আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -২৬৩: অ্যাটাচ বামরুমে জিকির-দুআ পাঠ করা জায়েজ হবে কি?

No Comments

 


















জিজ্ঞাসা-২৬৩: মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম। টয়লেটে বা বাথরুমে আল্লাহ/রসূলের নাম বা দুআ-কালাম পড়া যাবে? যদি পড়া না যায়, তাহলে অ্যাটাচ বামরুমে জিকির-দুআ পাঠ করা জায়েজ হবে কি? তারিখ: ১০/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা শফিকুল ইসলাম খাগড়াছড়ি থেকে----


জবাব:

  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর শুরুতে আপনাকে জাযাকাল্লাহ খয়র। কেননা আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন। যা আমাদের নিত্যদিন সর্বদা প্রয়োজন। আপনা প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।


প্রশ্ন: ক। টয়লেটে বা বাথরুমে আল্লাহ/রসূলের নাম বা দুআ-কালাম পড়া যাবে?


উত্তর: ক। মূলকথা হলো, যেখানে নাপাক-দুর্গন্ধ সেখানে আল্লাহ-রসূলের নাম, দুআ-জিকির করা যায় না। টয়লেটে বা বাথরুমে জিকির-দুআ বিষয়ে ওলামায়ে মুতাকাদ্দিমীনদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও; বিশুদ্ধ মত হলো, টয়লেটে/বাথরুমে দুআ-জিকির মাকরুহ। দলিল:


হাদিস নং-০১

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ حُضَيْنِ بْنِ الْمُنْذِرِ أَبِي سَاسَانَ، عَنِ الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأَ ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ ‏"‏ إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ عَلَى طُهْرٍ ‏"‏ ‏.‏ أَوْ قَالَ ‏"‏ عَلَى طَهَارَةٍ ‏"‏ ‏.‏

অর্থ: হজরত আল-মুহাজির ইবনু কুনফু (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি নবী (ﷺ) এর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন। তখন নবী (ﷺ) পেশাব করছিলেন। সেজন্য অযূ না করা পর্যন্ত তিনি তার জবাব দিলেন না। অতঃপর (পেশাব শেষে অযূ করে) তিনি তার নিকট ওযর পেশ করে বললেন, পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর নাম স্মরণ করা আমি অপছন্দ করি। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১৭


হাদিস/আসার নং-০২

ما روى عن ابن عباس رضي الله عنه قال: يكره أن يذكر الله تعالى على حالتين على خلائه والرجل يواقع امرأته لأنه ذو الجلال والاكرام يجل عن ذلك أخرجه ابن أبي شيبة في مصنفه (1/ 108) قال ابن المنذر في الأوسط (1/ 461):

অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. তিনি দুই অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা অপছন্দ করতেন (১) টয়লেটে থাকা অবস্থায় (২) এবং এই অবস্থায় যে, একজন ব্যক্তি তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে সহবাস অবস্থায়। কেননা তিনি (আল্লাহ) মহা মহিয়ান মর্যাদার অধিকারী, এসব জিনিস থেকে তিনি পবিত্র। তাখরিজ: মুসান্নাফায়ে ইবনে আবী শাইবাহ ১/১০৮; ইমাম ইবনুল মুনযির রাহিমাহুল্লাহ আল- আউসাত (১/৪৬১)


হাদিস আসার নং-০

قال ابن المنذر في الأوسط وقال عكرمة لا يذكر الله وهو على الخلاء بلسانه ولكن بقلبه " الأوسط " ( 1 / 341 

অর্থ: ইকরিমাহ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন যে, কোন ব্যক্তি টয়লেটে অবস্থানরত অবস্থায় আল্লাহর জিকির মুখে ( আওয়াজ করে) করবে না, বরং তিনি যিকির মনে মনে করবেন। ইমাম ইবনুল মুনযির রাহিমাহুল্লাহ আল-আউসাতে ১/৩৪১ সাহাবী ইকরিমাহ রাদিআল্লাহু আনহু এর এই কথা উল্লেখ করেছেন।


হাদিস-০৪

عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِي صلي الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ.

 আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে রাখতেন। তাখরিজ: আবু দাঊদ-১৯; তিরমিযী-১৭৪৬; নাসায়ি-৫২১৩


আর একথা স্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর আংটিতে আল্লাহ, রাসুল (ﷺ) এর নাম এর নকশা করা ছিলো।

عن أنس بن مالك رضي الله عنه ، أن النبي صلي الله عليه وسلم صنع خاتما من ورق ، فنقش فيه محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم ، ثم قال: لا تنقشوا عليه.هذا حديث حسن صحيح ومعنى قوله: لا تنقشوا عليه ، نهى أن ينقش أحد على خاتمه محمد رسول الله . (سنن الترمذي -طبعة بشار -ومعها حواشي –رقم 1745- ج3 / ص281)


সারমর্মঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর আংটিতে محمد رسول الله লিখিত নকশা করা ছিলো।


لمافی الھندیۃ(۵۰/۱):ویکرہ ان یدخل فی الخلاء ومعہ خاتم علیہ اسم اﷲ تعالیٰ أو شییٔ من القرآن۔

টয়লেটে আল্লাহত নাম,কুরআনের আয়াত সম্বলিত আংটি নিয়ে প্রবেশ করা মাকরুহ। সুতরাং আল্লাহর নাম সঙ্গে নাজায়েজ হলে, সেখানে নাম উচ্চারণ করা আরও অধিকতর নাজায়েজ যা সহজেই অনুমেয়।


হাদিস নং-০৫

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীর সর্বত্র সালাত আদায় করা যাবে—গোরস্তান ও বাথরুম ছাড়া। ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম, পৃষ্ঠা ৩৩২; আল ইরওয়া : ১/৩২০


এ হাদিস শরিফ দ্বারা প্রমাণিত হয়। টয়লেট বা গোসলখানায় সালাত আদায় করাও বৈধ নয়। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সালাতও শ্রেষ্ঠ জিকিরের অন্তর্ভুক্ত।


প্রশ্ন: খ। অ্যাটাচ বামরুমে জিকির-দুআ পাঠ করা জায়েজ হবে কি?   


উত্তর: খ। আমরা জানি যে, নবি-সাহাবি-তাবেয়িদের যুগে অ্যাটাচ ছিল না, এটা বর্তমান যুগের একটি সংস্করণ। যুগের চাহিদা, জায়গার স্বল্পতার কারণে এটি বানানো হয়েছে; তবে সম্ভব হলে আলাদা করা উচিত। নবিজি (ﷺ) গোসল খানায় প্রসাব করতে নিষেধ করেছেন। যেমন,

আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ لاَ يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي مُسْتَحَمِّهِ فَإِنّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ ‏”‏ ‏.‏

قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ بْنُ مَاجَهْ سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ مُحَمَّدٍ الطَّنَافِسِيَّ يَقُولُ إِنَّمَا هَذَا فِي الْحَفِيرَةِ فَأَمَّا الْيَوْمَ فَلاَ ‏.‏ فَمُغْتَسَلاَتُهُمُ الْجَصُّ وَالصَّارُوجُ وَالْقِيرُ فَإِذَا بَالَ فَأَرْسَلَ عَلَيْهِ الْمَاءَ لاَ بَأْسَ بِهِ ‏.‏

রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার গোসলখানায় পেশাব না করে। কেননা তা থেকেই যাবতীয় সন্দেহের উদ্রেক হয়। ১/৩০৪ 


ব্যাখ্যা: আবদুল্লাহ্ ইবনে মাজাহ (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি আলী বিন মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন, এ নির্দেশ সেই সময়ের যখন গোসলখানা কাঁচা ছিল। যেহেতু বর্তমানকালে গোসলখানা ইট ও চুনা দ্বারা নির্মিত হয়। তাই যদি কেউ পেশাব করার পর সে সেখানে পানি ঢেলে দেয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই।


আহসানুল ফাতাওয়া এর রচয়িতা বলেন ,গোসলখানা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় এবং তার ভেতর টয়লেট না থাকে তাহলে সেখানে প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় যে কোন পা আগে প্রবেশ করাতে পারবে।এবং গোসল খানার ভিতর পরিধেয় পোশাক খোলার পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়তে পারবে। লুঙ্গি বা গামছা ইত্যাদি শরীরে প্যাঁচানো অবস্থায় গোসল করলে শরীরের পোশাক খোলার পরও গোসলরত অবস্থায় দোয়া কালাম পড়তে পারে। ফাতাওয়া দারুল উলুম জাকারিয়া ১/১৬৬


নিচে আকাবিরের দেওবন্দের কিছু ফাতোয়া উল্লেখ করা হলো

 بیت الخلا کے اندر جانے کے بعد دعا پڑھنا،اٹیچ باتھ روم میں دعا پڑھنا

جنوری 26, 2022 0 تبصرے 38 مناظر

হ্যা,বাথরুম যদি পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকে, ময়লা ও দুর্গন্ধ না থাকে,পেশাব পায়খানা করার পর পর্যাপ্ত পানি ঢালার কারণে কমোডে নাপাক দেখা না যায় এবং দুর্গন্ধ না থাকে, হাই কমোড হলে পর্যাপ্ত পানি ঢালার পর ঢাকনা বন্ধ করে রাখা হয় তাহলে ঐ অবস্থায় বাথরুমে ওযু করার সময় ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ও ওযুর আগে- পরে হাদিসে বর্ণিত দোয়া সমূহ পড়া যাবে।


টয়লেট করার আগে -পরের দোয়া গুলো ও কমোড থেকে সরে এসে গোসলখানার অংশে পড়া যাবে।


প্রশ্ন: গ। বাথরুম/টয়লেটের দুআ কখন পাঠ করবে?


উত্তর: গ। অনেকে বিষয়টা বুঝে না, মাসনুন দুআগুলো কখন পাঠ করতে হবে। প্রবেশের পূর্বে না পরে এবং বের হবার পূর্বে না পরে।

টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে দুআ পাঠ করবে।


দলিল:

وعن علي قال قال رسول الله ﷺ ستر ما بين أعين الجن وعورات بني ادم إذا دخل أحدهم الخلاء أن يقول بسم الله. رواه الترمذي وقال حديث غريب وإسناده ليس بقوي

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে (যখন প্রবেশের ইচ্ছা পোষণ করবে) তখন জিন শাইত্বনের চোখ ও বানী আদামের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল “বিসমিল্লা-হ” বলা। তাখরিজ: তিরমিযী ৬০৬, সহীহুল জামি ৩৫১১; মিশকাতুল মাসাবিহ-৩৫


এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর দুআ পাঠ করবে। দলিল:

وعن عائشة قالت كان النبي ﷺ إذا خرج من الخلاء قال غفرانك. رواه الترمذي وابن ماجة والدارمي

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (ﷺ )যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেন : “গুফরা-নাকা” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। আবূ দাঊদ ৩০, তিরমিযী ৭, ইবনু মাজাহ্ ৩০০, দারিমী ৭০৭; মিশকাতুল মাসাবিহ-৩৫৯


প্রশ্ন: ঘ। যদি কেউ টয়লেটে দুআ পাঠ করতে ভুলে যায়; তাহলে করণীয় কি?


উত্তর: ঘ। যদি কেউ টয়লেটে দুআ পাঠ করতে ভুলে যায়; পরে মনে হয়; তাহলে উচ্চস্বরে দুআ পা না করে, মনে মনে পড়ে নিবে। দলিল:


প্রখ্যাত তাবেঈ ইকরিমা (রহ.) বলেন, টয়লেটে থাকা অবস্থায় মুখে উচ্চারণ করে জিকির করবে না, তবে মনে মনে করতে পারে। সূত্র: আল আওসাত-১/৩৪১

قوله( الا حال انكشاف) الظاهر ان المراد انه يسمي قبل

رفع ثيابه ان كان في غير المكان المعد لقضاء الحاجة والا فقبل دخوله فلو نسي فيها سمى بقلبه ولا يحرك لسانه تعظيما لاسم الله تعالى

অর্থাৎ দেহ থেকে কাপড় খোলার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে যদি সে পেশাব- পায়খানা করার জন্য প্রস্তুতকৃত জায়গায় ইস্তিঞ্জা না করে। আর পেশাব -পায়খানার জন্য প্রস্তুতকৃত স্থানে অর্থাৎ বায়তুল খলায় জরুরত পুরা করলে সেখানে প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে। বিসমিল্লাহ না বলে বাইতুল খলায় প্রবেশ করে ফেললে দিলে দিলে বিসমিল্লাহ বলবে, আল্লাহর নামের সম্মান প্রকাশার্তে মুখে উচ্চারণ করে বিসমিল্লাহ বলবেনা। সূত্র: ফাতাওয়া শামী ১/২৪২(মাকতাবায়ে আশরাফিয়া) হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ: ৫১


সারকথা কথা হলো, টয়লেটে প্রবেশ করার পর মুখে জিকির পাঠ করবে না, বরং প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে জিকির পাঠ করা বাদ দিয়ে নীরবতা অবলম্বন করবে। বর্তমানে যেহেতু টয়লেট পরিচ্ছন্ন থাকে, তাই যখন কমোডের বাইরে অবস্থান করবে, তখন দোয়া বা বিসমিল্লাহ পড়া যাবে। আর যদি দুর্গন্ধ থাকে; তাহলে অ্যাটাচ বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে দুআ পড়ে নিবে। সূত্র: ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা-৫/৯৩


 উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক