জিজ্ঞাসা-১২৫৫৫:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম।
ঈদের দিনের তথা ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নাহ/মুস্তাহাবগুলো কি কি? নস/ রেফারেন্সসহ উল্লেখ ভালো হয়। জাযাকাল্লাহু খয়রান।
তারিখ: ২১/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান, সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ঈদের দিন রয়েছে ১৪ টি সুন্নত/মুস্তাহাব। নিম্নে তা নসসহ উল্লেখ করা হলো:
১. অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। [বায়হাকী, হাদীস নং-৬১২৬]
২. মিসওয়াক করা। [তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/৫৩৮]
৩. গোসল করা। দলিল:
حَدَّثَنَا جُبَارَةُ بْنُ الْمُغَلِّسِ، حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ تَمِيمٍ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ مِهْرَانَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الأَضْحَى .
জুবারা ইবন মুগাল্লিস (র.) .......ইবন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন গোসল করতেন।
সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ১৩১৫ (আন্তর্জাতিক নং ১৩১৫;ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩১৫
وذكر النووي رحمه الله اتفاق العلماء على استحباب الاغتسال لصلاة العيد .
অর্থাৎ ইমাম নববি রহ. উল্লেখ করেছেন যে, সালাতুল ঈদের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব এ বিষয়ে ওলামারা ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
৪. শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। দলিল:
قَالَ أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالْوُفُودِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ قُلْتَ " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". وَأَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ الْجُبَّةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ ".
. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী (ﷺ) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোশাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাযিঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০১ (আন্তর্জাতিক নং ৯৪৮)
৫. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা।
قَالَ أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالْوُفُودِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ قُلْتَ " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ". وَأَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ الْجُبَّةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ ".
. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী (ﷺ) তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোশাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাযিঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০১ (আন্তর্জাতিক নং ৯৪৮); মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং -৭৫৬০]
وعن جابر رضي الله عنه قال : كان للنبي صلى الله عليه وسلم جبة يلبسها للعيدين ويوم الجمعة . صحيح ابن خزيمة 1765
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চাদর ছিল যা তিনি দুই ঈদ ও শুক্রবারে পরিধান করতেন। সহীহ ইবনে খুযাইমাহ 1765
৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। দলিল:
، ولما رُوِى عَنِ الْحَسَنِ بن عَلِى رَضِى اللهُ تَعَالَى عَنْهُما قَالَ: "أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وآله وسلم أن نَلْبَسَ أَجْوَدَ مَا نَجِدُ، وَأَنْ نَتَطَيَّبَ بِأَجْوَدِ مَا نَجِدُ" أخرجه الطبرانى فى "المعجم الكبير"، والحاكم.
অর্থ: আল-হাসান ইবনে আলী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমরা যা পাই তা সর্বোত্তম ব্যবহার করব এবং আমরা যে সর্বোত্তম সুগন্ধি পাই তা ব্যবহার করব।
[মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০]
৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। দলিল:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَغْدُو يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ. وَقَالَ مُرَجَّى بْنُ رَجَاءٍ حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنِي أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَيَأْكُلُهُنَّ وِتْرًا.
আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়ায়াতে আনাস (রাযিঃ) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন। তাখরিজ: বুখারী, হাদীস নং-৯৫৩, তিরমিজী, হাদীস নং-৫৪২, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৬০৩
ইবনে হাজার, রহ. ব্যাখ্যা করেছেন যে এটি রোজা বাড়ানোর অজুহাতে একটি বাধা এবং এটি আল্লাহর আদেশ মেনে চলার একটি উদ্যোগ। ফাতহুল বারী (২/৪৪৬)
আর যে খেজুর না পায়, সে যেন জায়েজ কিছু দিয়ে ইফতার করে।
وأما في عيد الأضحى فإن المستحب ألا يأكل حتى يرجع من الصلاة فيأكل من أضحيته إن كان له أضحية ، فإن لم يكن له من أضحية فلا حرج أن يأكل قبل الصلاة .
ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে, নামায থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত না খাওয়া মুস্তাহাব, তাই কুরবানী থাকলে সে তার কুরবানী থেকে খায়, আর যদি তার কুরবানী না থাকে তবে তার আগে খাওয়ায় কোন দোষ নেই। সূত্র: আদাবুল ঈদ-১২/২০০৮, শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ
৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। দলিল:
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي وَحْشِيَّةَ، عَنْ أَبِي عُمَيْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ عُمُومَةٍ، لَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَكْبًا جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَشْهَدُونَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلاَلَ بِالأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذَا أَصْبَحُوا أَنْ يَغْدُوا إِلَى مُصَلاَّهُمْ .
হাফস্ ইবনে উমর (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) থেকে তাঁর চাচা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। একদা কয়েকজন আরোহী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলেন যে, তারা গতকাল চাঁদ দেখেছেন। তখন তিনি তাদেরকে রোযা ভঙ্গ করতে এবং পরের দিন সকালে ঈদের নামায আদায় করতে বলেন। তাখরিজ: আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭
৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। দলিল:
حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ مَيْسَرَةَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.
আদম (রাহঃ) ... (আব্দুল্লাহ) ইবনে ‘উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) লোকদেরকে ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদ্কাতুল ফিত্র আদায় করার নির্দেশ দেন।
হাদীসের ব্যখ্যা:
সদাকাতুল ফিতর : গুরুত্ব ও ফযীলত
আল্লাহ তাআলার হুকুমে বান্দা পুরো মাস রোযা রেখেছে। আল্লাহ যেভাবে হুকুম করেছেন সেভাবে রাখতেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ্র মহান হুকুম পালন করা অসহায় বান্দার জন্য কি এত সহজ! আল্লাহ তাআলা বান্দার দুর্বলতা ভালোভাবে জানেন। আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানেন তাঁর উম্মতের দুর্বলতার কথা। তাই রোযা রাখতে গিয়ে যে টুকটাক ভুল হয়ে যায় তার কাফফারা স্বরূপ সদাকাতুল ফিত্রের বিধান দিয়েছেন।
পাশাপাশি রোযার মাধ্যমে রোযাদার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে উপবাসে থাকা অন্ন-বস্ত্রহীন ভাইগুলোর কষ্ট। আজ রমযান শেষে ঈদের দিন সেই ভাইদের মুখেও যেন ফুটে ওঠে আনন্দের রেখা, তাদের ঘরেও উত্তম খাবারের ব্যবস্থা হয় সেজন্য বিত্তবানদের উপর ওয়াজিব করা হয়েছে সদাকাতুল ফিত্র। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصّائِمِ مِنَ اللّغْوِ وَالرّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدّاهَا قَبْلَ الصّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدّاهَا بَعْدَ الصّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصّدَقَاتِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতরের বিধান দান করেছেন রোযাদারকে অর্থহীন ও অশ্লীল কথা-কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাবারের ব্যবস্থা হিসাবে। যে ব্যক্তি তা (ঈদের) নামাযের আগে আদায় করবে সেটা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসাবে পরিগণিত হবে। আর যে নামাযের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসাবে বিবেচিত হবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬০৯
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। প্রত্যেকে তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২১ (আন্তর্জাতিক নং ১৫০৯; দারাকুতনী, হাদীস নং-১৬৯৪]
১০. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। দলিল:
أَخْبَرَنِي زَيْدٌ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي سَرْحٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَىْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ، فَيَعِظُهُمْ وَيُوصِيهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ وَهْوَ أَمِيرُ الْمَدِينَةِ فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ، فَلَمَّا أَتَيْنَا الْمُصَلَّى إِذَا مِنْبَرٌ غَيَّرْتُمْ وَاللَّهِ. فَقَالَ أَبَا سَعِيدٍ، قَدْ الصَّلاَةِ فَجَعَلْتُهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল নামায। আর নামায শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন।
তাখরিজ: বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮
১১. যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। দলিল:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو تُمَيْلَةَ، يَحْيَى بْنُ وَاضِحٍ عَنْ فُلَيْحِ بْنِ سُلَيْمَانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ. تَابَعَهُ يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ فُلَيْحٍ. وَحَدِيثُ جَابِرٍ أَصَحُّ.
জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন। তাখরিজ:বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঈদগাহে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন করা ছুন্নাত। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ২/১৬৯) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে অনুরূপ হাদীস আরো বর্ণিত হয়েছে মুসতাদরাকে হাকেম: ১০৯৯, ইবনে হিব্বান-২৮১৫, তিরমিযী-৫৪১ এবং ইবনে মাযা-১৩০১ নাম্বারে ছুন্নাত আদায় ছাড়াও এ আমলের একটা ভিন্ন ফায়দা হলো- বেশি মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়া। অবশ্য অনেক গবেষক আলেম বলেন, এ আমলটি কেবল রসূল স.ই করতেন, অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম করতেন বলে প্রমাণ মেলে না। সুতরাং এটা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য যা জনসাধারণের জন্য অনুকরনীয় নয়। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলে থাকেন যে, নেতাদেরকে দেখার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জনতার ভীড় সৃষ্টি হয় যা রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে আবার নেতাদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করে। তাই নামায শেষে ভিন্ন পথে চলে গেলে উভয় সমস্যা থেকেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ কারণে অনেক উলামায়ে কিরাম এটা নেতাদের ছুন্নাত বলে আখ্যা দিয়েছেন।
১২. পায়ে হেটে যাওয়া। দলিল:
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى الْفَزَارِيُّ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْحَارِثِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تَخْرُجَ، إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ تَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يَخْرُجَ الرَّجُلُ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ يَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ لِصَلاَةِ الْفِطْرِ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَيُسْتَحَبُّ أَنْ لاَ يَرْكَبَ إِلاَّ مِنْ عُذْرٍ .
আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুন্নাত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং ঈদুল ফিতরে বের হওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেয়া। - ইবনে মাজাহ ১২৯৪-১২৯৭
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেন : এই হাদীসটি হাসান। অধিকাংশ আলিম এই হাদীস অনুসারে আমল করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া এবং উযর ছাড়া কোন বাহনে আরোহণ না করা পছন্দনীয় বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৫৩০ (আন্তর্জাতিক নং ৫৩০)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকা। দলিল:
ঈদের নামাযে যাওয়া আসার পথে তাকবীর বলাঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَغْدُو يَوْمَ الْعِيدِ، وَيُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ، حَتَّى يَبْلُغَ الْإِمَامُ
হযরত নাফে’ রহ. বলেন, হযরত ইবনে উমার রা. সকালে ঈদগাহে যেতেন এবং ইমামের আগমন পর্যনত্ম উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকতেন। (ইবনে আবী শাইবা-৫৬৬৫)
وعن الوليد بن مسلم قال : سألت الأوزاعي ومالك بن أنس عن إظهار التكبير في العيدين ، قالا : نعم كان عبد الله بن عمر يظهره في يوم الفطر حتى يخرج الإمام
আল-ওয়ালিদ বিন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আল-আওযায়ী ও মালিক বিন আনাসকে দুই ঈদে তাকবীর দেখানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা বলেন: হ্যাঁ, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ঈদের দিনে তাকবীর দেখাতেন। ইমাম বের ( খুতবার জন্য) হওয়া পর্যন্ত আল-ফিতর।
সূত্র: আদাবুল ঈদ-১২/২০০৮, শায়েখ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবেন। সূত্র: মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫
১৪. শরিয়তের সীমার মধ্যে খুশি প্রকাশ বা শুভেচ্ছা বিনিময় করা: এ বিষয়ে সহিহ খোযাইমাতে এসেছে-
وعن جبير بن نفير ، قال : كان أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم إذا التقوا يوم العيد يقول بعضهم لبعض ، تُقُبِّل منا ومنك . قال ابن حجر : إسناده حسن . الفتح 2/446
জুবায়ের বিন নাফির থেকে, তিনি বলেন: যদি নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণ ঈদের দিনে মিলিত হতেন, তারা একে অপরকে বলত: এটি আমাদের এবং আমাদের পক্ষ থেকে কবুল হোক। সূত্র: আল-ফাতহ ২/৪৪৬
নোট: ইবনে হাজার রহ. এর সনদ হাসান।
সংযোজন চলমান
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক