আল-বুরহান ( দলিল-প্রমাণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ! আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। একটু নিচে দেখুন> বিষয় ভিক্তিক সাজানো রয়েছে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী পাঠ করুন এবং পোষ্টগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে এই নাম্বারে- ০১৬৮৭-১১৩৮৮০ হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহু খাইর।

জিজ্ঞাসা-২৪১: মোটিভেশন ক্লাস-০১ ইসলামের আলোতে সামরিক জীবন।

No Comments

 



জিজ্ঞাসা-২৪১:

মোটিভেশন ক্লাস -০১

কোরআনের আলোকে সৈনিক/সামরিক জীবন" শীর্ষক বিষয়ে কারো কাছে কোন আর্টিকেল থাকলে গ্রুপে দেনউপকৃত হব    তারিখ-০৭/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি

মাওলানা  মোঃ কুতুব উদ্দিন,  খুলনা থেকে----

জবাব

 نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم 

হামদ ও সানার পর কথা এই যে"কোরআানের/ইসলামের আলোকে সৈনিক/সামরিক জীবন" কিছু লেখার ইচ্ছা রাখি।

ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين

ক।  সামরিক পেশা হালাল রিজিক অন্বেষণের একটি অংশ: 

হালাল রিজিক খাওয়া প্রত্যেক মুমিনের ওপর ফরজ। সামরিক পেশা হালাল রিজিকের অর্জনের একটি অন্যতম পন্থা।  হালাল খাওয়ার জন্য কুরআনের নির্দেশ রয়েছে-  যেমন,

মহান আল্লাহ বলেন,

 يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ

অর্থহে মানবজাতিপৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছেতোমরা তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা-১৬৮

হজরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ () বলেছেনহে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে নাযদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। ইবনে মাজাহ

হারাম মাল দ্বারা গঠিত শরীর জান্নাত হারাম

এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-

وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان

অর্থআবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ () বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছেসে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।  তাখরিজবায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান-৫৭৫৯

খ।   নামাজ সমাপান্তে রিজিক অর্জন করার নির্দেশ

 ইসলাম শুধু নিছক ইবাদত-বন্দেগি পালনের ধর্ম নয়।  বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ সালাত আদায়ের আল্লাহর জমিনে রিজিক অন্বেষণের তাগিদ করেছেন। যেমনইরশাদ হচ্ছে,

আয়াত নং-০১

﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الجمعة:10]

অর্থসালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবেএবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও সূরা জুমাআ-১০

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন:

فاذا فرغتم من الصلاة فانتشروا في الأرض للتجارة والتصرع في حوائجكم

‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবেতখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়ো  কুরতুবীআবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদআলজামেউ লি আহকামিল কুরআনখ.১৮,পৃ.৯৬

আয়াত নং-০২

﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ﴾ [الجمعة:9]

‘‘আল্লাহ জানেন যেতোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বেকেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সূরা মুযযাম্মিল-২০

أي مسافرين في الأرض يبتغون من فضل الله في المكاسب والمتاجر.

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:

‘‘অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বানিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমনরত। সূত্র আবুল দিদা ইসমইল ইবন উমর ইবন কাসীরতাফসীরুল কুরআনিল আযীম /২৫৮

গ।   হালাল রিজিক তালাশ করা শরিয়তের অনত্যম ফরজ:  

যেমনহাদিস শরিফে এসেছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ () বলেছেনঃ অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। তাখরিজবায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান-৮৩৬৭

কোন রিজিক উত্তম:

عن رافع بن خديج، قالقيليا رسول الله، أي الكسب أطيب؟ قال: «عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور»

হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছেতিনি বলেনরাসূল ()কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যেসর্বোত্তম উপার্জন কোনটিজবাবে তিনি বলেন: ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়। ইমাম আহমাদমুসনাদখ.৪পৃ. ১৪১.

ঘ।   ওয়াদা পূর্ণ করা

একজন সেনাসদস্য রিক্রুট ট্রেনিং পর যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে  গ্রহণ করে। সে তার জীবন বিপন্ন করিয়ে হলেও নিজ ও জাতিকে রক্ষা করবেন।  আর ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে আদেশ হলো یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ  অর্থওহে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। সূরা মায়েদা-০১

ঙ।   যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ  :

আয়াত নং-০১

وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ

 অর্থআর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে,যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের ওপর  এবং তোমাদের শত্রুদের ওপর আর তারেকে ছাড়া অন্যান্যদের ওপর ও যাদেরকে তোমরা জান নাআল্লাহ তাদেরকে চেনেন।  বস্তুত যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহেতা তোরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক  অপূর্ণ থাকবে না। সূরা আনফাল-৬০

 قُوَّة (শক্তি) শব্দের ব্যাখ্যা নবী () হতে প্রমাণিত আছে। তিনি বলেছেনশক্তি হল, (তীর) নিক্ষেপ। (মুসলিমঃ ইমারাহ অধ্যায় এবং আরো অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ) কেননাসে যুগে তীরই ছিল যুদ্ধের বড় অস্ত্র এবং তীর মারায় দক্ষতা অর্জন ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যা। (যেহেতু তাতে দূর থেকেই শত্রু নিপাত করা যায়।) যেমন যুদ্ধের জন্য ঘোড়া ছিল অপরিহার্য ও অতীব প্রয়োজনীয় একটি মাধ্যমযে কথা আলোচ্য আয়াতে ফুটে উঠেছে। কিন্তু বর্তমান যুগে যুদ্ধে তীর নিক্ষেপ ও ঘোড়ার সেই গুরুত্ব এবং উপকারিতা বাকী নেই। এই জন্য তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সাধ্যমত শক্তি প্রস্তুত কর এই নির্দেশ পালনে অধুনা যুগের যুদ্ধাস্ত্র (যেমনক্ষেপণাস্ত্ররকেটমিসাইলট্যাঙ্ককামানবোমারু বিমান এবং সামুদ্রিক যুদ্ধের জন্য সাবমেরিন প্রভৃতি) এর প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক। সূত্রতাফসীরে আহসানুল বায়ান

 গোটা মুসলিম উম্মাহর প্রতি এটা এক স্থায়ী নির্দেশ যেতারা যেন ইসলাম ও মুসলিমদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত রাখার লক্ষ্যে সব রকম প্রতিরক্ষা শক্তি গড়ে তোলে। কুরআন মাজীদ সাধারণভাবে শক্তি শব্দ ব্যবহার করে বোঝাচ্ছে যেরণপ্রস্তুতি বিশেষ কোনও অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং যখন যে ধরনের প্রতিরক্ষা-শক্তি কাজে আসেতখন সেই রকম শক্তি অর্জন করা মুসলিমদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। সুতরাং সর্বপ্রকার আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রও এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া মুসলিমদের জাতীয়সামাজিক ও সামরিক উন্নতির জন্য যত রকমের আসবাব-উপকরণ দরকার হয়সে সবও এর মধ্যে পড়ে। আফসোস আজকের মুসলিম বিশ্ব এ ফরয আদায়ে চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছে। ফলে আজ তারা অন্যান্য জাতির আশ্রিত ও বশীভূত জাতিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ সূরতহাল থেকে পরিত্রাণ দিন। সূত্রতাফসিরে তাওজিহুল কুরআন-মুফতি তাকি উসমানি দা.বা.

আয়াত নং-০২

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا خُذُوۡا حِذۡرَکُمۡ فَانۡفِرُوۡا ثُبَاتٍ اَوِ انۡفِرُوۡا جَمِیۡعًا 

অর্থহে মুমিনগণনিজেদের অস্ত্র তুলে নাও  এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড় সূরা নিসা- ৭১

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিতেছেন। শত্রুর বিরুদ্ধে মুমিনের অস্ত্রের ব্যবস্থা করানিজেদের সংখ্যা করা।  তাফসিরে ইবনে কাসির-৩য় খণ্ড১৭৪ পৃষ্‌ঠাইসলামিক ফাউন্ডেশন

চ।    বিশ্ব মানবাধিকারী প্রতিষ্ঠার জন্য:  

 অন্যায়ভাবে হত্যা করলে মানবতা বিপন্ন হয়। সেক্ষেত্রে অসহায় জনতার আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসে।  বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হত্যার বন্ধের জন্য কাজ করছে।  যেমনইরশাদ হচ্ছে-

مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا

এ কারণেই আমি বানী ইসরাঈলের জন্য বিধান দিয়েছিলাম যেযে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমীনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন তামাম মানুষকেই হত্যা করল। আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালোসে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো। সূরা মায়েদা-৩২

ছ।   অসহায়-মাজলুম মানবতাকে রক্ষায় যুদ্ধের নির্দেশ:   

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا

অর্থতোমাদের কী হয়েছে যেতোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে নাযারা দুআ করছে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাওতোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী করে দাও। সূরা নিসা-৭৫

উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতেজাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী,  ১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে যে অগ্রযাত্রার সূচনা হয়পরবতী‌র্ বছরগুলোতে দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব ও কর্মস্পৃহার মৃর্তপ্রতীক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের অবস্হান সুসংহত করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫টি কন্টিনজেন্টকে ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেম (ইউএনপিসিআরএস-এর অন্তভু‌র্ক্ত করা হয়েছে। 

অনন্য মাত্রার অধিকারী আফ্রিকা মহাদেশের ১৫০টির বেশি মিলিশিয়া বাহিনীর নিরন্তর সংঘাতের পটভূমিতে নিবেদিতপ্রাণ নীল শিরস্ত্রাণধারী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী আজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে ৯টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। তথ্যসূত্রদৈনিক ইত্তেফাক২৯ মে ২০২২

জ।   পেশাগত দায়িত্ববোধ:    

চাকুরী এটি জীবিকা নির্বাহে উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। এসব চাকুরীর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল দর্শন হলো প্রত্যেক চাকুরে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠাআন্তরিকতা ও সচ্ছতার সাথে পালন করবে। রাসূল () এ বিষয়ের মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

«كلكم راع، وكلكم مسئول عن رعيته »

অর্থতোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম বুখারী-৮৯৩ ইমাম মুসলিম-১৮২৯

ঝ।  দেশ রক্ষা/সীমান্ত পাহারার ফজিলত

হাদিস নং-০১

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ  قَالَ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا العَبْدُ في سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى أَوِ الغَدْوَةُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا متفقٌ عليه

সাহল ইবনে সাদ সায়েদী (রা.)হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ ( ) বলেছেনআল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত থাকাপৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের স্থানদুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। বুখারী-২৮৯২মুসলিম ৪৯৮২-৪৯৮৩

হাদিস নং-০২

عَنْ سَلمَانَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ  يَقُوْلُرِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الفَتَّانَ رواه مسلم

সালমান (রা.) হতে বর্ণিতনবী ( ) কে বলতে শুনেছি যেএকদিন ও একরাত সীমান্ত প্রহরায় রত থাকাএকমাস ধরে (নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেতাহলে তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবেযা সে পূর্বে করত এবং তার বিশেষ রুযী চালু করে দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিৎনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা হতে মুক্ত রাখা হবে। তাখরিজমুসলিম-৫০৪৭

হাদিস নং-০৩

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ  يَقُولُعَيْنَانِ لاَ تَمسُّهُمَا النَّارُ : عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبيلِ اللهِرواه الترمذي وقال حديث حسن

ইবনে আব্বাস (রা.)হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ ( ) কে বলতে শুনেছি যেদুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে। তাখরিজতিরমিযী-১৬৩৯

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের যদি নিয়ত সহিহ থাকে ইনশাল্লাহ সেই উপরোক্ত হাদিসগুলোর ফজিলত প্রাপ্ত হবে।  যেমনহাদিসে বলা হয়েছে-

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) "‏ إِنَّمَاا لْعَمَلُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ  مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ()  وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ‏"‏‏.‏

অর্থআমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত  তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ () ইরশাদ করেন- সকল কর্মই নিয়তের  ওপর নির্ভরশীল  আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা-ই রয়েছে যা সে নিয়ত করে  অতত্রবযার হিজরত আল্লাহ  ও তার রাসূলের দিকে (উদ্দেশ্য) হবেতার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকেই (পরিগণিত) হবে   হিজরত দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার  উদ্দেশ্যে হবেতার হিজরত সে দিকেই গণ্য হবেযে উদ্দেশ্য সে হিজরত করেছে বুখারি-০১৫৪২৫২৯মুসলিম-১৯০৭তিরমিজি-১৬৪৭আবু দাউদ-২২০১নাসায়ি-৭৫আহমদ-১৬৮   

বিস্তারিত দেখুনসৈনিক জীবনে দৈনন্দিন কার্যকলাপে ইসলাম (প্রকাশিতব্যলেখকআব্দুর রাজ্জাক                                                                             

উত্তর দিচ্ছেন