জিজ্ঞাসা-১২৮৪৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। জামাআতের সালাতে মুকতাদী যদি গোটা সালাতে কোন তাসবীহ- ই আদায় না করে(যেমন রুকুসাজদার তাসবীহ,আত্তাহিয়্যাতু ইত্যাদি)ইমামের সাথে সালাম ফিরায়ে সালাত শেষ করলো,তাহলে (মাকরুহ হলেও)তার সালাত আদায় হবে? হলে অথবা না হলে, কেন?
তারিখ: ১৮/১১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবুসুমাইয়া মোঃ শাহজাহান শেখ। থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
রুকু-সিজদার তাসবিহ অধিকাংশ ফুকাহার মতে সুন্নাত। যেমন,
الأوَّلُ:
أنَّ التَّسبيحَ في الرُّكوعِ والسُّجودِ سنَّةٌ، وهو مذهبُ جمهورِ العلماء؛ مِن الحنفيَّةِ ، والمالكيَّةِ ، والشافعيَّةِ، وروايةٌ عن الإمام أحمدَ.
وقال النووي: " وَاعْلَمْ أَنَّ التَّسْبِيحَ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ سُنَّةٌ؛ غَيْرُ وَاجِبٍ. هَذَا مَذْهَبُ مَالِكٍ وَأَبِي حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيِّ رَحِمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى وَالْجُمْهُورُ" انتهى من "شرح النووي على مسلم" (4/197).
নিশ্চয়ই রুকু ও সিজদায় তাসবিহ পাঠ করা সুন্নাত, জমহুর ওলামাদের মতে, তাদের মধ্যে হলেন, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফি রহ. আর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর এক মতই তাই।
ইমাম নববি রহ. বলেন, জেনে রাখ! রুকু- সিজদায় তাসবিহ পাঠ করা সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। এটা হানাফি, মালিকি ও শাফি মাজহাবের সিদ্ধান্ত এবং জমহুরের মতেও। সূত্র: শারহুন নাওয়াবি আলা মুসলিম-৪/১৯৭
জমহুরের দলিল:
793 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: أَخْبَرَنِي يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدٌ المَقْبُرِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ المَسْجِدَ، فَدَخَلَ رَجُلٌ، فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ، فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلّى الله عليه وسلم فَرَدَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ السَّلاَمَ، فَقَالَ: «ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» ، فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ، فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «ارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» ثَلاَثًا، فَقَالَ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ، فَمَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ، فَعَلِّمْنِي، قَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ، فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا»
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একসময়ে নবী (ﷺ) মসজিদে তাশরীফ আনলেন, তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করলো। তারপর সে নবী (ﷺ) কে সালাম করলো। নবী (ﷺ) তার সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে নামায আদায় কর, কেননা, তোমার নামায আদায় যথার্থ হয়নি। লোকটি আবার নামায আদায় করল এবং পুনরায় এসে নবী (ﷺ)কে সালাম দিল। তিনি বললেনঃ আবার গিয়ে নামায আদায় কর, কেননা, তোমার নামায আদায় যথাযথ হয়নি। এভাবে তিনবার ঘটনার পূনরাবৃত্তি হলো। তারপর লোকটি বলল, সে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর নামায আদায় করতে জানিনা। কাজেই, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পড়বে। এরপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ আদায় করবে। তারপর রুকূ’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর পূর্ণ নামায এভাবে আদায় করবে। তাখরিজ: বুখারি-৭৯৩; মুসলিম-৩৯৭
ব্যাখ্যা:
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
أنَّ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم علَّمَ الأعرابيَّ الصَّلاةَ، وليس فيها تسبيحٌ
নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুইন কে সালাত শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু তার মধ্যে তাসবীহ নেই। সূত্র: শারহু সহিহুল বুখারি -২/৪১৪, ইবনে বাত্তাল
দ্বিতীয় কথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে তাশাহুদ পাঠ করা ওয়াজিব, ফিকহি শাফির মতে ফরজ আর ফিকহি মালিকর মতে সুন্নাত।
ফিকহি হানাফির দলিল:
أَخْبَرَنَا سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبُو عُبَيْدِ اللَّهِ الْمَخْزُومِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، وَمَنْصُورٌ، عَنْ شَقِيقِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ كُنَّا نَقُولُ فِي الصَّلاَةِ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ التَّشَهُّدُ السَّلاَمُ عَلَى اللَّهِ السَّلاَمُ عَلَى جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَقُولُوا هَكَذَا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ هُوَ السَّلاَمُ وَلَكِنْ قُولُوا التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ " .
ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা তাশাহ্হুদ-এর বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে নামাযে বলতামঃ আল্লাহর উপর সালাম, জিবরাঈল ও মীকাঈলের উপর সালাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা এরূপ বলবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলাই স্বয়ং সালাম বরং তোমরা বলবেঃ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১২৭৭ (আন্তর্জাতিক নং ১২৭৭)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
বর্ণনাকারী: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) (মৃত্যু ৩২ হিজরী)
প্রশ্ন: ক। ইমামের পিছনে তাশাহুদ পাঠ না করলে নামাজ হবে কি?
উত্তর: ক। ফিকহি হানাফির মতে ইমামের পেছনে তাশাহুদ পাঠ না করলে মাকরুহ এর সাথে নামাজ আদায় হবে। দলিল -
قالوا: إنه إذا ترك التشهد تكون صلاته صحيحة مع كراهة التحريم.
অর্থাৎ যখন তাশাহুদ ছেড়ে দেবে, তখন নামাজ মাকরুহ তাহরীম এর সাথে নামাজ আদায় হবে। সূত্র: ফিকহুল ইবাদাত, সিফাতুস সালাত-৫৯৮২৬ (ফতোয়া নং)
সারকথা হলো, তাকবীরে তাহরিমা ফরজ, এটা ব্যতীত অন্যান্য তাকবীর গুলো সুন্নাত, রুকু-সেজদার তাসবিহ সুন্নাত, দরুদ ও দোয়া মাসুরা সুন্নত, তাশাহুদ ওয়াজিব। সুতরাং কেউ তা তাশাহুদ ছেড়ে দিলে, ওয়াজিব তরক এর কারণে পুনরায় ঐ নামাজটি আদায় করা ওয়াজিব।
والله اعلم بالصواب