জিজ্ঞাসা-১২৮৪৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
তাছলিম বাদ, আমীর মুয়াবিয়া(রাঃ)সর্বপ্রথম মোটা হয়ে যাওয়ার কারনে বসে খোৎবা দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। আমাদের দেশে দাঁড়িয়ে জুমার খোৎবা দেয়ার পূর্বে যে আলোচনা করা হয়,তা মিম্বরে বসে দেয়া مسنون او غير مسنون বা বৈধ/অবৈধ হওয়ার বিষয়ে مدلل উত্তর একান্ত কাম্য। مع السلام.
তারিখ: ২০/১১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরফুদ্দিন তাহের হাফিজাহুল্লাহু থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
খুতবার পূর্বের যে আলোচনা বা ওয়াজ-নছিহত এটা খুতবা অংশ নয়, তাই এটা দাঁড়িয়ে না বসে বলতে হবে, এ বিষয়ে ফোকাহায়ে কেরাম এর কোনো নির্দেশনা নেই। বসে বা দাঁড়িয়ে উভয় অবস্থাতেই ওয়াজ-নছিহত করতে পারবে, বক্তার ইচ্ছাধীন। তবে দাঁড়িয়ে এবং মিম্বারের বাহিরে হওয়া উত্তম। দলিল -
عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَقُومُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلَى جَانِبِ الْمِنْبَرِ فَيَطْرَحُ أَعْقَابَ نَعْلَيْهِ فِي ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ يَقْبِضُ عَلَى رُمَّانَةِ الْمِنْبَرِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَقُولُ فِي بَعْضِ ذَلِكَ: وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فَإِذَا سَمِعَ حَرَكَةَ بَابِ الْمَقْصُورَةِ بِخُرُوجِ الْإِمَامِ جَلَسَ. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ
অর্থ : আসেম (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, জুমু’আর দিন হযরত আবু হুরায়রা (রা.) জুতা খুলে মিম্বরের পাশে দাঁড়িয়ে মিম্বর ধরে বলতেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম.) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সাদেক মাসদুক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ধ্বংস আরবদের জন্য, ওই ফিতনার কারণে, যা নিকটবর্তী…। এরপর যখন ইমাম সাহেবের বের হবার আওয়াজ শুনতেন, তখন তিনি বসে যেতেন। তাখরিজ: মুসতাদরাকে হাকেম, ১/১৯০, হাদীস-৩৩৮
কোনো কোনো আসারে বসে বা দাঁড়িয়ে কোনটিও উল্লেখ নেই। দলিল -
عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى خَرَجَ الْإِمَامُ
হযরত আবদুল্লাহ বিন বুছর (রা.) জুমু’আর দিন প্রথমে ওয়াজ করতেন। যখন খতীব খুতবার জন্য আগমন করতেন, তখন তিনি ওয়াজ বন্ধ করতেন। তাখরিজ: মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৮৮, হাদীস-১০১২
দ্বিতীয় কথা হলো, বসে খুতবা দেওয়ার বিষয়ে হজরত আমিরে মুআবিয়া রা. এবং হজরত ওসমান রা. নামও পাওয়া যায়।
দলিল-
হাদিস/আসার নং -০১
وروى عبد الرزاق عن معمر عن قتادة أن النبي صلى الله عليه وسلم وأبا بكر وعمر وعثمان كانوا يخطبون يوم الجمعة قياما حتى شق على عثمان القيام فكان يخطب قائما ثم يجلس، فلما كان معاوية خطب الأولى جالسا والأخرى قائما
আব্দুর রাজ্জাক কাতাদার সূত্রে মুয়াম্মার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, ওমর এবং উসমান জুমার দিনে খুতবা দিতেন, যতক্ষণ না উসমানের পক্ষে দাঁড়ানো কঠিন ছিল। তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন এবং তারপর বসে। তাই যখন মুয়াবিয়া প্রথম খুতবা দিতেন তখন বসে এবং অন্যটি দাঁড়িয়ে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -৫২৫৮
হাদিস/আসার নং -০২
أخرجه ابن أبي شيبة في المصنف حدثنا بن آدم حدثنا إسرائيل بن يونس عن أبي إسحاق قال أول من خطب قاعدا معاوية قال ثم اعتذر إلى الناس ثم قال إني أشتكي قدمي
ইবনে আদম আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন,আমাদের কাছে ইসরাঈল ইবনে ইউনুস বর্ণনা করেছেন,আবু ইসহাক (রাঃ) থেকে। তিনি বলেনঃ বসে থাকা অবস্থায় খুতবা প্রদানকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন মুয়াবিয়া। তিনি বললেন: তারপর তিনি লোকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন, তারপর তিনি বললেন: আমি আমার পা সম্পর্কে অভিযোগ করছি। তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা -5088
হাদিস/আসার নং -০৩
وقال ابن أبي شيبة في المصنف حدثنا جرير عن مغيرة عن الشعبي قال إنما خطب معاوية قاعدا حيث كثر شحم بطنه ولحمه
অর্থাৎ ইবনে আবি শায়বা আল-মুসান্নাফে বলেছেন: জারীর আমাদের কাছে মুগীরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, আল-শা'বি থেকে, তিনি বলেছেন: মুয়াবিয়া কেবল বসা অবস্থায় বক্তৃতা দিতেন, কারণ তার পেট ও মাংস, চর্বি বেড়ে গিয়েছিল। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা - ৫২১; ফাতহুল বারী-২/৪৬৬
সারকথা হলো, মূল খুতবার আগে আলোচনা বা ওয়াজ-নছিহত করা হয়, তা খুতবার অংশ নয়। তাই খতিব সাহেব বসে বা দাঁড়িয়ে ওয়াজ করতে পারবেন, কোন অসুবিধা নেই। এ বিষয়ে শরিয়তের কোন নির্দেশনা নেই। সুতরাং এটাকে খেলাফে সুন্নাত বলা যাবে না।
والله اعلم بالصواب