জিজ্ঞাসা-১২৩৭৫:
আসসালামু আলাইকুম। বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানোর সবিনয় আবেদন-
কুয়েতে প্রচলিত আছে- উদাহরণতঃ জোহরের নামাজের সময় বৃষ্টি হচ্ছে, এমতাবস্থায় তারা জোহরের নামাজ পড়ে পরপরই আসরের নামাজও পড়ে ফেলে। অথচ তখনও আসরের ওয়াক্ত হতে বহু সময় বাকী! তারা বলে, হলে এরকম পড়া যায়। উল্লেখ্য যে, সেসময় বৃষ্টির প্রাবল্য খুবই সাধারণ!
তারিখ: ১০/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান কুয়েত থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো যে, মূল অলোচনার পূর্বে জমা বাইনাস সালাতাইন সম্পর্কে জানবো।
প্রশ্ন : ক। জমা বাইনাস সালাতাইন কত প্রকার?
উত্তর: ক। দুই প্রকার। যথা:
জমউত তাকদীম ও তাখীর । প্রথম প্রকার দুইভাবে হতে পারে।
প্রথমত: মজউত তাকদিম অর্থ হলো দ্বিতীয় নামাজকে এগিয়ে এনে, েপ্রথম নামাজের সময়ে আদায় করা। জোহর ও আসরের নামাজ জোহরের সময় একত্রে আদায় করা।
দ্বিতীয়ত: জমউত তাখির অর্থ হলো প্রথম নামাকে বিলম্বিত করে দ্বিতীয় নামাজের সময়ে আদায় করা। যেমন, মাগরিব ও ঈশা একত্রে আদায় করা।
জমা জাহিরি: দ্বিতীয় পদ্ধতিকে বলা হয় জমা জাহিরি। এর অর্থ প্রথম নামাজ তার শেষ ওয়াক্তের মেষ অংশে আর দ্বিতীয় নামাজ পরের ওয়াক্তের প্রথম অংশে আদায় করা। এভাবে বাহ্যত দুই নামাজ একত্র পড়া হলো ও কোন নামাজকেই তার ওয়াক্ত থেকে সরানো হয়নি। উদাহরণ জোহরের নামাজের সময় বেলা বারোটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এবং আসরের সময় চারটা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হয়। তাহলে জমা জাহিরি এভাবে হতে পারে যে, জোহরের নামাজ পৌঁনে চারটায় আদায় করা হলো আর আসর চারটায়।
প্রশ্ন: খ। দুই সালাত একত্র করার বিধান কি?
উত্তর: খ। আরাফার দিন যোহর ও আসরকে এগিয়ে নিয়ে যোহরের সময়ে জমা করে আদায় করা শরী‘আতসম্মত। আলেমগণ এ ব্যাপারে ইজমা‘ বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন অনুরূপভাবে তারা এ ব্যাপারেও একমত পোষণ করেছেন যে, আরাফার দিন সূর্য ডুবার পর নাহরের রাতে মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্র করে ইশার সময়ে পড়া শরী‘আতসম্মত। সূত্র: আল-ইজমা‘ ইবনুল মুনযির, পৃ. ৩৮; মারাতিবুল ইজমা‘ পৃ. ৪৫
তবে এর বাইরে অন্য সময়ে অর্থাৎ বৃষ্টি, সফর বা ভয়ভীতির সময়ে সালাত একত্রে আদায় করার ব্যাপারে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
প্রথম মত: আইম্মায়ে সালাছা, ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ও আহলে হাদিসদের মতে, বৃষ্টি, সফর বা ভয়ভীতির কারণে যোহর এবং আসর অনুরূপভাবে মাগরিব ও ইশার সালাতকে একত্রে আদায় করা জায়েয। সূত্র: আশ-শারহুল কাবীর, ১/৩৬৮; মুগনিল মুহতাজ, ১/৫২৯, কাশশাফুল কিনা‘, ২/৫
দ্বিতীয় মত: ইমামে আজম আবু হানিফা এবং তার অনুসারিগণের মতে,
فى الفتاوى الهندية- ولا يجمع بين الصلاتين في وقت واحد لا في السفر ولا في الحضر بعذر ما عدا عرفة والمزدلفة كذا في المحيط(الفتاوى الهندية -كتاب الصلاة، الفصل الثاني في بيان فضيلة الأوقات -1/52)
আরাফা ও মুযদালিফা ব্যতীত দুফরয সালাতকে একত্র করে আদায় করা যাবে না। তবে আকৃতিগতভাবে একত্রিত করা যাবে, আর তা হচ্ছে যোহরকে তার শেষ সময় পর্যন্ত দেরী করে আদায় করা তারপর আসরকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৫২
প্রশ্ন: গ। আইম্মায়ে সালাছা/আহলে হাদিসের দলিল কি?
উত্তর: গ। আইম্মায়ে সালাছার দলিলসমূহ নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
صلّی رسول الله (ص) الظهر و العصر جمیعاً بالمدینة فی غیر خوف و لا سفر.
হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ ভীত ও সফরের কারণ ছাড়াই যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছেন।” তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১২১০
হাদিস নং-০২
عن ابن عبَّاسٍ جمعَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ بينَ الظُّهرِ والعصرِ والمغربِ والعشاءِ بالمدينةِ من غيرِ خوفٍ ولا مطرٍ فقيلَ لابنِ عبَّاسٍ ما أرادَ إلى ذلِك قالَ أرادَ أن لا يحرجَ أمَّتَه
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। “মহানবী (ﷺ) মদীনাতে কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছাড়াই যোহর-আসর এবং মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতেন। হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয়: এক্ষেত্রে রাসূলের (ﷺ) উদ্দেশ্য কি ছিল? জবাবে তিনি বলেন: রাসূল (ﷺ) চেয়েছিলেন যে, কোন মুসলমান যেন নামায আদায়ের ক্ষেত্রে কষ্টের শিকার না হয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১২১১; মুসলিম-৭০৫
হাদিস নং-০৩
জাবের ইবনে জায়েদ বলেন: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে,
صلّی النبی (ص) سبعاً جمیعاً و ثمانیاً جمیعاً.
“রাসূল (সা.) সাত রাকাত (মাগরিব ও এশা’র) নামায একই সময়ে এবং আট রাকাত (যোহর ও আসরে’র) নামায একই সময়ে আদায় করেছেন। তাখরিজ: বুখারি ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪০
প্রশ্ন: ঘ। হানাফি মাজহাবের দলিল কি?
উত্তর: ঘ। ফুকাহায়ে আহনাফের দলিলসমূহ নিম্নরূপ:
আয়াত নং-০১
اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ
অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সূরা নিসা-১০৩
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ ، حَدَّثَنَا أَبِي ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ ، قَالَ : حَدَّثَنِي عُمَارَةُ ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى صَلَاةً بِغَيْرِ مِيقَاتِهَا، إِلَّا صَلَاتَيْنِ : جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ، وَصَلَّى الْفَجْرَ قَبْلَ مِيقَاتِهَا.
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি কখনও নবি কে দেখেনি যে, তিনি নির্ধারিত সময় থেকে সরিয়ে আদায় করেছেন। তবে দুই নামাজ ব্যতিক্রম হজে মধ্যে মাগরিব-ঈশা একত্রে পড়েছেন। আর ফজর নামাজ অন্য দিনের তুলনায় আগেই আদায়অ করেছেন। তাখরিজ: বুখারি-১৬৮২; মুসলিম-১২৮৯
হাদিস নং-০২
عن عبد الله رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي الصلاة لوقتها إلا بجمع وعرفات
ইবন মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতেন, শুধুমাত্র মুযদালিফা ও আরাফাহ ছাড়া। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৩০১০; ফিকহুস সুনান-৩৩৩
নোট: সনদ সহিহ
হাদিস নং-০৩
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَيْسَ فِي النَّوْمِ التَفْرِيطٌ إِنَّمَا التَّفْرِيطُ فِي الْيَقَظَةِ فاذا نَسِيَ أَحَدُكُمْ صَلَاةً اَوْ نَامَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللّهَ تَعَالى قَالَ أَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
অর্থ: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সলাত আদায় করতে না পারলে তা গুনাহ নেই। গুনাহ এই যে, ইচ্ছাকৃত নামাজ বিলম্বিত করা( আর পরবর্তী ওয়াক্ত এসে গেল)। সুতরাং তোমাদের কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা সলাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে, আদায় করে নিবে। তাখরিজ: মুসলিম ৬৮১, ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪১, নাসায়ী ৬১৫, তিরমিযী ১৭৭, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৮
হাদিস নং-০৪
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا صَلّى رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَاةً لِوَقْتِهَا الْآخِرِ مَرَّتَيْنِ حَتّى قَبَضَهُ اللّهُ تَعَالى. رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
অর্থ : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোন সলাতকে এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। তাখরিজ: তিরমিযী ১৭৪, হাকিম ১/১৯০
নোট: ইমাম তিরমিযী যদিও হাদীসটি মুনক্বাতি‘ বলেছেন কিন্তু ইমাম হাকিম হাদীসটি মুত্তাসিল সূত্রে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং সহিহ।
হাদিস নং-০৫
1111 حَدَّثَنَا حَسَّانُ الْوَاسِطِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الْمُفَضَّلُ بْنُ فَضَالَةَ ، عَنْ عُقَيْلٍ ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ارْتَحَلَ قَبْلَ أَنْ تَزِيغَ الشَّمْسُ، أَخَّرَ الظُّهْرَ إِلَى وَقْتِ الْعَصْرِ، ثُمَّ يَجْمَعُ بَيْنَهُمَا، وَإِذَا زَاغَتْ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ رَكِبَ.
অর্থ: আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহর বিলম্বিত করতেন এবং উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন। আর (সফর শুরুর আগেই) সূর্য ঢলে গেলে যুহর আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে উঠতেন। তাখরিজ: ১১১১; মুসলিম-৭০৪
হাদিস/আসার নং-০৬
ن عمر بن الخطاب رضي الله عنه عنه كتب إلى عامل له ثلاث من الكبائر الجمع بين الصلاتين إلا في عذر والفرار من الزحف والنهبى)
অর্থ: হজরত ওমর (রা.) তার এক প্রশাসককে লিখেছিলেন, তিনটি বিষয় বিষয় কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। এক. বিনা ওজরে দুই নামাজকে একত্র করা দুই. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা তিন. অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করা। তাখরিজ: সুনানে বায়হাকি- ৩য় খণ্ড,১৬৯ পৃ. ইলাউস সুনান-২য় খণ্ড ৪৬৫পৃ. হাদিস নং-৭৩০
হাদিস/আসার নং-০৭
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : « الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا » .
“আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি সর্বোত্তম? রাসূল বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা”।
প্রশ্ন: ঙ। উভয় পক্ষের হাদিসের দ্বন্দ্ব-এর সমাধান কি?
উত্তর: ঙ। আমরা প্রথম মতের হাদিস দেখলাম, হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ ভীত ও সফরের কারণ ছাড়াই যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছেন।
আবার দ্বিতীয় মতের হাদিস হলো, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি কখনও নবি (ﷺ) কে দেখেনি যে, তিনি নির্ধারিত সময় থেকে সরিয়ে আদায় করেছেন। তবে দুই নামাজ ব্যতিক্রম হজে মধ্যে মাগরিব-ঈশা একত্রে পড়েছেন। আর ফজর নামাজ অন্য দিনের তুলনায় আগেই আদায়অ করেছেন।
ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন, সালাত জমা করতে হলে প্রথম ওয়াক্তকে দেরী করে শেষ ওয়াক্তে নিয়ে গিয়ে এবং দ্বিতীয় ওয়াক্তকে একটু আগে টেনে দু’ওয়াক্তের মাঝখানে জমা করতে হবে। অর্থাৎ যুহরের আওয়াল ওয়াক্তে ‘আসর জমা হবে না এবং ‘আসরের আউয়াল ওয়াক্তে যুহর জমা হবে না। বরং যুহরের শেষ ওয়াক্তে যুহর ও ‘আসরকে জমা করতে হবে। দলিল:
হজরত আনাস (রা.) বলেন, কোন সফর যদি নবি করিম এর তাড়া থাকতো, তাহলে তিনি জোহরকে আসরের ওয়াক্তের সূচনা পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন আর দুেই দুই নামাজ একত্র পড়তেন এবং মাগরিবকে লালিমা ডোবা পন্ত বিলম্বিত করতেন আর মাগরিব-ঈশা একত্র আদায় করতেন। তাখরিজ: বুখারি-১১১১;মুসলিম-৭০৪
ইমাম তহাবি (রহ.) বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন,
» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَقْتُهُمَا وَاحِدٌ , قَالُوا: وَلِذَلِكَ جَمَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَهُمَا فِي وَقْتِ إِحْدَاهُمَا , وَكَذَلِكَ الْمَغْرِبُ وَالْعِشَاءُ , فِي قَوْلِهِمْ وَقْتُهُمَا وَقْتٌ لَا يَفُوتُ إِحْدَاهُمَا حَتَّى يَخْرُجَ وَقْتُ الْأُخْرَى مِنْهُمَا. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: بَلْ كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْ هَذِهِ الصَّلَوَاتِ وَقْتُهَا مُنْفَرِدٌ مِنْ وَقْتِ غَيْرِهَا. وَقَالُوا: أَمَّا مَا رَوَيْتُمُوهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ جَمْعِهِ بَيْنَ الصَّلَاتَيْنِ , فَقَدْ رُوِيَ عَنْهُ كَمَا ذَكَرْتُمْ. وَلَيْسَ فِي ذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فِي وَقْتِ إِحْدَاهُمَا , فَقَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ جَمْعُهُ بَيْنَهُمَا كَانَ كَمَا ذَكَرْتُمْ وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ صَلَّى كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا فِي وَقْتِهَا كَمَا ظَنَّ جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ , وَهُوَ رَوَى ذَلِكَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ , وَعَمْرِو بْنِ دِينَارٍ , مِنْ بَعْدِهِ. فَقَالَ أَهْلُ الْمَقَالَةِ الْأُولَى: قَدْ وَجَدْنَا فِي بَعْضِ الْآثَارِ , مَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ صِفَةَ الْجَمْعِ الَّذِي فَعَلَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا قُلْنَا. فَذَكَرُوا فِي ذَلِكَ
ইমাম আবূ জা'ফর তাহাবী (র) বলেনঃ একদল আলিম এই মত গ্রহণ করেছেন যে, যুহর ও আসরের সালাতের একই ওয়াক্ত। তাঁরা বলেন, এজন্যই নবী (ﷺ) এ এই দুই সালাতকে ওই দুইটির একটির ওয়াক্তে একত্রে আদায় করেছেন। অনুরূপভাবে তাঁদের মতে মাগরিব ও ইশার সালাতের ওয়াক্তও অভিন্ন। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বিতীয় সালাতের ওয়াক্ত শেষ না হবে প্রথম সালাত কাযা হবে না। পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাঁদের বিরোধিতা করে বলেছেন, (বিষয়টি এরূপ নয়) বরং এই সমস্ত সালাতের প্রত্যেকটির ওয়াক্ত অপরটির ওয়াক্ত থেকে পৃথক। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ থেকে দুই সালাত একত্রে আদায় করার যে রিওয়ায়াত আপনারা উদ্ধৃত করেছেন, এটা তাঁর থেকে সেই ভাবেই বর্ণিত আছে। কিন্তু তাতে একথার কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি তা এক সালাতের ওয়াক্তে আদায় করেছেন। দুই সালাতের মাঝে একত্রীকরণ সেইভাবেও হতে পারে, যেভাবে আপনারা উল্লেখ করেছেন। আবার একথারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি প্রত্যেক সালাত তার নিজস্ব ওয়াক্তে আদায় করেছেন। যেমনটি জাবির ইব্ন যায়দ (র) ধারণা পোষণ করেছেন এবং তিনি তা ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। আর তাঁর পরে আমর ইব্ন দীনার (র) ও রিওয়ায়াত করেছেন।
প্রথমোক্ত অভিমত পোষণকারীগণ বলেন, কিছু সংখ্যক হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, (দুই সালাতকে) একত্রে আদায় করার পদ্ধতি তা–ই, যা আমরা বলেছি। তাঁরা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেনঃ
হাদিস/আসার নং-০১
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ يَحْيَى، قَالَ: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ إِدْرِيسَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: ثنا عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، قَالَ: أنا جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , يَقُولُ: " صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ ثَمَانِيًا جَمِيعًا , وَسَبْعًا جَمِيعًا. قُلْتُ لِأَبِي الشَّعْثَاءِ: أَظُنُّهُ أَخَّرَ الظُّهْرَ وَعَجَّلَ الْعَصْرَ , وَأَخَّرَ الْمَغْرِبَ , وَعَجَّلَ الْعِشَاءَ , قَالَ: وَأَنَا أَظُنُّ ذَلِكَ "
ইসমাইল ইবন ইয়াহইয়া (র)..... ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, আমি মদীনাতে নবী (সা)–এর সঙ্গে আট রাক'আত (যুহর ও আসর) একত্রে এবং সাত রাক'আত (মাগরিব ও ইশা) একত্রে আদায় করেছি। আমর ইবন দীনার (র) বলেন, আমি আশ শা'সা (জাবির ইবন যায়দ র)–কে বললাম, আমার ধারণা মতে তিনি যুহরের সালাতকে বিলম্ব করে শেষ ওয়াক্তে ও আসরের সালাতকে জলদি করে প্রথম ওয়াক্তে, আবার মাগরিবকে বিলম্ব করে শেষ ওয়াজে ও ইশাকে জলদি করে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করেছেন। তিনি বললেন, আমার ধারণাও তাই। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৬৬
হাদিস/আসার নং-০২
حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا الْحِمَّانِيُّ، قَالَ: ثنا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ ابْنِ أَبِي نَجِيحٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي ذُؤَيْبٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَلَمَّا غَرَبَتِ الشَّمْسُ , هِبْنَا أَنْ نَقُولَ لَهُ الصَّلَاةَ , فَسَارَ , حَتَّى ذَهَبَتْ فَحْمَةُ الْعِشَاءِ , وَرَأَيْنَا بَيَاضَ الْأُفُقِ , فَنَزَلَ فَصَلَّى ثَلَاثًا الْمَغْرِبَ , وَاثْنَتَيْنِ الْعِشَاءَ , ثُمَّ قَالَ: «هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُ»
ফাহাদ (র)..... ইসমাঈল ইব্ন আবী যুওয়াইব (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একবার আমি ইব্ন উমার (রা) এর সঙ্গে ছিলাম। যখন সূর্য ডুবে গেল আমরা তাঁকে সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে সাহস পেলাম না। তিনি চলতে চলতে যখন রাতের প্রথমাংশের অন্ধকার এগিয়ে আসতে লাগল এবং আমরা দিগন্তের শুভ্রতা দেখলাম, তখন তিনি অবতরণ করে মাগরিবের সালাত তিন রাক'আত এবং ইশার সালাত দু'রাক'আত আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে এভাবেই (সালাত আদায়) করতে দেখেছি। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৭৫
হাদিস/আসার নং-০৩
ا حَدَّثَنَا ابْنُ مَرْزُوقٍ , قَالَ: ثنا عَارِمُ بْنُ الْفَضْلِ , قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ , عَنْ أَيُّوبَ , عَنْ نَافِعٍ: أَنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا اسْتُصْرِخَ عَلَى صَفِيَّةَ بِنْتِ أَبِي عُبَيْدٍ , وَهُوَ بِمَكَّةَ , فَأَقْبَلَ إِلَى الْمَدِينَةِ , فَسَارَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ , وَبَدَتِ النُّجُومُ , وَكَانَ رَجُلٌ يَصْحَبُهُ , يَقُولُ: الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ. قَالَ وَقَالَ لَهُ سَالِمٌ: الصَّلَاةَ. فَقَالَ: «إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا عَجَّلَ بِهِ السَّيْرُ فِي سَفَرٍ، جَمَعَ بَيْنَ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ، وَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَجْمَعَ بَيْنَهُمَا، فَسَارَ حَتَّى غَابَ الشَّفَقُ، ثُمَّ نَزَلَ فَجَمَعَ بَيْنَهُمَا»
ইবনে মারযূক (র).... নাফি' (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইব্ন উমার (রা) মক্কায় অবস্থানকালে (তাঁর স্ত্রী) সফিয়া বিন্ত আবূ উবায়দ এর অসুস্থতার সংবাদ পেলেন। তিনি মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং সফর শুরু করলেন। সফর করতে করতে (এক পর্যায়ে) সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল এবং তারকারাজি দৃশ্যমান হয়ে পড়ল। তার সফর সঙ্গী জনৈক ব্যক্তি বলতে লাগল, সালাত আদায় করুন। সালাত আদায় করুন। রাবী বলেন, সালিম (র) ও তাঁকে বললেন, সালাত আদায় করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ –এর যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত তখন এই দুই সালাত (মাগরিব ও ইশা) একত্রে আদায় করতেন। আমিও এ দু'টি একত্রে আদায় করতে চাচ্ছি। তিনি সফর অব্যাহত রেখে আরো অগ্রসর হলেন। এমনকি ‘শাফাক' অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর তিনি অবতরণ করে উভয় সালাত একত্রে আদায় করলেন। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৭৯
হাদিস/আসার নং-০৪
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ، قَالَ: ثنا مُسَدَّدٌ، قَالَ: ثنا يَحْيَى، عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ كَانَ إِذَا جَدَّ بِهِ السَّيْرُ جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ , بَعْدَمَا يَغِيبُ الشَّفَقُ , وَيَقُولُ: «إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا جَدَّ بِهِ السَّيْرُ , جَمَعَ بَيْنَهُمَا» قَالُوا: فَفِي هَذَا دَلِيلٌ عَلَى صِفَةِ جَمْعِهِ , كَيْفَ كَانَ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ لِمُخَالِفِهِمْ أَنَّ حَدِيثَ أَيُّوبَ , الَّذِي قَالَ فِيهِ: فَسَارَ حَتَّى غَابَ الشَّفَقُ ثُمَّ نَزَلَ كُلُّ أَصْحَابِ نَ
ইব্ন আবী দাউদ (র).... ইবন উমার (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত তখন তিনি ‘শাফাক’ অদৃশ্য হওয়ার পর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। আর বলতেন, যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত তখন রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)ওই দুই সালাত একত্রে আদায় করতেন।
ইমাম তাহাবী (র)–এর ভাষ্য
তাঁরা বলেন এতে (রিওয়ায়াত সমূহে) তাঁর একত্রীকরণের পদ্ধতি কিরূপ ছিল তার দলীল বিদ্যমান রয়েছে। তাঁদের বিরোধী গণ তাঁদের বিরুদ্ধে দলীল দিতে গিয়ে বলেছেন যে, আয়্যূব (র) এর রিওয়ায়াত যাতে বলা হয়েছে, তিনি সফর করতে ছিলেন তারপর 'শাফাক' অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর তিনি অবতরণ কররেন।
নাফি' (র)–এর কোন সাথীই ওই কথাটি উল্লেখ করেননি, উবায়দুল্লাহ (র), মালিক (র) ও লায়স (র) কেউ না। ঐ ব্যক্তি যার থেকে আমরা এই বিষয়ে ইবন উমার (রা)–এর হাদীস বর্ণনা করেছি। এই হাদীসে ইব্ন উমার (রা)–এর আমলের সংবাদ দেয়া হয়েছে। তিনি নবী থেকে (সালাতসমূহ) একত্রে আদায় করার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কিভাবে একত্রে আদায় করেছেন তা তিনি উল্লেখ করেননি। উবায়দুল্লাহ্ (র)–এর হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)ওই দুই সালাতকে একত্রে আদায় করেছেন। তারপর তিনি ইব্ন উমার (রা)–এর একত্রে আদায় করা কিরূপ ছিল তা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি ‘শাফাক' অদৃশ্য হওয়ার পর এরূপ করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, যখন উভয় সালাতকে একত্রে আদায় করেছেন তাহলে ইশার সালাত ‘শাফাক 'অদৃশ্য হওয়ার পর ছিল এবং মাগরিবের সালাত ‘শাফাক' অদৃশ্য হওয়ার পূর্বে আদায় করে ফেলেছিলেন।
যেহেতু ইশার সালাত আদায় না করা পর্যন্ত তিনি 'দুই সালাতের মাঝে একত্রে আদায়কারী' গণ্য হবেন না। তাই এভাবে তিনি মাগরিব ও ইশার মাঝখানে একত্রে আদায়কারী হয়েছিলেন। আমাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে আয়্যব (র) ব্যতীত অন্য রাবীগণ তা ব্যাখ্যা করে বিস্তারিতভাবে রিওয়ায়াত করেছেন। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৮০
হাদিস/আসার নং-০৫
ا حَدَّثَنَا يُونُسُ قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي جَابِرُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , عَنْ عُقَيْلِ بْنِ خَالِدٍ , عَنِ ابْنِ شِهَابٍ , عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِثْلَهُ يَعْنِي «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا عَجَّلَ بِهِ السَّيْرُ يَوْمًا , جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ , وَإِذَا أَرَادَ السَّفَرَ لَيْلَةً , جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ، يُؤَخِّرُ الظُّهْرَ إِلَى أَوَّلِ وَقْتِ الْعَصْرِ , فَيَجْمَعُ بَيْنَهُمَا، وَيُؤَخِّرُ الْمَغْرِبَ حَتَّى يَجْمَعَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ الْعِشَاءِ , حَتَّى يَغِيبَ الشَّفَقُ» قَالُوا: فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّهُ صَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ فِي وَقْتِ الْعَصْرِ , وَأَنَّ جَمْعَهُ بَيْنَهُمَا كَانَ كَذَلِكَ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ لِأَهْلِ الْمَقَالَةِ الْأُولَى أَنَّ هَذَا الْحَدِيثَ قَ
ইউনুস (র).... আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। অর্থাৎ যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে কোন দিন সফরে দ্রুত চলতে হত তখন তিনি যুহর ও আসরকে একত্রে আদায় করতেন। আর যখন রাতে সফরের ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন মাগরিব ও ইশার সালাতকে একত্রে আদায় করতেন। তিনি যুহরের সালাতকে আসরের প্রথম ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করে উভয়কে একত্রে আদায় করতেন। এবং মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও ইশাকে একত্রে আদায় করতেন, যাতে করে শাফাক অদৃশ্য হয়ে যেত। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৮৪
ব্যাখ্যা
তাঁরা বলেন, এই হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, তিনি আসরের ওয়াক্তে যুহর ও আসরের সালাত আদায় করেছেন এবং উভয়ের মাঝে তাঁর একত্রীকরণের পদ্ধতি এরূপই ছিল।
حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا الْحَسَنُ بْنُ بِشْرٍ، قَالَ: ثنا الْمُعَافَى بْنُ عِمْرَانَ، عَنْ مُغِيرَةَ بْنِ زِيَادٍ الْمَوْصِلِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا , قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السَّفَرِ , يُؤَخِّرُ الظُّهْرَ وَيُقَدِّمُ الْعَصْرَ , وَيُؤَخِّرُ الْمَغْرِبَ وَيُقَدِّمُ الْعِشَاءَ» ثُمَّ هَذَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَيْضًا , قَدْ رَوَيْنَا عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنَّهُ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الصَّلَاتَيْنِ فِي السَّفَرِ» ثُمَّ قَدْ رُوِيَ عَنْهُ
ফাহাদ (র)...... আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)সফর অবস্থায় যুহরের সালাতকে বিলম্বে ও আসরের সালাতকে আগে (প্রথম ওয়াক্তে) এবং মাগরিবের সালাতকে বিলম্বে ও ইশার সালাতকে আগে (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা)–এর সূত্রেও আমরা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)থেকে রিওয়ায়াত করেছি যে, তিনি সফর অবস্থায় দুই সালাতকে একত্রে আদায় করতেন। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৮৫
প্রধান্য মত: কুরআন হাদিস পরস্পর বিরোধিতা হলে প্রথমে সমন্বয় করতে সাধন/ব্যাখ্যা করতে হবে। সুতরাং দুই ফরজ নামাজ একত্রিত করে পড়ার হাদিসগুলোতে একথা উল্লেখ নেই যে, একই ওয়াক্তে জমা করেছেন। বিষয়টি অন্য হাদিস দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জমা বাইনাস সালাতাইন জাহিরি অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
কুরআন হাদিস পরস্পর বিরোধিতা হলে দ্বিতীয়ত কুরআন প্রধান্য পাবে। তাই ঠিক সময়েই তা আদায় করতে হয়। দলিল:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣]
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। [সূরা নিসা-১০৩]
তৃতীয় কথা হলো, দুটি ফরজ নামাজকে যদি একত্রিত জায়েজ হতো, তাহলে যুদ্ধের বিভীষিকাময় অবস্থায় সালাতুল খওফ এর বিধান নাজিল করতেন না। দলিল:
(وَإِذَا كُنتَ فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُم )
অর্থ: আর যখন তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা করে ফেলবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন ও অস্ত্র ধারণ করে| সূরা নিসা-১০২
পক্ষান্তরে জমা বাইনাস সালাতাইন হাকিকতান এর পক্ষের হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণের বলেন, জমা করা মুস্তাহাব নয়, বরং ত্যাগ করাই উত্তম।
মালেকী মাযহাবের লোকদের মতে সফরে দু’ সালাত একত্রে আদায় করা উত্তমের বিপরীত। মিনাহুল জালীল, ১/৪১৬; শারহুল খুরাশী, ২/৬৭]
সুতরাং প্রমাণিত হলো, জমা বাইনাস সালাতাইন হাকিকতান জায়েজ নেই এবং এটাই সর্বোচ্চ সতর্কতা; তবে জাহিরি সর্বসম্মত জায়েজ।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত আলোকে বুঝা যায় কুয়েতের লোকেরা হানাফি মাজহাবের অনুসারি নয়। সুতরাং তারা তাদের মাজহাব অনুযায়ী আমল করবে, আর আপনি যেহেতু ফিকহি হানাফির অনুসারি, তাই আপনি সঠিক সময়ে আদায় করনে। অথবা জমা বাইনাস সালাতাইন জাহিরি করতে পারেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক