আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-১২৩৫০: বিড়ি, সিগারেট, গুল,জর্দ্দা,পান তামাক ও হেরোইন,গাঁজা আফিং সহ মাদকের হুকুম?

No Comments

 











জিজ্ঞাসা-১২৩৫০:

 বিড়িসিগারেটগুল,জর্দ্দা,পান তামাক ও  হেরোইন,গাঁজা আফিং সহ মাদকের হুকুম সম্পর্কে জানাবেন ৷

لله تأمنوا و تؤجروا ، তারিখ২১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

 

মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস আলী,সুদান   থেকে।

 

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো হেরোইন,গাঁজা-আফিম তথা মাদক দ্রব্যের সরাসরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বিড়ি,সিগারেট,গুল-জর্দা, পান তামাক এর ব্যাপারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞার নস নেই।  যাই হোক আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।  ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين

 

প্রশ্ন:   ক। বিড়ি-সিগারেট ধুমপান করার বিধান কি?

উত্তর: ক। এ বিষয়ে ওলামাদের দুটি মত পাওয়া যায়।  একটি মত মাকরুহ অপরটি হারাম।

 

প্রথম মত মাকরুহ যারা মাকরুহ বলেন, তাদের  দলিল/যুক্তি হলো-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: وَلَا أَعْلَمُهُ إِلَّا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () ইরশাদ করেছেনপ্রতিটি মাতাল করে দেয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২০০৩ইবনে মাজাহ-৩৩৯০মুসনাদে আহমাদ-৪৮৩০

ব্যাখ্যা: বিড়ি-সিগারেট যেহেতু ব্যক্তিকে মাতাল করে না। আর তা মাতাল হবার জন্য খাওয়া হয় না। তাই হারাম নয়।  

দ্বিতীয় মত, হারাম:  হারামের প্রবক্তাগণও সরাসরি হারাম বলেন না।  বরং কিছু উসূলের ভিত্তিতে বা ইল্লত-এর কারণে হারাম বলেন। তিনটি কারণে হারাম হয়।


(০১) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়-অপব্যয়। আর ইসলামে তা হারাম। দলিল:

 

আয়াত নং-০১

وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا

এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। সূরা ইসরা,২৬-২৭

 

আয়াত নং-০২

 وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ 

এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না ূরা আরাফ-৩১

 

রাসুল (বলেছেন,

إِنّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلاَثًا قِيلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السّؤَالِ  আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা ২. সম্পদ নষ্ট করা৩. অধিক প্রশ্ন করা।  তাখরিজবুখারি-১৪৭৭মুসলিম-৫৯৩

 

(০২) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। যা (বিভিন্ন রোগের মাধ্যমে)  ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।  আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরইসলামে তা হারাম। দলিল:

 

আয়াত নং-০১

 وَلَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا  

অর্থ: আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। সূরা নিসা-২৯

 

আয়াত নং-০২

وَاَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّہۡلُکَۃِ

তোমরা আল্লাহ্ র পথে ব্যয় কর আর নিজেদের হাতে নিজে-দেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না। সূরা বাকারা-১৯৫

 

ব্যাখ্যা: ধুমপান করা পরোক্ষভাবে নিজেকে হত্যা করার শামিল।

 

 (০৩) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। অপরকে/কোন মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া হারাম। দলিল:

 

وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا অর্থ: যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। সূরা আহজাব-৫৮

 

প্রশ্ন:   খ। গুলর্দা, তামাক পাতা খাওয়া কি?

উত্তর: খ।  গুল-জর্দা, তামাক পাতাও সম্পর্কে দুটি মতামত রয়েছে। হারাম ও মাকরুহ ।


প্রথমমত হারাম: যারা হারাম বলেন, তাদের যুক্তি হলো গুল-জর্দা সরাসরি তামাক পাতা থেকে তৈরি। আর তামাক বা তামাকজাত নেশাদ্রব্য তাই সেটাও হারাম।  

 

দ্বিতীয়মত মাকরুহ: যারা মাকরুহ বলেন, তাদের যুক্তি হলো,  তামাককে খানিক পরিশোধন করে জর্দা বানানো হয়ে থাকে। ফলে জর্দায় তেমন কোন নেশাই থাকে না। শুধুমাত্র নেশার প্রাথমিক উপকরণ হওয়াই যদি কোন কিছু নিষিদ্ধ হবার মানদণ্ড হয়

এখন প্রশ্ন হলযেহেতু খেজুরআঙ্গুর ও কিশমিশ মদের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই কি এসব খাওয়া নাজায়েজ?

অবশ্যই নয়। কারণকোন কিছু মাদকের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হলেই যতক্ষণ না তা মাদকে পরিণত হয়ততক্ষণ সেটিকে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই।


প্রশ্ন:   গ। হেরোইন,গাঁজা আফি বা মাদকের হুকুম কি?


উত্তর: গ। আমার জানামতে হেরোইন, গাঁজা, বাবা , ফেনসিডিল বা নেশাজাত দ্রব্য যা মাতাল করে মস্তিষ্ককে বিকৃত করে তা হারাম। দলিল:


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٥:٩٠

হে মুমিনগণ,এই যে মদ,জুয়া,প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএবএগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। [সূরা মায়িদা-৯০]

হাদিস নং-০১

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: وَلَا أَعْلَمُهُ إِلَّا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল () ইরশাদ করেছেনপ্রতিটি মাতাল করে দেয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২০০৩ইবনে মাজাহ-৩৩৯০মুসনাদে আহমাদ-৪৮৩০

 হাদিস নং-০২

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ الْخَمْرَ، فَجَلَدَهُ بِجَرِيدَتَيْنِ نَحْوَ أَرْبَعِينَ»، قَالَ: وَفَعَلَهُ أَبُو بَكْرٍ، فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ، فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ: أَخَفَّ الْحُدُودِ ثَمَانِينَ، «فَأَمَرَ بِهِ عُمَرُ»،

হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল (র কাছে মাদ পান করা এক ব্যক্তি আসল। তখন তাকে খেজুর গাছের দুটি ডাল দিয়ে চল্লিশ বেত্রাঘাত করা হয়।[এক বেতে চল্লিশ হলেদুই বেতের দ্বারা হচ্ছে আশি] একই পদ্ধতিতে আবু বকর রাঃ ও এ অপরাধের শাস্তি দিতেন। তারপর যখন হযরত উমর রাঃ এর সময় আসল। তিনি লোকদের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করলেন। তখন আব্দুর রহমান পরামর্শ দিলেন যেকমপক্ষে আশি বেত্রাঘাত। [দুই ডাল একসাথে নয়বরং আলাদা করে আশিটি] তখন হযরত উমর রাঃ আশিটি বেত্রাঘাতের হুকুম দিলেন। তাখরিজ:  মুসলিম-১৭০৬


হাদিস নং-০৩

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ شَرِبَ الخَمْرَ فِي الدُّنْيَا، ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا، حُرِمَهَا فِي الآخِرَةِ»

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ () বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে অতঃপর তা থেকে তাওবাহ করেনিসে আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাকরিজ: মুসলিম ৩৬/৮হাঃ ২০০৩আহমাদ ৪৬৯০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২

হাদিস নং-০৪
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ شَرِبَ الخَمْرَ فِي الدُّنْيَا، ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا، حُرِمَهَا فِي الآخِرَةِ»

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ () বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে অতঃপর তা থেকে তাওবাহ করেনিসে আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। [মুসলিম ৩৬/৮হাঃ ২০০৩আহমাদ ৪৬৯০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)


 সারকথা হলো, গাঁজা, ইয়াবা, বাবা, ফেনসিডিল, হিরোইন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, মরফিন,বিয়ার, জাওয়া ইত্যাদি যে নামই হোক কেন, যা মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি সাধন করে,অচেতন, মাতাল করে এ ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম। তবে বিড়ি-সিগারেট  সরাসরি হারাম বলা না হলেও কমপক্ষে মাকরুহ তাহরিমি, কেননা সেগুলোও ধীরে ধীরে মাদকের মতই ক্ষতি করে। আর গুল-জর্দা যেহেতু স্বাস্থ্যগত ক্ষতি রয়েছে, সেটাও পরিহার যোগ্য।


والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক