আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

মোটিভেশন ক্লাস -২২: ইসলামে আমানতের গুরুত্ব ও উহার সংরক্ষণ

No Comments

 












ইসলামে আমানতের গূরুত্ব ও উহার সংরক্ষণ

- জসিম বিন আখতার 


ভূমিকা :- ইসলামে আমানতের গুরুত্ব ও উহার রক্ষণাবেক্ষণ এক বিরাট বিষয়। কেউ কারো নিকট কিছু গচ্ছিত রাখলে হুবহু তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে ফিরিয়ে দেয়াকে আমানত বলে। এটি একটি মহৎ গুণ। আর এই আমানত সঠিকভাবে সংরক্ষণকারীকে আমানতদার বলে। আমানতদার ব্যক্তি সকলের নিকট বিশ্বস্ত ও সমাদৃত। বিশ্বস্ততার আরবী পরিভাষাই আমানত। একজন পুরুষের অধীনস্থ গোটা পরিবার তার নিকট আল্লাহর আমানত ,স্ত্রীর নিকট স্বামীর সন্তান এবং সহায় সম্পদ আমানত, সমাজপতির নিকট গোটা সমাজটাই আমানত, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর নিকট গোটা ইউনিয়ন আমানত , কোন সংসদীয় এলাকার আমানতদারী সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যের উপর , প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের আমানত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর উপর বর্তায়, এভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন রাষ্ট্রপতির নিকট গোটা রাষ্ট্রটাই আমানত। আর ইসলামে এই আমানত এর গুরুত্ব এবং তার সংরক্ষণ পদ্ধতিই আলোচ্য প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য। 

আমানতের গুরুত্ব :- এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন - إِنَّ اللَّـهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّـهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا - “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী ’’ (সূরা আননিসা -৫৮ )। তাফসীরে সফওয়াতুত তাফাসীরের প্রণেতা বলেন - এতে দুই ধরণের জিনিস অন্তর্ভুক্ত : তা হলো আল্লাহ তার বান্দার উপর কথা কাজ ও বিশ্বাসের যে আমানত দিয়েছেন এবং মানুষ যা কিছু তার প্রতি গচ্ছিত রাখে সব কিছুই এই আমানতের আওতাভুক্ত। এখানে প্রত্যেক মানুষকে আমানতদার হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে , তাই প্রতিটি মানুষের কর্তব্য হলো সেই আমানতকে যথাযোগ্য স্থানে পৌছে দেয়া । 

আমানতের বোঝা অনেক কঠিন :- কুরআন সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা একটা কঠিন আমানত , এই আমানতের বোঝা কত কঠিন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী - إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا -“ আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহণ করল। নিশ্চয় সে জালেম-অজ্ঞ ’’ (সূরা আল আহযাব-৭২)। আমানতের বোঝা কত ভারী ! যার ভারত্বের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সুবিশাল আকাশ ,সুবিস্তৃত যমীন এবং সুদৃঢ় পর্বতমালা এই গুরু দায়িত্ব পালনে নিজ নিজ অক্ষমতা আল্লাহর নিকট পেশ করে, অথচ জালিম ও নির্বোধ মানব জাতি স্বেচ্ছায় সে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিল ! এই আয়াতে আমানত বলতে খিলাফাত আলা মিনহাজিন নবুয়্যাহ তথা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পদ্ধতিতে খিলাফাত তথা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে , যা আসলেই কঠিন। অথচ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যায় এ দায়িত্ব নিজে চেয়ে নেয় ! এমনকি দায়িত্ব পাওয়ার লক্ষ্যে অনেকের জীবন বিসর্জন দিতেও যেন কুন্ঠা বোধ করে না , আসলে প্রকৃত জালিম এবং মূর্খ ছাড়া কেউ দায়িত্ব নেতৃত্ব কর্তৃত্ব চেয়ে নিতে পারে না , কারণ এটা এক বিরাট আমানতদারীতা। রাসূল সাঃ বলেন নেতৃত্ব যে ব্যক্তি চেয়ে নেয় সে নেতৃত্ব দেয়ার সবচেয়ে অযোগ্য। 

আমানতদারীর মর্যাদা :- আমানতদারীর মর্যাদা কত বেশী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণীতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে – عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال أربع إذا كن فيك فلا عليك ما فاتك من الدنيا : حفظ أمانة و صدق حديث و حسن خليقة و عفة فى طعمة (رواه أحمد) - “ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন – চারটি জিনিস যদি তোমার মাঝে থাকে তাহলে দুনিয়ার কোন জিনিস থেকে বঞ্চিত হলেও তোমার কিছু আসে যায় না , আর তা হলো – হালাল উপার্জন সৎচরিত্র সত্য কথা এবং আমানতের হিফাজত’’।

বায়হাকীতে এবং মিশকাতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন – لا إيمانا لمن لا أمانة له و لا دينا لمن لا عهد له - “ যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না তার দ্বীনদারী নেই ’’।

 আমানত সুরক্ষার নির্দেশ :- ইসলামী জীবন দর্শনে আমানত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । তাই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ও তদীয় রাসূল (সাঃ) এর সুরক্ষার নির্দেশ দিয়ে মানব জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য গাইড লাইনপ্রদান করেছেন । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী - يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنوا لا تَخونُوا اللَّـهَ وَالرَّسولَ وَتَخونوا أَماناتِكُم وَأَنتُم تَعلَمونَ – “হে ঈমানদারগণ, তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও রসূলের সাথে খেয়ানত করোনা এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে ’’ (সূরা আল আনফাল-২৭)। 

তিরমিযীতে বর্ণিত – عن أبى هريرة رضــ أن النبى صلى الله عليه وسلم قال أد الأمانة إلى من إتمنك ولا تخن من خانك - - “ আবুহুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত (নবী সাঃ) বলেন কেউ তোমার কাছে আমানত রাখলে তা যথাযথ ফিরত দাও আর যে খিয়ানত করে তুমি তার খিয়ানতকারী হয়োনা।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহবায়ে কিরামের জীবনে আমানতের সুরক্ষার দৃষ্টান্ত :- রাসূল (সাঃ) ছিলেন সর্ব শ্রেষ্ঠ আমানতদার , এক পর্যায়ে তিনি আইয়ামে জাহেলিয়াতের মধ্যে যখন আমানতের খিয়ানত করে মানুষ মহাউৎসবে মেতে উঠে ঠিক তখনই মুহাম্মদ (সাঃ) আল আমীন তথা সবচেয়ে বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন , এজন্য শত্রুরাও তার নিকট আমানত রাখতো , এমনকি হিজরতের সময় তিনি সেই আমানত সমূহ ফেরৎ দানের জন্য আলী (রাঃ) কে তার স্থলাভিষিক্ত করে যান। তিনি দুশমনকেও ঠকাননি। তাদের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেও প্রতারণার আশ্রয় নেননি। তিনি জীবনে কোন যুদ্ধে পরাজয় লাভ করেননি বলে বীরত্বের জন্য অহংকারও করেননি।

আবু খবাইব আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন উষ্ট্রের যুদ্ধের ( আয়েশা (রাঃ) ও আলী (রাঃ) এর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ ) দিন যুবাইর (রাঃ) যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আমাকে ডাকেন , আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম , তখন তিনি বলেন হে প্রিয় বৎস আজ জালিম অথবা মজলুম কেউ না কেউ নিহত হবেই , আমার মনে হচ্ছে আমি আজ নির্যাতিত অবস্থায় নিহত হব , আমি আমার কর্জ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছি , তুমিকি মনে কর আমার কর্জ পরিশোধের পর কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে ? হে আমার সন্তান তুমি আমার সম্পদ বিক্রি করে কর্জ পরিশোধ কর। তিনি শহীদ হলেন কিন্তু সম্পদ , নগদ অর্থ রেখে যাননি ! তিনি রেখে যান গাবার কিছু যমীন , মদীনায় ১১ টি ঘর , বসরায় ২ টি , কুফায় ১টি এবং মিসরে ১ টি ঘর , তার এ ঋণের কারণ ছিল তিনি তার নিকট কেউ আমানত রাখতে আসলে বলতেন আমি আমানত রাখি না , তোমার নিকট থেকে কর্জ বা ঋণ হিসেবে নিলাম। কেননা আমানত হিসেবে রাখলে হয়ত এটা আমার হাতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ’’। ( আমানতের খেয়ানত থেকে নিজেকে রক্ষার এমন দৃষ্টান্ত বর্তমানে বিরল )। এই আমানতদারীতার জন্যই আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) কে আমীনুল উম্মাহ বা জাতির বিশ্বস্ত লোক হিসেবে ডাকা হতো।  

 

আমানতের খিয়ানত মুনাফিকের আলামত :- সমাজ জীবনে চলতে গিয়ে অনেক মানুষ কপটতার আশ্রয় নেয়। আর মানব সমাজের এসমস্ত কপট তথা মুনাফিকদের চিহ্নিত করতে কিছু আলামত রাসূল (সাঃ) বর্ণনা করেছেন , সেগুলোর মধ্যে আমানতের খিয়ানত অন্যতম। যেমন:- বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীস তার প্রমাণ – عن أبى هريرة رضـ قال قال رسو الله صلى الله عليه وسلم آية المنافق ثلاثة ، إذا حدث كذب وإذا وعد أخلف و إذا أؤتمن خان و فى رواية وإن صام وصلى و زعم أنه مسلم “ আবুহুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ)বলেছেন মুনাফিকের আলামত তিনটি – যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে ,কারো নিকট যখন প্রতিশ্রুতি দেয় উহা ভঙ্গ করে এবং কেউ আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে । অন্য বর্ণনায় আছে যদিও সে সিয়াম পালনকরে , সালাত আদায় করে এবং ধারণা করে সে নিজে একজন মুসলিম ’’ । বুখারী ও মুসলিমে অন্য বর্ণনায় মুনাফিকের আলামত চারটির উল্লেখ আছে , রাসূল (সাঃ) বলেন চারটি অভ্যাস যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে নির্ভেজাল মুনাফিক , তবে যার মধ্যে একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি অভ্যাস থাকলো যতক্ষণ পর্যন্ত না উহা বর্জন না করে , উপরোক্ত তিনটি সহ চতুর্থটি হলো و إذا خاصم فجر – অর্থাৎ যখন সে তর্ক করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে বা সততা ও নৈতিকতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যায় ।


আমানতের খিয়ানতকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীরের ফোস্কার মত :- কিয়ামতের পূর্বে মানুষ এত বেশী পরিমাণে আমানতের খিয়ানত কারী হবে যে , আমানতের মত এমন গুরু বোঝা বহনের যোগ্যতা মানুষের থাকবে না । কেউ কোন জিনিস আমানত রাখতে ইচ্ছে হলে আমানত দার ব্যক্তি খুজে পাবে না । কারণ আমনতকে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তুলে নিবেন। এমনকি মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে বেশী আমানতদার মনে করবে বাস্তবে তার মধ্যে আমানতদারীর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। যেমন কারো পা আগুনে পুড়ে গিয়ে ফোস্কা পড়ে গেলে দূর থেকে মনে হয় এর ভিতরে অনেক কিছু আছে ,বাস্তবে ফোস্কার ভিতরে খালি জায়গা । এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে – عن حذيفة بن اليمن رضـ قال حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حديثين قد رأيت أحدهما و أنا أنتظر الآخر – حدثنا أن الأمانة فى جزر قلوب الرجال ثم نزل القرآن فعلموا من القرآن و علموا من السنة ثم حدثنا عن رفع الأمانة فقال ينام الرجل النومة فتقبض الأمانة من قلبه فيظل أثرها مثل الوكت ثم ينام النومة فتقبض الأمانة من قلبه فيظل أثرها مثل أثر المجل كجمر دحرجتهعلى رجلك فنفط فتراه منتبرا و ليس فيه شيئ ثم أخذ حصاة فدحرجتها على رجله فيصبح الناس يتبايعون فلا يكاد أحد يؤدى الأمانة حتى يقال أن فى بنى فلان رجلا أمينا حتى يقال للرجل ماأجلده ماأظرفه ماأعقله و ما فى قلبه مثقال حبة من خردل من الإيمان - “ হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) আমাদের সামনে দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন তার একটি আমি দেখেছি আর অপরটির জন্য অপেক্ষায় আছি - প্রতমত মানুষের অন্তরে আমানতকে নাযিল করা হলো - তারা ক্বুরআন ও হাদীস জানল । এরপর তিনি আমনত তুলে নেয়া সম্পর্কে আমাদেরকে বলেন – মানুষ চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী ঘুমিয়ে যাবে , অতপর তার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমানতকে তুলে নেয়া হবে , এর পর তার মধ্যে দাগের ন্যায় একটি ক্ষীণ প্রভাব অবশিষ্ট থাকবে । সে পুনরায় স্বাভাবিক অভ্যাস অনুযায়ী ঘুমিয়ে যাবে , অতপর তার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমানতের বাকী প্রভাবটুকুও তুলে নেয়া হবে , এর পর অন্তরে ফোস্কার মত একটি চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে , যেমন তুমি তোমার পায়ে একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ রেখেছ এবং তাতে চামড়া পুড়ে ফোস্কার মত সৃষ্টি হয় , অতপর বাহ্যত স্থানটি দেখতে ফোলা দেখাবে কিন্তু এর মধ্যে কিছুই নেই । বর্ণনাকারী বলেন – অতপর রাসূল (সাঃ) কাঁকড় ঊঠিয়ে নিজের পায়ে মারলেন । অতপর লোকজন বেচা-কেনায় লিপ্ত হবে , তাদের মধ্যে আমানতের হিফাজত কারী একটি লোকও খুজে পাওয়া যাবে না , এমনকি বলা হবে অমুক বংশে একজন বিশ্বস্ত লোক রয়েছে । এমনকি লোকটিকে বলা হবে সে কত হুশিয়ার ও চালাক এবং কত বুদ্ধিমান , অথচ তার অন্তরে সরিষার বীজ পরিমাণও ঈমান থাকবে না ’’ । 


ইহুদী ধর্ম মতে – মূর্খ ও ধর্মহীনদের সম্পদ আত্মসাৎ করলে কোন দোষ নেই ! অথচ এই ইহুদীদের সম্পর্কে পবিত্র ক্বুরআনে বলা হয়েছে - وَمِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنطَارٍ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ وَمِنْهُم مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ بِدِينَارٍ لَّا يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ إِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَائِمًا ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّـهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ- بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ - إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّـهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَـٰئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّـهُ وَلَا 

يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ – “কোন কোন আহলে কিতাব এমনও রয়েছে, তোমরা যদি তাদের কাছে বহু ধন-সম্পদ আমানত রাখ, তাহলেও তা তোমাদের যথারীতি পরিশোধ করবে। আর তাদের মধ্যে অনেক এমনও রয়েছে যারা একটি দীনার গচ্ছিত রাখলেও ফেরত দেবে না-যে পর্যন্ত না তুমি তার মাথার উপর দাঁড়াতে পারবে। এটা এজন্য যে, তারা বলে রেখেছে যে, উম্মীদের অধিকার বিনষ্ট করাতে আমাদের কোন পাপ নেই (ইহুদীদের বিশ্বাস মতে আরবরা উম্মী বা মূর্খ ও ধর্মহীন কাজেই আরবদের অর্থ আত্মসাৎ ইহুদীদের জন্য বৈধ এবং বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই স্বাধীন ফিলিস্তিনী আরবভূমি ১৯৪৮ সাল থেকে অধ্যাবধি ইসরইলী অনারব গোষ্ঠী জবর দখল করে রেখেছে )। আর তারা আল্লাহ সম্পর্কে জেনে শুনেই মিথ্যা বলে। যে লোক নিজ প্রতিজ্ঞা ( আমানত ফেরত দান ) পূরণ করবে এং পরহেজগার হবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন। যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে, (ইহুদীগণ রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান ও আমানতের হিফাজত করার অঙ্গীকার করেছিল , তারা উহা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করে তুচ্ছ পার্থিব সম্পদ অর্জন করে এজন্য ) আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব ’’ (সূরা আলে ইমরান-৭৫-৭৭)। 


পরিশিষ্ট :- আমানত রক্ষা করা মুমিনের গুণাবলীর অন্যতম । মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন - وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ - “এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে ’’ (সূরা আল মুমিনুন -৮ ) । এই জন্য প্রতিটি মানুষের উচিত তার উপর অর্পিত দায়িত্বের আমানত যথাযথ হিফাজত করা । দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা সসস্ত্র বাহিনীর উপর আমানত , দেশের পরীসীমা বজায় রাখা বর্ডার গার্ডের উপর সরকারের আমানত , তেমনি দেশের আভ্যন্তরীন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সরকার কর্তৃক অর্পিত আমানত , এমনি ভাবে প্রত্যেকের উপর অর্পিত দায়িত্বটাই হলো আমানত , স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রীরা তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে কারণ উহা তাদের স্বামীর আমানত । এই আমানতের খিয়ানত করলে আল্লাহর নিকট কঠিন শাস্তি পেতে হবে । আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে এক একজন আমানতদার হিসেবে কবুল করুন , (আ-মীন) । 

     ( এল এফ ই, জাহরা – কুয়েত, তারিখ ০৫/১১/২০১৬)

~v``````