জিজ্ঞাসা-১২৫৮১:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, আমার কাছে একজন অফিসার জানতে চেয়েছেন যে, তার স্ত্রীর ৫ মাসের বাচ্চা পেটে মারা গিয়েছে। এখন সিজার করতে হবে। এখন জানার বিষয় হলো, ঐ শিশুর জানাযা, দাফন - কাফনের বিধান কি এবং উক্ত মহিলার নামাজ-রোজার বিধান কি?
তারিখ: ০৭/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
قال ابن قدامة (رحمه الله): "إذا مات الولد حياً فلا خلاف بين العلماء في اغتسله". قال الإمام أحمد بن حنبل (رحمه الله): "إذا مات المولو তয়د بعد أربعة أشهر في بطن أمه جنازة" (مغني المجلد 4 ص 497).
অর্থ: ইবনু কুদামা রহ. বলেন, ‘সন্তান যদি জীবিত জন্ম হওয়ার পরই মারা যায় তাহলে তার গোসল জানাযা দেয়ার ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই’। ( কিন্তু মৃত্যু সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে জানাযার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ) সূত্র: (মুগনী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৯৭)
وأما من مات في بطن أمّه،
وسقط ميتًا؛ فإن في مشروعية الصلاة عليه خلافًا بين الفقهاء، ولو بلغ أربعة أشهر، ولا حرج في الأخذ بأحد أقوالهم،
যে তার মায়ের গর্ভে মারা গিয়েছিল, এবং মৃত অবস্থায় পড়েছিল; তার উপর নামায পড়ার বৈধতা সম্পর্কে মতভেদ আছে, যদিও সে চার মাস পৌছে যায়।
ذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ إِلَى أَنَّهُ إِذَا انْفَصَل الْجَنِينُ مَيِّتًا، وَلَمْ يَسْتَهِلّ بَعْدَ الْوِلاَدَةِ؛ فَإِنَّهُ يُغَسَّل، وَيُسَمَّى، وَيُدْرَجُ فِي خِرْقَةٍ، وَيُدْفَنُ، وَلاَ يُصَلَّى عَلَيْهِ...
وَعِنْدَ الْمَالِكِيَّةِ: قَال الدَّرْدِيرُ: لاَ يُغَسَّل سِقْطٌ لَمْ يَسْتَهِلّ صَارِخًا، وَلَوْ تَحَرَّكَ؛ إِذِ الْحَرَكَةُ لاَ تَدُل عَلَى الْحَيَاةِ... وَيُغَسَّل دَمُ السِّقْطِ، وَيُلَفُّ بِخِرْقَةٍ، وَيُوَارَى وُجُوبًا فِي التَّكْفِينِ، وَالدَّفْنِ ...
وَعِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ: إِذَا اسْتَهَلّ الْجَنِينُ، أَوْ تَحَرَّكَ، ثُمَّ مَاتَ؛ غُسِّل، وَصُلِّيَ عَلَيْهِ، وَإِنْ لَمْ يَسْتَهِلّ، وَلَمْ يَتَحَرَّكْ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ؛ كُفِّنَ بِخِرْقَةٍ، وَدُفِنَ.
وَعِنْدَ الْحَنَابِلَةِ: يَقُول ابْنُ قُدَامَةَ: إِذَا أَكْمَل السِّقْطُ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ، أَوْ بَانَ فِيهِ خَلْقُ إِنْسَانٍ؛ غُسِّل، وَصُلِّيَ عَلَيْهِ، وَلَوْ لَمْ يَسْتَهِلّ، وَيُسْتَحَبُّ تَسْمِيَتُهُ
অর্থাৎ জমহুর তথা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফিয়ি রহ এর মতে, শিশু যদি জীবিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে, তাহলে তার জানাযা, দাফন -কাফন ও নাম রাখবে। আর মৃত হলে জানাযা লাগবে না, বয়স তাই হোক না কেন।
পক্ষান্তরে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, ‘বাচ্চা মায়ের গর্ভে চার মাস অবস্থানের পর নষ্ট হলে তার জানাযা পড়া যাবে’। সূত্র: আলফিকহু মাউসুআ, ফিকহুল ইবাদাত, জানাযা-৪৫৯৪৪২( ফতোয়া নং) ; মুগনী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৯৭
প্রশ্ন: ক। তিন ইমামের দলিল কি?
উত্তর: ক। মৃত শিশুকে জানাযা ছাড়াই দাফন করতে হবে। দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং -০১
عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الطِّفْلُ لاَ يُصَلَّى عَلَيْهِ، وَلاَ يَرِثُ، وَلاَ يُورَثُ حَتَّى يَسْتَهِلَّ
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শিশুর উপর জানাযা পড়া হবে না, তার থেকে কেউ মিরাছ পাবে না এবং তাকেও মিরাছ দেয়া হবে না। তবে যদি জন্মের পর কাঁদে তথা জীবিত জন্ম নেয়।(তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে এবং মিরাছ পাবে) । তাখরিজ: সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১০৩২
হাদিস/আসার নং -০২
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: «لَا يُوَرَّثُ الْمَوْلُودُ حَتَّى يَسْتَهِلَّ، وَلَا يُصَلَّى عَلَيْهِ حَتَّى يَسْتَهِلَّ، فَإِذَا اسْتَهَلَّ، صُلِّيَ عَلَيْهِ وَوُرِّثَ،
ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, না কাঁদলে জন্ম নেয়া নবজাতক মিরাছ পাবে না। এবং তার জানাযাও পড়া হবে না যদি না কাদে। তবে যদি কাদে তাহলে তার জানাযা পড়া হবে এবং মিরাছ পাবে। তাখরিজ: সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৩১৭৪
প্রশ্ন: খ: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর দলিল কি?
উত্তর: খ। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর দলিল নিম্নরূপ:
أقام ابن عمر (رضي الله عنه) جنازة ابن ابنته الذي سقط (شرح الكبير ، المجلد 2 ، ص 337)
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর মেয়ের ছেলের জানাযা পড়েছিলেন, যা পড়ে গিয়েছিল । সূত্র: শারহুল কাবীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৭
প্রশ্ন: গ। মিসক্যারিজ বা গর্ভপাত/ডিএনসি নারীর সালাতের হুকুম কি?
উত্তর: গ। বাচ্চাটি যদি পূর্ণাঙ্গ মানবাকৃতি হয় অর্থাৎ ৮১ দিন হয়,
কারণ ৮১ দিন পর শিশুর শরীরের গঠন সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়। তবে তার আগে যদি মিসক্যারিজ/গর্ভপাত হয়ে যায় এবং ব্লিডিং হয় তাহলে তাহলে তা নিফাস হিসেবে ধরা যাবে না। ৮১ দিনের আগে মিসক্যারিজ হয়ে গেলে নামাজ ও রোজা সব সময়ের মতোই আদায় করতে হবে। আর নাফিসের সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন। দলিল:
أخبرنا جعفر بن عون أنا إسماعيل بن مسلم، عن الحسن عن عثمان بن أبي العاص، قال: وقت النفساء أربعين يوما، فإن طهرت وإلا فلا تجاوزه حتى تصلي.
‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাদের সময়সীমা চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগেই পবিত্র হয়ে যায়, (তাহলে পবিত্রতার বিধান শুরু হয়ে যাবে।) অন্যথায় চল্লিশ দিন পর নামায শুরু করতে বিলম্ব করবে না।’’ সুনানে দারেমি-১/২২৯
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে, সিজার করা মৃত প্রসব হওয়া সন্তানকে গোসল দিবে এবং কাফন দিবে এবং কবরস্থ করবে। তবে জানাযা পড়তে হবে না।
এবং উক্ত মহিলার ব্লাড নিফাস হিসেবে গণ্য হবে। তাই নিফাস চলাকালীন নামাজ- রোজা লাগবেনা এবং সহবাস করতে পারবে না।