জিজ্ঞাসা-১২৮৪৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। যোহরের নামাজ ছোট ছুড়া দিয়ে আদায় করতে হয়। এই ধরনের কোন হাদিস আছে কি? দিলে উপকৃত হব ।
তারিখ: ০২/১১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুল মান্নান, কুমিল্লা থেকে।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته حمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
যোহর নামাজ ছোট সূরা আদায় করতে হয়, এরূপ কোন হাদিস আছে বলে জানা নেই। ছোট তিন আয়াত পরিমাণ তেলাওয়াত করলে নামাজ হয়ে যাবে। তবে যোহর নামাজের তিওয়ালে মুফাসসাল বা বড় সূরা দিয়ে নামাজ পড়া সুন্নত। উল্লেখ্য যে তেওয়ালে মুফাস্সাল নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যে সূরায় ত্রিশ আয়াত রয়েছে বা সমপরিমাণ তাকে তেওয়ালে মুফাস্সাল বলে। দলিল -
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الْوَلِيدِ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ أَبِي الصِّدِّيقِ النَّاجِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ فِي صَلاَةِ الظُّهْرِ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ قَدْرَ ثَلاَثِينَ آيَةً وَفِي الأُخْرَيَيْنِ قَدْرَ خَمْسَ عَشَرَةَ آيَةً أَوْ قَالَ نِصْفَ ذَلِكَ وَفِي الْعَصْرِ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ قَدْرَ قِرَاءَةِ خَمْسَ عَشْرَةَ آيَةً وَفِي الأُخْرَيَيْنِ قَدْرَ نِصْفِ ذَلِكَ .
৮৯৯। শায়বান ইবনে ফাররূখ (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) যোহরের প্রথম দুই রাকআতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ কিরা’আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকআত পনের আয়াত পরিমাণ। অথবা বলেন, এর অর্ধেক পরিমাণ। এবং আসরের প্রথম দুই রাকআতের প্রত্যেক রাক’আতে পনের আয়াত পরিমাণ কিরাআত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৯ (আন্তর্জাতিক নং ৪৫২-২)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ جَمِيعًا عَنْ هُشَيْمٍ، - قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، - عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ أَبِي الصِّدِّيقِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كُنَّا نَحْزِرُ قِيَامَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فَحَزَرْنَا قِيَامَهُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ قَدْرَ قِرَاءَةِ الم تَنْزِيلُ السَّجْدَةِ وَحَزَرْنَا قِيَامَهُ فِي الأُخْرَيَيْنِ قَدْرَ النِّصْفِ مِنْ ذَلِكَ وَحَزَرْنَا قِيَامَهُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنَ الْعَصْرِ عَلَى قَدْرِ قِيَامِهِ فِي الأُخْرَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ وَفِي الأُخْرَيَيْنِ مِنَ الْعَصْرِ عَلَى النِّصْفِ مِنْ ذَلِكَ . وَلَمْ يَذْكُرْ أَبُو بَكْرٍ فِي رِوَايَتِهِ الم تَنْزِيلُ وَقَالَ قَدْرَ ثَلاَثِينَ آيَةً .
