তিনি বলেনঃ যখন চাদর বা জামা এতটা লম্বা হবে, যাতে পায়ের পাতা ঢেকে যায়- এরূপ কাপড় পরে নামায পড়তে পারবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৪০ (আন্তর্জাতিক নং ৬৪০)
৫. কিবলামুখী হওয়া। দলিল:
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। সূরা বাকারা-১৪৪
6251 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا» وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ، فِي الأَخِيرِ: «حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا» ،
ইসহাক ইবনে মানসুর (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে নামায আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করল। নবী (ﷺ) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে নামায আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নামায শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার নামাযের বাকী সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবু উসামা বর্ণনার শেষে বলেন, (দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠে) এমনকি তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তাখরিজ: বুখরী, হাদীস নং ৫৮১৭
৬. ওয়াক্ত মতো নামাজ পড়া । দলিল:
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সূরা নিসা -১০৩
521 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، قَالَ: قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ العَزِيزِ أَخَّرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا فَدَخَلَ عَلَيْهِ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، فَأَخْبَرَهُ أَنَّ المُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ أَخَّرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا وَهُوَ بِالعِرَاقِ، فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَبُو مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيُّ، فَقَالَ: مَا هَذَا يَا مُغِيرَةُ أَلَيْسَ قَدْ [ص:111] عَلِمْتَ أَنَّ جِبْرِيلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ فَصَلَّى، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ صَلَّى، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ صَلَّى، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ صَلَّى، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ صَلَّى، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ: «بِهَذَا أُمِرْتُ» ، فَقَالَ عُمَرُ لِعُرْوَةَ: اعْلَمْ مَا تُحَدِّثُ، أَوَأَنَّ جِبْرِيلَ هُوَ أَقَامَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقْتَ الصَّلاَةِ؟ قَالَ عُرْوَةُ: كَذَلِكَ كَانَ بَشِيرُ بْنُ أَبِي مَسْعُودٍ يُحَدِّثُ، عَنْ أَبِيهِ،
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) ..... ইবনে শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) একদিন কোন এক নামায আদায়ে বিলম্ব করলেন। তখন উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাযিঃ) তাঁর কাছে গেলেন এবং তাঁর কাছে বর্ণনা করলেন যে, ইরাকে অবস্থানকালে মুগীরা ইবনে শু’বা (রাযিঃ) একদিন এক নামায আদায়ে বিলম্ব করেছিলেন। ফলে আবু মাসউদ আনসারী (রাযিঃ) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, হে মুগীরা! একি? তুমি কি অবগত নও যে, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে নামায আদায় করলেন, আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও নামায আদায় করলেন। আবার তিনি নামায আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও নামায আদায় করলেন। পুনরায় তিনি নামায আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও নামায আদায় করলেন। আবার তিনি নামায আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও নামায আদায় করলেন। পুনরায় তিনি নামায আদায় করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও নামায আদায় করলেন। তারপর জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।*
উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) উরওয়া (রাহঃ)-কে বললেন, “তুমি যা রিওয়ায়াত করছ তা একটু ভেবে দেখ। জিবরাঈলই কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য নামায এর ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন?” উরওয়া (রাহঃ) বললেন, বশীর ইবনে আবু মাসউদ (রাহঃ) তার পিতা থেকে এরূপই বর্ণনা করতেন। উরওয়া (রাহঃ) বলেনঃ অবশ্য আয়িশা (রাযিঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন মুহূর্তে আসরের নামায আদায় করতেন যে, সূর্যরশ্মি তখনও তাঁর হুজরার মধ্যে বিরাজমান থাকত। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার আগেই।
*অর্থাৎ, যে সময়ে যে নামায আদায় করা হয়েছে, ঠিক সে সময়ে সেই নামায আদায় করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৭ (আন্তর্জাতিক নং ৫২১-৫২২)
৭. অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। দলিল:
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ "
হুমায়দী (রাহঃ) ......... আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস লায়সী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য।
নামাজের ভেতরে ছয়টি ফরজ
১. তাকবিরে তাহরিমা, অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা। দলিল:
وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ
আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন। সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩;
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْفُضَيْلِ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، طَرِيفٍ السَّعْدِيِّ عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ وَلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بــ"الْحَمْدُ" وَسُورَةٍ _ فِي فَرِيضَةٍ أَوْ غَيْرِهَا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَعَائِشَةَ . قَالَ وَحَدِيثُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ فِي هَذَا أَجْوَدُ إِسْنَادًا وَأَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ أَبِي سَعِيدٍ وَقَدْ كَتَبْنَاهُ فِي أَوَّلِ كِتَابِ الْوُضُوءِ . وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ بَعْدَهُمْ . وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَابْنُ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ أَنَّ تَحْرِيمَ الصَّلاَةِ التَّكْبِيرُ وَلاَ يَكُونُ الرَّجُلُ دَاخِلاً فِي الصَّلاَةِ إِلاَّ بِالتَّكْبِيرِ . .
সুফিয়ান ইবনে ওয়াকী (রাহঃ) .... আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন নামাযের চাবি হল তাহারাত। তাকবীর তাহরীমা (নামাযের পরিপন্থী) সকল কাজ হারাম করে দেয় আর নামায তা হালাল করে। কেউ যদি সূরা ফতিহা ও একটি সূরা না পড়ে তবে তাঁর নামায হয় না তা ফরয হোক বা অন্য কিছু। তাখরিজ: তিরমিজি ১/৫৫, হাদিস : ২৩৮
২. ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। দলিল:
Surah Al-Baqara, Verse 238:
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। সূরা বাকারা-২৩৮
1117 - حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ طَهْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنِي الحُسَيْنُ المُكْتِبُ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ»
আবদান (রাহঃ) ......... ইমরান ইবনে হুসাইন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে নামায সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেনঃ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে, তাতে সমর্থ না হলে বসে; যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে। তাখরিজ: বুখারি-১১১৭
হাদীসের ব্যখ্যা:
উল্লিখিত হাদীসের বিবরণ থেকে বুঝা যায় যে, নামায দাঁড়িয়ে পড়াই জরুরী। তবে কেউ দাঁড়াতে একান্ত অপারগ হলে তাকে বসে বা তা-ও না পারলে শুয়ে অথবা ইশারা করে নামায পড়তে হবে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেউ বসে নামায পড়লে তার নামায হবে না। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৪৪, ৪৪৫)
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, গ্রামের মহিলাগণ অজ্ঞতার কারণে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সামান্য অজুহাতেই বসে বসে নামায পড়েন। অথচ এতে তাদের নামায হয় না। আবার শহরের অতি আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ সামান্য কোমরে ব্যথা বা হাঁটু ব্যথার অজুহাতে অভিজ্ঞ মুফতি বা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত চেয়ারে বসে নামায পড়ে থাকেন। অথচ তারা চেষ্টা করলে একটু কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারতেন। গ্রহণযোগ্য ওযর ব্যতীত ফরয বিধান (দাঁড়ানো) পরিত্যাগের কারণে তাদের নামায হচ্ছে না; কিন্তু এ দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
৩. কিরাত পড়া। (অর্থাৎ কোরআন শরিফ থেকে ন্যূনতম ছোট এক আয়াত (৩০ অক্ষর) পরিমাণ পড়া ফরজ। দলিল:
فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ
কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।
সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০
6251 - حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ المَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا» وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ، فِي الأَخِيرِ: «حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا» ،
ইসহাক ইবনে মানসুর (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে নামায আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করল। নবী (ﷺ) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে নামায আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নামায শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযু করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার নামাযের বাকী সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবু উসামা বর্ণনার শেষে বলেন, (দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠে) এমনকি তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তাখরিজ: বুখারি-৬২৫১
৫. রুকু করা: দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সূরা হজ-৭৭
1113 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِهِ وَهُوَ شَاكٍ، فَصَلَّى جَالِسًا وَصَلَّى وَرَاءَهُ قَوْمٌ قِيَامًا، فَأَشَارَ إِلَيْهِمْ أَنِ اجْلِسُوا، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا، وَإِذَا رَفَعَ فَارْفَعُوا»
কুতাইবা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ঘরে নামায আদায় করলেন, তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই তিনি বসে বসে নামায আদায় করছিলেন এবং এক দল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে লাগলেন। তখন তিনি বসে পড়ার জন্য তাদের প্রতি ইশারা করলেন। তারপর নামায শেষ করে তিনি বললেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে। কাজেই তিনি রুকূ’ করলে তোমরা রুকূ’ করবে এবং তিনি মাথা উঠালে তোমরাও মাথা উঠাবে।
বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২]
৫. দুই সিজদা করা। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সূরা হজ-৭৭
733 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ قَالَ: خَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ فَرَسٍ، فَجُحِشَ، فَصَلَّى لَنَا قَاعِدًا فَصَلَّيْنَا مَعَهُ قُعُودًا، ثُمَّ انْصَرَفَ، فَقَالَ: " إِنَّمَا الإِمَامُ - أَوْ إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ - لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا، وَإِذَا رَفَعَ فَارْفَعُوا، وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، فَقُولُوا: رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ، وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوا "
কুতাইবা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে নামায আদায় করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বসে নামায আদায় করি। তারপর তিনি ফিরে বললেনঃ ইমাম অনুসরণের জন্যই বা তিনি বলেছিলেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। যখন তিনি উঠেন তখন তোমরাও উঠবে। তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলেন তোমরাও তখন رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে এবং তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১]
৬. শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা)। দলিল:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ النُّفَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ الْحُرِّ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُخَيْمِرَةَ، قَالَ أَخَذَ عَلْقَمَةُ بِيَدِي فَحَدَّثَنِي أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ أَخَذَ بِيَدِهِ وَأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ بِيَدِ عَبْدِ اللَّهِ فَعَلَّمَهُ التَّشَهُّدَ فِي الصَّلاَةِ فَذَكَرَ مِثْلَ دُعَاءِ حَدِيثِ الأَعْمَشِ " إِذَا قُلْتَ هَذَا أَوْ قَضَيْتَ هَذَا فَقَدْ قَضَيْتَ صَلاَتَكَ إِنْ شِئْتَ أَنْ تَقُومَ فَقُمْ وَإِنْ شِئْتَ أَنْ تَقْعُدَ فَاقْعُدْ " .
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ নুফায়েলী, যুহায়ের, তিনি হাসান ইবনুল হুর, তিনি কাসিম ইবনে্ মুখায়মারা হতে এই হাদীসটি বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, একদা আলকামা (রাহঃ) আমার হস্ত ধারণ করে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) একদা আমার হাত ধরে বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) নামাযের মধ্যে তাশাহুহুদ পাঠের পদ্ধতি শিক্ষা দেন। অতঃপর তিনি আ’মাশের উপরোক্ত হাদীসের মধ্যে উল্লিখিত দুআটি শিক্ষা দেন।
অতঃপর তিনি বলেনঃ যখন তুমি এই দুআ (দুআ মাছুরা) পাঠ করবে, তখন তোমার নামায সমাপ্ত হবে। এ সময় তুমি ইচ্ছা করলে যাওয়ার জন্য দণ্ডায়মান হতে পার বা বসেও থাকতে পার। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৭০ (আন্তর্জাতিক নং ৯৭০)
বি.দ্র. : নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন—সালাম ফেরানো ইত্যাদি) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫১৩]
নামাজের কোনো ফরজ বাদ পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহিহ হয় না। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫০৫) ফাতাওয়া শামি, ১ : ৪৪৭, হিদায়া, ১ : ৯৮]
সারকথা হলো, ফরজ ও ওয়াজিব এর সংখ্যা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে সবার মতে জরুরি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক