আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৮১: বাড়ি করার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ/লোন নেওয়া জায়েজ আছে কি?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৭৮১: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।   সম্মানিত মুফতি সাহেবের কাছে জানতে চাই। আমার থাকার জন্য একটি বাড়ি/ঘড় ক্রয় করতে বা তৈরি করতে হবে এমতাবস্থায় যে সেই পরিমাণ অর্থ আমার কাছে নেই বা পাঁচ/দশ বছরেও হবে না এই অবস্থায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কি করা যায়। শরয়ী বিধান কি?

তারিখ:  ২৫/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা নেছার উদ্দিন শেরপুর  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সুদের মাসয়ালা সুস্পষ্ট। সুদী ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা জায়েজ নয়, চাই সেটা বাড়ির করার জন্য হোক, ব্যবসার জন্য হোক, গাড়ি কেনার জন্য হোক বা যেজন্যেই হোক। দলিল:


আয়াত নং-০১

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ.

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। সূরা বাকারা,২৭৮-২৭৯


আয়াত নং-০২

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥

অর্থ: যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। সূরা বাকারা-২৭৫


হাদিস নং-০১

عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেছেন। সূত্র: মুসনাদে আহমাদ-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা-৪৯৮১


হাদিস নং-০২

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ»

আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৭৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী-৫১৩১


দ্বিতীয় কথা হলো, নিরুপায় সুদি ব্যাংক বা সুদের ভিত্তিতে লোন নেওয়া জায়েজ আছে। দলিল:


: {إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ} سورة البقرة:173.

অর্থ: তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। সূরা বাকারা-১৭৩

উপরোক্ত আয়াতের উপর কিয়াস করে ফুকাহায়ে উম্মত বলেছেন, যদি সুদি লোন নেওয়া ছাড়া খাদ্য-পানীয়, চিকিৎসার অভাবে জীবন নাশের হুমকি হয়, তাহলে জায়েজ।

تطرق ممتاز بعد ذلك إلى قضية الاضطرار لهذا النوع من القروض فقال إنه بحال كانت الحاجة تتعلق بحفظ النفس بالطعام أو الشراب بحيث إن المحتاج لا يستطع هذا الحفظ إلا بالقرض بزيادة ربوية فحينئذٍ يجوز له ذلك وأضاف: "فمن يضطر لدفع الهلاك عن نفسه يبقى اضطراره مقيداً بهذا، وهو الطعام أو الشراب أو نحو ذلك مما يحفظ النفس من الهلاك، ولا يتعدى إلى شراء السيارة مثلاً إذ لا ضرورة لها في حفظ النفس."

অর্থাৎ এই ধরনের ঋণের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি স্পর্শ করেন এবং তিনি বলেন যে প্রয়োজন যদি খাদ্য বা পানীয়ের সাথে স্ব-সংরক্ষণের সাথে সম্পর্কিত হয়, যাতে অভাবী ব্যক্তিরা সুদ বৃদ্ধির সাথে ঋণ ছাড়া এই সংরক্ষণ করতে না পারে, তাহলে এটা তার জন্য জায়েজ। এটা খাদ্য, পানীয়, বা অনুরূপ যে আত্মা ধ্বংস থেকে রক্ষা করে, এবং একটি গাড়ী কেনার বাইরে যায় না, উদাহরণস্বরূপ, কারণ আত্মা রক্ষা করা আবশ্যক নয়।

أنّ الضرورة التي يلجأ لها الشخص تكون حينما لا يُوجد أيّ بديل آخر؛ كبنوك تتعامل بتعاملات إسلامية، أو قرض حسن، أو قبول أموال الزكاة، أو قبول أموال الصدقات، وغيرها؛ فالمضطر الذي يزعم أنّه يقبل مال الربا ولا يقبل مال الزكاة مُكابر؛ لأنّ مال الزكاة حلال له إن كان من أهله المستحقين له؛ فيما أنّ مال الربا حرام؛ ولهذا يقول سيدنا الإمام أحمد : " لا تحل الميتة لمن قدر على دفع ضرورته بالمسألة" [ المغني لابن قدامة : 11 /74 ]

অর্থাৎ যে প্রয়োজনীয়তা একজন ব্যক্তি অবলম্বন করে যখন অন্য কোন বিকল্প নেই; ইসলামী লেনদেন, একটি ভাল ঋণ, যাকাতের টাকা গ্রহণ, বা ভিক্ষার টাকা গ্রহণ, এবং অন্যান্য নিয়ে ব্যাংক হিসাবে; বাধ্য ব্যক্তি যে দাবি করে যে সে সুদের টাকা গ্রহণ করে কিন্তু যাকাতের টাকা গ্রহণ করে না সে অহংকারী। কারণ যাকাতের টাকা তার জন্য হালাল যদি সে তার যোগ্য লোকদের একজন হয়। যদিও সুদের টাকা হারাম; তাই আমাদের ওস্তাদ, ইমাম আহমাদ রহ. বলেন: “যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে তার প্রয়োজনীয় জিনিস পরিশোধ করতে সক্ষম তার জন্য মৃত্যু জন্তু খাওয়া জায়েজ নয়।” সূত্র: ইবনে কুদামাহ দ্বারা আল-মুগনি-১১ খণ্ড; ৭৪ পৃ.


তৃতীয় কথা হলো, সুতরাং সুদি ঋণ কোনো অবস্থায়ই জায়েজ নেই। এতে কোনো আলেমের দ্বিমতও নেই। ইসলামি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে বাইয়ে মুরাবাহা/বিভিন্ন সিস্টেম চালু আছে। এই পদ্ধতিতে মূলত ঋণ হিসেবে টাকা দেওয়া হয় না; দেওয়া হয় পণ্য। আর এই পদ্ধতিও জায়েজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। আর সত্য কথা হলো, খাতা কলমে শরিয়া পদ্ধতি লেখা থাকলেও, বাস্তবে সেই নীতি মানা হচ্ছে না (আমার সম্মানিত প্রশিক্ষক মুহতারাম মাওলানা আবিদ আলি স্যারের কাছে শুনেছি, ইসলামি ব্যাংকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাৎসরিক রিপোট যে, কত পারসেন শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত হয়নি) তাই তাকওয়া হলো এসব লেনদেন থেকেই দূরে থাকা।


সারকথা কথা হলো, শরিয়তে যা সুস্পষ্ট হারাম তা হালাল করার চেষ্টা করা জঘন্য অন্যায়, কুফুরি। সুতরাং সুদের ভিত্তিতে বাড়ি/গাড়ি/ব্যবসার নিমিত্তে সুদি ব্যাংক লোন নেওয়া হারাম। তবে কোন ব্যক্তি একান্ত বাধ্য হয়ে, খাদ্য-পানীয়-চিকিৎসার জন্য ভিক্ষার করার দ্বারাও যদি সম্ভব না হয়, জীবনকে রক্ষার করার জন্য সুদ ভিত্তিক লোন জায়েজ আছে, তাও খুশিমনে নয়, ঘৃণার সাথে গ্রহণ করা, তওবা-এসতেগফার করা। সূত্র: ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়াহ ১২/৬৯২৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৪১১


  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক