আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৮৪৩: ফজরের ওয়াক্ত শুরু থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত নফল নামাজ ব্যতিত দুআ -মুনাজাত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা যাবে কি?

No Comments

 












জিজ্ঞাসা-১২৮৪৩: 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়খগণ! একটা জিগ্গাসা ও একটা স্বপ্নের তা'বির জানতে চাই। 

১। প্রশ্ন : ফজরের আযানের পর থেকে ফরজ নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে সুন্নাত ছাড়া কোন নামাজ নেই। কিন্তু কোন দোয়া/ জিকির করা যাবে কি?

২। কোন এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখে যে, সে মৃত ব্যক্তির সাথে কোলাকুলি করছে। এর তা'বির জানতে চাই। 

তারিখ:  ১৫/১১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 মাওলানা মাহবুব নড়াইল  থেকে।


 জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে উত্তরকে দুই ভাগে ভাগ করছি

 প্রশ্ন: ১। ফজরের আযানের পর থেকে ফরজ নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে সুন্নাত ছাড়া কোন নামাজ নেই। কিন্তু কোন দোয়া/ জিকির করা যাবে কি?

উত্তর: ১। ফজরের ওয়াক্ত শুরু থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত নফল নামাজ পড়া জমহুরের মতে মাকরুহে তাহরিম। যা জিজ্ঞাসা -১৮১: মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে।


তবে এ  সময় দোয়া- মোনাজাত, জিকির-আজকার, তাসবিহ- তাহলিল করা নিষেধ নয়। বরং আজান ও ইকামতের মাঝে দুআ করা মুস্তাহাব। দলিল:


হাদিস নং -০১

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَعَبْدُ الرَّزَّاقِ، وَأَبُو أَحْمَدَ وَأَبُو نُعَيْمٍ قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ زَيْدٍ الْعَمِّيِّ، عَنْ أَبِي إِيَاسٍ، مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الدُّعَاءُ لاَ يُرَدُّ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَنَسٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَقَدْ رَوَاهُ أَبُو إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيُّ عَنْ بُرَيْدِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَ هَذَا .

 আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ রদ হয় না। —জামে' তিরমিজি- ২১২; সুনানে আবু দাউদ-৪৩৭; মুসনাদে আহমদ-১২১৭৪


নোট:

ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহ বর্ণিত হাদিসটি হাসান ও সহীহ। ইসন ইসহাক আল হামদানী (ﷺ) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)

বর্ণনাকারী: হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) (মৃত্যু ৯৩ হিজরী)


হাদিস নং -০২

614 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ المُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ 

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে দুআ করেঃ ‘হে আল্লাহ- এ পরিপূর্ণ আহবান ও নামাযের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ (ﷺ) কে ওসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকামে মাহমুদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’- কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে। তাখরিজ: বুখারি-৬১৪


হাদিস নং -০৩

حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى قَالاَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ خَالِدِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنِ الْبَهِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ اللَّهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ .

আবু কুরায়র মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সব সময়ই আল্লাহর যিক্‌র করতেন।

—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১২ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭৩)


উপরোক্ত তিনটি হাদিস থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত হয়, উক্ত সময় দোয়া মোনাজাত তাসবিহ-তাহলীল, জিকির নিষেধ নয়।


প্রশ্ন: ২। কোন এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখে যে, সে মৃত ব্যক্তির সাথে কোলাকুলি করছে। এর তা'বির জানতে চাই।


উত্তর: ২। স্বপ্নের তাবিরের বিখ্যাত ইমাম হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছাত্র মুহাম্মাদ ইবনে শিরিন রহ. বলেন,

অপরিচিত মৃত ব্যক্তি চুম্বন/কোলাকুলি করলে, সে অকল্পনীয় ভাবে রিজিক বা ধন-সম্পদ প্রাপ্ত হবে।

পরিচিত মৃত ব্যক্তি যদি চুম্বন/ কোলাকুলি করে, তাহলে মৃত্যু ব্যক্তির আত্মীয়র দ্বারা সে উপকার লাভ করবে।


আর মৃত ব্যক্তিকে যদি হাস্য উজ্জ্বল দেখা যায়, তাহলে তার ক্ষমার ইঙ্গিত বহন করে। দলিল -

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ

অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল,

ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ

সহাস্য ও প্রফুল্ল। সূরা আবাসা,৩৮,৩৯


আর মৃত ব্যক্তির মুখ মলিন দেখলে, তার খারাপ অবস্থা ইঙ্গিত করে। সূত্র: স্বপ্নের তাবির-৯৩-৯৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইবনে শীরীন রহ., ফয়েজিয়া লাইব্রেরী, যাত্রাবাড়ি ঢাকা।


সারকথা হলো,  উক্ত সময়ে নফল নামাযের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, দুআ-মুনাজাত, জিকির- আজকার ও তাসবিহ-তাহলিল, কান্নাকাটি নিধেষ নয়, বরং উত্তম। 



  والله اعلم بالصواب