জিজ্ঞাসা-১২৮৫৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম ইসলামী বাংকে ১০ বছর মেয়াদী হজের একাউনট ছিল আরো ৪ চার বছর পরে মেয়াদ পুরন হবে এখন বৈধ কোন কাজে টাকা গুলো উঠায়ে খরচ করতে চাই ৩ বছর পরে অবসরের টাকায় হজে যাব ইনসা আললাহ মাসআলা জানাবেন
তারিখ: ০৩/১২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা এনামুল হক যশোর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হজ তো হলো সামর্থবান ব্যক্তিদের উপর। যেমন, আল্লাহ তাআলার বাণী -
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا
আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। সূরা ইমরান -৯৭
وعن أنس رضي الله عنه قال: قيل: يا رسول الله ما السبيل؟ قال: الزاد والراحلة. رواه الدارقطني وصححه الحاكم
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, সাবিল কী? তিনি বললেনঃ পাথেয় ও বাহন। তাখরিজ: মুসান্নেফে আবি শাইবা - ১৫৯৫৭ ; তাবারানি-৭৪৮৬
ব্যাখ্যা: হজ ফরজ হয় দৈনন্দিন খরচ বাদে হজ্বে আবশ্যকীয় প্রয়োজনে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তথা যাওয়া আসা, সেখানে থাকা খাওয়া ইত্যাদি পরিমাণ টাকা থাকলে ব্যক্তির উপর হজ্ব করা ফরজ হয়ে থাকে।
সে হিসেবে দেখতে হবে বর্তমানে হজ্ব করতে গেলে কত টাকা লাগবে। সে টাকা উক্ত ব্যক্তির কাছে থাকলে তার উপর হজ্ব করা আবশ্যক।
একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, কিছু অংশ বিক্রি করে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫৩)
হজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে আর হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৬)
দ্বিতীয় কথা হলো, জমহুর তথা অধিকাংশ আলেমদের মতে তাড়াতাড়ি হজ আদায় করা ফরজ। দলিল -
হাদিস নং -০১
مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ ، فَلْيَتَعَجَّلْ ، فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ ، وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ ، وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ
ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন -যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাখরিজ:মুসনাদে আহমদ, হাদীস - ১৮৩৩ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস - ২৮৮৩ ; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস - ১৭৩২
হাদিস নং -০২
تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ, يَعْنِي الْفَرِيضَةَ, فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لا يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ
ইবনে আববাস রা. বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন -ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না! কারণ, তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। তাখরিজ:মুসনাদে আহমদ, হাদীস - ২৮৬৭ ; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০
হাদিস নং -০৩
روى الدارمي (1826) ، والبيهقي في "الشعب" (3693) ، وأبو نعيم في " الحلية " (9/251) ، وابن الجوزي في " التحقيق" (2/118) من طريق شَرِيكٍ ، عَنْ لَيْثٍ ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ( مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ عَنِ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ ، أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ، أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ ، فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا، وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا) .
হজ্বের সামর্থ্য থাকা সত্তেও যে হজ্ব করল না, এরপর সে ইহুদি অবস্থায় মারা যাক কী নাসরানী অবস্থায়, সবই তাঁর জন্য সমান! তাখরিজ: দারেমি-১৮২৬; বায়হাকি -৩৬৯৩; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্ন মোতাবেক ইসলামি ব্যাংকে ৬ বছরের জমাকৃত টাকা যদি সংসার পরিচালনা, চিকিৎসা বা থাকার জন্য বাড়ি করে থাকেন, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
তবে যদি টাকাগুলো উন্নয়নমূলক/ব্যবসায়ী কাজে ব্যয় করেন। এই টাকা এবং অতিরিক্ত অন্যান্য টাকা মিলে যদি হজ করার মত সম্পদ হয়, তাহলে আপনার জন্য হজ ফরজ, তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন করতে হবে, পেনশন যাওয়া পর্যন্ত করা ঠিক হবে না।
والله اعلم بالصواب