৮৯৮। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া ও আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যোহর ও আসরের নামায রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কিয়াম (দাঁড়ান) এর পরিমাপ করতাম। যোহরের প্রথম দুই রাকআতে তাঁর কিয়াম, আলিফ লা-ম মীম তানযীল আস-সিজদা পাঠের সময়ের পরিমাণ হত। আর শেষ দুই রাকআতে তার অর্ধেক পরিমাণ। আসরের প্রথম দুই রাকআত যুহুরের শেষ দু-রাকআতের পরিমাণ দাঁড়াতেন এবং আসরের শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ এবং আবু বকর (রাযিঃ) তার রিওয়ায়াতে সূরা আলিফ লা-ম মীম তানযীল-এর উল্লেখ করেন নি, বরং ত্রিশ আয়াত পরিমাণ বলেছেন। —সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৮ (আন্তর্জাতিক নং ৪৫২-১)
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, রসূল স. যোহরের নামাযে আলিফ লাম মীম সিজদা বা ভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী ৩০ আয়াত বিশিষ্ট ছূরা তিলাওয়াত করেছেন। আর এটা তিওয়ালে মুফাছ্ছাল (হুজুরাত থেকে বুরুজ পর্যন্ত)-এর সমপরিমাণ বা তার কাছাকাছি হয়। আর আসরের নামাযে তিনি যোহরের অর্ধেক পরিমাণ তিলাওয়াত করেছেন যা আওসাতে মুফাছ্ছাল (ত্বরিক থেকে বায়্যিনাহ পর্যন্ত)-এর সমপরিমাণ হয়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, যোহরের নামাযের উত্তম কিরাত হলো তিওয়ালে মুফাছ্ছাল। আর আসরের নামাযের উত্তম কিরাত হলো আওসাতে মুফাছ্ছাল। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯২) এর বিপরীতে মুসলিম শরীফের ৯১৩ নং হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রসূলুলস্নাহ স. যোহরের নামাযে ছূরা আল-লাইল পড়তেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি যোহরের নামাযে আওসাতে মুফাছ্ছাল (ত্বরিক থেকে বায়্যিনাহ পর্যন্ত) পড়তেন। এটাও আমল করা যেতে পারে।
হাদিস নং-০৩
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ شُجَاعٍ الْمَرُّوذِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا بَكْرِ بْنَ النَّضْرِ، قَالَ كُنَّا بِالطَّفِّ عِنْدَ أَنَسٍ فَصَلَّى بِهِمُ الظُّهْرَ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ إِنِّي صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الظُّهْرِ فَقَرَأَ لَنَا بِهَاتَيْنِ السُّورَتَيْنِ فِي الرَّكْعَتَيْنِ بِـ ( سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى ) وَ ( هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ ) .
৯৭৫। মুহাম্মাদ ইবনে শুজা মারওয়াযী (রাহঃ) ......... আবু বকর ইবনে নযর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ‘তফ’- নামক স্থানে আনাস (রাযিঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাদের নিয়ে যোহরের নামায আদায় করলেন। নামায শেষ করে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে যোহরের নামায আদায় করেছি। তিনি দু’রাকআতে আমাদের জন্য সাব্বিহিসমা- রবিকাল আলা এবং হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ পাঠ করলেন।
—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৯৭২ (আন্তর্জাতিক নং ৯৭২)
দ্বিতীয় কথা হলো, প্রথম রাকাতে সূরা লম্বা হওয়া আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ছোট হওয়া সুন্নাত। দলিল -
أَخْبَرَنَا عِمْرَانُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ خَالِدِ بْنِ مُسْلِمٍ، - يُعْرَفُ بِابْنِ أَبِي جَمِيلٍ الدِّمَشْقِيِّ - قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَمَاعَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ بِأُمِّ الْقُرْآنِ وَسُورَتَيْنِ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنْ صَلاَةِ الظُّهْرِ وَصَلاَةِ الْعَصْرِ وَيُسْمِعُنَا الآيَةَ أَحْيَانًا وَكَانَ يُطِيلُ فِي الرَّكْعَةِ الأُولَى .
৯৭৮। ইমরান ইবনে ইয়াযীদ ইবনে খালিদ মুসলিম (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যোহর এবং আসরের প্রথম দু’রাক'আতে সূরা ফাতিহা এবং দুটি সূরা পাঠ করতেন। আর কোন কোন সময় আমাদের আয়াত শুনাতেন। আর তিনি প্রথম রাকআত লম্বা করতেন। সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৯৭৫ (আন্তর্জাতিক নং ৯৭৫)
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. প্রত্যেক ফরয নামাযের প্রথম রাকাত দ্বিতীয় রাকাতের তুলনায় লম্বা করতেন। অতএব, এটাই সুন্নাত এবং উত্তম পদ্ধতি। এখানে নমুনা হিসেবে দুই ওয়াক্ত নামাযের বর্ণনা পেশ করা হয়েছে। এটাই হানাফী মাযহাবের মত।
সারকথা হলো, ছোট সূরা বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন, তা পরিষ্কার নয়। শরিয়তের পরিভাষায় কিসারে মুফাস্সাল (ছোট সূরা) বলতে সূরা বাইয়িনাত থেকে নাস পর্যন্ত।
উক্ত সূরা যোহর নামাজে পাঠ করার ব্যাপারে কোন নস আছে বলে জানা নেই।
والله اعلم بالصواب