জিজ্ঞাসা-১২৭৬৩:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নামাজ নিষিদ্ধ সময়ের কোনো নস বা দলীল আছে কি?
তারিখ: ১৮/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল হাসান যশোর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এমন কিছু সময় আছে, যেসব সময় ফরজ, ওয়াজিব ও নফল কোনো ধরনের নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই। এমনকি কাজা নামাজও পড়া যাবে না। এ রকম নিষিদ্ধ সময় হলো ৩টি।
(১) ঠিক সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে একটু উঁচু না হওয়া পর্যন্ত,
(২) সূর্য ঠিক মাথার উপর আসার পর থেকে একটু ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত এবং
(৩) সূর্য ডোবার কাছাকাছি হওয়া থেকে ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত।
দ্বিতীয় কথা হলো, আর এমন কিছু সময় আছে, যেসব সময় ফরজ, ওয়াজিব, কায়া আদায় করা নিষেধ নয়, শুধু নফল/সুন্নাত ধরনের নামাজ আদায় করা মাকরুহ। এ রকম সময় দুইটি।
(১) “আসরের নামাযের পর সূর্য না ডোবা পর্যন্ত এবং
(২) ফজরের নামাযের পর সূর্য না ওঠা পর্যন্ত কোনো নফল/সুন্নাত নেই। দলিল-
হাদিস নং-০১
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُلَىٍّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ الْجُهَنِيَّ، يَقُولُ ثَلاَثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ .
ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... উলাঈ (রাহঃ) বলেন, আমি উকবা ইবনে আমির জুহানী (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিনটি সময়ে নামায আদায় এবং মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা হতে আমাদেরকে নিষেধ করতেন, সূর্য যখন আলোকজ্জ্বল হয়ে উদয় হতে থাকে তখন থেকে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত। যখন সূর্য ঠিক মধ্যাকাশে থাকে তখন থেকে ঢলে না পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য অস্ত যাওয়া শুরু হলে, যাবৎ না সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত হয়। —সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮০২ (আন্তর্জাতিক নং ৮৩১)
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উপরিউক্ত তিন ওয়াক্তে সব ধরণের নামায পড়াই মাকরূহ তাহরিমি। তবে কেউ ঐ দিনের আসর না পড়ে থাকলে সূর্য ডুবন্ত অবস্থাতেও তা পড়ে নিবে। বুখারী-৫২৯) এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৩৭১)
উলামায়ে কিরামের তাহকীক মতে উক্ত মাকরূহ তাহরিমের বা নিষিদ্ধ সময় হলো সূর্যোদয় থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত, সূর্য মাথায় আসার পূর্বে ৩ মিনিট ও পরে ৩ মিনিট এবং সূর্যাস্তের পূর্বে ১০ মিনিট।
হাদিস নং-০২
581 - حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي العَالِيَةِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: شَهِدَ عِنْدِي رِجَالٌ مَرْضِيُّونَ وَأَرْضَاهُمْ عِنْدِي عُمَرُ، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَشْرُقَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ» ،
৫৫৪। হাফস ইবনে উমর (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি আমার কাছে — যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমর (রাযিঃ) — আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
Narrated `Umar: "The Prophet (sallallahu ’alaihi wa sallam) forbade praying after the Fajr prayer till the sun rises and after the `Asr prayer till the sun sets."
হাদীসের ব্যাখ্যা:
*এ হাদীসের ভিত্তিতে ফকীহগণ বলেন, যাদের ফজরের জামাতে শরীক হতে গিয়ে ২ রাকআত সুন্নত বাদ পড়ে; তারা ওই সুন্নাত সূর্যোদয়ের পরে পড়বেন। আর আসরের নামাযের পর কোন সুন্নাত/নফল পড়া যাবে না; তবে মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে কোন ফরয কাযা নামায পড়া যাবে ।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৪ (আন্তর্জাতিক নং ৫৮১)
হাদিস নং-০৩
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -ﷺ- نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ
রাসূল ﷺ আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। (সহিহ মুসলিম ১৯৫৭)
হাদিস নং-০৪
583 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، قَالَ: أَخْبَرَنِي ابْنُ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَحَرَّوْا بِصَلاَتِكُمْ طُلُوعَ الشَّمْسِ وَلاَ غُرُوبَهَا»
وَقَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا طَلَعَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَأَخِّرُوا الصَّلاَةَ حَتَّى تَرْتَفِعَ، وَإِذَا غَابَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَأَخِّرُوا الصَّلاَةَ حَتَّى تَغِيبَ» تَابَعَهُ عَبْدَةُ
৫৫৬। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় নামায আদায়ের ইচ্ছা করো না।
উরওয়া (রাহঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাযিঃ) আমাকে আরও বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যদি সূর্যের একাংশ প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত নামায আদায়ে বিলম্ব করো। আর যদি তার একাংশ ডুবে যায় তাহলে সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত নামায আদায়ে বিলম্ব করো। আবদাও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬ (আন্তর্জাতিক নং ৫৮৩)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক