আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৫৭: বৃহস্পতিবারে নখ - গোঁফ কাটা কি সুন্নাত বা সুস্তাহাব?

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৬৫৭:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম আমার জানার বিষয় হলো: প্রতি বৃহস্পতিবার

নখ, গোঁফ কাটা সুন্নত বা মুস্তাহাব এই মর্মে কোন বর্ননা থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন।নুরুল ইসলাম খুলনা।

তারিখ:  ৩০/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা   থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, বৃহস্পতিবারে নখ ও গোঁফ কাটার বিষয়ে কোনো হাদিস নেই। তবে সাহাবায়ে কেরাম শুক্রবার নখ-চুল কেটেছেন  বলে প্রমাণিত আছে। দলিল:


وقد ورد أن ابن عمر أنه كان يفعله، فقد روى البيهقي في السنن الكبرى: عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ، كَانَ يُقَلِّمُ أَظْفَارَهُ، وَيَقُصُّ شَارِبَهُ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ. وهو أثر صحيح ذكره الإمام النووي في خلاصة الأحكام، ثم قال بعده: رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَاد صَحِيح، وَصَححهُ. انتهى..

আজাদ নাফে রহমাতুল্লাহ আলাই বর্ণনা করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. প্রত্যেক শুক্রবারে নখ-গোফ কাটতেন। সুনানে বাইয়াকি

নোট: সনদ সহিহ।



لهذا يذكره الفقهاء في كتبهم مما يستحب فعله يوم الجمعة، قال الإمام النووي في المجموع: وَقَدْ نَصَّ الشَّافِعِيُّ وَالْأَصْحَابُ -رَحِمَهُمْ اللَّهُ- عَلَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ تَقْلِيمُالْأَظْفَارِ، وَالْأَخْذُ مِنْ هَذِهِ الشُّعُورِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ. انتهى.

 আর এ কারণেই ফোকাহায়ে কেরাম শুক্রবারে নখ-গোফ কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।  ইমাম নববি রহ আল-মাজমু'তে বলেছেন: আল-শাফিঈ  রহ এবং তাঁর সঙ্গীরা বলেছেন যে, শুক্রবারে  নখ  এবং  চুল কাটা মুস্তাহাব। সূত্র: তাকলিমুল আযফার সুন্নাতুন, ফতোয়া নং -২০৪৭


সারকথা হলো, বৃহস্পতিবার নয় শুক্রবার নখ এবং চুল কাটা মুস্তাহাব।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা -১২৪৬২: ইসলামে নখ - চুল কাটা সম্পর্কে বিধান?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৪৬২:  মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। নখ কাটা, চুল কাটা সম্পর্কে রেফারেন্স সহ কিছু হাদীস প্রয়োজন। জাঝাকাল্লাহ


 তারিখ: ০৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম রাজশাহী থেকে



  জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 


তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোধগম্যের জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।

ক। চুলের বিধান:

চুল বলতে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন, মাথার চুল, গোঁফ, দাড়ি, বগলের চুল নাভির নিচে চুল ইত্যাদি।


প্রশ্ন: ক। মাথার চুলের বিধান?

উত্তর: ক।  চুল রাখার পদ্ধতি হলো তিনটি বাবরী রাখা, ছোট করে রাখা এবং হলক বা ন্যাড়া করা।

০১. বাবরী রাখা: পুরুষের জন্য এভাবে রাখা সুন্নত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই বাবরী রেখেছেন। 

বাবরী তিনি কিভাবে রাখতেন?

এ বিষয়ে তিন ধরণের বর্ণনা এসেছে। যথা-

১. ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল। দলিল:

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4185)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল তাঁর দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল।  {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫}


২. লিম্মা তথা গর্দান ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা। দলিল:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَالْجُمَّةِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث–4187

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল ঘাড়ের উপর এবং কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৭}


৩.জুম্মা তথা ঘাড় পর্যন্ত আলম্বিত চুল। দলিল:


عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ: «لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4183)

হযরত বারা বিন আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী, লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহঃ অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৩}

০২. চুল ছোট  চারদিকে সমান করে রাখা: সাহাবায়ে কেরাম চুল ছোট করে রেখেছেন। দলিল:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ، وَسُفْيَانُ بْنُ عُقْبَةَ السُّوَائِيُّ، - هُوَ أَخُو قَبِيصَةَ - وَحُمَيْدُ بْنُ خُوَارٍ عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَلِي شَعْرٌ طَوِيلٌ فَلَمَّا رَآنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " ذُبَابٌ ذُبَابٌ " . قَالَ فَرَجَعْتُ فَجَزَزْتُهُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ مِنَ الْغَدِ فَقَالَ " إِنِّي لَمْ أَعْنِكَ وَهَذَا أَحْسَنُ " .

