জিজ্ঞাসা-১২৮৩৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।জিজ্ঞাসা= সৈনিকেরা আসরের নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই নামাজ পড়তে চায়। গেইম এ যাওয়ার জন্য, যেটি হানাফী মাযহাব মত ওয়াক্ত হয় না। কিন্তু শাফি মাজহাব মতে ওয়াক্ত হয় এর বিধান কি? নামাজ পড়া যাবে? গেইম করে আসলে আসরের মাকরুহ ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। জানতে চাচ্ছি ।
তারিখ: ১২/১১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ওলিউল্লাহ ঢাকা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আসরের ওয়াক্ত শুরুর ব্যাপারে সম্মানিত চার ইমামদের মধ্যে রয়েছে।আইম্মায়ে সালাসা (ইমাম মালেক,শাফি ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ) ও সাহেবাইন ( ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রহ.) এর মতে কোন বস্তুর মূল ছায়ার সমপরিমাণ হলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়।
আর ইমাম আবু হানিফা রহ এর মতে, বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়।
প্রশ্ন: ক। আইম্মায়ে সালাসার দলিল কী?
উত্তর: ক। আইম্মায়ে সালাসার দলিল নিম্নরূপ:
وَحَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ الأَوْسَطِ وَوَقْتُ صَلاَةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلاَةِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ " .
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সূর্য চলে যাওয়ার পর যোহরের ওয়াক্ত হয় এবং মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া ও আসরের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত থাকে। আসরে ওয়াক্ত সুর্য হলুদ না হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে শাফাক গায়েব না হওয়া পর্যন্ত রয়েছে। ইশার ওয়াক্ত থাকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত। এবং ফজরের ওয়াক্ত থাকে উষার উদয়কাল হতে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত। আর যখন সূর্য উদয় হতে থাকে তখন নামায থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে উদিত হয়।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৬৪ (আন্তর্জাতিক নং ৬১২-৪)
প্রশ্ন: খ। ইমাম আবু হানিফা রহ এর দলিল কী?
উত্তর: খ। ইমাম আবু হানিফা রহ এর দলিল নিম্নরূপ:
قال المشائخ: ينبغى أن لا يصلى العصر حتى يبلغ المثلين، ولا يؤخر الظهر إلى أن يبلغ المثل ليخرج من الخلاف فيها، (الحلبى الكبير، كتاب الصلاة، بحث فروع فى شرح الطحاوى-227، رد المحتار، كتاب الصلاة-1/359، البحر الرائق، كتاب الصلاة-1/425-426، حاشية الطحطاوى على الدر المختار، كتاب الصلاة-1/173)
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَا أُخْبِرُكَ، صَلِّ الظُّهْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ.وَالْعَصْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ (1) مِثْلَيْكَ.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ বলেন, আমি তোমাদের জানাচ্ছি যে, যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়, তখন যোহরের নামায পড়, আর যখন তা দ্বিগুণ হয়, তখন আসরের নামায পড়। তাখরিজ: মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২, ৯, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২০৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২১৭৩৪
প্রশ্ন: গ। বিশেষ প্রয়োজনে বস্তুর ছায়ার সমপরিমাণ হলে আসর নামাজ আদায় করা যাবে কি?
উত্তর: গ। যেহেতু এ বিষয়ে আমাদের ইমামদের মাঝেই মতভেদ হয়ে গেছে। তাই ফক্বীহগণ বলেন, উত্তম ও সতর্কতা এটাই যে, বস্তুর ছাড়া দ্বিগুণ হওয়ার আগে আসরের নামায পড়বে না। তবে যদি কেউ পড়ে নেয়, তাহলে মতভেদ থাকার কারণে নামাযকে বাতিল বলা যাবে না। বরং সহীহ হয়ে গেছে বলেই ধতব্য হবে। দলিল:
مثل اول پر عصر کی نماز حنفیہ میں سے صاحبین کے مذہب پر درست ہے، بہت سے مشائخ احناف سے اس رائے کی ترجیح بھی منقول ہے؛ لہذا جماعت کی اہمیت اور حرمین شریفین میں اس کی فضیلت کے حصول کے لئے صاحبین کے مذہب کو اختیار کیا جاتا ہے، اور اس وقت اکثر احناف کا اس پر عمل ہے ۔ (مستفاد: احسن الفتاوی ۱٤۵/۲)
অর্থাৎ, হানাফী মাজহাবের সাহেবাইনের ( ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ ( রাহি.) এর) নিকট প্রতিটি বস্তুর ছায়া মিসলে আওয়াল ( সমপরিমাণ) পর্যন্ত হলেই আছরের সময় হয়ে যায়। হানাফী মাজহাবের একটি বৃহৎ সংখ্যক মাশায়েখগণ এই মতামতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই কোন অঞ্চলের মসজিদসমূহে (যেমন হারামাইন শরীফে) এই সময়েই আছরের জামায়াত সংঘটিত হবার প্রচলন হয়ে থাকলে বৃহৎ জামায়াতে অংশগ্রহণের ফজীলত প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে সাহেবাইনের মতামতের অনুকরণে সেই সময় সালাত আদায় করা যেতে পারে। প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হানাফী আলেমগণ এই মতানুসারেই আমল করে থাকেন। সূত্র: আহসানুল ফাতাওয়া- ২/১৪৫
অর্থাৎ আমাদের (হানাফি) ইমামদের মধ্যে কোন মাসয়ালায় মতভেদ থাকলে, বিশেষ প্রয়োজনে যে কোন ইমামের মতের উপর আমল করা যাবে।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরতে যেহেতু পরে আদায় করলে মাকরুহ ওয়াক্ত এসে যাচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে হানাফি মাজহাবের দুই ইমাম আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদের মতের আমল করতে কোন সমস্যা নেই।
উদাহরণ: আজকে ১২/১১/২০২৩ ইমাম আবু হানাফির মত অনুযায়ি ওয়াক্ত হবে ৩.৩৮ মিনিট (ঢাকা) আর ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম শাফিয়ি প্রমূখদের ওয়াক্ত হবে, ২.৫৩ মিনিট। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিশেষ প্রয়োজনে নামাজ পড়লে নামাজ হয়ে যাবে বিশেষ প্রয়োজনে ২.৫৩ মিনিটে আসর নামাজ আদায় করলে, নামাজ শুদ্ধ হবে।
তবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আবু হানিফা রহ. মতের উপর উপর আমল করা উচিত।
والله اعلم بالصواب