জিজ্ঞাসা-১২৭৫৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম
বিজ্ঞজনের নিকট আমার প্রশ্ন , নারীর হায়েজ চলাকালীন সময়ে কুরআন মাজিদ স্পর্শ না করে দেখে দেখে পড়তে পারবেন কি না ?
যেহেতু সে কুরআন শিক্ষার্থী তাই হাতে না ধরে পড়তে পারবেন কি না ?
শরয়ী দলীলসহ উত্তর জানতে চাই।
তারিখ: ১৩/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান। থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
জুনুবি (নাপাক) তথা হায়েজ- নেফাস বা গোসল ফরজ হলে কোরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে রয়েছে।
ইমাম মালেক, ইবনে তাইমিয়া এবং বর্তমানে আহলে হাদিসদের মতে নাপাক অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত জায়েজ।
অপর পক্ষে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর মতে নাজায়েজ।
প্রশ্ন: ক। ইমাম আবু হানিফা ইমাম শাফি এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর দলিল কী?
উত্তর: ক। তিন ইমামের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، وَعُقْبَةُ بْنُ خَالِدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، وَابْنُ أَبِي لَيْلَى، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلِمَةَ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَلِيٍّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَبِهِ قَالَ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالتَّابِعِينَ . قَالُوا يَقْرَأُ الرَّجُلُ الْقُرْآنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ وَلاَ يَقْرَأُ فِي الْمُصْحَفِ إِلاَّ وَهُوَ طَاهِرٌ . وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَالشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ .
আবু সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ আল আশাজ্জ (রাহঃ) .... আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জুনুবী না হলে রাসূল (ﷺ) সকল অবস্থায়ই কুরআন শিক্ষা দিতেন। তাখরিজ: তিরমিজি-১৪৬
নোট: ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেন আলী বর্ণিত এই হাদিসটি হাসান ও সহীহ। সাহাবী ও তাবিঈগণের একাধিক আলিম এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেন অযু ছাড়াও কুরআন তিলাওয়াত করা যায়। তবে অযু ছাড়া কুরআন শরীফ স্পর্শ করে পড়া যায় না। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক (রাহঃ) এর অভিমতও এ-ই।
হাদিস নং-০২
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القرآن (سنن الترمذى، ابواب الطهارات، باب ما جاء في الجنب والحائض : أنهما لا يقرأن القرآن، رقم الحديث-131)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩}
ফকিহদের মতামত:
يستحب للحائض اذا دخل وقت الصلاة ان تتوضأ وتجلس عند مسجد بيتها تسبح وتهلل قدر ما يمكن أداء الصلاة لو كانت طاهرة (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الفصل الرابع فى احكام الحيض والنفاس والإستحاضة- 1/38)
হায়েজ নিফাসওয়ালী মহিলার ক্ষেত্রে নামায পড়া নিষিদ্ধ, রোযা রাখা নিষিদ্ধ। কুরআন পড়া নিষিদ্ধ। গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। {বাদায়েউস সানায়ে’-১/১৬৩}
প্রশ্ন: খ। নাপাক অবস্থায় আল্লাহ জিকির, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা কি জায়েজ?
উত্তর:খ। হ্যাঁ, নাপাক অবস্থায় আল্লাহর জিকির তাসবিহ দরুদ শরিফ এবং কোরআনে যেসব আয়াত দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত তা পাঠ করা জায়েজ। দলিল:
عن إبراهيم قال : الحائض والجنب يذكران الله ويسميان (مصنف عبد الرزاق، كتاب الطهارة، باب الحائض تذكر الله ولا تقرأ القرآن، رقم الحديث-989)
অনুবাদ-হযরত ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হায়েজ এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করতে পারবে, এবং তার নাম নিতে পারবে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩০৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৮৯}
فجمهور الفقهاء على حرمة قراءة الحائض للقرآن حال الحيض حتى تطهر ، ولا يستثنى من ذلك إلا ما كان على سبيل الذّكر والدّعاء ولم يقصد به التلاوة كقول : بسم الله الرحمن الرحيم ، إنا لله وإنا إليه راجعون ، ربنا آتنا في الدنيا حسنة … الخ مما ورد في القرآن وهو من عموم الذكر .
অর্থাৎ জমহুর এর মতে হায়েজ অবস্থায় কোরআন পাঠ করা জায়েজ নেই তবে দোয়া করা জায়েজ এবং কোরআনের আয়াত দুআ হিসেবে পাঠ করা যাবে। যেমন,
: بسم الله الرحمن الرحيم ، إنا لله وإنا إليه راجعون ، ربنا آتنا في الدنيا حسنة
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে নারীর হায়েজ চলাকালীন সময়ে কুরআন মাজিদ স্পর্শ না করে দেখে দেখে পড়তেও পারবে না। যেহেতু সে কুরআন শিক্ষার্থী তাই হাতে না ধরে পড়তেও পারবে না।
তবে ফোকাহায়ে কেরাম একটি জায়েজ পদ্ধতি বলে দিয়েছেন তাহলো, স্পর্শ না করে, পূর্ণ আয়াত তেলাওয়াত না করে খন্ড খন্ড, শব্দে শব্দে মশক বা তেলাওয়াত করা যাবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক