আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা -১২৬৩৮: বাসে বা যানবাহনের সিটে বসে নামাজ আদায় করার বিধান?

No Comments

 





 জিজ্ঞাসা-১২৬৩৮:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া..........। আমার জানার বিষয় হচ্ছে সফর অবস্থায় বাসে বসে যে নামায আদায় করি সেক্ষেত্রে কিবলার বিষয়ের কোন সমস্যা নয়, বসে যে নামায আদায় করি দাঁড়ানো ব্যতীত বসে নামায আদায়ে কোন সমস্যা আছে কিনা?

তারিখ:  ২০/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি                       

 

মাওলানা  মনিরুল ইসলাম, ঝালকাঠি থেকে।


 জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

 

তাসলিম ও হামদ-সানার পর  প্রথম কথা হলো

القيامُ في الفرضِ ركنٌ من أركان الصلاة وفرضٌ من فروضها.

الأدلَّة:

أوَّلًا: مِن الكتابِ

قال تعالى: وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ [البقرة: 238] 

وَجْهُ الدَّلالَةِ:

أنَّ المرادَ به القيامُ في الصَّلاةِ بإجماعِ المفسِّرينَ

ثانيًا: من السُّنَّة

عن عِمرانَ بن الحُصَينِ رضيَ اللهُ عنه، قال: ((كانت بي بواسيرُ، فسألْتُ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عنِ الصَّلاةِ، فقال: صلِّ قائمًا، فإن لم تستطِعْ فقاعدًا، فإن لم تستطِعْ فعلى جنبٍ ))

অর্থাৎ নামাজে কিয়াম তথা দাঁড়ানো ফরজ রুকুনের মধ্যে একটি রুকুন। ফরজের মধ্যে একটি ফরজ। দলিল:


০১.কুরআন থেকে:

وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ

 আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। সূরা বাকারা-২৩৮


ব্যাখ্যা: এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য সমস্ত মোফাচ্ছেরে   এজমা হলো যে নামাজ  দাঁড়ানো ফরজ। সূত্র: আল-বাহরুল রায়েক -১/৩০৮, ইবনে নুজাইম রহ.


 ০২.সুন্নাহ থেকে:

حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ طَهْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنِي الحُسَيْنُ المُكْتِبُ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ»

ইমরান ইবনে হুসাইন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে নামায সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেনঃ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে, তাতে সমর্থ না হলে বসে; যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১১৭


হাদীসের ব্যখ্যা:

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহ.) বলেন-

ولايصح الإيماء بهما – ( الركوع والسجود) – مع القدرة عليهما، بل شرطه تعذرهما۔

অর্থাৎ উল্লিখিত হাদীসের বিবরণ থেকে বুঝা যায় যে, নামায দাঁড়িয়ে পড়াই জরুরী। তবে কেউ দাঁড়াতে একান্ত অপারগ হলে তাকে বসে বা তা-ও না পারলে শুয়ে অথবা ইশারা করে নামায পড়তে হবে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেউ বসে নামায পড়লে তার নামায হবে না। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। সূত্র: শামী- ১/৪৪৪, ৪৪৫


এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়,ব্যক্তি কোনো অসুস্থতা ও বিশেষ কোনো কারণে সে দাঁড়াতে পারে না; তার জন্য বসে নামাজ পড়া জায়েজ এবং যে ব্যক্তির এমন কোন ওজর ঘটেছে যার কারণে সে বসতে পারে না; তার জন্য কাত হয়ে শুয়ে নামাজ পড়া জায়েজ। - সূত্র:নাইলুল আওতার ৩/২৪৩, মাজমুউল ফাতাওয়া, ৮/৪৩৭


প্রশ্ন: ক। বাসে বসে নামাজ পড়া সহিহ হওয়ার কোন শর্ত আছে কি?



উত্তর: ক। আমরা উপরে লক্ষ্য করলাম যে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ফরজ, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। তাই শর্তসাপেক্ষে বাসে সিটে বসে নামাজ পড়া জায়েজ আছে। যেমন,


০১. গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগে যদি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।

০২. গাড়ি বা বাসকে থামিয়ে নামাজ আদায় করতে ব্যর্থ হলে।

০৩. নিজ ও মালের ক্ষতির আশঙ্কা হলে।

০৪. গাড়িতে দাঁড়িয়ে  সালাত আদায় করা চেষ্টা করা।

০৫. প্রয়োজনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।


যেমন, ইমাম নববি রহ বলেন,

قال النووي في المجموع: ولو حضرت الصلاة المكتوبة، وخاف لو نزل ليصليها على الأرض إلى القبلة انقطاعاً عن رفقته أو خاف على نفسه أو ماله لم يجز ترك الصلاة وإخراجها عن وقتها، بل يصليها على الدابة لحرمة الوقت، وتجب الإعادة، لأنه عذر نادر. انتهى

আল্লামা নববি রহ আল-মাজমু'তে বলেছেন: যদি ফরয সালাত এসে যায় এবং সে ভয় করে যে, সে কিবলার দিকে মাটিতে নামায পড়ার জন্য নেমে যাবে, তার সাহচর্য ছিন্ন করবে, অথবা সে নিজের বা তার অর্থের জন্য ভয় পাবে, তাহলে তা। নামায ত্যাগ করা এবং তার সময় থেকে বের করা জায়েয নয়, বরং তিনি সময়ের পবিত্রতার জন্য পাহাড়ে নামায পড়েন এবং এটি অবশ্যই পুনরাবৃত্তি করতে হবে, কারণ এটি একটি বিরল অজুহাত। সূত্র: আলমাজমু শারহুল মাহযাব -৩/২২১


সারকথা হলো, গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগেই ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আশংকা হয়, বাস থামার সম্ভাবনা না থাকে এবং

দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে কিছুতে হেলান দিয়ে দাঁড়াবে। কারণ হাত বাঁধা সুন্নত আর দাঁড়ানো ফরজ। তাই ফরজ রক্ষার্থে সুন্নতের ক্ষেত্রে শিথিলতা মার্জনীয়। পক্ষান্তরে দাঁড়ানোর কোনো প্রকার সুযোগ না থাকলে, বসে ইশারা করে নামাজ পড়ে নেবে। পরে এই নামাজ আর পুনরায় পড়তে হবেনা।


 والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদানে মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক