আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

নির্বাচিত মাসয়ালা-০৭: মোবাইল ফোন সম্পর্কীয় প্রয়োজনীয় মাসায়েল

No Comments

 




মোবাইল ফোন সম্পর্কীয় প্রয়োজনীয় মাসায়েল- ১

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

মোবাইল ফোন বর্তমান সময়ের একটি নতুন আবিষ্কার। এর কিছু ভালো দিক যেমন আছে তেমনি ক্ষতির দিকও রয়েছে। আর দশটা প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো এরও প্রয়োজন মাফিক ব্যবহার আপত্তিকর নয়, কিন্তু এখন যেভাবে তা ব্যবহৃত হচ্ছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

মোবাইলের প্রয়োজনীয় দিকগুলোর তুলনায় এর যে ব্যাপক আর্থিক ও নৈতিক ক্ষতির দিক অভিজ্ঞতায় এসে গেছে, বিশেষত এলম চর্চায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য এর যে ক্ষতিকর প্রভাব, তার তালিকা মোটেই ছোটো-খাটো নয়। তবে বাস্তবতা এই যে, মোবাইলের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নও আসছে। এজন্য এসব প্রশ্ন একত্র করে শরীয়তের দলীল ও নীতিমালার আলোকে তার জওয়াব প্রস্ত্তত করা এবং পাঠকবৃন্দের খেদমতে তা পেশ করা একটি প্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে হয়েছে। এ অনুভূতি থেকেই বর্তমান প্রবন্ধটি তৈরি হল। এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হচ্ছে :

১-  বেশ কিছু মাসায়িলে হাদীস, তাফসীর ও ফিকহের বিভিন্ন গ্রন্থের উদ্ধৃতি সংযুক্ত হয়েছে। এগুলো মূলত কুরআন, হাদীস ও ফিকহে ইসলামীর ওইসব নীতিমালার উদ্ধৃতি, যার আলোকে এই সমাধানগুলো পেশ করা হয়েছে। কেননা, উল্লেখিত প্রাচীন উদ্ধৃতিগুলোতে স্পষ্টভাবে মোবাইল ফোনের উল্লেখ যে থাকবে না তা তো বলাই বাহুল্য।

২- কিছু মাসায়িল এমনও আছে, যেগুলো অনেকের কাছেই স্পষ্ট বলে মনে হবে। তারপরও ওই মাসআলাগুলো এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, এসব বিষয়েও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন এসেছে। আর সকল বিষয় সবার সমানভাবে জানা থাকবে-এটাও অপরিহার্য নয়।

এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর ওই মাসয়িলগুলো বিশেষ কোনো বিন্যাস ছাড়াই পেশ করছি। আলোচনা সহজ করার উদ্দেশ্যে প্রশ্নোত্তরের আঙ্গিকটিই বহাল রাখা হয়েছে।

১. ভিডিও ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ক্রয় বিক্রয়

প্রশ্ন :

মোবাইল ফোনেরই আধুনিক সংস্করণ। কিন্তু এ আবিষ্কার শুধু কথোপকথন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং মোবাইলের সাথে আজকাল গচ৩-৪, ক্যামেরা এবং ভিডিও, ইন্টারনেটসহ সবধরনের সুবিধা রয়েছে। মোবাইলের এ সুবিধাগুলো আজকাল ভাল-খারাপ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার হতে দেখা যায়। তাই প্রশ্ন দাঁড়ায় এ সকল সুবিধাযুক্ত মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় জায়েয কি না?

উত্তর :

ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। তবে অবৈধ কোনো কাজে তা ব্যবহার করা জায়েয নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯১, আল-বাহরুররায়েক ৮/২০২, জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৪৬, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ ১/৩৫৯

 ২ সিম হস্তান্তর

প্রশ্ন :

সিম ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করা জরুরি। এখন কোনো ব্যক্তি নিজ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সিম ক্রয় করে কোম্পানীর অনুমোদন এবং পুনঃ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া অন্য ব্যক্তির কাছে সিম বিক্রি করা বৈধ কি না?

উত্তর :

বৈধ।

৩. চোরাই সেট ক্রয়-বিক্রয়

প্রশ্ন :

মোবাইলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে মোবাইল চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে। অনেকের মোবাইল হারিয়েও যায়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের সেট ক্রয়-বিক্রয়ের হুকুম কী?

উত্তর :

ছিনতাইকৃত বা চোরাই সেট জেনে শুনে ক্রয় করা জায়েয নেই। কেউ ক্রয় করলেও এ সেট ক্রেতার জন্য ব্যবহার করা বৈধ হবে না। বরং মালিক জানা থাকলে মূল মালিকের নিকট পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে ক্রেতাবিক্রেতা থেকে মূল্য ফেরত নিতে পারবে। মালিকের সন্ধান পাওয়া না গেলে যার থেকে কিনেছে তাকে দিয়ে মূল্য ফেরত নিতে পারবে। আর কারো কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া সেট হস্তগত হলে কী করতে হবে তা তো সবারই জানা আছে। এর ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না। -আল-মুহীতুল বুরহানী ৭/৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৫, খানিয়া ৩/৪১৮, ফাতহুল কাদীর ৫/১৬৯

৪ ডাউন লোডিং ব্যবসা

প্রশ্ন :

মোবাইলে রিংটোন, মিউজিক, গান, ভিডিও-ছবি ইত্যাদি ডাউন লোড করার প্রবণতা বেড়েছে। এজন্য অনেক সার্ভিসিং সেন্টারে পৃথক ব্যবস্থাপনা থাকে। জানতে চাই ডাউন লোড করে বিনিময় নেওয়া এবং এ ব্যবসা করা জায়েয কি না?

উত্তর :

মিউজিক সংবলিত গান, প্রচলিত অশ্লীল ছবির ভিডিও ফিল্ম, অবৈধ চিত্র ইত্যাদির ডাউনলোড ব্যবসা নাজায়েয। কারণ এতে নিজের তো গুনাহ হয়ই, উপরন্তু অন্যের নিকট গুনাহের উপকরণ সরবরাহ করা হয়। তাই এ ধরনের ডাউনলোড থেকে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে না। হাঁ, কোনো বৈধ চিত্র, মিউজিক ছাড়া রিংটোন, বাদ্যহীন গজল ইত্যাদি ডাউনলোড করা জায়েয এবং এ থেকে অর্জিত টাকাও হালাল।

-সহীহ বুখারী ১/২৯৮, জামে তিরমিযী ১/২৪১, সহীহ মুসলিম ২১৯, শরহে নববী ২/২৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫, আল-বাহরুররায়েক ৮/১৯

৫ স্ক্র্যাচকার্ডের নির্ধারিত মূল্য থেকে কম/বেশীতে ক্রয়-বিক্রয়

প্রশ্ন :

স্ক্র্যাচকার্ডের গায়ের মূল্যের (ঋধপব ঠধষঁব) এর চেয়ে কম-বেশীতে বেচা-কেনা করা জায়েয আছে কি না? যেমন ১০০ টাকার কার্ড অনেক দোকানে কোনো কোনো সময় দুই তিন টাকা বেশী নেয়। আবার কোন কোন মোবাইল কার্ডে ৪/৫ টাকা কমও রাখে। এখন ১০০ টাকার পরিবর্তে কম-বেশী করে লেনদেন করা কি জায়েয, এটি কি সুদ নয়?

উত্তর :

স্ক্র্যাচকার্ডের গায়ের মূল্য একটি নির্ধারিত পরিমাণ টেলিযোগাযোগ সুবিধা তথা আউটগোয়িং সেবা প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যান্য সেবার মত এটিও বিক্রিয়যোগ্য সেবা। সুতরাং কার্ডের (ঋধপব ঠধষঁব) গায়ের দাম যেহেতু টাকা নয় তাই কম-বেশীতে বিক্রি করা সুদ নয়। ১০০ টাকার কার্ড কম-বেশীতে ক্রয়-বিক্রয়কে সুদ মনে করা ভুল। তবে এখানে আরেকটি বিষয় আছে, তা হল, কোম্পানী থেকে পণ্যের বা সেবার মূল্য নির্ধারিত করে দিলে ঐ নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করা নিয়ম। কমবেশি করা ঠিক নয়। কেননা এতে বাজারের স্বাভাবিকতা বাঁধাগ্রস্ত হয়।

-ফাতহুল কাদীর ৬/১৫৯; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৪০০

৬ ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা ও গ্রাহক থেকে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের বেশী গ্রহণ করা

প্রশ্ন :

ঋষবীর খড়ধফ (ফ্লেক্সিলোড) করতে অধিকাংশ দোকানে অতিরিক্ত টাকা নেয় না। যত টাকার ফ্লেক্সি করা হয় তত টাকা নেয়। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহক থেকে ২/৪ টাকা বেশি রাখে। এটা জায়েয কি না? এখানেও অতিরিক্ত নেওয়াকে কেউ কেউ সুদ মনে করে। এছাড়া দোকানীকে কোম্পানি ফ্লেক্সির উপর ১০% কমিশন দিয়ে থাকে। যেমন- ৯০০০ টাকা ফ্লেক্সি বাবদ জমা দিলে তার নামে ১০,০০০/- টাকার ফ্লেক্সি সুবিধা দেওয়া হয়। এটাকেও কেউ কেউ ৯০০০/-এর পরিবর্তে ১০,০০০/- টাকার লেনদেন মনে করে। বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর :

ফ্লেক্সিলোডে যত টাকার ফ্লেক্সি করা হচ্ছে এর চেয়ে কম-বেশীতে লেনদেন করার হুকুম কার্ডের মতই। এতেও সুদ নেই। নির্ধারিত অংকের ফ্লেক্সি অর্থাৎ ঐ পরিমাণ টেলি যোগাযোগ আউটগোয়িং সেবা, যা বিক্রয়যোগ্য। তাই এটা নির্ধারিত মূল্যের বেশীতে লেনদেন করা সুদ নয়। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে লোডকারী তথা দোকানীকে যেহেতু কমিশন দেওয়া হয় এবং গ্রাহক থেকে এবাবদ অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া কোম্পানি কর্তৃক নিষিদ্ধ তাই নির্ধারিত মূল্যের বেশী নেওয়া ঠিত হবে নাএকইভাবে ফ্লেক্সিকারী দোকানীকে দেওয়া কমিশন তার জন্য বৈধ। এখানেও সুদের কিছুই নেই। বরং এ কারবারের ব্যাখ্যা হল, ১০ হাজার টাকার সেবা কোম্পানি তার ডিলারদের নিকট নয় হাজার টাকায় বিক্রি করছে। -প্রাগুক্ত

দোকানগুলোর ফোন ব্যবসা

৭ কল-মিনিটের হিসাব কীভাবে হবে

প্রশ্ন :

সিটিসেল মোবাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেরই জানা যে, সিটিসেলের মিনিট গণনা শুরু হয় ডায়ালের পর থেকেই। এখন ৭-৮ টা রিং হওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ করলে রিসিভ করার আগেই প্রায় এক মিনিট চলে যায়। অনেক ব্যবসায়ীকেই দোকানে সিটিসেল ফোন রাখতে দেখা যায়। তারা এই এক মিনিটের বাড়তি সুবিধা ভোগ করে। অর্থাৎ এই অগ্রীম ১ মিনিটেরও বিল রাখে। জানতে চাই, রিসিভের আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয কি না? এক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তর :

গ্রাহক থেকে কল রিসিভ হওয়ার আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয হবে না। কারণ এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের সাথে চুক্তি হল, রিসিভের পর থেকে যত মিনিটের কথা হবে তার বিল নিবে। সুতরাং রিসিভের আগের মিনিটের বিল নেওয়া জায়েয হবে না। এজন্য সিটিসেল মোবাইল দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাইলে হয়ত পৃথক মিনিটমাইন্ডার রাখতে হবে যা দ্বারা রিসিভ করার সময় থেকে মিনিটের হিসাব করা হবে। এছাড়া কল ডিউরিশন অপশন থেকেও শেষ কলের সময় জেনে নেওয়া যেতে পারে। আর এখন সিটিসেল অপারেটরের পক্ষ থেকেই কল শেষে কলের মোট সময় সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। তাই সে অনুপাতেও বিল নেওয়া সহজ।

৮ পরবর্তী মিনিটের ১-২ সেকেন্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া

প্রশ্ন :

সাধারণত ফোন দোকানীরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় মিনিট শুরু হলেই এমনকি সেকেন্ড পরিমাণ কথা হলেও পরবর্তী পুরো মিনিটের বিল করে। মোবাইল কোম্পানী থেকে পাল্স সুবিধা থাকলেও তার হিসাব করে না। এটা জায়েয কিনা? এক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর :

ফোন ব্যবসায়ীর জন্য কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত পাল্স সুবিধা গ্রাহকদের দেওয়া জরুরি নয়। বরং পালস হিসাব না করতে চাইলে গ্রাহককে পূর্ব থেকেই অবহিত করবে যে, এখানে পরবর্তী মিনিটের এক সেকেন্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া হয়। প্রয়োজনে গ্রাহকের দৃষ্টি পড়ে এভাবে দোকানের কোথাও লিখে রাখা যেতে পারে। তবে এব্যাপারে পরামর্শ হল, পরবর্তী মিনিটের ২/৩ সেকেন্ড হয়ে কথা শেষ হয়ে গেলে পুরো মিনিটের বিল না নিয়ে আধা মিনিটের বিল নেওয়া যেতে পারে। এ প্রস্তাবের ওপর আমল উভয় পক্ষের জন্য ভাল।

৯ ভুল নাম্বারে গেলে এর বিল কার জিম্মায়

প্রশ্ন :

ফোন দোকানে ভুল নাম্বারে গেলেও গ্রাহক থেকে বিল আদায় করা হয়ে থাকে। আগে টিএন্ডটির এ্যানালগ লাইনে সঠিক নাম্বারে রিং করলেও ভুল নাম্বারে চলে যেত। এজন্য ফোন দোকানগুলোতে এ নিয়ম চলে আসছে যে, ভুল নাম্বারে গেলেও বিল দিতে হবে। সেই এ্যানালগ নাম্বার এখন আর নেই। মোবাইল করার পর ভুল নাম্বারে ডায়াল হলে এর বিল কে দিবে? এ বিল কি গ্রাহক দিতে বাধ্য?

উত্তর :

মোবাইলে যে নাম্বারে রিং করা হবে সে নাম্বারেই যাবে। সঠিক নাম্বারে রিং করার পরও ভুল নাম্বারে যাওয়ার অবকাশ নেই। তাই ভুল নাম্বারে চলে গেলে বুঝতে হবে নিশ্চয় ভুল নাম্বারে ডায়াল করা হয়েছে। এখন দেখতে হবে এ ভুল কার। দোকানী ভুলে একটির পরিবর্তে অন্যটি টিপেছে, নাকি গ্রাহক নাম্বার দিতে ভুল করেছে? গ্রাহকের ভুল হলেই কেবল এর ক্ষতিপূরণ তার ওপর আসবে। আর দোকানীর ভুল হলে সেই ভুলের ক্ষতি তারই। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না।

১০ কল রিসিভের জন্য বিনিময় নেওয়া

প্রশ্ন :

গ্রামেগঞ্জে অনেকের হাতে মোবাইল থাকে না। অনেকের হাতে থাকলেও টিএন্ডটি ইনকামিং নেই। তাই বিদেশ থেকে কিংবা অন্য কোথাও থেকে দোকানীর মোবাইলে কল আসলে তার কিছু খরচ না হলেও সে গ্রাহক থেকে কিছু টাকা নিয়ে থাকে। এটাকা নেওয়া কি জায়েয?

উত্তর :

হাঁ, এ বাবদ বিনিময় নেওয়া জায়েয। বিল না কাটলেও তার সেট ও লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সময় ব্যয় হচ্ছে। তাই সে এর ন্যায্য বিনিময় নিতেই পারে। দোকানী এ সেবা ফ্রি দিতে বাধ্য নয়।

১১ ভিওআইপি সংযোগ নিয়ে বিদেশে কম খরচে কথা বলা

প্রশ্ন :

এক ধরনের মেশিন দেশীয় টিএন্ডটি এবং মোবাইলের সাথে সংযোগ করলে সরাসরি বিদেশে অনেক কম খরচে কথা বলা যায়। কিন্তু এটি সরকার অনুমোদিত নয়। কেউ কেউ অবৈধভাবে এর ব্যবহার করে থাকে। এ ব্যবসা জায়েয কি না? এ ধরনের সুবিধাযুক্ত ফোনের গ্রাহকদের ফোন বা মোবাইল ব্যবহার করার কী হুকুম?

উত্তর :

এ ধরনের লাইনে কথা বলা বৈধ হবে না। কারণ, এতে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ লাইন ব্যবহার করা হয়। সরকারের আদায়যোগ্য ফি অনাদায় থাকে এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ব্যবসায় সহায়তাও করা হয়। এছাড়া এতে অনেকগুলো টিএন্ডটি চোরা লাইনও থাকে। এমনটি হলে তো এর অবৈধতা আরো প্রকট।

ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা এতে কোনো চোরা লাইন ব্যবহার করে থাকলে এ বাবদ উপার্জিত অর্থ হালাল হবে না। তবে চোরা লাইন ব্যবহার না করলে সরকারী নিয়ম ভঙ্গ করে এ কারবার করার জন্য গুনাহ হবে। কিন্তু এ কারণে কারবার থেকে উপার্জিত অর্থ অবৈধ গণ্য হবে না।

১২ মিউজিক, গানের কলির রিং টোন

প্রশ্ন :

মোবাইলের রিং টোন হিসাবে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক বা গানের কলি ইত্যাদি ব্যবহার করার হুকুম কী?

উত্তর :

মিউজিক, বাদ্য ইত্যাদি গানের সাথে শোনা তো কবীরা গুনাহ। গান ছাড়া পৃথকভাবে শোনাও গুনাহ। তাই যেকোনো ধরনের বাদ্য, মিউজিক টোন রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করাও গুনাহ। তদ্রূপ গানের কলি বা অংশবিশেষও রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা নাজায়েয। প্রকাশ থাকে যে, মিউজিক বা গান রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করলে নিজে শোনার গুনাহ তো আছেই, সাথে সাথে যে স্থানে মোবাইলটি ব্যবহার হচ্ছে তার আশপাশের লোকদেরকে বাদ্য, গান শোনানোর গুনাহও হয়। এছাড়া এমন রিংটোন মসজিদে বেজে উঠলে মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করা হয়। তাই রিংটোন হিসাবে এর ব্যবহার নিতান্তই মন্দকাজ ও গুনাহ। সেজন্যই গান বা মিউজিক ছাড়া অন্যান্য শব্দ রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

-সূরা লোকমান-৬, সহীহ বুখারী ২/৮৩৭, জামে তিরমিযী ১/২৪১; সুনানে ইবনে মাজা ৩০০; আলগিনা ফিল-ইসলাম ৮৭; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৮২

১৩ ওয়েলকাম টিউন হিসাবে গানের ব্যবহার

প্রশ্ন :

কারো কাছে ডায়াল করার পর তার মোবাইল বা ফোনে রিং হচ্ছে কিনা এটি বুঝানোর জন্য যে টোন বা শব্দ ব্যবহার করা হয় তাকে ওয়েলকাম টিউন বলে। এখন এই টোনের পরিবর্তে গান ডাউন লোড করা যায়। কেউ ডাউন লোড করলে তাকে যে ব্যক্তি কল করবে সে রিং টোনের পরিবর্তে ঐ গান বা ডাউন লোডকৃত আওয়াজ শুনতে পাবে। এতে ডাউন লোডকারীর প্রত্যেক মাসে ২০/৩০ টাকা করে খরচ হয়। এটি জায়েয কি না?

উত্তর :

ওয়েলকাম টিউনে গান বা মিউজিক ডাউন লোড করলে এই নাম্বারের সাথে যোগাযোগকারী সকলকে বাধ্য হয়ে গান বা মিউজিক শুনতে হবে। এতে অন্যকে গান শোনানো তথা গুনাহের কাজে বাধ্য করার গুনাহ হয়। তাই এটিও নাজায়েয। -সূরা লোকমান ৬, সহীহ বুখারী ২/৮৩৭, ফাতহুল কাদীর ৬/৪৮২, প্রাগুক্ত

১৪ ওয়েলকাম টিউন হিসাবে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের ব্যবহার

প্রশ্ন :

গানের ব্যবহার যেহেতু নাজায়েয তাই অনেকেই এক্ষেত্রে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত, আযান ইত্যাদি ডাউনলোড করে থাকে। ধারণা করা হয় যে, এতে গুনাহ তো হবেই না, বরং আমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তি কিছু সময় হলেও কুরআনের তিলাওয়াত শুনছে। বাহ্যত এটাকে ভাল মনে করা হয়। আযানের শব্দ বা জিকর শুনছে। এতে শ্রোতাকে সওয়াবের বিষয় শোনানো হচ্ছে। এদৃষ্টিতে একে অনেকেই ভাল বলে। জানতে চাই ওয়েলকাম টিউন হিসাবে কুরআন, জিকির, আযানের ব্যবহারের হুকুম কী?

উত্তর :

নিঃসন্দেহে প্রশ্নোক্ত উদ্দেশ্যেটি ভালো। রিংটোন, মিউজিক বা গান না শুনিয়ে সেস্থানে কুরআনের তিলাওয়াত বা জিকর, আযান ইত্যাদি শোনানোর ব্যবস্থা করা অবশ্যই একটি প্রশংসণীয় কাজ। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এটি ভাল মনে হলেও এক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহারে একাধিক খারাপ দিক রয়েছে। যার একটিই এ থেকে বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট। যেমন-

(১) ওয়েলকাম টিউন-এর ব্যবহার হয় যার কাছে কল করা হয়েছে তার সাথে সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে কি না এটি বুঝার জন্যই। কারো কাছে কল করার পর রিংটোন পেলে বুঝা যায় যে, তার মোবাইলে রিং হচ্ছে। কল করার পর বিজিটোন আসলে বুঝা যায় সে এখনও অন্যের সাথে কথা বলছে। আবার ফোন বন্ধ থাকলেও এক ধরনের টোন পাওয়া যায়। মোটকথা কাঙ্ক্ষিত ফোনটিতে সংযোগ লাগার জন্য যে সংকেত-টোন রয়েছে সেস্থানে কুরআনের তিলাওয়াত, আযান ইত্যাদি ফিট করলে এই তিলাওয়াত ও আযানও ফোনকারীকে প্রথমে ঐ টোনের কাজ দিবে। অর্থাৎ ফোনকারী বুঝবে যে, কাঙ্ক্ষিত ফোনটিতে সংযোগ পেয়েছে, রিং হচ্ছে। আচ্ছা, বলুন তো আল্লাহর মহান কালাম কি এই কাজে ব্যবহার করা উচিত? এই কাজে তিলাওয়াতের ব্যবহার কি অপাত্রে কুরআনের ব্যবহার নয়? আযান যা শরীয়তের একটি মহান নিদর্শন ও জিকর, একে এই কাজে ব্যবহার করা কি সমীচীন?

(২) কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে কল করার পর রিংটোন হিসাবে ফোনকারীর কানে কুরআনের তিলাওয়াত ভেসে আসছে, হয়ত রিসিভের অপেক্ষার সাথে সাথে তিলাওয়াতও শুনছে। কিন্তু যার নাম্বারে ফোন করা হয়েছে সে তো তিলাওয়াত শুনতে পাচ্ছে না। বিধায় সে এমন সময় রিসিভ করল যখন তিলাওয়াতের কোন শব্দের মাঝে কিংবা এমন স্থানে রিসিভ করা হল যখন থেমে গেলে আয়াতের অর্থই বদলে যায়। তদ্রূপ আযান ডাউনলোড করলে কেউ যদি লা-ইলাহা পর্যন্ত উচ্চারিত হওয়ার পর ফোন রিসিভ করে ফেলে তাহলে অর্থ দাঁড়ায়- কোন মাবুদ নেই। ফলে অর্থের বিকৃতি ঘটে। এই সমস্যার কারণেও এস্থানে এগুলোর ব্যবহার করা যাবে না।

(৩) এছাড়া বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যে থেকে ফোনে কথা বলার সময় কানে তিলাওয়াতের ধ্বনি আসলেও তা মনোযোগ সহকারে শোনা হয় না। ফলে তিলাওয়াত শোনার হক আদায় হয় না। তাই ওয়েলকাম টিউন হিসাবে কুরআন-তিলাওয়াত বা আযান কিংবা যিকরের ব্যবহার করা যাবে না। এর জন্য স্বাভাবিক রিংটোনই উপযোগী।

-আত-তিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন- নববী ৪৬, হককুত্তিলাওয়া-হুসাইনী শাইখ উসমান-৪০১, আলমগীরী ৫/৩১৫, রদ্দুল মুহতার ১/৫১৮, আল মুগনী ৪/৪৮২, আলাতে জাদীদাহ কী শরয়ী আহকাম- ১৭১

১৫ রিংটোন হিসাবে সালাম-এর ব্যবহার

প্রশ্ন :

অনেকে সালাম ডাউনলোড করে তা রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করে এটি জায়েয কিনা?

উত্তর :

হাঁ, এ ক্ষেত্রে সালামের ব্যবহার জায়েয। কারণ, শরীয়তে সালাম এর ব্যবহার দুভাবে এসেছে। একটি হল অভিবাদন হিসাবে সালামের ব্যবহার। দ্বিতীয়টি হল অনুমতি প্রার্থনামূলক সালাম। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার জন্য সালাম দেওয়া। মোবাইলের রিংটোন হিসেবে সালামের ব্যবহার এ প্রকারের সাথে কিছু মিল রয়েছে। রিংটোনের জন্য সালামের ব্যবহার না জায়েয নয়।

১৬ আযান, জিকর বা তিলাওয়াত রিংটোন হিসাবে ব্যবহার

প্রশ্ন :

অনেকে রিংটোন হিসাবে ঘণ্টা, বাজনা ইত্যাদির পরিবর্তে আযান, যিকর ও তিলাওয়াতের ব্যবহারকে পছন্দ করে। জানতে চাই এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো খারাপী আছে কি না?

উত্তর :

তিলাওয়াত, যিকর ও তাসবীহ সবকিছুই অতীব মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। আযান আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক তথা শিআরএগুলোর ব্যবহার একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। শরীয়তে এগুলোর ব্যবহার-ক্ষেত্র সুনির্ধারিত। মোবাইলের রিংটোন হিসাবে এগুলোর প্রয়োগ অপব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মোবাইলে রিং এসেছে, কেউ কথা বলতে চায় এই খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম ওহী, জিকর ও তাসবীহের ব্যবহার যে এগুলোর অপাত্রে ব্যবহার তা বলাই বাহুল্য।

ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রেতার জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলা, তদ্রূপ প্রহরী জাগ্রত আছে একথা বুঝানোর জন্য জোরে জোরে যিকর করাকেই ফিকহবিদগণ অপব্যবহার হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তাহলে মোবাইলে কল এসেছে এ খবর দেওয়ার জন্য এগুলোর ব্যবহার যে কেমন হবে তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। উপরন্তু রিংটোন হিসাবে এগুলোর ব্যবহারে আরো অন্যান্য শরয়ী খারাবী রয়েছে যেমন :

(ক) রিং আসলে কুরআনের তিলাওয়াত বেজে  উঠছে,  কিন্তু  অনেক  ক্ষেত্রে   ব্যস্ততার দরুণ তিলাওয়াতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করারই সুযোগ হয় না। তদ্রূপ কে রিং করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততা তো লেগেই থাকে এ কারণেও তিলাওয়াতের আদব রক্ষা করে শ্রবণ করা হয় না।

(খ) রিং আসলে যেহেতু রিসিভের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এটিই মূল উদ্দেশ্য থাকে তাই আয়াতের যেকোনো স্থানেই তিলাওয়াত চলতে থাক সে দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে রিসিভ করে ফেলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত অংশের বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।

(গ) মোবাইল নিয়ে টয়লেট কিংবা বাথরুমে প্রবেশের পর রিং আসলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম, যিকর ও আযান বেজে উঠবে। এতে এগুলোর পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। মোটকথা অনেক কারণেই তিলাওয়াত, আযান ও জিকরকে রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।

-আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন-ইমাম নববী ৪৬, হক্কুততিলাওয়া- হুসাইনী শাইখ উসমান ৪০১, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩১৫, আলমুগনী ৪/৪৮২, রদ্দুল মুহতার ১/৫১৮, ১/৫৪৬, আলাতে জাদীদা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ., আলকাফী ১/৩৭৬, আলআশবাহ ৩৫

রেকর্ড/ডাউনলোভ

১৭ মোবাইল মেমোরিতে কুরআন তিলাওয়াত ডাউনলোড করা

প্রশ্ন :

মোবাইল মেমোরী বা মেমোরী কার্ডে কুরআন তিলাওয়াত বা কোন যিকর ডাউনলোড করে রাখা জায়েয কিনা?

উত্তর :

মেমোরি কার্ড বা মোবাইল মেমোরিতে তিলাওয়াত ডাউনলোড বা রেকর্ড করা জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এর হুকুম অন্যান্য রেকর্ডারের মতই। তবে যখন তিলাওয়াত চালানো হবে তখন খুব মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। অন্য কাজে ব্যস্ত থেকে তিলাওয়াতের রেকর্ড ছেড়ে দেওয়া তিলাওয়াতের আদব পরিপন্থী কাজ।

১৮ কুরআন শরীফের সূরা বা পুরো কুরআন মোবাইলে ডাউনলোড করা

প্রশ্ন :

লিখিত কুরআন শরীফ বা তার অংশবিশেষ ডাউনলোড করে মেমোরিতে সংরক্ষণ করা যায়। আজকাল ইন্টারনেট থেকে অল্প খরচে পকেট কুরআন নামে পুরো কুরআন শরীফ মোবাইলে ডাউন লোড করা যায়। তদ্রূপ হাদীস শরীফও ডাউন লোড করা যায়। লিখিত কুরআন ডাইনলোড করা এবং মেমোরিতে সংরক্ষণ করা জায়েয কি না?

উত্তর :

হাঁ, লিখিত পূর্ণ কুরআন বা তার অংশ বিশেষ ডাউনলোড করে মেমোরিতে রেখে দেওয়া জায়েয। তবে কখনো তা স্ক্রিনে আনলে এর অসম্মানী না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। মেমোরিতে হেফাযত করা অবস্থায় মোবাইল ধরতে অযুর প্রয়োজন নেই। তেমনিভাবে স্ক্রিনে থাকা অবস্থায়ও মোবাইল বিনা অযুতে ধরা যাবে।

১৯ মোবাইলের স্ক্রিনে ছবি সেভ করে রাখা

প্রশ্ন :

মোবাইলের  স্ক্রিনে পুরুষ বা  মহিলার ছবি সেভ করে রাখার হুকুম কী?

উত্তর :

স্ক্রিনে ছবি সেভ করে রাখলে ছবির প্রদর্শনী হয় এবং ছবি খুলে রাখা হয়। যা রহমতের ফিরিশতার আগমন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। এছাড়া  শরীয়তে ছবির প্রকাশ ও প্রদর্শন নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, স্ক্রিনে মানুষ বা কোন প্রাণীর ছবি সেভ করে রাখা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

আর স্ক্রিনের ছবিটি যদি কোনো মহিলার হয় তবে গায়রে মাহরামদের জন্য ছবিটি দেখা এবং অন্যদের দেখানোর ভিন্ন গুনাহ হবে। এতে ছবি প্রদর্শনের গুনাহ ছাড়া পর্দা লংঘনের গুনাহ হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা আরো বেশী জরুরি।

-সহীহ বুখারী ২/৮৮০; সহীহ মুসলিম ২/২০০; আলমাদখাল ইবনুল হাজ ১/২৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৭২

২০ স্ক্রিনে কুরআনে কারীমের আয়াত, যিকর, বা এগুলোর ক্যালিগ্রাফী সেভ করে রাখা

প্রশ্ন :

মোবাইল স্ক্রিনে কুরআনের আয়াত, জিকর বা আল্লাহ তাআলার নাম সেভ করে রাখা হয়। তদ্রূপ কেউ এগুলোর ক্যালিগ্রাফি সেভ করে রাখে। এটি জায়েয কি না?

উত্তর :

মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহ তাআলার নামের ক্যালিগ্রাফি বা লিখিত আয়াত কিংবা অন্য কোন যিকর ইত্যাদি সেভ করে রাখা ঠিক নয়। কারণ, এভাবে ক্ষেত্রবিশেষে এগুলোর সাথে বেয়াদবি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়া মোবাইল সাধারণত সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হয় না। বরং অধিক ব্যবহারের ফলে যত্রতত্র রাখা হয়। অনেক সময় বসার স্থানে, নিচেও থাকে, চার্জের প্রয়োজনেও নিচে রাখতে হয় ইত্যাদি। সুতরাং স্ক্রিনে দৃশ্যমান অবস্থায় রেখে এর যথাযথ আদব রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এ ধরনের কোন কিছু স্ক্রীন সেভারে রাখা ঠিক হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০

মোবাইলের ব্যবহার

২১ পিকচার ম্যাসেজ

প্রশ্ন :

পিকচার ম্যাসেজের মাধ্যমে যেমনিভাবে বিভিন্ন চিত্র, ফুল ইত্যাদি কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে পাঠানো যায়। তদ্রূপ মোবাইলে ধারণকৃত মানুষ বা প্রাণীয় ছবিও পাঠানো যায়। ছবির এই ব্যবহার জায়েয কি না?

উত্তর :

এসএমএস মাধ্যমে প্রাণীর ছবি ছাড়া অন্য কিছু পাঠাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মানুষ বা কোন প্রাণীর ছবি পাঠানো জায়েয হবে না। কেননা এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া ছবির ব্যবহার হচ্ছে। আর ছবিটি যদি কোন গায়রে মাহরাম মহিলার হয় তবে তো পর্দার হুকুম লংঘন করার গুনাহ হবে। এ ধরনের ছবি যার কাছে পাঠানো হচ্ছে সেও দেখে, আশপাশের অন্য পুরুষরাও দেখে। এতে ব্যাপকভাবে পর্দা লংঘনের গুনাহ হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে জরুরতের সময় জায়েয। যেমন শরীয়তসম্মত বিশেষ প্রয়োজনে কারো ফটোর জরুরত হলে মোবাইলের মাধ্যমে অন্যত্র ছবি পাঠানো যাবে। প্রাপক মোবাইলের এই ছবি প্রিন্ট করে নিজ কাজে লাগাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও এর ব্যবহার জরুরত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হওয়া কর্তব্য। -সহীহ মুসলিম ২/২০০; আলমাদখাল ১/২৭৩

২২ মিসডকল

প্রশ্ন :

মোবাইল ব্যবহারকারীর অনেকেই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মিসডকল দেয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে যাকে মিসডকল দেওয়া হচ্ছে সে বিরক্ত হয়। এছাড়া এতে অনর্থক নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখা হয়। গ্রামীণ ফোন কোম্পানি মিসডকলকে নিরুৎসাহিত করার জন্য একবার মিসডকলকে বিনষ্টকারী পোকার সাথে তুলনা করে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়েছিল। মোটকথা প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে মিসডকল দেওয়া জায়েয কি না?

উত্তর :

বিনা প্রয়োজনে মিসডকল দিলে অনর্থক নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখা হয়। ফলে প্রয়োজনীয় কথার জন্য অনেকের সংযোগ পেতে কষ্ট হয়। বিনা প্রয়োজনে মিসডকল দিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখার কোন বৈধতা নেই। এতে মোবাইল কোম্পানীরও কোন উপকার নেই বরং এতে তাদের ক্ষতি হয়। এছাড়া বিনা প্রয়োজনে এ মিসডকল দেওয়ার দ্বারা যাকে মিসডকল দেওয়া হচ্ছে তাকে বিরক্ত করা হয়। তার একাগ্রতা বা কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এসবই মিসডকলের ক্ষতি। এসব কারণে বিনা প্রয়োজনে মিসডকল দেওয়া গুনাহ।

তবে প্রয়োজনে  মিসডকলের ব্যবহার বৈধ। যেমন কারো সাথে পূর্বেই কথা থাকল যে, তুমি প্রস্ত্তত হলে কিংবা অমুক স্থানে পৌঁছলে কিংবা অমুক জিনিস পেলে অথবা অমুক ব্যক্তি আসলে আমাকে মিসডকল দিবে। এসব ক্ষেত্রে মিসডকল দেয়ার দ্বারা কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। তদ্রূপ আত্মীয়-স্বজন কিংবা কম আয়ের লোকদের সহযোগিতা কামনার্থে অনেকেই বলে থাকে, তুমি আমাকে শুধু মিসডকল দিলেই আমি ব্যাক করব। তোমার কল করার প্রয়োজন নেই। তুমি কল করে টাকা খরচ কর না ইত্যাদি। এসবই মিসডকলের বৈধ ক্ষেত্র। এককথায় যে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মিসডকল করা হয় আর এর কারণে যাকে মিসডকল করা হচ্ছে তার অসন্তুষ্টি বা কষ্টের কারণ না হয় সেক্ষেত্রে এতে কোন অসুবিধা নেই।

২৩ মোবাইলে কে আগে সালাম দিবে

প্রশ্ন :

মোবাইলে কোন পক্ষ আগে সালাম দিবে এ নিয়ে দুধরনের মতামত শোনা যায়। কেউ বলেন, যে ব্যক্তি রিং করবে সে আগে সালাম দিবে। আবার কেউ বলেন, যে রিসিভ করবে সে সালাম দিবে। জানতে চাই শরীয়তের দলীলের আলোকে কোনটি সঠিক? মহিলার সাথে কথা বললে সালাম দেওয়া যাবে কি না? কোন বড় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় যে ছোট সেই কি শুধু সালাম বলবে?

উত্তর :

আস্সালামু কাব্লাল কালামএর ভিত্তিতে যে ব্যক্তি আগে কথা বলবে সেই সালাম দিবে। সাধারণত যে রিসিভ করে সেই যেহেতু আগে কথা বলে থাকে তাই সে কথা শুরু করার আগে সালাম দিবে। কারণ রিসিভ করার পর কথা না বললে অনেক সময় রিসিভ হয়েছে কি না তা বুঝা যায় না। তাই রিসিভকারী সাধারণত আগে কথা বলে থাকে।

অবশ্য কখনো রিসিভকারী যদি রিসিভ করে কথা না বলে বা কোন কারণে কলকারী কথা শুনতে না পায় অথবা বুঝতে না পারে তখন কলকারী আগে কথা বলে থাকে। এক্ষেত্রে যেহেতু কলকারী আগে কথা বলছে তাই কথা শুরুর আগে সে সালাম দিবে, এমনকি হ্যালো বলার আগে সালাম বলবে।

২৪ গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে মোবাইলে সালাম আদান-প্রদান

গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে প্রয়োজনে পর্দায় থেকে কথা বলা জায়েয। (যদি ফেতনার আশংকা না থাকে।) তাই মোবাইলে মহিলার সাথে কথা বলতে হলেও সালাম দিয়েই কথা শুরু করবে।

যে আগে কথা বলবে সে সালাম দিবে। মহিলা আগে কথা বললে সে আগে সালাম দিবে। আর পুরুষ আগে কথা বললে সে সালাম দিবে।

যার নাম্বারে কল করা হচ্ছে তিনি যদি বড় ও সম্মানী ব্যক্তি হন তখন তিনি সালাম দিলে এ সালামের উত্তর দেওয়া হয় না। বরং কলকারী উল্টো তাকে সালাম দেয়। এটা ভুল নিয়ম। তাই বড় ও সম্মানী ব্যক্তি রিসিভ করে সালাম দিলে অপর প্রান্ত থেকে এর শুধু উত্তরই দিবে। পাল্টা সালাম দিবে না। -সুনানে তিরমিযী ২-৯৯

আগে হ্যালো না আগে সালাম

২৫ প্রশ্ন :

ফোনে অনেকে আগে হ্যালো বলে এরপর সালাম বলে। এটি কি ঠিক নিয়ম?

উত্তর :

এ নিয়ম সুন্নত পরিপন্থী। কারণ, সুন্নাত নিয়ম হল,…….সবধরনের কথার আগে সালামের ব্যবহার হবে। এমনকি হ্যালো বলার আগেও। তাই হ্যালো বলে সালাম বলা ঠিক নয়। বরং আগে সালাম বলবে। এটিই সুন্নত। -জামে তিরমিযী ২/৯৯, রদ্দুল মুহতার ৫/৮৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫

উভয় পক্ষের সালাম মুখোমুখী হলে

২৬. প্রশ্ন :

অনেক সময় দেখা যায় উভয় পক্ষ থেকেই সালাম দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কি করণীয়?

উত্তর :

যদি রিসিভকারী এবং কলকারী উভয়ে একই সাথে সালাম বলে তবে প্রত্যেককেই উত্তর দিতে হবে। কিন্তু কেউ যদি আগে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে অপর পক্ষের জন্য উত্তর দেওয়া নির্ধারিত। সে ভুলে বা ইচ্ছাকৃত পাল্টা সালাম দিলে দ্বিতীয় ব্যক্তির সালাম উত্তর হিসাবে ধর্তব্য হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫, রদ্দুল মুহতার ৬/৪৯৬, শরহুল মুহাযযাব ৪/৪৬৩

মসজিদে মোবাইলের ব্যবহার

২৭. প্রশ্ন :

মসজিদের ভিতরে থেকে মোবাইলে কথাবার্তা বলা যাবে কি না? কী ধরনের কথাবার্তা বলা যাবে?

উত্তর :

মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। এখানে অন্য ইবাদতকারীর ক্ষতি করে বৈধ কথাবার্তাও নাজায়েয। অবশ্য ইবাদতের উদ্দেশ্যে এসে অন্য ইবাদতকারীর ক্ষতি না হয় এভাবে বৈধ কথাবার্তা বলার অবকাশ আছে। তবে মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলাই উচিত। আর মসজিদে প্রবেশের আগেই রিংটোন বন্ধ করে দেয়াই আদব। বিশেষ করে কেউ ইবাদতে মগ্ন থাকলে বা জামাতের সময় হলে এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরী।

-আল মাসনূ ফী মাআরিফাতিল হাদীসিল মাওজু ৯২, আলমুহাল্লা-৩/১৬০, শরহুল মুনইয়াহ ৬১০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২১,ফাতহুল বারী ১/৬৫৩, এলামুস সাজিদ ০৩২৬

এতেকাফে মোবাইলের ব্যবহার

২৮. প্রশ্ন :

ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল রাখা যাবে কি না? ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইলে কথাবার্তা বলার হুকুম কী?

উত্তর :

ইতিকাফকারীর জন্য পূর্ণ সময় বাইরের সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে ইবাদতে নিমগ্ন থাকা এবং আল্লাহমুখী হয়ে থাকাই কাম্য। তাই অধিক প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইলের ব্যবহার না করাই শ্রেয়। আর অন্য কোন মুসল্লী বা ইবাদতকারীর ক্ষতি না করে মোবাইলে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে পারবে। -আল বাহরুর রায়েক ২/৩০৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১২

ভুল নাম্বারে ফ্লেক্সি হলে টাকা কে দিবে?

২৯. প্রশ্ন :

ফ্ল্যাক্সিলোডে ভুল হলে কোনো কোনো সময় অন্যের মোবাইলে টাকা চলে যায়। এক্ষেত্রে এর ক্ষতিপূরণ কে দিবে? অনেক দোকানীকে এ টাকা জোরপূর্বক ফ্লেক্সি করতে আসা গ্রাহক থেকে আদায় করতে দেখা যায়। এটা জায়েয কি না?

উত্তর :

যে নাম্বারে ফ্লেক্সি করা হবে সে নাম্বারেই টাকা জমা হবে। ভুল নাম্বারে করা হলে ভুল নাম্বারে যাবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে টাকা উদ্ধার না করা গেলে দেখতে হবে ভুল কার থেকে হয়েছে। সাধারণত ফ্লেক্সিকারী গ্রাহকের নাম্বার ভিন্ন খাতায় প্রথমে নোট করা হয়। সেটা কখনো দোকানী নিজে লিখে কখনো গ্রাহকের হাতে লেখায়। দোকানী লিখলে গ্রাহকের জন্য ঐ লিখা মিলিয়ে নেওয়া কর্তব্য। এরপর খাতার নোটকৃত নাম্বারে ফ্লেক্সি না করে ভুলে অন্য নাম্বারে করলে এর ক্ষতি দোকানীর নিজেরই। এ বাবদ গ্রাহক থেকে কিছুই নিতে পারবে না। হাঁ, গ্রাহক যদি স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু দিতে চায় তবে তা নিতে বাধা নেই।

আর খাতায় যা নোট করা হয়েছে দোকানী যদি সে নাম্বারেই ফ্লেক্সি করে থাকে তবে এ ভুলের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দিতে হবে। অবশ্য দোকানী খাতায় ভুল নাম্বার নোট ক

 

মোবাইল ফোন সম্পর্কীয় প্রয়োজনীয় মাসায়েল- ২

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

মোবাইল ফোন সম্পর্কীয় প্রয়োজনীয় মাসায়েল- ২

অজ্ঞাত স্থান থেকে ভুলে ফ্লেক্সি এসে গেলে

৩০. প্রশ্ন :

ভুল ফ্লেক্সির মাধ্যমে কারো মোবাইলে টাকা এসে গেলে এ টাকা খরচ করা জায়েয হবে কি না? এ টাকার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? এর মালিক তো জানা নেই। এ ব্যাপারে করণীয় কি?

উত্তর :

ভুলবশত ফ্লেক্সিলোড এসে গেলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। এ টাকা মূল মালিককে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে নাম্বার থেকে ভুলে এসেছে সে নাম্বার থেকে কল করে থাকে। এমনটি হলে তো মূল মালিকের সন্ধান মিলেই গেল। কিন্তু প্রেরকের সন্ধান যদি না পাওয়া যায় তবে প্রাপক যে অপারেটরের মোবাইল ব্যবহার করে সেই অপারেটরের সাহায্যে মূল মালিকের নাম্বার সহজেই জানা যায়। তা এভাবে যে, ফ্লেক্সিলোড মেসেজের শেষে প্রেরকের আইডি নাম্বার লিখা থাকে। মোবাইল অপারেটর থেকে ঐ আইডি নাম্বার-এর ঠিকানা এবং মোবাইল সংগ্রহ করা যাবে। অবশ্য এ অনুসন্ধানের জন্য যা খরচ হবে তা বাদ দিয়ে বাকী টাকা পাঠালেই চলবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫২, ফাতাওয়া তাতার খানিয়া ৫/৫৮৫, বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৯৮

ভুল ফ্লেক্সিকারীর দেওয়া ছাড় গ্রহণ

৩১. প্রশ্ন :

যার নাম্বারে ভুলক্রমে ফ্লেক্সি চলে গেছে দোকানী  তাকে কিছু ছাড় দিয়ে বাকীটা পাঠাতে বলে। জানতে চাই, এ ছাড় গ্রহণ করা এ ব্যক্তির জন্য জায়েয হবে কি না?

উত্তর :

এ ছাড় যদি সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেয় তবে তা নেওয়া জায়েয। কিন্তু ছাড় না দিলে বাকিটাও পাঠাবে না এ আশংকা করে যদি কিছু ছাড় দিতে চায় তবে তা গ্রহণ করা যাবে না। তাই সন্তুষ্টচিত্তে দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/১৫৪, আল মাবসূত সারাখসী ১১/১০, আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮০, তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৫০২

ভুল ব্যালেন্স

৩২. প্রশ্ন :

কোনো কোনো সময় কোম্পানীর কম্পিউটারের ভুলের কারণে মোবাইলে ভুল ব্যালেন্স দেখায়। টাকা কম থাকলে বেশি দেখায়, আবার ব্যালেন্স না থাকলেও ভুলে ব্যালেন্স উঠে থাকে। কখনো ব্যলেন্সে কোনো টাকা দেখা যায় না ঠিকই, কিন্তু অন্যের কাছে আউট গোয়িং কল হয়। এই সুযোগ পেয়ে অনেকে অনায়াসে ব্যবহার করে থাকে। এটা জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তবে এভাবে ব্যবহৃত বিল আদায়ের উপায় কি?  এটাকা কি কোম্পানীকেই দিতে হবে? নাকি সাদকা করে দিলে চলবে?

উত্তর :

প্রশ্নোল্লিখিত ক্ষেত্রে নিজের জমা টাকার বেশি খরচ করা জায়েয হবে না। বরং এ ভুলের কথা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ফোন করে অবহিত করা জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যালেন্সে জমা টাকার অতিরিক্ত খরচ করে থাকলে এটিও কাস্টমার কেয়ারে অবহিত করতে হবে। যেন তারা তত টাকা ব্যালেন্স থেকে কেটে নেয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কলের সমপরিমাণ টাকা ব্যালেন্স থেকে কেটে নিলেই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। যেহেতু কোম্পানীকে ব্যবহৃত কলের বিল পৌঁছানো সম্ভব তাই এটাকা সাদকা করা যথেষ্ট নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ৮/১০৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৭২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৭৯

নির্ধারিত বিলের বেশি চার্জ করলে

৩৩. প্রশ্ন :

মোবাইল কোম্পানী থেকে যে চার্জ ঘোষণা করা হয় কোনো কোনো সময় ঘোষিত নির্ধারিত বিল থেকে বেশি কেটে নেয়। বা পোষ্ট পেইডে বেশি বিল করে। এটা জায়েয কি না? এ ক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তর :

প্রতিশ্রুত বিলের বেশি নেওয়াও জায়েয হবে না। এমনটি হলে কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করতে হবে। কোম্পানী কর্তৃপক্ষ এ ভুল জানতে পারলে তা শোধরে নেওয়া জরুরি।

মোবাইল ও যাকাত

সিকিউরিটি ডিপোজিটের যাকাত

৩৪. প্রশ্ন :

পোষ্ট-পেইড মোবাইলে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি বিল করলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অবশ্য মোবাইল কোম্পানীর কাছে অতিরিক্ত টাকা সিকিউরিটি হিসাবে জমা রাখলে নির্ধারিত পরিমাণ বিলের সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিলের বেশি হলেও লাইন বিচ্ছিন্ন করে না। এছাড়া বিদেশে গিয়েও এই নাম্বারে রোমিং সুবিধা পাওয়ার জন্যও সিকিউরিটি জমার প্রয়োজন হয়। খরচের উদ্বৃদ্ধ সিকিউরিটি ডিপোজিটের জমাকৃত টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর :

হাঁ, খরচের অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিটের এ টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদ। নেসাবের মালিকের জন্য এ টাকার যাকাত দিতে হবে। কেননা, এটাকা সে চাইলে ক্যাশ করতে পারে। এটি অন্যান্য জমার মতই। -আলবাহরুর রায়েক ২/২০২ ও ২০৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৪

ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকার যাকাত

৩৫. প্রশ্ন :

যাকাতের বছরের শেষদিন যদি প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে টাকা থাকে তবে এটাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর :

প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে যে টাকার অংক দেখা যায় এটা মূলত টাকা নয়। বরং ঐ টাকার সমপরিমাণ আউটগোয়িং সেবা। আর ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকা যেহেতু মূলত টাকা নয় বরং ক্রয়কৃত একটি সেবা পণ্য। যা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। তাই অন্যান্য ব্যবহৃত সম্পদের ন্যায় ব্যালেন্সে অবস্থিত সম্পদ-এর যাকাত দিতে হবে না।

-হেদায়া ১/১৮৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৪৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

৩৬. প্রশ্ন :

ফ্লেক্সি ব্যবসায়ীদের জন্য আগে কোম্পানীর নির্দিষ্ট স্থানে টাকা জমা দিতে হয়। এরপর এ থেকে ধীরে ধীরে গ্রাহকের নিকট ফ্লেক্সি বিক্রি করতে পারে। জানতে চাই ব্যবসায়ীরা ফ্লেক্সি বাবদ যে টাকা জমা দেয় তা ক্যাশ হওয়ার আগেই যদি যাকাতের বর্ষ পূর্ণ হয়ে যায় তবে ব্যবসায়ীকে এ বাবদ জমা টাকার যাকাত দিতে হবে কি না? যদি দিতে হয় তবে জমাকৃত টাকা এবং এর উপর সম্ভাব্য লাভ উভয়টিরই যাকাত আসবে নাকি শুধু জমা টাকার উপর?

উত্তর :

ফ্লেক্সি বাবদ দেওয়া টাকার মধ্যে যা জমা আছে সে টাকার যাকাত দিতে হবে। কিন্তু এ টাকারও ফ্লেক্সি বিক্রি করলে যে লাভ হবে তার যাকাত এখন দিতে হবে না। কারণ, সে লাভ তো এখনো হয়নি।

মোবাইল ও নামায

৩৭. প্রশ্ন :

অনেকে বলে মসজিদে প্রবেশের আগেই নাকি মোবাইলের রিং বন্ধ করে দেওয়া জরুরি। আসলে কি তাই? যদি কেউ রিং বন্ধ করে দিয়ে শুধু ভাইব্রেশন দিয়ে রাখে তাতে কোনো ক্ষতি আছে কি না?

উত্তর :

নামায অন্য সকল ইবাদত থেকে ভিন্ন ধরণের ইবাদত। এ ইবাদতটি হল সরাসরি আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজিরা দিয়ে তাঁর মহান স্বত্ত্বার সামনে দন্ডায়মান হয়ে তাঁর সাথে কথোপকথনের এক অপূর্ব মুহূর্ত। এ কারণেই নামায অবস্থায় একাগ্রতা ও খুশুখুযুর প্রতি যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, অন্য কোনো ইবাদতের বেলায় তেমনটি করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র। -সূরা মুমিনুন ১-২

তাই মসজিদে প্রবেশের আগেই মোবাইল একেবারে বন্ধ না করলেও অন্তত রিংটোন বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক। কারণ, মসজিদে রিং বেজে উঠলে নামাযীদের খুশুখুযু নষ্ট হবে। আর নামাযের উদ্দেশ্যে প্রবেশকারীর জন্য মোবাইলে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা ঠিক নয়। কারণ, ভাইব্রেশন দিয়ে রাখলেও কল আসলে নামাযীর মনোনিবেশ নষ্ট করে। এতে অন্যের নামাযের ক্ষতি না হলেও নিজের নামাযের খুশুখুযু নষ্ট হয় বটে।

তাছাড়া মোবাইলটি তখন পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর শরীরে স্পর্শ করলে তারও নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হবে। তাই ভাইব্রেশন দিয়ে রাখাও ঠিক নয়, বরং হয়ত সাইলেন্ট করে রাখবে, কিংবা একেবারে বন্ধ করে দিবে।

নামায অবস্থায় রিং বেজে উঠলে

৩৮. প্রশ্ন :

কোনো কারণে যদি নামাযের আগে মোবাইলের রিং বন্ধ করা না হয় আর নামায পড়াবস্থায় রিং বেজে উঠে তখন করণীয় কি? নামাযে থেকে রিং বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না? নামায নষ্ট না করে রিং বন্ধ করার কোনো সুযোগ থাকলে বিস্তারিত জানতে চাই।

এ ছাড়া কিভাবে বন্ধ করলে নামায ভাঙ্গে বা ভাঙ্গে না তাও জানাবেন।

উত্তর :

যদি জামাত চলাকালীন কোনো মুসল্লীর মোবাইল বেজে ওঠে তাহলে সে ক্ষেত্রে করণীয় ও লক্ষণীয় বিষয়সমূহ হল নিম্নরূপ :

এক হাত দ্বারা রিং বন্ধ করা

ক. দুই হাত ব্যবহার না করে নামাযের আপন অবস্থাতে থেকেই এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই কোনো বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দিবে। আর পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন হলেও এক হাত দ্বারাই করবে। মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখেই না দেখে দ্রুত বন্ধ করে পকেটে রেখে দিবে।

জেনে রাখা প্রয়োজন যে, নামাযে প্রয়োজনে এক হাত কোনো কাজে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যেমন, টুপি ওঠানোর জন্য, জামার হাতা নামানোর জন্য, সিজদার স্থানের কংকর সরানোর জন্য, শরীরের কোন স্থান বিশেষ প্রয়োজনে চুলকানোর জন্য ইত্যাদি।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৬৪, শরহুল মুনিয়াহ ৪৪৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯, রদ্দুল মুহতার ১/৬২৪, শরহে নববী ১/২০৫

এক হাত দ্বারা দেখে বন্ধ করা

খ. এক হাত দ্বারা বন্ধ করতে গিয়ে মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এমনটি (করলে যদিও দুই হাত ব্যবহার হচ্ছে না, কিন্তু মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করা অবস্থায় এ ব্যক্তিকে কেউ দেখলে সে নামাযে আছে বলে মনে করবে না।) আর নামায অবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নামায ভেঙে যায়। তাই নামায অবস্থায় মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করার কোন সুযোগ নেই। -রদ্দুল মুহতার ১/২৬৪-২৬৫, আলবাহরুর রায়েক ২/১১-১২

দুই হাত দ্বারা বন্ধ করা

গ. নামাযে মোবাইল বন্ধের জন্য একসাথে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। যদি এক সাথে দুই হাত ব্যবহার করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

রিং বন্ধের জন্য সিজদা থেকে উঠে গেলে

ঘ. সিজদাবস্থায় রিং বেজে উঠলে কেউ কেউ সিজদা থেকে প্রায় বসে গিয়ে মোবাইল বের করে বন্ধ করে থাকে। অথচ তখনো ইমাম-মুসল্লী সকলেই সিজদাতেই থাকে। নামাযের এ অবস্থা থেকে মোবাইল বন্ধের জন্য বসে যাওয়া অতঃপর মোবাইল বন্ধ করাতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় ব্যয় না হলেও নামায ভেঙ্গে যাবে। কারণ, যেখানে দুই হাতের ব্যবহারকেই নামায ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে সেখানে পুরো শরীরকে নামাযের অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে নামায ভঙ্গের কারণ হবে। এ ছাড়া এ অবস্থায় কোনো আগন্তুক তাকে দেখলে সে নামাযে নেই বলেই মনে করবে। এটিও আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত। যা নামায নষ্টকারী।

নামাযে একাধিকবার রিং বন্ধ করা

৩৯. প্রশ্ন :

নামাযে একাধিক বার রিং বন্ধ করার পর আবার রিং বেজে উঠলে তা বন্ধ করতে পারবে কি না? এভাবে কতবার পর্যন্ত বন্ধ করার সুযোগ আছে?

উত্তর :

তিনবার বিশুদ্ধভাবে সুবহানা রাবিবয়াল আযীম বা সুবহানা রাবিবয়াল আলা বলা যায় এ পরিমাণ সময়ের ভিতর উপরন্তু দুইবার পর্যন্ত এক হাতের সাহায্যে উপরোক্ত  তে উল্লেখিত নিয়মে রিং বন্ধ করা যাবে। এ সময়ের ভিতর দুইবারের বেশি বন্ধ করা যাবে না। যদি করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

হাঁ, একবার বা দুই বার বন্ধ করার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্বে আবার রিং বেজে উঠলে তখন বন্ধ করা যাবে। মোটকথা তিন তাসবীহ বলা যায় এ সময়ের ভিতর তিনবার রিং বন্ধের জন্য এক হাতও ব্যবহার করা যাবে না। এতে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯, রদ্দুল মুহতার ১/৬২৫, আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৪১৮-৪১৯

মোবাইল বন্ধের জন্য দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হলে

৪০. প্রশ্ন :

মোবাইল প্যান্টের পকেটে থাকলে তা বের করে বন্ধ করার জন্য দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তদ্রূপ ফোল্ডিং সেট হলেও রিং বা ফোন বন্ধ করতে কখনো কখনো দুইহাত ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। অথচ দুই হাত ব্যবহার করলে নামায ভেঙ্গে যায়। তাই এক্ষেত্রে কি নিজের নামায নষ্ট করে হলেও রিং বন্ধ করবে? না কি মুসল্লীদের নামাযে বিঘ্ন হলেও নিজের নামায নষ্ট করা বা ছেড়ে দেওয়া যাবে না? সঠিক সমাধান কি?

কেউ কেউ এক্ষেত্রে মুসল্লীর নামায ছেড়ে দেওয়া বা নামায নষ্ট করার অনুমতি দেয় না। বরং এ পরিস্থিতিতেও নামায নষ্ট করা অবৈধ বলে।

উত্তর :

নামাযে খুশুখুযুর গুরুত্ব অনেক বেশি। কোন নামাযীর মল-মূত্রের বেগ হওয়ার দরুণ খুশুখুযু বিঘ্নিত হলে তার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফিকহের কিতাবাদিতে এ ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। তাহতাবী আলাল মারাকী-১৯৮, হিন্দিয়া ১/১০৭, আল বাহরুল রায়েক ১/২৮৭, রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪, তাহলে নামায অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে যার মোবাইল শুধু তার নামাযেরই বিঘ্ন ঘটায় না বরং আশপাশের মুসল্লীদেরও খুশুখুযু বিঘ্নিত হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায নষ্ট না করে বন্ধ করা সম্ভব না হলে নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করা জায়েয তো বটেই বরং এমনটি করাই কর্তব্য। আর রিংটোন যদি গান বা মিউজিকের হয় তবে এর খারাবিতো আরো অধিক। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়া না জায়েয হওয়া সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত কথাটি ঠিক নয়। সুতরাং এ ধরণের পরিস্থিতিতে নামাযে থেকে উপরোক্ত (৩৮ নং প্রশ্নোত্তরের  তে উল্লেখিত) নিয়ম অনুযায়ী একহাত দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হলে তাই করবে। কিন্তু তা সম্ভব না হলে নিজের নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও রিং বন্ধ করে দিবে। অতঃপর মাসবুকের ন্যায় আবার নতুন করে জামাতে শরীক হবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৫

মোবাইলের মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল

৪১. প্রশ্ন :

মোবাইলের মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয কি না? ডাটা ক্যাবল দ্বারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট-এর সাহায্যে বৈধ এবং অবৈধ ও অশ্লীল বস্ত্ত মোবাইলে নেওয়া হয়। আর মোবাইলের মেমোরি কার্ডে অডিও, ভিডিও এবং সকল প্রকার রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। এর ক্রয়-বিক্রয় জায়েয কি না?

উত্তর :

মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল এ দুটি বস্ত্তর ব্যবহারক্ষেত্র নাজায়েয হওয়া সুনির্দিষ্ট নয়। বরং মেমোরি কার্ডে প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিভিন্ন ধরনের ছবি, গজল, হামদ-নাত, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত ইত্যাদিও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর ডাটা ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে এ ধরনের জায়েয বস্ত্ত সরবরাহ করা যেতে পারে। তাই মৌলিকভাবে এ দুটি বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়। কিন্তু এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নাজায়েয কোনো কিছু আদান-প্রদান ও সংরক্ষণের জন্য এসব বস্ত্তর ব্যবহার নাজায়েয।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৯১, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ ১/৩৫৯, জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৪৬

মোবাইল ও ইন্টারনেট

৪২. প্রশ্ন :

মোবাইলে ইন্টারনেট সার্চ করার হুকুম কী?

উত্তর :

ইন্টারনেট হল তথ্যের এক বিশাল জগত। এখানে যেমন নাজায়েয বস্ত্ত, দুনিয়ার সকল অশ্লীল জিনিস আছে তদ্রূপ ভাল ও দ্বীনি বিষয়ে জানারও অনেক কিছু আছে। তাই ইন্টারনেটের উপর ব্যাপকভাবে কোনো হুকুম আরোপ করা দুষ্কর। এর হুকুম হবে ব্যবহারকারী হিসাবে। ব্যবহারকারী যদি এ থেকে নাজায়েয ও অবৈধ বস্ত্ত সার্চ করে তবে গুনাহ হবে। আর যদি বৈধ ও জায়েয বস্ত্ত সার্চ করে তবে জায়েয হবে।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৫০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ১/৩৫৯

পণ্যসামগ্রীর দোকানে বিভিন্ন সিম ব্যবহারকারীদেরকে দেওয়া ডিসকাউন্ট

৪৩. প্রশ্ন :

কিছু কিছু পণ্যসামগ্রীর দোকানে ক্রেতার জন্য গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারী বা বাংলালিংক লেডিস ফার্স্ট সিম ব্যবহারকারীর জন্য পুরো মূল্যের উপর ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। যেমন পেগাসাস সুজ কোম্পানির শোরুম থেকে কোনো জুতা ক্রয় করলে গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারীদের জন্য ১০% থ্যাংকইউ ডিসকাউন্ট দেয়। ক্রেতা দোকান থেকেই নির্দিষ্ট নাম্বারে ম্যাসেজ করে দিলে কোম্পানি থেকে একটি ফিরতি ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজ দোকানের ক্যাশে  দেখালে ১০% মূল্য ছাড় দেয়। এভাবে ১০০০ টাকার জুতা ৯০০ টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। তদ্রূপ বাংলালিংকের লেডিস ফার্স্ট সিম ব্যবহারকারীর  জন্য নাভানা ফার্নিচার, বিভিন্ন জুয়েলার্স, চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদিতে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। জানতে চাই এই ডিসকাউন্ট নেওয়াটা বৈধ কি না? স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, আমি দ্রব্য নিচ্ছি পেগাসাস, নাভানা ইত্যাদি থেকে, কিন্তু তারা আমার সিমের উপর নির্ভর করে আমাকে ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এ ডিসকাউন্ট নেওয়া আমার জন্য বৈধ কি না? এতে তো কোনো প্রকার সুদ নেই?

উত্তর :

এই ছাড় গ্রহণ করা জায়েয। এটি সুদ নয়। ক্রেতার জন্য এ মূল্যছাড় বিক্রেতার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর বিক্রেতার জন্য স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ধারিত মূল্য হতে ছাড় দেওয়া জায়েয এবং পছন্দনীয় কাজ।

বোনাস টকটাইম

৪৪. প্রশ্ন :

কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানি সিমকার্ডের সাথে বোনাস টকটাইম দেয়। যেমন বাংলালিংক সিম কিনলে ১২০ টাকার বোনাস টকটাইম পাওয়া যায়। ওয়ারিদ সিম কিনলে সমমূল্যের ফ্রি টকটাইম পাওয়া যায়।

আবার কোনো কোনো কোম্পানি স্ক্র্যাচ কার্ড নিলে অতিরিক্ত বোনাস টকটাইম দেয়। এগুলো গ্রহণ করা বৈধ কি না?

উত্তর :

মোবাইল সিমের সাথে ঘোষিত টকটাইম ব্যবহার করা বৈধ। এটা এক ধরনের মূল্য হ্রাসের ঘোষণা। এখানে মূলত মোবাইল সিম এবং ঘোষিত বোনাস টকটাইম উভয়টি মাবী তথা বিক্রিত পণ্য। আর স্ক্র্যাচ কার্ড এর উপর ঘোষিত বোনাস টকটাইম বা বোনাসও গ্রহণ করা জায়েয। এতেও সুদের কিছু নেই। ৩০০ টাকার স্ক্র্যাচ কার্ড এর উপর ১০% টকটাইম সহ ব্যালেন্সে ৩৩০ টাকা  জমা হয়। এখানে একথা বলার সুযোগ  নেই যে, ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বরং ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৩০ টাকা সমমূল্যের টকটাইম ক্রয় করা হচ্ছে। ধরে নেওয়া যায় যে, কোম্পানি সাময়িকভাবে জন্য তার ট্যারিফ মূল্য কমিয়ে দিয়েছে ।

-হেদায়া ৩/৭৫, ফাতহুল কাদীর ৬/১৪২, রদ্দুল মুহতার ৫/১৮-১৯,

৪৫. প্রশ্ন : একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমের সাথে একটি ঘড়ি ফ্রি এবং অতিরিক্ত টকটাইমও রয়েছে। প্রশ্ন হল, সিমের সাথে এসব ফ্রি আইটেম নেওয়ার হুকুম কী?

উত্তর : এক্ষেত্রে প্রদেয় টাকা সিম, ঘড়ি ও টকটাইম তিনটি বস্ত্তরই মূল্য। অর্থাৎ বিক্রিত দ্রব্য শুধু সিম নয়, বরং তিনটিই বিক্রিত দ্রব্য। তাই সিম ক্রেতার জন্য ঘড়ি ও টকটাইম নেওয়া বৈধ।

মসজিদের ছাদে মোবাইলের টাওয়ার স্থাপন

৪৬. প্রশ্ন :

মোবাইল কোম্পানি টাওয়ার স্থাপনের জন্য বিল্ডিং-এর ছাদ ভাড়া নিয়ে থাকে। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে মসজিদের ছাদে টাওয়ার স্থাপনের প্রস্তাব আসে। এতে প্রতি মাসে যে ভাড়া পাওয়া যাবে তা মসজিদের জরুরি ব্যয়ে অনেকটা সহায়তা পাওয়া যাবে। জানতে চাই মসজিদের ছাদে টাওয়ার স্থাপনের অনুমতি আছে কি না?

উত্তর :

মসজিদের ছাদে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন জায়েয নয়। এজন্য ছাদ ভাড়া দেওয়া না জায়েয। কোনো স্থানে মসজিদ হয়ে গেলে তার উপর নিচ সম্পূর্ণটাই মসজিদ হিসাবে পরিগণিত হয়ে যায়। মসজিদের ছাদও মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। আর মসজিদের কোনো অংশ ভাড়া দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়। সুতরাং টাওয়ার স্থাপনের জন্য ছাদ ভাড়া দেয়া জায়েয হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭, আলমগীরী ২/৪৫৫, রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮, আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫০-২৫১, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৩ #