জিজ্ঞাসা-১২৮৩৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সম্মানিত শায়েখ ফারাজ ও ফাইজান এই দুটি নামের অর্থ জানতে চাই।
তারিখ: ১২/১১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নেছার উদ্দিন শেরপুর থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যে কোন শব্দের অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, শব্দটির বানানের ভিন্নতার কারণে অর্থের মাঝেও পার্থক্য সূচিত হয়। সকল ভাষার ক্ষেত্রেই এই বিধানটি সমভাবে প্রযোজ্য।
সেই মোতাবেক শব্দস্থ বর্ণের পার্থক্য বিবেচনায় আপনার প্রদত্ত "ফারাজ" নামটির সম্ভাব্য অর্থগুলো নিম্নরূপ -
(১) فرض : (ফারয/ ফারদ্ব) একটি আরবী শব্দ। এটি বাবে ضَرَبَ يَضْرِب থেকে নিষ্পন্ন হলে তার অর্থ হবে -আবশ্যক, অপরিহার্য, অবধারিত, ইত্যাদি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
{ سُورَةٌ أَنزَلۡنَٰهَا وَفَرَضۡنَٰهَا وَأَنزَلۡنَا فِيهَآ ءَايَٰتِۭ بَيِّنَٰتٖ لَّعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ }
অর্থাৎ, এটা একটি সূরা, এটা আমি অবতীর্ণ করেছি এবং এর বিধানকে আমি অবশ্যপালনীয় করেছি, আর এতে আমি নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা নূর- ১)
উনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের "ফরাজী আন্দোলনে"র কথা কারোরই অজানা নয়। ইসলামী শরীয়তের অবশ্যপালনীয় ফরজ বিধানগুলোকে বাস্তবায়নের মহান আদর্শকে লালন করে হাজী শরিয়তুল্লাহ (রাহি.) এক বৈপ্লবিক উত্থানের সূচনা করেন। কালের অববাহিকায় সেই আন্দোলনের ধারা বহু শাখা প্রশাখায় বিস্তৃতি লাভ করে।
(২) তবে শব্দটি যদি বাবে كَرُمَ يَكْرُمُ থেকে নির্গত হয়ে থাকে, তাহলে তার অর্থ হবে- বয়োজ্যেষ্ঠ, বর্ষীয়ান, বয়সের ভারে ন্যুব্জ ইত্যাদি।
আল কুরআনে বনী ইসরাঈলের চমকপ্রদ কাহিনি বর্ণনার ধারাবাহিকতায় এই অর্থে শব্দটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
{ قَالَ إِنَّهُۥ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٞ لَّا فَارِضٞ وَلَا بِكۡرٌ عَوَانُۢ بَيۡنَ ذَٰلِكَۖ فَٱفۡعَلُواْ مَا تُؤۡمَرُونَ }
অর্থাৎ ‘ মূসা বললেন, ‘আল্লাহ্ বলছেন, সেটা এমন গাভী যা অতি বয়োবৃদ্ধও নয়, আবার অল্পবয়স্ক শাবকও নয়, বরং তা মধ্যবয়সী। অতএব, তোমাদেরকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পালন কর’। ( সূরা বাকারা- ৬৮)
(৩) فرج : শব্দটি বিদীর্ণতা, ফাটল, লজ্জাস্থানসহ একাধিক অর্থ বহন করে। তবে তার আশাব্যঞ্জক ইতিবাচক অর্থ হলো- আরাম, স্বস্তি , প্রশান্তি, আনন্দ, কষ্টের উপশম, দুশ্চিন্তা লাঘব, প্রতিকূলতার অবসান প্রভৃতি।
সহীহ বুখারীর সামাজিক সম্প্রীতিমূলক একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
قال رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ".
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি তার ভাইয়ের দুশ্চিন্তা লাঘব করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করে দিবেন। (সহিহ বুখারী-২৪৪২)
(৪) فرز : শব্দটির অর্থ পৃথক, আলাদা, স্বতন্ত্র, বাছাইকৃত। ইত্যাদি।
ফাইযান শব্দের বিশ্লেষন ঃ
আরবী فَيْضاَن শব্দটি বাবে ضَرَبَ يَضْرِبُ এর মাসদার বা ক্রিয়ামূল।মূল হরফ হলো, ف ي ض। তার জিনস হলো أجوف يائي । শব্দটির অর্থ হলো- প্রাচুর্য, সমৃদ্ধি, প্রাবল্য, আধিক্য, প্লাবন, বন্যা, তোড়, ফোয়ারা ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে শব্দটি ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
{ وَإِذَا سَمِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَى ٱلرَّسُولِ تَرَىٰٓ أَعۡيُنَهُمۡ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُواْ مِنَ ٱلۡحَقِّۖ يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱكۡتُبۡنَا مَعَ ٱلشَّٰهِدِينَ }
অর্থাৎ, আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা যখন তারা শুনে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য আপনি তাদের চোখ অশ্রু বিগলিত দেখবেন । তারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি; কাজেই আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যবহদের তালিকাভুক্ত করুন।’ ( সূরা মায়িদা - ৮৩)
সারকথা হলো,
আরবী বানানভেদে "ফারাজ" শব্দটির অর্থ হতে পারে যথাক্রমে- অবধারিত অমোঘ বিধান, বর্ষীয়ান, প্রশান্তিদায়ক, বাছাইকৃত ইত্যাদি। তবে তৃতীয় অর্থটি অধিকতর অর্থবহ ও তাৎপর্যসমৃদ্ধ।
আর "ফাইযান" শব্দের অর্থ হলো প্রবহমান জলধারা ফোয়ারা বা আধিক্য।
والله اعلم بالصواب