জিজ্ঞাসা-২৮১: আসসালামু আলাইকুম। নামাজ তরককারীর শাস্তি সম্পর্কে ইমামদের মতামত জানতে চাই কষ্ট করে যদি দলিলসহ জানাতেন। তারিখ-২৪/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ রবিউল ইসলাম কঙ্গো থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
وقد أجمع الفقهاء على كفر من ترك الصلاة جاحداً لوجوبها أنه فاسق ارتكب معصية وكبيرة من الكبائر ولكنه ليس بكافر وهذا قول أكثر أهل العلم (أبوحنيفة ومالك ووجه عند الشافعي ورواية عند الإمام أحمد)
অর্থাৎ ফুকাহায়ে কিরামগণ! একথার ওপর ইজমা (ঐক্যমত পোষণ করেছেন) করেছেন যে, নামাজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে যে অস্বীকার করবে অর্থা্ৎ নামাজকে যে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। দলিল:
، واستدلّوا بقول الله -تعالى-: (يَوْمَ يُكْشَفُ عَن سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ، خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ)،
অর্থ: গোছা পর্যন্ত পা খোলার দিনের কথা স্মরণ কর, সেদিন তাদেরকে সেজদা করতে আহবান জানানো হবে, অতঃপর তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে; তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে, অথচ যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল, তখন তাদেরকে সেজদা করতে আহবান জানানো হত। সূরা কলাম,৪২,৪৩
كما واستدلّوا بحديث النبيّ الذي ضعّفه بعض العلماء: (لا تُشرِكوا باللَّهِ شيئًا وإن قطِّعتُمْ أو حُرِّقتُمْ أو صُلِّبتُمْ، ولا تترُكوا الصَّلاةَ متَعمِّدينَ فمن ترَكَها متعمِّدًا فقد خرجَ عن الملَّةِ আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ (ﷺ)আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়; (২) ইচ্ছা করে কোন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে না, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে তার ওপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে; (৩) মদ পান করবে না, কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। হাসান লিগয়রিহী : ইবনু মাজাহ্ ৪০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৭।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সিদ্ধান্ত হলো, অলসতাবশত নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না। দলিল:
ودليلهم على ذلك قول الله تعالى:
“إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ” (النساء – 48)
নিশ্চয়ই আল্লাহ এ বিষয়কে ক্ষমা করেন না যে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করা হবে। এর চেয়ে নিচের যে-কোন বিষয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। ৪১ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে, সে এক গুরুতর পাপে লিপ্ত হল। সূরা নিসা-৪৮
فقالوا أن الله يغفر جميع الذنوب ما عدا الشرك وترك الصلاة تهاونًا وكسلًا ليس من الشرك
অর্থাৎ শিরক ব্যতিত সব গুনাহ ক্ষমার যোগ্য। আর নফসের কামনা ও অলসতাবশত নামাজ ত্যাগ করা শিরক নয়। অতত্রব প্রমাণিত হলো অলসতাবশত নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না; ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাকে মাফ করতে পারেন।
তবে নামাজ ত্যাগকারীর শাস্তি কি হবে এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছেন। যেমন,
ইমাম শাফেয়ি, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমদ (রহ.) এর ফতোয়া হলো, সে কাফের হবে না, কিন্তু নামাজ না পড়ার শাস্তিস্বরূপ তাকে তিন দিন জেলখানায় বন্দি রাখতে হবে। এর মধ্যে সে তওবা করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তওবা না করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে।
তিন ইমামের দলিল:
আয়াত নং-০১
مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ: সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। সূরা রুম-৩১
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে নামাজ না পড়লে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত কথা বলা হয়েছে।
আয়াত নং-০২
﴿ فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ شَيۡٔٗا ٦٠ ﴾ [مريم: ٥٩، ٦٠]
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে। কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” সূরা মারইয়াম আয়াত: ৫৯-৬০
ব্যাখ্যা: এ আয়াত সালাত বর্জনকারীর কুফুরী এইভাবে প্রমাণ করে যে আল্লাহ তা‘আলা সালাত বিনষ্টকারী ও প্রবৃত্তির অনুগামী অবস্থায় ঈমান থাকে না।
হাদিস নং-০১
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ ترك الصَّلَاة» . رَوَاهُ مُسلم
অর্থ : হজরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা। তাখরিজ: মুসলিম-৮২, আবু দাঊদ-৪৬৭৮, নাসায়ী-৪৬৪, তিরমিযী-২৬২০, ইবনু মাজাহ্-১০৭৮
হাদিস নং-০২
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
অর্থ: হজরত বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করলো (অর্থাৎ- কাফির হয়ে যাবে)। তাখরিজ: তিরমিযী ২৬২১, নাসায়ী ৪৬৩, ইবনু মাজাহ্ ১০৭৯ সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৪, আহমাদ ২২৯৩৭
অর্থাৎ উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যে নামাজ ছেড়ে দিলো, সে কাফের হয়ে গেলো। এ ধরনের কাফেরের জন্য মুরতাদের শাস্তি তথা মৃত্যুদন্ড দেওয়াই নিয়ম
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং ইমাম আহমদের (রহ.) আরেক মতে, নামাজ ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি কাফের নয়। তাকে হত্যা করাও ঠিক নয়। তবে নামাজ ত্যাগকারীকে জেলখানায় বন্দি করে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন জুতাপেটা করতে হবে। এ শাস্তি ততদিন চলবে যতদিন সে পুনরায় নামাজে না ফেরে। দলিল:
আয়াত-০১
ودليلهم على ذلك قول الله تعالى:
“إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ” (النساء – 48)
فقالوا أن الله يغفر جميع الذنوب ما عدا الشرك وترك الصلاة تهاونًا وكسلًا ليس من الشرك.
অর্থাৎ শিরক ব্যতিত সব গুনাহ ক্ষমার যোগ্য। আর নফসের কামনা ও অলসতাবশত নামাজ ত্যাগ করা শিরক নয়। অতত্রব প্রমাণিত হলো অলসতাবশত নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না; ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাকে মাফ করতে পারেন।
আয়াত নং-০২
(وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ)
‘‘আর তাদের জন্য ক্ষমা নেই, যারা ঐ পর্যন্ত পাপ করতে থাকে যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলেঃ নিশ্চয়ই আমি এখন তাওবা করছি’’। সূরা নিসা-১৮
ব্যাখ্যা: এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তওবা কবুল হয়, সুতরাং তওবার সুযোগ দিতে হবে; হত্যা করা যাবে না।
আয়াত নং-০৩
أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى اللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“তবে কি তারা আল্লাহ্র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে না (ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না)?! আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সূরা মায়িদা-৭৪
আয়াত নং-০৪
তুমি কি দেখ না যে হত্যার প্রসঙ্গে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার বাণী যাতে তিনি বলেছেন:
﴿فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰن﴾ [البقرة: ١٧٨]
“তবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোন ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার রক্ত-বিনিময় আদায় করা কর্তব্য।” সূরা আল-বাকারা আয়াত: ১৭৮
ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন অর্থাৎ কাফের নয়। সুতরাং তাকে হত্যা করা যাবে না।
আয়াত নং-০৫
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ অর্থ: মুমিনের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা হুজুরাত,৯-১০
ব্যাখ্যা: পরস্পর দ্বন্দ্বরত দুই দলের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যে, দ্বন্দ্ব সংঘাত লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানদার আখ্যা দিয়েছেন। তাই এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে আলহে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মত পেশ করেছেন যে, যত বড় পাপই করুক, তাতে মুমিন বে-ঈমান হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে খারিজি ও মুতাজিলাদের একাংশের মতে কবিরা গুনাহ করলে ঈমান থাকে না। বিস্তারিত দেখুন- ‘মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য’ লেখক মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
হাদিস নং-০১
حكم تارك الصلاة عند الحنفية جاء عن أبي حنيفة قوله بأن تارك الصلاة ليس بكافر ولا يجوز الحكم بذلك؛ ولكنّه مُتهم بالفسق ومرتكب لكبيرة.[٦] ومن الأدلة التي استدل بها الحنفية في هذه المسألة، قول رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (خَمْسُ صَلَواتِ كتَبهنَّ اللهُ على العِباد، فمن جاءَ بهن لم يُضَيعْ منهُن شيئاً استخفافاً بحقهنَّ كان له عندَ الله عَهدٌ أن يُدْخِلَه الجَنَّة، ومَنْ لم يأتِ بهِن، فلَيسَ له عندَ الله عهد: إن شاءَ عَذبه، وإن شَاءَ أدْخَلَه الجَنة)[٧] وأما القول في عقوبته، : ، فعند أبي حنيفة أنه يُعزّر على تركه الصلاة ولا يُقتل.[٨]
ইবনু মুহাইরীয (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। বনু কিনানাহর আল-মুখদাজী সিরিয়াতে আবূ মুহাম্মাদ নামক এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন, বিতর ওয়াজিব। মুখদাজী বলেন, আমি ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা বলেছে। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফারয করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলাহেতু এর কোনটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাখরিজ: আহমাদ ২২৭০৪, আবূ দাঊদ-৪২৫, মালিক-১৪, নাসায়ী-৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব -৩৭০
এ হাদিসে নামাজ ত্যাগ করার পরও আল্লাহ তাআলা চাইলে জান্নাতে যেতে পারবেন। সুতরাং নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না এবং তাকে হত্যা করা যাবে না।
হাদিস নং-০২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ سِنِين وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ» .
অর্থ: হজরত ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তার পিতার মাধ্যমে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমার সন্তানদের বয়স সাত বছরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। আর (সালাত আদায় করার জন্য) তাদের শাস্তি দিবে যখন তারা দশ বছরে পৌঁছবে এবং তাদের ঘুমানোর স্থান পৃথক করে দিবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ৪৯৫, আহমাদ ২/১৮০ ও ১৮৭
এ হাদিস শরিফে সন্তান নামাজ পড়ার কারণে সন্তানদেরকে প্রহার করার কথা বলা হয়েছে, হত্যা করতে বলা হয়নি।
হাদিস নং-০৩
إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ
অর্থ: নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।” তাখরিজ: জামে তিরমিযি-৩৫৩৭
এ হাদিস শরিফ থেকে প্রমাণিত হয় জানকবজের আগ পর্যন্ত তওবার সুযোগ আছে, তাই তাকে হত্যা করা যাবে না।
মৃত্যুদন্ড না দেওয়ার যৌক্তিকতা উল্লেখ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, নামাজ না পড়লে কাফের হওয়ার হাদিসে কুফরি ইতেকাদি বা বিশ্বাসী কাফের বলা হয়নি, বলা হয়েছে কুফরি আমলি অর্থাৎ সে কাফেরের মত কবিরা গোনাহ করল। আর আহলে সুন্নাতের মতে, কবিরা গোনাহকারী কাফের নয়। সুতরাং তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া জায়েজ হবে না।
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- শরহে মুআজ্জাব, ৩য় খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা; আল মুগনি, ২য় খন্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা; ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা।
والله اعلم بالصواب