ওয়ায়েল ইবনে হুজ্‌র (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নবী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হই, আর এ সময় আমার মাথার চুল খুবই লম্বা ছিল। তিনি আমাকে দেখে বলেনঃ অশুভ! অমঙ্গলজনক! তিনি বলেনঃ তখন আমি ফিরে আসি এবং চুল কেটে ফেলি (ছোট করি)। পরদিন আমি যখন তাঁর কাছে আসি, তখন তিনি বলেনঃ আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি, ইহাই উত্তম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৪২ (আন্তর্জাতিক নং ৪১৯০)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)


০৩. হলক বা ন্যাড়া করা: রাসূলুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডাতেন। এছাড়া তিনি কখনো মাথা মুণ্ডাননি। এ সময় তিনি মাথা মুণ্ডানোকে চুল ছোট করে রাখার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এজন্য ইমাম তাহতাবী রহ. বলেন, মাথা ন্যাড়া করাও সুন্নাত । আর কিছু অংশ মুণ্ডানো ও কিছু রেখে দেয়া নিষেধ।

কতিপয় ফকিহদের দৃষ্টিতে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলাও সুন্নত। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৫/১৪৯, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/৪৩


০২. দাড়ি রাখার বিধান: এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -১৩১ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। লিংকটি পুনরায় শেয়ার করা হবে।

০৩. গোঁফ, বগলের নিচে চুল  ও নাভির নিচের চুল এর বিধান:

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ‏"‏ ‏.‏ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ ‏.‏ قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ ‏.‏
 ‏

 আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …… 'আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ দশটি জিনিস ফিতরাত বা মানবীয় স্বভাবজাত। তা হলোঃ গোঁফ ছোট করে কাটা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকের ছিদ্রপথ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলের ময়লা ধৌত করা বগলের পশম উপড়ে ফেলা নাভির নিচের পশম পারিষ্কার করা ও শৌচ করা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা।
যাকারিয়া (র) বলেন, মুসআব (রা) বলেছেনঃ আমি দশম জিনিসটির কথা ভুলে গেছি, তবে
সম্ভবত তা হলো কুলি করা।

—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯৩ (আন্তর্জাতিক নং ২৯৩)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)

নোট: কেননা হাদীছে যে সকল শব্দ (أَحْفُوْا، أَنْهِكُوْا، جُزُّوْا) ব্যবহৃত হয়েছে তা গোঁফ মুন্ডানো নয়, বরং ছাঁটার অর্থ বহন করে (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/২৮৭; আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২০৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮৪, ১২৮)। এমনকি গোঁফ চেঁছে ফেলাকে ইমাম মালেক বিদ‘আত বলেছেন, যেটি লোকদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আছে। এরূপ আমলকারী ব্যক্তিকে প্রহার করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন (বায়হাক্বী ১/১৫১ পৃ., হা/৬৮২

প্রশ্ন: ক।  অবাঞ্ছিত লোম  এবং নখ কাটার বা পরিষ্কার করার কোন সময়সীমা আছে কি? না করলে কোন গুনাহ হবে কি?

উত্তর: ক। হ্যা, চল্লিশ দিন।  ৪০ দিন অতিক্রান্ত  হলে গুনাহ হবে। দলিল:

 حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، كِلاَهُمَا عَنْ جَعْفَرٍ، - قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، - عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الْجَوْنِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً .

অর্থ: আনাস ইবনে মালিক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাড়ির নীচের পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, চল্লিশ দিনের অধিক যেন না রাখি। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯২ (আন্তর্জাতিক নং ২৫৮)


খ। নখ কাটার বিধান:


يُسَنُّ تقليمُ الأظفارِ، وهذا باتِّفاقِ المَذاهِبِ الفِقهيَّةِ الأربَعةِ: الحنفيَّة، والمالكيَّة، والشَّافعيَّة، والحنابلةِ، وحُكِيَ الإجماعُ على ذلك
الأدلَّة مِن السُّنَّةِ:

অর্থাৎ নখ কাটা সুন্নত এ বিষয়ে ফিকহি চার ইমাম (ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.) ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সূত্র: আলইনাইয়াতু শরহুল হিদায়া -১/৫৬

সুন্নাতের দলিল:

হাদিস নং -০১

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ الْفِطْرَةُ خَمْسٌ - أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ - الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ ‏"‏ ‏.

অর্থ: আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ফিতরাত পাঁচটি, অথবা পাঁচটি জিনিস মানবীয় স্বভাবজাত। খতনা করা, নাভীর নিচের লোম সাফ করা, নখসমূহ কাটা, বগলের পশম তুলে ফেলা এবং গোঁফ ছোট করে কাটা।

—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯২ (আন্তর্জাতিক নং ২৯২)

হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ‏"‏ ‏.‏ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ ‏.‏ قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ ‏.‏
 ‏

 আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …… 'আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ দশটি জিনিস ফিতরাত বা মানবীয় স্বভাবজাত। তা হলোঃ গোঁফ ছোট করে কাটা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকের ছিদ্রপথ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলের ময়লা ধৌত করা বগলের পশম উপড়ে ফেলা নাভির নিচের পশম পারিষ্কার করা ও শৌচ করা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা।
যাকারিয়া (র) বলেন, মুসআব (রা) বলেছেনঃ আমি দশম জিনিসটির কথা ভুলে গেছি, তবে
সম্ভবত তা হলো কুলি করা। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯৩ (আন্তর্জাতিক নং ২৯৩)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)


প্রশ্ন: ক। শুক্রবারে নখ -গোফ কাটা কি সুন্নাত বা কোন হাদিস আছে?

উত্তর: ক।  শুক্রবারের নখ ও গোঁফ কাটার বিষয়ে কোনো হাদিস নেই। তবে সাহাবায়ে কেরাম শুক্রবার নখ-চুল কেটেছেন  বলে প্রমাণিত আছে। দলিল:

وقد ورد أن ابن عمر أنه كان يفعله، فقد روى البيهقي في السنن الكبرى: عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ، كَانَ يُقَلِّمُ أَظْفَارَهُ، وَيَقُصُّ شَارِبَهُ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ. وهو أثر صحيح ذكره الإمام النووي في خلاصة الأحكام، ثم قال بعده: رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَاد صَحِيح، وَصَححهُ. انتهى.

لهذا يذكره الفقهاء في كتبهم مما يستحب فعله يوم الجمعة، قال الإمام النووي في المجموع: وَقَدْ نَصَّ الشَّافِعِيُّ وَالْأَصْحَابُ -رَحِمَهُمْ اللَّهُ- عَلَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ تَقْلِيمُالْأَظْفَارِ، وَالْأَخْذُ مِنْ هَذِهِ الشُّعُورِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ. انتهى.

আজাদ নাফে রহমাতুল্লাহ আলাই বর্ণনা করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. প্রত্যেক শুক্রবারে নখ-গোফ কাটতেন। সুনানে বাইয়াকি

নোট: সনদ সহিহ।

 আর এ কারণেই ফোকাহায়ে কেরাম শুক্রবারে নখ-গোফ কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। সূত্র: তাকলিমুল আযফার সুন্নাতুন, ফতোয়া নং -২০৪৭

প্রশ্ন: খ।  কর্তনকৃত নখ কি মাটিতে দাফন করা জরুরি?

উত্তর: খ। يجوز رَمْيُ الظُّفر في أيِّ مكانٍ، ولا يجِبُ دَفنُه. سُئل ابن باز: هل يجب دَفنُ الشَّعرِ المتساقِطِ والأظافر المقصوصة في التُّراب؟ فقال: (ليس بلازمٍ؛ يُلقيها في القمامة، والحمدُ لله، ما فيه دليلٌ على دفنها، إذا ألقاها في القمامةِ كفَى، والحمد لله). ((فتاوى نور على الدرب لابن باز بعناية الشويعر)) (5/62

অর্থাৎ যেকোনো জায়গায় নখ ফেলা জায়েজ আছে এবং দাফন করা ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে শায়েখ ইবনে বাজ রহ কে জিজ্ঞেস করা হলো, নখ এবং চুল মাটিতে দাফন করা কি ওয়াজিব? তিনি জবাবে বললেন আবশ্যক নয়। সূত্র: ফাতাওয়া নুরি আলাল দারব লিইবনে বাজ-৫/৬২

তবে অবশ্য না হলেও ওলামায়ে কেরাম পছন্দ করেছে। যেমন, 

فقد استحب العلماء دفن ما انفصل من الأظافر والشعر، وسئل الإمام أحمد عن ذلك فأمر فيه بالدفن، وراجع فيه الفتوى رقم:  38921.

অর্থাৎ আলেমগণ নখ ও চুল থেকে যা আলাদা করা হয়েছে তা দাফন করার সুপারিশ করেছেন এবং ইমাম  আহমাদকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তাতে দাফনের নির্দেশ দেন ।
 ফাতওয়া নং-৩৮৯২১


প্রশ্ন: গ। নখ কাটার তারতীব বা ধারাবাহিকতা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি?


উত্তর: গ।  এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন,

وقال ابن حجر أيضًا: (لم يثبُت في ترتيبِ الأصابِعِ عند القصِّ شيءٌ مِن الأحاديث) ((فتح الباري)) (10/345). وقال السَّخاويُّ: 
কাটার সময় আঙ্গুলের বিন্যাস সম্পর্কে কোন হাদীসে প্রমাণিত নয়। সূত্র: ফাতহুল বারী -১০ খণ্ড,৩৪৫ পৃষ্ঠা।

তবে  ভিন্ন কিতাবে যে তারতীবগুলো বর্ণিত হয়েছে তা সুন্নত মনে না করে কাটলে সমস্যা নেই। যেমন,

উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামি, ৬/৪০৬; ফাতওয়ায়ে আলমগিরি, ৫/৩৫৮


প্রশ্ন: ঘ। নখ বড় রাখলে নামাজ হবে কি?

উত্তর: ঘ। নামাজ হবে। কিন্তু

والحد المطلوب في قص الظفر إزالة ما يزيد على ما يلامس رأس الإصبع، وذلك حتى لا يمنع الوسخ وصول الماء إلى البشرة في الطهارة ولو لم يُصَلِّ بَطَل الوضوء .

নখ কাটার ক্ষেত্রে যে সীমা প্রয়োজন তা হল আঙ্গুলের অগ্রভাগে যা স্পর্শ করে তার চেয়ে বেশি সরিয়ে ফেলা, যাতে ময়লা পরিষ্কার করার সময় ত্বকে পানি পৌঁছাতে বাধা না দেয়, এমনকি যদি না পৌঁছায় তবে অযু নষ্ট হয়ে যায়।

মূল কথা হলো,নখ বড় হওয়ার দরুন কোনো কারণে যদি নখের গোড়ায় পানি না পৌঁছে, তাহলে অজু শুদ্ধ হয় না। সূত্র: খুলাসাতুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ২২


নিচের হাদিস শরিফ সেদিকে ইঙ্গিত করে।

وطولها يخدِش ويضرُّ، يقول أبو أيوب الأنصاري: جاء رجل إلى النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فسأله عن خبر السماء، فنظر إليه النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فرأى أظفاره طِوالاً فقال ” يسأل أحدكم عن خبر السماء وأظفاره كأظفار الطير يجمع فيها الجَنابة والتَّفَث ” وهو الخبث. ” تفسير القرطبي ج2 ص 102 ” .

অর্থ: আবু ওয়াসিল বলেন, আমি আবু আইয়ুব (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। মুসাফাহার সময় তিনি আমার নখ বড় দেখে বললেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ কেউ আসমানের খবর জিজ্ঞাসা করো, অথচ তার হাতের নখগুলো পাখির নখের মতো, যাতে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে! তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩০১১; তাফসিরে কুরতুবি-২য় খণ্ড,১০২ পৃষ্ঠা


 

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা -১২৬৫৬: হাদিস শরিফ অনুসন্ধান

No Comments

 


জিজ্ঞাসা-১২৬৫৬:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

عن ابي امامه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان العبد لا يعطى كتابه يوم القيامه منشورا فيريه حسنات لم يعملها فيقول رب لم أعمل هذه الحسنات. فيقول أنها كتبت باغتياب الناس اياك و ان العبد ليعطى كتابه يوم القيامة منشورا فيقول رب أعمل حسنات يوم كذا وكذا فيقال له محيت عنك باغتيابك الناس হযরতজী এই হাদীস খানা কোন হাদীস গ্রন্থের। আচ্ছালামু আলাইকুম

তারিখ:  ৩০/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো,  আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবেক হাদিস শরিফ হলো:


٢- [عن أبي أمامة الباهلي:] إنّ الرَّجل ليؤتى كتابَه منشورًا فيقولُ: يا ربِّ فأين حسناتُ كذا وكذا عمِلتُها ليس في صحيفتي؟ فيقولُ: مُحِيت باغتيابِك النّاسَ.

المنذري (ت ٦٥٦)، الترغيب والترهيب ٤‏/١٥ • [لا يتطرق إليه احتمال التحسين]


আত-তারগিব ওয়াত তারহিব -৪২৮৩ নং হাদিস


নোট: শায়েখ আলবানি রহ হাদিসটিকে জাল বলেছেন।



 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে, হাফেজ মাওলানা  মুফতি সাজ্জাদ হোসেন 

জিজ্ঞাসা -১২৬৫৮: হালাল প্রাণীর কি কি জিনিস খাওয়া নিষেধ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৬৫৮:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। 

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মুফতি সাহেব। গরু বা ছাগলের কোন কোন অঙ্গ খাওয়া হারাম? জাযাকাল্লাহু খয়রান

তারিখ:  ০১/০৭/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

জনৈক মাওলানা  পাবনা থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ১। পুরুষ লিঙ্গ। ২. স্ত্রী লিঙ্গ। ৩. মুত্রথলি। ৪. মেরুদণ্ডের ভেতরের মগজ বা সাদা রগ। ৫. পিত্ত। ৬. অন্ডকোষ। ৭. চামড়ার নিচের টিউমারের মতো উঁচু গোশত। ৮. প্রবাহিত রক্ত। তবে এগুলোর ৮ম প্রকার প্রবাহিত রক্ত অকাট্য হারাম, বাকিগুলো মাকরুহে তাহরিমি। (আহসানুল ফাতাওয়া ৭/ ৪০৭)


প্রবাহিত রক্ত অকাট্য হারাম। এর দলিল হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার বাণী;

ل لاَّ أَجِدُ فِي مَا أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلاَّ أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ

আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র। (সূরা আলআনআ’ম ১৪৫)


বাকি অঙ্গ গুলোর দলিল:


أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحَافِظُ ، ثنا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذٍ , أَخْبَرَنِي يَزِيدُ بْنُ الْهَيْثَمِ ، أَنَّ إِبْرَاهِيمَ بْنَ أَبِي اللَّيْثِ ، حَدَّثَهُمْ ثنا الْأَشْجَعِيُّ ، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ ، عَنْ وَاصِلِ بْنِ أَبِي جَمِيلٍ ، عَنْ مُجَاهِدٍ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْرَهُ مِنَ الشَّاةِ سَبْعًا : الدَّمَ وَالْمَرَارَ وَالذَّكَرَ وَالْأُنْثَيَيْنِ وَالْحَيَا وَالْغُدَّةَ وَالْمَثَانَةَ ، قَالَ : وَكَانَ أَعْجَبَ الشَّاةِ إِلَيْهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُقَدِّمُهَا ،

অর্থ: আর মুজাহিদ রহ.  থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ  ﷺ বকরির পুরুষ লিঙ্গ, অন্ডকোষ, স্ত্রী লিঙ্গ , চামড়ার নিচের টিউমারের মতো উঁচু গোশত, পিত্ত, মুত্রথলি ও প্রবাহিত রক্ত অপসন্দ করেছেন।’ তাখরিজ: সুনানে বায়হাকি -১৮০৮৭



ব্যাখ্যা: 

وقال في البدائع آخر كتاب الذبائح : وما روي عن مجاهد فالمراد منه كراهة التحريم بدليل أنه جمع بين الستة وبين الدم في الكراهة والدم المسفوح محرم والمروي عن أبي حنيفة أنه قال : الدم حرام وأكره الستة فأطلق الحرام على الدم ، وسمى ما سواه مكروها لأن الحرام المطلق ما ثبتت حرمته بدليل مقطوع به وهو المفسر من الكتاب قال الله تعالى - { أو دما مسفوحا } -


এখানে মাকরুহ (অপসন্দ) দ্বারা উদ্দেশ্য, মাকরুহ তাহরিমি। কেননা, উক্ত ছয়টি বস্তুর উল্লেখ প্রবাহিত রক্তের সাথে করা হয়েছে। আর প্রবাহিত রক্ত হারাম। ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে বর্ণিত, রক্ত হারাম, ছয়টি বস্তু মাকরুহ। রক্ত হারাম; কেননা, তা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। আর তাহল, আল্লাহ তাআ’লার বাণী- أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا অথবা প্রবাহিত রক্ত।’ সূত্র: বাদাউস সানায়িআ-৫/৬১


সারকথা হলো, আহলে হাদিসের মতে, রক্ত ছাড়া সবই হালাল। এছাড়াও রগ জাতীয় জিনিস খাওয়া ঠিক নয়।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক

জিজ্ঞাসা-১২৫৫৫: ঈদের দিনের সুন্নাত -মুস্তাহাব দলিল সহ?

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-১২৫৫৫:

 

আসসালামু আলাইকুম।

মুহতারাম।

ঈদের দিনের তথা ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নাহ/মুস্তাহাবগুলো কি কি? নস/ রেফারেন্সসহ উল্লেখ ভালো হয়। জাযাকাল্লাহু খয়রান।

তারিখ:  ২১/৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা আব্দুর রহমান, সাভার থেকে।


জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো, ঈদের দিন রয়েছে ১৪ টি সুন্নত/মুস্তাহাব। নিম্নে তা নসসহ উল্লেখ করা হলো:


১. অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। [বায়হাকী, হাদীস নং-৬১২৬]


২. মিসওয়াক করা। [তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/৫৩৮]


৩. গোসল করা। দলিল:

حَدَّثَنَا جُبَارَةُ بْنُ الْمُغَلِّسِ، حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ تَمِيمٍ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ مِهْرَانَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الأَضْحَى ‏.‏

জুবারা ইবন মুগাল্লিস (র.) .......ইবন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন গোসল করতেন।

সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ১৩১৫ (আন্তর্জাতিক নং ১৩১৫;ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩১৫


وذكر النووي رحمه الله اتفاق العلماء على استحباب الاغتسال لصلاة العيد .

অর্থাৎ ইমাম নববি রহ. উল্লেখ করেছেন যে, সালাতুল ঈদের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব এ বিষয়ে ওলামারা ঐক্যমত পোষণ করেছেন।


৪. শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা।  দলিল:

قَالَ أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالْوُفُودِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ قُلْتَ " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". وَأَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ الْجُبَّةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ ". 

. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী (ﷺ) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোশাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাযিঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০১ (আন্তর্জাতিক নং ৯৪৮)


৫. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা।

قَالَ أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالْوُفُودِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ قُلْتَ " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". وَأَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ الْجُبَّةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ ". 

. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী (ﷺ) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোশাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাযিঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০১ (আন্তর্জাতিক নং ৯৪৮); মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং -৭৫৬০]


وعن جابر رضي الله عنه قال : كان للنبي صلى الله عليه وسلم جبة يلبسها للعيدين ويوم الجمعة . صحيح ابن خزيمة 1765

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চাদর ছিল যা তিনি দুই ঈদ ও শুক্রবারে পরিধান করতেন। সহীহ ইবনে খুযাইমাহ 1765


৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। দলিল: 

، ولما رُوِى عَنِ الْحَسَنِ بن عَلِى رَضِى اللهُ تَعَالَى عَنْهُما قَالَ: "أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وآله وسلم أن نَلْبَسَ أَجْوَدَ مَا نَجِدُ، وَأَنْ نَتَطَيَّبَ بِأَجْوَدِ مَا نَجِدُ" أخرجه الطبرانى فى "المعجم الكبير"، والحاكم.

অর্থ: আল-হাসান ইবনে আলী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমরা যা পাই তা সর্বোত্তম ব্যবহার করব এবং আমরা যে সর্বোত্তম সুগন্ধি পাই তা ব্যবহার করব।

 [মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০]


৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। দলিল: 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَغْدُو يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ. وَقَالَ مُرَجَّى بْنُ رَجَاءٍ حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنِي أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَيَأْكُلُهُنَّ وِتْرًا.

 আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়ায়াতে আনাস (রাযিঃ) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন। তাখরিজ: বুখারী, হাদীস নং-৯৫৩, তিরমিজী, হাদীস নং-৫৪২, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৬০৩


ইবনে হাজার,  রহ. ব্যাখ্যা করেছেন যে এটি রোজা বাড়ানোর অজুহাতে একটি বাধা এবং এটি আল্লাহর আদেশ মেনে চলার একটি উদ্যোগ। ফাতহুল বারী (২/৪৪৬)

আর যে খেজুর না পায়, সে যেন জায়েজ কিছু দিয়ে ইফতার করে।



وأما في عيد الأضحى فإن المستحب ألا يأكل حتى يرجع من الصلاة فيأكل من أضحيته إن كان له أضحية ، فإن لم يكن له من أضحية فلا حرج أن يأكل قبل الصلاة .

ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে, নামায থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত না খাওয়া মুস্তাহাব, তাই কুরবানী থাকলে সে তার কুরবানী থেকে খায়, আর যদি তার কুরবানী না থাকে তবে তার আগে খাওয়ায় কোন দোষ নেই। সূত্র: আদাবুল ঈদ-১২/২০০৮, শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ


৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। দলিল:

حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي وَحْشِيَّةَ، عَنْ أَبِي عُمَيْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ عُمُومَةٍ، لَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَكْبًا جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَشْهَدُونَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلاَلَ بِالأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذَا أَصْبَحُوا أَنْ يَغْدُوا إِلَى مُصَلاَّهُمْ .

 হাফস্‌ ইবনে উমর (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) থেকে তাঁর চাচা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। একদা কয়েকজন আরোহী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলেন যে, তারা গতকাল চাঁদ দেখেছেন। তখন তিনি তাদেরকে রোযা ভঙ্গ করতে এবং পরের দিন সকালে ঈদের নামায আদায় করতে বলেন। তাখরিজ: আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭


৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। দলিল:

حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ مَيْسَرَةَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.

আদম (রাহঃ) ... (আব্দুল্লাহ) ইবনে ‘উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) লোকদেরকে ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদ্‌কাতুল ফিত্‌র আদায় করার নির্দেশ দেন।


হাদীসের ব্যখ্যা:

সদাকাতুল ফিতর : গুরুত্ব ও ফযীলত

আল্লাহ তাআলার হুকুমে বান্দা পুরো মাস রোযা রেখেছে। আল্লাহ যেভাবে হুকুম করেছেন সেভাবে রাখতেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ্র মহান হুকুম পালন করা অসহায় বান্দার জন্য কি এত সহজ! আল্লাহ তাআলা বান্দার দুর্বলতা ভালোভাবে জানেন। আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানেন তাঁর উম্মতের দুর্বলতার কথা। তাই রোযা রাখতে গিয়ে যে টুকটাক ভুল হয়ে যায় তার কাফফারা স্বরূপ সদাকাতুল ফিত্রের বিধান দিয়েছেন।


পাশাপাশি রোযার মাধ্যমে রোযাদার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে উপবাসে থাকা অন্ন-বস্ত্রহীন ভাইগুলোর কষ্ট। আজ রমযান শেষে ঈদের দিন সেই ভাইদের মুখেও যেন ফুটে ওঠে আনন্দের রেখা, তাদের ঘরেও উত্তম খাবারের ব্যবস্থা হয় সেজন্য বিত্তবানদের উপর ওয়াজিব করা হয়েছে সদাকাতুল ফিত্র। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصّائِمِ مِنَ اللّغْوِ وَالرّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدّاهَا قَبْلَ الصّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدّاهَا بَعْدَ الصّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصّدَقَاتِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতরের বিধান দান করেছেন রোযাদারকে অর্থহীন ও অশ্লীল কথা-কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাবারের ব্যবস্থা হিসাবে। যে ব্যক্তি তা (ঈদের) নামাযের আগে আদায় করবে সেটা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসাবে পরিগণিত হবে। আর যে নামাযের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসাবে বিবেচিত হবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬০৯


প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। প্রত্যেকে তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২১ (আন্তর্জাতিক নং ১৫০৯; দারাকুতনী, হাদীস নং-১৬৯৪]


১০. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। দলিল:


أَخْبَرَنِي زَيْدٌ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي سَرْحٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَىْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ، فَيَعِظُهُمْ وَيُوصِيهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ  وَهْوَ أَمِيرُ الْمَدِينَةِ فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ، فَلَمَّا أَتَيْنَا الْمُصَلَّى إِذَا مِنْبَرٌ  غَيَّرْتُمْ وَاللَّهِ. فَقَالَ أَبَا سَعِيدٍ، قَدْ  الصَّلاَةِ فَجَعَلْتُهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ.    

 আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল নামায। আর নামায শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। 

তাখরিজ: বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮



১১. যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। দলিল:


حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو تُمَيْلَةَ، يَحْيَى بْنُ وَاضِحٍ عَنْ فُلَيْحِ بْنِ سُلَيْمَانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ. تَابَعَهُ يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ فُلَيْحٍ. وَحَدِيثُ جَابِرٍ أَصَحُّ.

 জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন। তাখরিজ:বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬


হাদীসের ব্যখ্যা:

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঈদগাহে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন করা ছুন্নাত। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ২/১৬৯) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে অনুরূপ হাদীস আরো বর্ণিত হয়েছে মুসতাদরাকে হাকেম: ১০৯৯, ইবনে হিব্বান-২৮১৫, তিরমিযী-৫৪১ এবং ইবনে মাযা-১৩০১ নাম্বারে ছুন্নাত আদায় ছাড়াও এ আমলের একটা ভিন্ন ফায়দা হলো- বেশি মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়া। অবশ্য অনেক গবেষক আলেম বলেন, এ আমলটি কেবল রসূল স.ই করতেন, অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম করতেন বলে প্রমাণ মেলে না। সুতরাং এটা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য যা জনসাধারণের জন্য অনুকরনীয় নয়। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলে থাকেন যে, নেতাদেরকে দেখার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জনতার ভীড় সৃষ্টি হয় যা রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে আবার নেতাদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করে। তাই নামায শেষে ভিন্ন পথে চলে গেলে উভয় সমস্যা থেকেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ কারণে অনেক উলামায়ে কিরাম এটা নেতাদের ছুন্নাত বলে আখ্যা দিয়েছেন।


১২. পায়ে হেটে যাওয়া।  দলিল: 

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى الْفَزَارِيُّ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْحَارِثِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تَخْرُجَ، إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ تَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يَخْرُجَ الرَّجُلُ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ يَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ لِصَلاَةِ الْفِطْرِ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَيُسْتَحَبُّ أَنْ لاَ يَرْكَبَ إِلاَّ مِنْ عُذْرٍ .

 আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুন্নাত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং ঈদুল ফিতরে বের হওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেয়া। - ইবনে মাজাহ ১২৯৪-১২৯৭


ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেন : এই হাদীসটি হাসান। অধিকাংশ আলিম এই হাদীস অনুসারে আমল করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া এবং উযর ছাড়া কোন বাহনে আরোহণ না করা পছন্দনীয় বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।

—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৫৩০ (আন্তর্জাতিক নং ৫৩০)

তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)



১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকা। দলিল:


ঈদের নামাযে যাওয়া আসার পথে তাকবীর বলাঃ

حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَغْدُو يَوْمَ الْعِيدِ، وَيُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ، حَتَّى يَبْلُغَ الْإِمَامُ

হযরত নাফে’ রহ. বলেন, হযরত ইবনে উমার রা. সকালে ঈদগাহে যেতেন এবং ইমামের আগমন পর্যনত্ম উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকতেন। (ইবনে আবী শাইবা-৫৬৬৫)


وعن الوليد بن مسلم قال : سألت الأوزاعي ومالك بن أنس عن إظهار التكبير في العيدين ، قالا : نعم كان عبد الله بن عمر يظهره في يوم الفطر حتى يخرج الإمام

আল-ওয়ালিদ বিন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আল-আওযায়ী ও মালিক বিন আনাসকে দুই ঈদে তাকবীর দেখানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা বলেন: হ্যাঁ, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ঈদের দিনে তাকবীর দেখাতেন। ইমাম বের ( খুতবার জন্য) হওয়া পর্যন্ত আল-ফিতর।

সূত্র: আদাবুল ঈদ-১২/২০০৮, শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ


 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবেন। সূত্র: মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫

 

১৪. শরিয়তের সীমার মধ্যে খুশি প্রকাশ বা শুভেচ্ছা বিনিময় করা: এ বিষয়ে সহিহ খোযাইমাতে এসেছে-

وعن جبير بن نفير ، قال : كان أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم إذا التقوا يوم العيد يقول بعضهم لبعض ، تُقُبِّل منا ومنك . قال ابن حجر : إسناده حسن . الفتح 2/446

জুবায়ের বিন নাফির থেকে, তিনি বলেন: যদি নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণ ঈদের দিনে মিলিত হতেন, তারা একে অপরকে বলত: এটি আমাদের এবং আমাদের পক্ষ থেকে কবুল হোক। সূত্র: আল-ফাতহ ২/৪৪৬


নোট: ইবনে হাজার রহ. এর সনদ হাসান।

 

 সংযোজন চলমান

 

 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক


Stylo

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। পোষ্ট গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে করে যোগাযোগ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর