জিজ্ঞাসা-১২৬৩৬:
আসসালামু আলাইকুম
আমার কয়েকটি জানার বিষয় হলো,
১) একজন হাজি হজ্জের জন্য ৪৫ দিনের সফরে বের হলো,
তিনি প্রথম ২৫দিন মক্কায়,
তারপর ১০দিন মদিনায়, আর শেষ ১০ দিন (জিলহজ্জ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ) মক্কায় অবস্থান করলেন,
এমতাবস্থায় তিন স্থানের নামাজের বিধান কি হবে? নামাজ কি ক্বসর করবে নাকি পরিপূর্ণ আদায় করবে ?
২) হজ্জের ৫দিন বিশেষ করে মিনায়,মুজদালিফায়, আরাফায়,এবং পুনরায় মিনাতে অবস্থান কালে কি ক্বসর করতে হবে?
৩) আরাফার ময়দানে যোহর ও আসর মিলিয়ে পড়তে হবে? যদি পড়তে হয় তাহলে কোন ওয়াক্তে পড়বে?
এর পর মিনায় মাগরিব ও এশা কোন ওয়াক্তে মিলিয়ে পড়বে এবং ক্বসর করতে হবে কি না?
তারিখ: ১৯/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ কামরুল হাসান যশোর, থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, যাই হোক আপনার প্রশ্নের আলোকে মাসয়ালাটিকে কয়েক ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ০১. একজন হাজি হজ্জের জন্য ৪৫ দিনের সফরে বের হলো,
তিনি প্রথম ২৫দিন মক্কায়,
তারপর ১০দিন মদিনায়, আর শেষ ১০ দিন (জিলহজ্জ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ) মক্কায় অবস্থান করলেন,
এমতাবস্থায় তিন স্থানের নামাজের বিধান কি হবে? নামাজ কি ক্বসর করবে নাকি পরিপূর্ণ আদায় করবে ?
উত্তর: ০১। প্রথম ২৫ দিন মক্কায় অবস্থানকালে মুকিম অবস্থায় তথা পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। আর মদীনায় ১০ দিন এবং মক্কায় ১০ কসর আদায় করবেন।
দলিল:
হাদিস নং -০১
وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرٌو، وَهُوَ ابْنُ الْحَارِثِ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ صَلَّى صَلاَةَ الْمُسَافِرِ بِمِنًى وَغَيْرِهِ رَكْعَتَيْنِ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ رَكْعَتَيْنِ صَدْرًا مِنْ خِلاَفَتِهِ ثُمَّ أَتَمَّهَا أَرْبَعًا .
হারামালা ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিনা ও অন্যান্য জায়গায় মুসাফিরের নামায হিসেরে দু-রাকআত নামায আদায় করেন। আবু বকর (রাযিঃ) এবং উমর (রাযিঃ)ও দু রাকআত পড়েন। উসমান (রাযিঃ) তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দু রাকআত পড়েন। পরে তিনি চার রাকআত পুরা করেন।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৬৩ (আন্তর্জাতিক নং ৬৯৪-১)
ব্যাখ্যা:
أنَّ مِن أوجُهِ تفسيرِ سَبَبِ إتمامِ عثمانَ رَضِيَ اللهُ عنه بمِنًى أنَّه تأهَّلَ بمكَّةَ، فلم يكن مسافرًا، فصلَّى صلاةَ المقيمِ، فدلَّ على أنَّ أهلَ مكَّةَ يُتِمُّونَ بمِنًى ولا يَقْصُرون. (المغني)) لابن قُدامة (3/367)، ((شرح النووي على مسلم)) (5/195)، ((فتح الباري)) لابن حجر (2/570).
অর্থাৎ ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মিনায় পূর্ণ নামাজ পড়ার কারণ হলো তিনি মক্কার অধিবাসী। মুসাফির ছিলেন না। তাই তিনি মুকিমের সালাত আদায় করেছেন। এটা দলিল হল মক্কাবাসীরা মিনায় পূর্ণ সালাত আদায় করবে, কসর আদায় করবে না। সূত্র: ফাতহুল বারী -২/৫৭০; আলমুগনি -৩/৩৬৭
হাদিস নং -০২
عن ابن عباس وابن عمر أنهما قالا : إذا قدمت بلدة وأنت مسافر وفي نفسك أن تقيم خمسة عشر يوما فأكمل الصلاة
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন , ”যদি তুমি কোন শহরে সফর করে আসো আর সেখানে ১৫ দিন অবস্থানের পাক্কা নিয়ত কর তাহলে পূর্ন নামায আদায় করবে।
তাখরিজ: আল-মুগনী, ২য় খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা, অধ্যায়: সালাতুল্ মুসাফির
হাদিস নং -০৩
من اقام خمسة عشر يوما اتم الصلاة
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত– তিনি বলেন,"যে ব্যক্তি ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করল সে পূর্ন নামায আদায় করবে।" তাখরিজ: জামে তিরমিজি- ১/৭১
হাদিস নং -০৪
عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ قَالَ: سَمِعْتُ مُجَاهِدًا يَقُولُ: «كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا قَدِمَ مَكَّةَ فَأَرَادَ أَنْ يُقِيمَ خَمْسَ عَشْرَةَ لَيْلَةً سَرَّحَ ظَهْرَهُ فَأَتَمَّ الصَّلَاةَ
হযরত উমর বিন যর রহ. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি মুজাহিদ রহ.কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, হযরত ইবনে উমর রা. যখন মক্কায় আসতেন এবং ১৫ দিন থাকার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি সওয়ারীর বাধন খুলে দিতেন এবং পূর্ণ নামাজ আদায় করতেন। তাখরিজ: ত্ববহাবী শরীফ, হাদিস নং ৩৪৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং ৪৩৪৩
হাদিস নং -০৫
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «إِذَا كُنْتَ مُسَافِرًا، فَوَطَّنْتَ نَفْسَكَ عَلَى إِقَامَةِ خَمْسَةَ عَشَرَ يَوْمًا، فَأَتْمِمِ الصَّلَاةَ، وَإِنْ كُنْتَ لَا تَدْرِي مَتَى تَظْعَنُ فَأَقْصِرْ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যখন তুমি মুসাফির অবস্থায় থাকো অতপর কোনো স্থানে ১৫ দিন থাকার পাক্কা নিয়ত করো তখন তুমি পূর্ণ নামাজ পড়বে আর যদি তুমি না জানো যে কবে তুমি যাবে তাহলে তুমি নামাজ কসর করো। তাখরিজ: ত্বহাবী শরীফ, হাদিস নং ৩৪৬, কিতাবুল আসার, হাদিস নং ১৮৮
প্রশ্ন: ০২। হজ্জের ৫দিন বিশেষ করে মিনায়,মুজদালিফায়, আরাফায়,এবং পুনরায় মিনাতে অবস্থান কালে কি ক্বসর করতে হবে?
উত্তর: ০২। যেহেতু তিনি শেষের দশ দিন মুসাফির থাকবেন তাই মিনা, মুজদালিফায় ও আরাফাতে কসর সালাত আদায় করবেন। ইমাম মুকিম হলে চার রাকাত আর একাকী হলে কসর বা দুই রাকাত আদায় করবে। দলিল:
নাফে রাহ. বলেন,
أنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُصَلِّي وَرَاءَ الْإِمَامِ، بِمِنًى أَرْبَعاً. فَإِذَا صَلَّى لِنَفْسِهِ، صَلَّى رَكْعَتَيْنِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মিনায় ইমামের পেছনে চার রাকাত পড়তেন। আর যখন একাকী পড়তেন তখন দুই রাকাত পড়তেন। -মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ৫০৬
প্রশ্ন: ০৩। আরাফার ময়দানে যোহর ও আসর মিলিয়ে পড়তে হবে? যদি পড়তে হয় তাহলে কোন ওয়াক্তে পড়বে?
এর পর মিনায় মাগরিব ও এশা কোন ওয়াক্তে মিলিয়ে পড়বে এবং ক্বসর করতে হবে কি না?
উত্তর: ০৩। ফিকহি হানাফির মতে,
فى الفتاوى الهندية- ولا يجمع بين الصلاتين في وقت واحد لا في السفر ولا في الحضر بعذر ما عدا عرفة والمزدلفة كذا في المحيط(الفتاوى الهندية -كتاب الصلاة، الفصل الثاني في بيان فضيلة الأوقات -1/52)
অর্থাৎ হজ্বের সময় আরাফা ও মুযদালিফা ছাড়া বাকি সময় মুকিম হোক বা মুসাফির হোক কোন অবস্থায়ই এক নামাযকে অন্য নামাযের সময়ে একসাথে করে পড়া জায়েজ নয়। সূত্র: ফাতওয়া হিন্দিয়া -১/৫২
দ্বিতীয় কথা হলো, আরাফাতে মসজিদে নামিরাতে ইমামের পিছনে যোহরের ওয়াক্তে যোহর এবং আসর একত্রিত করে কসর আদায় করবে।
আর জামাত না পেলে যোহর ও আসরের নামায সময়মত আলাদা আদায় করতে হবে। একত্র করা যাবে না। দলিল:
عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ: «إِذَا صَلَّيْتَ فِي رَحْلِكَ بِعَرَفَةَ فَصَلِّ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا لِوَقْتِهَا، وَاجْعَلْ لِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا أَذَانًا وَإِقَامَةً»
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম রাহ. বলেন, আরাফায় যখন নিজ তাঁবুতে নামায আদায় করবে তখন প্রত্যেক নামায ওয়াক্ত মতো পড়বে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আযান-ইকামত দিবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪২৩৫
তৃতীয় কথা হলো, আর মুজদালিফায় এশার সময় মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবে। এটাকে ‘জময়ে তাখীর’ বলা হয়। দলিল:
وَحَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا الثَّوْرِيُّ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ صَلَّى الْمَغْرِبَ ثَلاَثًا وَالْعِشَاءَ رَكْعَتَيْنِ بِإِقَامَةٍ وَاحِدَةٍ .
ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ইশার নামায একত্রে আদায় করেছেন। তিনি এক ইকামতেই মাগরিবের নামায তিন রাকআত এবং ইশার নামায দু’রাক’আত আদায় করেছেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮৪ (আন্তর্জাতিক নং ১২৮৮-৪)
চতুর্থ কথা হলো, পূর্বেও উল্লেখ করেছি যেহেতু সে মুসাফির, তাই কসর করবে।
সারকথা হলো, প্রথম ২৫ দিন মক্কায় পূর্ণ সালাত আদায় করতে হবে, তারপর ১০ দিন মদীনায় কসর সালাত আদায় করতে হবে এবং শেষের ১০দিন মক্কায় কসর সালাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, আরাফাতে কসর করবে ঠিকই, তবে একাকি তাঁবুতে নামাজ আদায় করলে, যোহর ও আসর একত্রিত করা যাবে না। নিজ নিজ ওয়াক্তে আদায় করতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক