জিজ্ঞাসা-১২৬১৩:
মোটিভেশন ক্লাস: ১৩
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
Assalamualaikum.
অনুশীলন /যুদ্ধ যাত্রার সময় সেনাসদস্যগণকে ধর্মীয় জ্ঞান দান ও উদাহরণের আলোকে উজ্জীবিত করা এবং যুদ্ধকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় প্রেষণার মাধ্যমে মনোবল সমুন্নত রাখা।
এই ধারার আলোকে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন Exercise উপলক্ষে এই ক্লাসের জন্য লেসনপ্লান দরকার।
তারিখ: ০৭/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নূরুল আমিন, নীলফামারী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে নিম্নে ক্লাসটি তুলে ধরছি:
ইসলামের আলোকে যুদ্ধে সৈনিকের উদ্বুদ্ধকরণে প্রেষণা প্রদান
১। ভূমিকা। জিহাদ ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এটি দ্বীনের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত। কুরআন ও হাদিসে জিহাদের গুরুত্ব সমন্ধে প্রচুর আলোচনা এসেছে। ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠায় জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী (সঃ) ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য জিহাদ পরিচালনা করেছেন এবং সাহাবীদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
২। উদ্দেশ্য। যুদ্ধাবস্থায় সৈনিকদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করা।
৩। প্রায়োগিক উদ্দেশ্য। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাসদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি করা।
৪। জিহাদ শব্দের অর্থ ও সংজ্ঞা। আরবী জিহাদ শব্দটি জুহদুন শব্দ থেকে উদগত হয়েছে যার অর্থ চরম প্রচেষ্টা, প্রানান্তকর প্রচেষ্টা, ইংরেজীতে এর প্রতিশব্দ Struggle। এমন প্রচেষ্টাকে জিহাদ বলা হয় যাতে জীবন হানির সম্ভাবনা থাকে। যে কোন উদ্দেশ্য সফল করার জন্য প্রচেষ্টা করাকে জিহাদ বলা হয় না। একমাত্র আল্লাহর দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের কিংবা সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় যে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালানো হয় তাকে জিহাদ বলা হয়।
৫। ইসলামে জিহাদের উদ্দেশ্য। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি কিংবা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিনাশ সাধন করা জিহাদের উদ্দেশ্য নয়। ইসলামে জিহাদের উদ্দেশ্য দুইটি।
ক। কুফর ও ইসলাম এ দুটির যে কোন একটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
খ। মানবতার মুক্তির জন্য। কোন আগ্রাসী শক্তির আক্রমনে দেশের জনগণের খাদ্য, বাসস্থান ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মূখীন হলে সশস্ত্র জিহাদ ফরয। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের এ কি হয়েছে, তোমরা আল্লাহর পথে সে সব অসহায় নর-নারী ও শিশু সন্তানদের বাঁচাবার জন্যে লড়াই করো না, যারা নির্যাতনে কাতর হয়ে ফরিয়াত করছে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে জালেমদের এই জনপদ থেকে বের করে অন্য কোথাও নিয়ে যাও, অতপর তুমি আমাদের জন্যে তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাঠিয়ে দাও।”
৬। জিহাদের প্রকার ও হুকুম। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের ধন, প্রাণ ও জবান দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর।” (আবু দাউদ) জিহাদ তিন প্রকার। যথাঃ
ক। নিজ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’লার পথে সংগ্রাম সাধনা করে, সে তো আসলে তা করে তার নিজের কল্যানের জন্যেই, কেননা আল্লাহ তা’লা সৃষ্টিকূল থেকে প্রয়োজন মুক্ত”। (আনকাবুত -৬) মহানবী (সঃ) বলেন, “প্রকৃত মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে নিজের নফসের সাথে জিহাদ করে। (মেশকাত – পৃঃ ১৫)
খ। আল জিহাদ বিল ইল্ম (ইলমের সাহায্যে জিহাদ করা)। এ জিহাদকে কুরআন মাজিদে জিহাদে কাবির বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “তুমি কাফেরদের এ অভিযোগের পিছনে পড়োনা, তুমি এ কুরআন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড জিহাদ কর।” (ফোরকান -৫২) জিহাদ বিল ইলম আবার চার প্রকার। যথাঃ
১। জিহাদ বিল লিসান। (বক্তব্য ও যুক্তির দ্বারা জিহাদ করা)
২। জিহাদ বিল নাফস। (শরীর ও মন দ্বারা জিহাদ করা)
৩। জিহাদ বিল কলম। (লেখনীর মাধ্যমে জিহাদ করা)
৪। জিহাদ বিল মাল। (অর্থ সম্পদ দিয়ে জিহাদ করা)
গ। (শত্রুর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ)। এটি জিহাদের চূড়ান্ত রূপ।
৭। জিহাদের হুকুম। আত্মরক্ষামূলক জিহাদ এবং আক্রমনাত্মক জিহাদ উভয় প্রকার জিহাদই ইসলামে ফরজ। আত্মরক্ষামূলক জিহাদ ফরজে আইন। জিহাদের শরয়ী হুকুমসমূহ নিম্নরূপঃ
ক। রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত ব্যক্তিগতভাবে কেউ সশস্ত্র জিহাদ ঘোষনা করতে পারবে না।
খ। জিহাদের ব্যাপারে সাধারণ ঘোষনা হলে সকলের উপর জিহাদ ফরজ।
গ। প্রথমতঃ সীমান্ত এলাকায় আক্রান্ত হলে শুধু তাদের উপরই জিহাদ ফরজ। অন্যদের জন্য ফরযে কেফায়া।
ঘ। জিহাদ আক্রমনাত্মক হলে শত্রু বাহিনীকে যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে ইসলামের দাওয়াত ও সন্ধির প্রতি আহবান জানানো।
ঙ। শিশু, মহিলা, শারীরিক–মানসিক ও অসুস্থ ব্যক্তির উপর জিহাদ ফরজ না।
৮। যুদ্ধে মানবাধিকার রক্ষা। ইসলাম যুদ্ধে মানবাধিকার রক্ষায় অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। যেমনঃ
ক। যুদ্ধকালীন সময়ে বেসামরিক নারী, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও বৃদ্ধদের উপর আক্রমন করা যাবে না।
খ। ধর্মীয় উপাসনালয় ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা যাবে না।
গ। সবুজ চারণ ভূমি, ফল, ফসল ও বৃক্ষ কর্তন করা বা ধ্বংস করা যাবে না।
ঘ। পাশধিকতা যেমনঃ ধর্ষণ, অংগ কর্তন করা, লাশ জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম।
ঙ। আত্মসমর্পনকারীকে আশ্রয় দিতে হবে।
চ। একান্ত অত্যাবশ্যকীয়তায় ফল,ফসল ধ্বংস করা যাবে।
৯। জিহাদের গুরুত্ব ও ফযিলত। জিহাদের গুরুত্ব সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, “জিহাদ তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে অথচ তা তোমাদের কাছে কষ্টকর মনে হয়। হতে পারে তোমরা কোন জিনিস অপছন্দ কর অথচ তা তোমাদের জন্য ভালো। পক্ষান্তরে তোমরা কোন জিনিস ভালবাসো অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ। কিসে কল্যাণ আর কোন বিষয়ে অকল্যাণ এ বিষয়টি আল্লাহ তা’লা ভালো জানেন তোমরা জানো না।” (সূরা বাকারাঃ ২১৬) স্বদেশ ভূমি শত্রু রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হলে তা মোকাবেলার কাজটি যতই চ্যালেঞ্জিং ও কষ্টকর হোক না কেন তা ঈমানী দায়িত্ব মনে করে স্বার্থকভাবে আনজাম দিতে হবে। কেননা ইসলামে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জিহাদ করা একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। কেননা এ পথে জান-মাল উৎসর্গ করাকে আল্লাহর পথে জিহাদের কাজ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। নিম্নে কুরআন ও হাদিসের আলোকে জিহাদের গুরুত্ব ও ফযিলত বর্ণিত হলোঃ
ক। সর্বোত্তম আমল। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন কাজটি উত্তম? তিনি জবাব দিলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? জবাব দিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? জবাব দিলেন, মাবরূর হজ্জ। (মুত্তাফাক আলাইহি)
খ। মসজিদে হারাম ব্যবস্থাপনার চাইতে উত্তম। তোমরা কি হজ্জের মৌসুমে হাজীদেরপানি পান করানো ও কাবা ঘরের খেতমত করাকে সেই ব্যক্তির কাজের সম পর্যায়ের মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’লার উপর ঈমান এনেছে, পরকালের উপর ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, এরা কখনো আল্লাহর কাছে সমান মর্যাদার নয়, আল্লাহ তা’লা কখনো জালেমদের সঠিক পথ দেখান না। (তাওবাঃ ১৯)
গ। সবচেয়ে বেশি মর্যাদা জিহাদ কারীর। যারা আল্লাহ তা’লার উপর ঈমান এনেছে, তাঁরই সন্তুষ্টির জন্যে হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে তাদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে সবার চাইতে বড় এবং এ ধরণের লোকেরাই পরিণামে সফলকাম হবে। (তাওবাঃ ২০)
ঘ। পার্থিব সকল কিছুর উপর প্রাধান্য। হে নবী বলো, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তানাদি, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী, তোমাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যা অচল হয়ে যাবে বলে তোমরা ভয় পাও, তোমাদের বাড়ি-ঘরসমূহ যা তোমরা পছন্দ করো, এগুলো যদি তোমরা আল্লাহ তা’লা, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে বেশি ভালবাসো, তাহলে তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর আযাবের ঘোষনা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো, জেনে রেখো আল্লাহ তা’লা কখনো ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (তাওবাঃ ২৪)
ঙ। জান্নাত লাভের পূর্বশর্ত। তোমরা কি মনে করো, তোমরা এমনি এমনি বেহেশতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ তা’লা পরীক্ষার মাধ্যমে এ কথা জেনে নেবেন না যে, কে তার পথে জিহাদ করতে প্রস্তুত হয়েছে এবং কে এ বিপদে কঠোর ধৈর্য ধারণ করতে পেরেছে! (ইমরানঃ ১৪২)
চ। সর্বোত্তম ব্যবসা। হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন একটি লাভজনক ব্যবসার সন্ধান দিব যা তোমাদের মহা বিচারের দিন কঠোর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দিবে। হ্যাঁ সে ব্যবসাটি হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ তা’লা ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করবে, এটাই হচ্ছে তোমাদের জন্যে মঙ্গল যদি তোমরা কথাটা বুঝতে পারতে। (সফঃ ১০,১১)
ছ। সমস্ত গুনাহ মার্জনা। যথার্থ ঈমান আনলে আল্লাহ তা’লা তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দেবেন এবং শেষ বিচারের দিন তোমাদের তিনি প্রবেশ করাবেন এমন এক সুরম্য জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত থাকবে, সর্বোপরী তিনি তোমাদের আরও প্রবেশ করাবেন জান্নাতের স্থায়ী নিবাস স্থলের সুন্দর ঘরসমূহে, আর এটাই হচ্ছে সব চাইতে বড় সাফল্য। (সফঃ ১২)
জ। মুমীন জীবনের উদ্দেশ্য। অবশ্যই আল্লাহ তা’লা ঈমানদারদের নিকট থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে খরীদ করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। শত্রুদেরকে নিধন করে এবং নিজেরা শহীদ হয়। (তাওবাঃ ১১১)
ঝ। ঈমানের সত্যতা নিরূপন। সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি হচ্ছে তারা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, অতঃপর আল্লাহ তা’লার বিধানে সামান্যতম সন্দেহও পোষন করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, এরাই ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী। (হুজরাতঃ ১৫)
ঞ। জিহাদ শুধুই আল্লাহর পথে। আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক বেদুইন রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি গানীমাতের মাল লাভ করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে খ্যাতিমান হওয়ার জন্য, তৃতীয় এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে প্রতিপত্তি লাভের জন্য, অন্য বর্ণনায় বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, কেউ গোত্রপ্রীতির জন্য যুদ্ধ করে, কেউ যুদ্ধ করে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে? রাসূল (সঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে একমাত্র তার যুদ্ধই আল্লাহর পথে জিহাদ হিসেবে গণ্য। (বুখারী ও মুসলিম)
ট। জিহাদ থেকে দূরে থাকা মুনাফিকী। আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ না করে এবং জিহাদের কোন চিন্তাও তার মনে পোষন না করে মারা গেল, তার মৃত্যু হলো মুনাফিকী স্বভাবের উপর। (সহীহ মুসলিম)
ঠ। জিহাদ না করার পরিণতি। জিহাদের উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহনে শৈথিল্য প্রদর্শন এবং সঠিক সময়ে জিহাদ পরিচালনা না করলে আল্লাহ তা’লা পরকালে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। শত্রু রাষ্ট্রের আধিপত্য চাপিয়ে দিবেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি কোন অভিযানে বের না হও তাহলে এর অবাধ্যতার জন্যে তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের অন্য এক জাতির দ্বারা বদল করে দিবেন, তোমরা কিন্তু তার কোনই অনিষ্ঠ সাধন করতে পারবেনা, কারন তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (তাওবাঃ ৩৯)
ড। সত্যিকারের মুমীন। জিহাদে অংশগ্রহনকারীগণই সত্যিকারের মুমীন। আল্লাহ বলেন, যারা ঈমান এনেছে, হিযরত করেছে, নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা এই হিযরত ও জিহাদকারীদের থাকার জায়গা দিয়েছে এবং তাদের সাহায্য করেছে মূলত এরা সবাই হচ্ছে সত্যিকারের ঈমানদার, এদের জন্যে আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও উত্তম জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে। (আনফালঃ ৭৪)
ঢ। সীমান্ত পাহাড়া দেয়ার ফযিলত। একদিন ও এক রাত ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহাড়া দেয়া এক মাস ধরে রোযা রাখা ও রাতে ইবাদাত করার চাইতে বেশি মূল্যবান। এ অবস্থায় যদি সে মারা যায় তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য জারি থাকবে। তার রিযিকও জারি থাকবে এবং কবরের পরীক্ষা থেকে সে থাকবে নিরাপদ। (সহীহ মুসলিম)
ণ। আহত ব্যক্তির ফযিলত। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে আহতদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার আহত স্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে। এর বর্ণ হবে রক্ত বর্ণ এবং এর গন্ধ হবে মিশকের গন্ধ। (বুখারী ও মুসলিম)
ত। সর্বোত্তম জীবন। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সেই ব্যক্তির যে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে সবসময় আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য তৈরী থাকে। যেখানেই সে শুনতে পায় কোন বিপদ বা পেরেশানীর কথা সঙ্গে সঙ্গেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাতাসের বেগে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে। হত্যা ও মৃত্যুকে তার পথে তালাশ করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম)
থ। দুই চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে এবং যে চোখ আল্লাহর পথে রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। (সহীহ তিরমিযী)
দ। সামান্য আমলে বিপুল প্রতিদান। বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) এর নিকট এক ব্যক্তি এলো অস্ত্র সজ্জিত হয়ে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি প্রথমে জিহাদ করবো, না প্রথমে ইসলাম গ্রহন করবো? জবাব দিলেনঃ প্রথমে ইসলাম গ্রহন করো, তারপর জিহাদ করো। লোকটি ইসলাম গ্রহন করলো, তারপর জিহাদে লিপ্ত হলো এবং শহীদ হয়ে গেল। রাসূল (সঃ) বলেনঃ এই ব্যক্তি সামান্য আমল করলো কিন্তু বিপুল প্রতিদান লাভ করলো। (বুখারী ও মুসলিম)
ধ। পুনারায় শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও সারা দুনিয়ার সমস্ত জিনিস তার জন্য হয়ে যায়। তবে শহীদ যখন তার মর্যাদা দেখবে, সে আকাঙ্খা করবে আবার দুনিয়ার ফিরে আসার এবং দশবার আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করার। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছেঃ “তবে শহীদ যখন তার শাহাদাতের মর্যাদা দেখবে”। (বুখারী ও মুসলিম)
ন। শাহাদাতের জযবা। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি শহীদ হই তাহলে আমার স্থান হবে কোথায়? তিনি জবাব দিলেনঃ জান্নাতে। এ কথা শুনে ঐ ব্যক্তি নিজের হাতের খেজুরগুলো ছুড়ে ফেলে দিল, তারপর জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হলো। (সহীহ মুসলিম)
প। শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা। সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি সাচ্চাদিলে শাহাদাত লাভের জন্য দু’আ করে তাহলে সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ তাকে শহীদদের স্তরে পৌঁছিয়ে দেন। (সহীহ মুসলিম)
ফ। শাহাদাতের কষ্টের অনুভূতি। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ শাহাদাত লাভকারী ব্যক্তি নিহত হওয়ার কষ্ট অনুভব করে না, তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ের কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে কেবল ততটুকুই অনুভব করে মাত্র। (সহীহ তিরমিযী)
ব। জিহাদের বেশি কার্যকরী অস্ত্র। আবু হাম্মাদ উকবা আমের আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তার কয়েকটি ডাকনাম রয়েছে। যেমন আবু সু’আদ, আবু আসাদ, আবু আমের, আবু আমর, আবুল আসওয়াদ ও আবু আবস। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সঃ) কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ আর তোমরা কাফিরদের মুকাবিলায় নিজেদের শক্তি-সামর্থ মুতাবিক প্রস্তুতি গ্রহন করো (সূরা আল আনফালঃ ৬০)। জেনে রাখ, শক্তি অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী। জেনে রাখ, শক্তি অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী। জেনে রাখ, শক্তি অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী। (সহীহ মুসলিম)
ভ। একটি তীরের বদৌলতে ৩ ব্যক্তি জান্নাতি। আবু হাম্মাদ উকবা ইবনে আমের আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ একটি তীরের বদৌলতে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনঃ তীর নির্মাতা- যে তা নির্মাণে সাওয়াব আশা করে, তীরটি নিক্ষেপকারী এবং যে তীরন্দাজের হাতে তীর ধরিয়ে দেয়। তোমরা তীরন্দাজী কর ও ঘোড়ায় চড়া শেখ। যদি তোমরা তীরন্দাজী শেখ তাহলে আমার কাছে তা ঘোড়ায় চড়া শেখার চেয়ে বেশি প্রিয়। যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শেখার পর তার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে তা ত্যাগ করে, সে আল্লাহর একটি নিয়ামত ত্যাগ করে অথবা তিনি এভাবে বলেনঃ সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (আবু দাউদ) তীরের বর্তমান আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে গোলন্দাজ কামান ও বিভিন্ন পাল্লার মিসাইল।
ম। সেনা পরিবারকে সাহায্য না করার পরিণতি। আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ করেনি, কোনো গাযীকে জিহাদের সরঞ্জামও সংগ্রহ করে দেয়নি এবং কোন গাযীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবার-পরিজনের দেখাশুনাও করেনি, আল্লাহ কিয়ামতের পূর্বে তাকে কঠিন বিপদে ফেলবেন। (আবু দাউদ)
য। যুদ্ধ কামনা নিষেধ। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আকাঙ্খা করো না। আর যখন তোমাদের শত্রুর সাথে মুকাবিলা হয়েই যায় তখন দৃঢ়ভাবে মুকাবিলা করতে থাকো। (সহীহ মুসলিম)
র। শাহাদাতের মর্যাদা। হযরত মা’দী কারব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সঃ) বলেছেন, “মহান আল্লাহর নিকট শহীদের ৬টি মর্তবা রয়েছে। প্রথম দফায় তার জীবনের সমস্ত গুণাহ ক্ষমা করা হয়। কবর ও কিয়ামতের বিভিষিকা হতে সে নিরাপদ থাকে। জান্নাতে তার অবস্থানের জায়গা প্রদর্শন করা হয়। শহীদের মাথায় এমন সম্মানের মুকুট পরিধান করানো হয় যার মূল্য আকাশ ও পৃথিবীর চাইতে বেশি। ৭০ জন পরমা সুন্দরী হুরের সঙ্গে তার বিবাহ দিবেন। ৭০ জন জাহান্নামের ফয়সালা যুক্ত আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে তাকে সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হবে।” (তিরমিযী)
১০। উপসংহার। কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর পথে যুদ্ধের অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। যার ফলে যুগে যুগে অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করতে উৎসাহিত হয়েছেন। যাদের বীরত্ব গাঁথা ইসলামের ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। যা ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করবে।
তথ্যসুত্র।
১। আল কুরআন মাজীদ
২। রিয়াদুস সালেহীন
৩। সিহাহ সিত্তার হাদিসসমূহ
৪। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক