আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৭৪৯: মোজার উপর মাসেহ এর মেয়াদ?

No Comments

 




জিজ্ঞাসা-১২৭৪৯: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

মুহতারাম,মোজার উপর মাসেহ এর হাদীস প্রয়োজন,যেখানে মুকিমের জন্য একদিন একরাত আর মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত।

তারিখ:  ০৪/০৯/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা  আবু সুমাইয়া শাহজাহান শেখ কুমিল্লা থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا الثَّوْرِيُّ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ الْمُلاَئِيِّ، عَنِ الْحَكَمِ بْنِ عُتَيْبَةَ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُخَيْمِرَةَ، عَنْ شُرَيْحِ بْنِ هَانِئٍ، قَالَ أَتَيْتُ عَائِشَةَ أَسْأَلُهَا عَنِ الْمَسْحِ، عَلَى الْخُفَّيْنِ فَقَالَتْ عَلَيْكَ بِابْنِ أَبِي طَالِبٍ فَسَلْهُ فَإِنَّهُ كَانَ يُسَافِرُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَسَأَلْنَاهُ فَقَالَ جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ لِلْمُسَافِرِ وَيَوْمًا وَلَيْلَةً لِلْمُقِيمِ . قَالَ وَكَانَ سُفْيَانُ إِذَا ذَكَرَ عَمْرًا أَثْنَى عَلَيْهِ .


৫৩২। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আল হানযালী (রাহঃ) ......... সূরাইয়া ইবনে হানী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাযিঃ)-এর কাছে এলাম মোযার ওপর মাসাহ করার মাস’আলা জিজ্ঞাসা করতো তিনি বললেন, আবু তালিবের পূত্র (আলী (রাযিঃ)-এর কাছে গিয়ে এ মাসআলা জিজ্ঞাসা কর। কারণ সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সফর করত। অতঃপর আমরা তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুসাফিরের জন্য তিন দিন রাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং মুকীমের জন্য একদিন, এক রাত। এ হাদীসের রাবী সুফিয়ান সাওরী (রাহঃ) যখন তার উস্তাদ আমর-এর উল্লেখ করতেন তখন তাঁর প্রশংসা করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩২ (আন্তর্জাতিক নং ২৭৬-১)


হাদীসের ব্যখ্যা:

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)


রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ (সুরা : আবু দাউদ, আয়াত : ১৩৫)


ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, অজু সহজভাবে করার জন্য পা ধৌত করার বিকল্প হিসেবে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।


মাসেহ বৈধ হওয়ার শর্তসমূহ


যতক্ষণ পর্যন্ত নিম্নোল্লিখিত শর্তসমূহ পাওয়া যাবে, মোজার ওপর মাসেহ বৈধ হবে।


১। পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯)


২। মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)


৩। মোজা ফাটাছেঁড়া হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটাছেঁড়া থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০, আল-আশবাহ ১/১১৪, আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)


৪। উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।


৫। তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)


সুতরাং আমাদের দেশে প্রচলিত সুতার মোজার ওপর মাসেহ বৈধ নয়।


মাসেহর ফরজ ও সুন্নতসমূহ


মাসেহর ফরজ সীমারেখা : হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবু দাউদ : ১৪০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫)


মাসেহর সুন্নত : পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাখনু পর্যন্ত মাসেহ করবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫, কিতাবুল আসার : ১/৭২)


মোজা মাসেহর নির্ধারিত মেয়াদ


মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫)


মাসেহর সময় শুরু হবে যখন থেকে অজু ভেঙে যায় (হাদাস হয়)। আর এটি যখন থেকে মোজা পরা হয়, সে সময় থেকে নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮০)


মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে, তবে মুসাফিরের সময়সীমা পরিপূর্ণ করবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫, মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক : ১/২২১)


মাসেহ ভঙ্গকারী বিষয়


১। যেসব কারণে অজু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে মাসেহও ভঙ্গ হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)

২। মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২)

৩। মোজা যদি পায়ের টাখনুসহ বেশির ভাগ অংশ বের হয়ে যায়, তখনো মাসেহ ভেঙে যাবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২, ১৩৯৬)

৪। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ ভেঙে যায়। (বাদায়ে : ১/৪৬)

৫। উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশির ভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা : ১৩৯৬, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৫৮৭)



  والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি এরমুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক