আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

আদব সৌভাগ্যের সোপান : পর্ব ১*

No Comments

 



*আদব সৌভাগ্যের সোপান : পর্ব ১* 🌹


নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি 'আলা রাসূলিহিল কারীম।

"আদব সৌভাগ্যের সোপান"- একটা দ্বীনি কিতাবের নাম, একটা ইসলামী বইয়ের নাম।


যত অবস্থা আছে, যত হালত আছে সর্ব হালতেই, সকল জায়গাতেই আদব আছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এমন এক দ্বীন দান করেছেন যাতে ২৪ ঘন্টার জিন্দেগীতে, দিনে হোক বা রাতে, লোকালয়ে হোক বা গোপনে, সমুদ্রে হোক অথবা স্থলভাগে, সর্বত্র সর্ব হালতে আদব আছে। সেই আদবের দিকে যে যত বেশি লক্ষ্য রাখবে, সে তত বেশি ঊর্ধ্বে উঠবে।


মুফতি মনসুরুল হক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম একবার এক মজলিসে বলতেছিলেন, মানুষের পিছনের রাস্তা দিয়ে যখন বাতাস বের হয়, শরীরের পিছন সাইড যেন তখন কিবলার দিকে না থাকে। এটা একটা আদব।


মূল বিষয় হল মহব্বত। মহব্বত মানুষকে আদব শেখায়- এইটা করা যাবে, ঐটা করা যাবে না, এটা উত্তম, ঐটা অনুত্তম। আদবের দাবি তো এটাই। মহব্বতের দাবি তো এটাই যে, যখন মানুষ তার নিজের অক্ষমতা বা দুর্বলতাবশতঃ পেটের গ্যাস বের করার জন্য অস্থির হয়ে যায়, পেটে গ্যাস জমা হলে যতক্ষণ পর্যন্ত এ গ্যাস বের না হয় ততক্ষণ সে অস্থির থাকে, শান্তি পায় না। এতে যারা বুদ্ধিমান তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, আল্লাহ পাক জাল্লা জালালুহু আমাকে কতটা দুর্বল করে বানিয়েছেন। নিজেকে বড় মনে করার কি আছে? কোনো আল্লাহ প্রেমিক তখন এই ভাবনা ভাবেন যে, নিজের দুর্বলতা কত বেশি আমার, তাহলে আমার বড়াই করার কি আছে?


তো যাই হোক পেটের এই গ্যাস যখন বের হবে তখন শরীরের পশ্চাদ ভাগ অর্থাৎ পিছন সাইড যেন কিবলামুখী না থাকে, এই চেষ্টা করা। এটা একটা আদব হিসেবে হযরত মুফতি সাহেব দামাত বারাকাতুহুম বলেছিলেন। আল্লাহপাক জাল্লা জালালুহু আমাদেরকে আমলের তৌফিক দান করেন।


তো প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আদব আছে। দ্বীনি কিতাব পড়ি আমরা। যখন দ্বীনি কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টাতে হয়, তখন তা ডান হাতে উল্টানো উচিত। অনেক সময় আমরা বেখেয়াল বশত বাম হাতে উল্টিয়ে ফেলি। একটা পৃষ্ঠা পড়া হয়ে গেছে, পরের পৃষ্ঠায় যাব তখন তা ডান হাতে উল্টানো চাই। হাদীসে পাকে তো সুস্পষ্টভাবে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম কাজগুলির ক্ষেত্রে ডান হাতকে, ডান দিককে, ডান পা কে প্রাধান্য দিতেন। সহীহ বুখারী 


তো দ্বীনি কিতাব, এটাতো অনেক বেশি উত্তম বিষয়। দ্বীনি কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় ডানহাতে সেই পৃষ্ঠা উল্টানো চাই। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কত বড় আলেমেদ্বীন ছিলেন, কত বড় ইলমী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, কত বড় আল্লাহওয়ালা ছিলেন। তিনি কিতাবের সঙ্গে এতটা আদব রক্ষা করতেন যে, কিতাবের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় টীকা আকারে যে নোট লেখা থাকে, সেই টিকা অনেক সময় কিতাবের যে মূল লেখা সেই বরাবর থাকে না। কিতাবের ডান পাশে বা বাম পাশে, সাইড দিয়ে যে একটু জায়গা থাকে অনেক সময় সেখানেও লেখা থাকে। যার জন্য তখন সেই টিকা টি পড়তে হলে কিতাবটাকে ঘুরাইতে হয়। তা না হলে লেখাটা সামনে আসে না ঠিকভাবে।


তো আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি কিতাবকে ঘুরাইতেন না। বরং তিনি নিজে উঠে সেই বরাবর বসতেন যেখানে গিয়ে বসলে সেই টিকা টা সুন্দর ভাবে পড়া যায়। কিতাবের এত সম্মান করতেন, ইলমের এত সম্মান করতেন। আজমত অন্তরে এত বেশি ছিল এলেমের প্রতি। আর আল্লাহপাক জাল্লা জালালুহু এজন্যই এই মহান বুজুর্গ কে এলেম এত বেশি দান করেছেন যে, কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, একবার যে বিষয় তিনি পড়তেন তা ৪০ বছর পর্যন্ত ভুলতেন না। আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায়, কোনো বিষয় একবার পড়লে তা মৃত্যু পর্যন্ত ভুলতেন না। সারা জীবন তা ইয়াদ থাকতো। তাঁকে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী বলা হত। 


তো সকল স্থানেই আদব রক্ষা করে চলা চাই। যে যত আদবের দিকে লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহপাক তাকে তত বেশি ঊর্ধ্বে তুলবেন, উপরে তুলবেন। আল্লাহপাকের খাস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকেই তৌফিক দান করেন। আমীন...


সংগ্রহে, মুহাম্মদ বেলাল ফরাজী