আদর্শ সন্তান গঠনে পিতা-মাতার দায়িত্ব
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
তারিখ ৩০/১২/২০২১
------------------
১ম পর্ব (ধর্মীয় দায়িত্ব)
المال والبنون زينة الحياة الدنيا
ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দম্পতির জন্য দুনিয়ার জীবনে
অন্যতম সৌন্দর্য। সূরা কাহাফ/৪৬
আদর্শ সন্তান প্রতিপালনে পিতামাতার দায়িত্ব গুলো নিম্নরূপ
-------------------------------------------------
১।নেককার সন্তান চেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে হবে।
সূরা ইমরান/৩৮
২। পিতামাতা দুজনকেই ইসলামী অনুশাসন গুলো আন্তরিকতা সহ পালন করে আদর্শ পিতামাতা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সূরা তাহরীম/০৬
৩।হবু পিতামাতা দুজন কেই পরস্পরের দ্বীনদারী দেখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
আবু দাউদ/২০৪৯ ইবনে মাজাহ/১৯৩২
৪। হালাল খাবার ও বৈধ্য উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে ব্লাড পরিস্কার রাখতে হবে।
সূরা বাকারা/১৬৮
৫। সন্তান মায়ের পেটে থাকাকালীন সন্তানের সুস্থতার জন্য মাকে প্রয়োজনীয় টিকা, পুষ্টিকর খাদ্য,ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। সূরা তালাক/৭
৬। গর্ভবতী কে হালকা কাজ কাম, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও চিন্তা মুক্ত ধর্মীয় পরিবেশে রাখতে হবে।
সূরা বাকারা/২৩১
৭।শিশুর দৈহিক পুষ্টতা বৃদ্ধির জন্য কম পক্ষে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ ও অন্যান্য খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম(১২-১৬ ঘন্টা) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক ও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।) সূরা বাকারা/২৩৩
৮। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত দিতে হবে।(আল্লাহর বড়ত্ব, রাসূলের আনুগত্য ও নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য) তিরমিযি/১৫৯৬
৯। তাহনীক করাতে হবে।( মুরুব্বি দের দ্বারা দোয়া ও মিষ্টি মুখ করা) । বুখারী/ নূরুল ঈমান/৯১৫
১০। সুন্দর একটি নাম রাখতে হবে।( আল্লাহর নামের সাথে আবদ যোগ করে,নবীদের নামে, রাসূলের উপনামে,অথবা সাহাবাদের নামে কিম্বা ভালো অর্থ বোধক নাম রাখতে হবে)
আবু দাউদ/৪৯৫০
১১। সন্তানের আকিকা করতে হবে।(শিশু জন্মের ৭/১৪/২১ দিনে মাথার চুল মুন্ডন করে সমপরিমাণ স্বর্ণ অথবা রূপা দান করতে হবে , এবং ছেলে কিম্বা মেয়ে উভয়ের জন্য কম পক্ষে একটি প্রানী দ্বারা আকিকা করতে হবে।
নাসাঈ/৪২৩৭ তিরমিযি/১৫২২
১২।যথা সময়ে ছেলেদের খৎনা (৭ম দিনে অথবা ৭ বছরের মধ্যে ছেলেদের খাৎনা (সুন্নাত) করাতে হবে।)
নাসায়ী/৯ ১ম খন্ড পৃ ৭ বোখারী/৫৮৪৭
১৩। সন্তান কথা বলা শিখলে প্রথমেই কালেমা ( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) শিক্ষা দেয়া দিয়ে তার মনে ঈমানের বীজ বপন করতে হবে। আনওয়ারুল হাদীস/
। সুন্দর চরিত্র ও শিষ্টাচার শিখাতে হবে।(গুরুজন, পিতামাতা,শিক্ষক, প্রতিবেশী, মুরুব্বি, খাদেম খাদেমা, সহপাঠী, বন্ধু বান্ধব দের সাথে কথা এবং ব্যবহার শিক্ষা দেয়া)।
তিরমিযী/২০৭
১৪। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ শিক্ষা দিতে হবে। সূরা যুখরুফ/৪৪
১৫। নামাজের তালীম দিতে হবে।(সন্তানের বয়স ৭-১০ বছর হলে নামাজের সূরা কেরাত দোয়া দরুদ শিখায়ে নামাজে অভ্যস্থ করতে হবে।এর পর নামাজ না পড়লে লঘু শাস্তি দিতে হবে। সূরা লুকমান/১৭ আবু দাউদ/৪৯৫
১৫।সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখতে হবে। সূরা লুকমান/১৭
১৬। সন্তান কে আহকামে শরীয়াহ(হালাল হারাম, মাকরুহ,ফরজ,ওয়াজিব, সুন্নাহ,মুস্তাহাব অজু গোসল পাক নাপাক সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে ।
তিরমিযি/২৮৫৭
১৮। সন্তানের সামনে নিজেদের কে ইসলামের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।
১৯। আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আন্তরিক ভাবে ও প্রকাশ্যে বেশি বেশি আদায় করতে হবে।
সূরা আরাফ/১০
আদর্শ সন্তান গঠনে পিতা-মাতার দায়িত্ব
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
২য় পর্ব (ব্যবহারিক দিক)
----------------------
المال والبنون زينة الحياة الدنيا
ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দম্পতির জন্য দুনিয়ার জীবনে অন্যতম সৌন্দর্য। সূরা কাহাফ/৪৬
১। সন্তান কে পরম স্নেহ মায়া মমতা আদর সোহাগ দিয়ে
লালন পালন করতে হবে।
২। তাদের সাথে মার্জিত ভাষায় দরদ মাখা কন্ঠে কথা বলতে হবে।
৩। কলিজার টুকরা এই শিশুরাই পিতা মাতার জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ তাই তাদের জন্যে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সংগ দিতে হবে।
(এক সাথে খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব,খেলা ধুলা,ঘুরাফিরার
মাধ্যমে নিবীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।)
৪।তাদেরকে মাঝে মাঝে তরজমা কুরআন, তাসবিহ, জায়নামাজ,আতর , টুপি উপহার হিসেবে দিতে হবে।
৫। সন্তান কে শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে।( গুরুজন, পিতামাতা ভাই বোন,শিক্ষক, সহপাঠী, বন্ধু, প্রতিবেশী, পথচারী,ও খাদেম
খাদেমাদের সাথে মার্জিত আচরন ওকথা বলার পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে হবে।)
৭।তাদেরকে সাথে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত করে মৃত প্রিয়জনদে অবদানের কথা স্মরন করে দিতে হবে।
৮। মাঝে মাঝে পারিবারিক আলোচনা সভার আয়োজন করে
বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং পুরুস্কৃত করতে হবে।
৯।মাঝে মাঝে মসজিদে সাথে নিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করতে হবে , এবং বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলে শরীক করে ইসলামী জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
১০।তারা কোন কথা বললে/প্রশ্ন করলে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে ।কিছু আবদার করলে/বাইরে যেতে চাইলে সাধ্যমত তা পুরনের চেষ্টা করতে হবে।
১১।সন্তান কোন ভালো কাজ করলে প্রান খুলে প্রশংসা করতে হবে ও উৎসাহ যোগাতে হবে।
১২। তাদের সামনে আল্লাহর বড়ত্ব মহত্ব ও প্রশংসা সূচক (সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার) শব্দ গুলো
বেশি বেশি পাঠ করতে হবে।)
১৩। তাদের সাথে বেশি বেশি সালাম কালাম বিনিময় করতে হবে।
১৪। তাদের সামনে অন্য মানুষ কে সন্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।তাহলে অন্যকে সম্মান করতে শিখবে।
১৫।তাদের চরিত্র গঠনের জন্য ও তাদেরকে জান্নাতে পাওয়ার জন্য প্রান ভরে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
১৬। সন্তানের বন্ধু ও সহপাঠিদেরকেও স্নেহ ও মায়ার দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
১৭। শিরক ও অপ সংস্কৃতির খারাপ দিক গুলো সুন্দর করে তাদের কে বুঝিয়ে দিতে হবে।
১৮। তাদের ভুলগুলো সহানুভূতির সাথে মার্জিত ভাষায় তুলে ধরতে হবে।
১৯। তাদের হাত দিয়ে গরীব দুঃখী মানুষ কে দান ছাদকা করাতে হবে।
২০। তাদের কে শৃঙ্খলা ও নিয়মানু বর্তিতা শিখানোর জন্য হালকা কাজ দিতে হবে।( বই পত্র,খাতা কলম ব্যাগ,সু,জামা কাপড় ফুলদানি গুছিয়ে রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।)
২১। পরিবারের সদস্যদের উন্নতি কল্পে পারিবারিক বৈঠকে তাদের দেয়া মতামত গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
২২। একাধিক সন্তান/ ছেলেমেয়েদের মাঝে স্নেহ মায়া ও অর্থ
ব্যায়ের সময় সমতা রক্ষা করে চলতে হবে।
২৩। তাদেরকে ছোট থেকে ই শালীন ও রুচিশীল পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত করাতে হবে।
২৪। তাদের জন্যে ভালো শিক্ষক, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , ভালো বন্ধু নির্বাচনে দূরদর্শী ভুমিকা রাখতে হবে।
২৫। শিশুদের বুঝার মত বয়স (৬-৭ বছর) হলে তাদের জন্যে পৃথক বিছানার ব্যাবস্থা করতে হবে, ঘুমানোর সময় অন্য কোন মানুষের সংগ থেকে দুরে রাখতে হবে।
২৬। সামর্থ ও সুযোগ থাকলে এক সাথে হজ/ উমরা করার জন্য কাবাঘর জিয়ারতে যেতে হবে।
২৭। সন্তান প্রাপ্ত বয়সে পৌছলে (মেয়ে১৮ ছেলের ২১বছর পার হলে) সুবিধা মত সময়ে সৎ পাত্র পাত্রী দেখে যৌতুক ছাড়া বিবাহ দিয়ে পৃথক ভাবে সংসার করানোর ব্যাবস্থা করতে হবে।
২৮। সন্তান কে স্বদেশ প্রেমে (দেশের মাটি ,মানুষ ,ভাষা কে ভালোবাসতে) উদ্বুদ্ধ করতে হবে।)
২৯।সন্তানকে মনে প্রানে যে ভালোবাসি তা মাঝে মাঝে
তাদের সামনে মৌখিক ভাবে প্রকাশ করে বলতে হবে,I Love you যেমন রাসূল সাঃ ফাতেমাকে বলতেন,ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা,যে ফাতেমা কে ভালো বাসলো সে আমাকে ভালো বাসলো আর যে আমাকে ভালোবাসলো সেযেন আল্লাহ কেই ভালোবাসলো।
৩০। তাদের সাথে কথা বার্তা আচার আচরনে কোন ভুল হলে
ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। এতে ক্ষমা চাওয়ার ও ক্ষমা করার যোগ্যতা তাদের মধ্যে তৈরি হবে।
চলবে ---------আসছে ২য় ও ৩য় পর্ব।
লেখক মাওলানা আলিফ হোসাইন হাফি.
তারিখ ঃ ৩০/১২/২০২১
আদর্শ সন্তান গঠনে পিতা-মাতার দায়িত্ব
---------------------------------
৩য় পর্ব ( নিষেধ সূচক)
খ। সন্তানের সামনে যে সব কথা- কর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে
------------------------------------------------
১। সন্তানের সামনে নিজেদের মধ্যে কখনো ঝগড়া বিবাদ
করা যাবেনা।
২। সন্তানকে কখনো আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় দেখানো যাবে না।( বাঘ,ভালুক,ভুতের ভয় দেখানো যাবেনা)
৩। তাদের সামনে কাউকে গালি গালাজ করা যাবেনা।
৪ তাদের সামনে কোন নেশাকর দ্রব্য পান করা যাবে না।
৫। মানুষের সামনে তাদেরকে ও কখনো গাল মন্দ করা যাবেনা।
৬।তাদের কে অপসংস্কৃতি (নাচ,গান) শিখানো যাবেনা।
ফায়জুল কালাম/২২৬, মুসলিম
৭। তাদের সামনে কোন জিনিষের অপচয় করা যাবেনা।
সূরা আরাফ/৩১
৮। তাদের কে কখনো অশালীন পোষাক পরিচ্ছদ পড়ানো যাবেনা।সূরা আরাফ/২৬ আবু দাউদ/৪১০০
৯।তাদেরকে অসৎ বন্ধুর সাথে মিশতে দেয়া যাবেনা।
তিরমিযি/২৫৫২
১০।তাদের সামনে অমুসলিম দের ধর্মকে উপহাস করা যাবেনা। সূরা আনয়াম/১০৮
১১। তাদেরকে কুরুচিপূর্ণ বই, পত্র পড়তে দেয়া যাবেনা।
১২।বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পর তাদের কে বাসার বাইরে যেতে দেয়া যাবেনা।
১৩। ।সন্তান কে কখনো তিরস্কার,ধমক,মন্দ ,বোকা ,গাধা অপদার্থ বলা যাবেনা।
১৪। তাদের সাথে অহমিকা পূর্ণ কথা বলা যাবেনা।
সূরা লোকমান/১৮
১৫। তাদেরকে মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আশ্বাস দেয়া দেয়া যাবেনা।
১৬। তাদের সামনে বিপদে আপদে ধর্য্য হারা ( অস্থীর) হওয়া
যাবেনা। সূরা লোকমান/১৭
১৭।। তাদের সামনে অশ্লীল কথা কথা বলা যাবেনা।
সূরা লোকমান/১৯
১৮।।তারা কোন ইচ্ছা আকাংখা প্রকাশ করলে তা অবজ্ঞা করা যাবেনা ।সূরা লোকমান/১৮
১৯।তাদের কে একেবারে ই স্বাধীন ভাবে ছেড়ে দেয়া যাবেনা,
আবার কঠিন বন্ধনে ও আবদ্ধ রাখা যাবেনা।
২০। সন্তানের সামনে অন্য মানুষ কে অসন্মান করা যাবেনা।
২১। তাদেরকে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যাবেনা।
২২। তাদেরকে অসৎ পাত্র পাত্রীর সাথে বিবাহ দেয়া যাবেনা।
২৩। তাদের প্রতি সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে দেয়া
যাবেনা।
২৪।তাদের প্রাইভেসির উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা যাবেনা।
২৫। তাদের কে তথাকথিত আধুনিকতায় গা ভাসিয়ে চলতে দেয়া যাবেনা।
২৬। কোন সন্তান কেই অভিশাপ দেয়া যাবেনা।
২৭। সন্তান কে পরকাল সম্পর্কে বেখবর রাখা যাবেনা।
২৮। সন্তান কে সাথে নিয়ে অবৈধ কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না।
২৯। সন্তান কে কথায় কথায় ধমক দেয়া যাবেনা।
৩০।এক মাত্র নামাজ না পড়লে মৃদু প্রহার করা ছাড়া কখনো গায়ে হাত তোলা যাবেনা।
লেখক, হজরত মাওলানা আলিফ হোসাইন হাফিজাহুল্লাহু