জিজ্ঞাসা-১২৩৯৮:
আসসালামু আলাইকুম, এক্সারসাইজ এলাকায় কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে জুমার জামাত শুদ্ধ হবে কি না জানতে চাই । উল্লেখ্য এক্সারসাইজ এলাকা নিজ ইউনিট থেকে ১০ কিলো দূরে। তারিখ: ২৬/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মুহাম্মদ জুনাইদ আল কাওকাব, ময়মনসিংহ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এক্সারসাইজে সাধারণত সরকারি মালিকনা জায়গা কমই হয়। যাইহোক, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি:
প্রশ্ন: ক। মসজিদ/জামে মসজিদ ব্যতিত জুমাআ সালাত জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ক। لا مانع من أداء صلاة الجمعة خارج المسجد ولو لغير أي سبب عند من لم يشترط إقامتها في المسجد وهم الحنابلة والشافعية والحنفية، أما المالكية فيشترطون لصحة الخطبة والصلاة كونهما داخل المسجد المبني بناء معتادا لأهل القرية. وراجع الأجوبة التالية أرقامها: 13870،31086،7637. ما حكم صلاة الجمعة في الخلاء
অর্থাৎ ইমাম হাম্বলি, শাফেয়ি ও হানাফি (রহ) এর মতে মসজিদের বাইরে জুমাআর নামাজ পড়তে কোনো আপত্তি নেই, এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই।
তিন ইমামের দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ سَيَّارٍ، عَنْ يَزِيدَ الْفَقِيرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي كَانَ كُلُّ نَبِيٍّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى كُلِّ أَحْمَرَ وَأَسْوَدَ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَلَمْ تُحَلَّ لأَحَدٍ قَبْلِي وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَيِّبَةً طَهُورًا وَمَسْجِدًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ صَلَّى حَيْثُ كَانَ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ بَيْنَ يَدَىْ مَسِيرَةِ شَهْرٍ وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ..... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। প্রত্যেক নবীকে শুধু তার কওমের জন্য পাঠানো হতো। কিন্তু আমাকে সাদা ও কালো সবার জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে। আমার জন্য গনীমাত বা যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ হালাল করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বে আর কারো (কোন নবীর) জন্য তা হালাল ছিল না। আমার জন্য গোটা পৃথিবী পাক-পবিত্র ও মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সালাতের সময় হলে যে কোন লোক যে কোন স্থানে সালাত আদায় করে নিতে পারে। আমাকে একমাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত অত্যন্ত শান শাওকাত সহকারে (শত্রুও অন্তর ভীতি দ্বারা) সাহায্য করা হয়েছে। আর আমাকে শাফা’আতের সুযোগ দান করা হয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম -৫২১
হাদিস নং-০২
عَنْ أبِي ذَرٍّ، قالَ: قُلتُ يا رَسولَ اللهِ، : أيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ في الأرْضِ أوَّلُ؟ قالَ: المَسْجِدُ الحَرَامُ قُلتُ: ثُمَّ أيٌّ؟ قالَ: المَسْجِدُ الأقْصَى قُلتُ: كَمْ بيْنَهُمَا؟ قالَ: أرْبَعُونَ سَنَةً، وأَيْنَما أدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ فَصَلِّ فَهو مَسْجِدٌ.
الراوي : أبو ذر الغفاري | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 520 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অর্থাৎ আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)কে পৃথিবীতে নির্মিত সর্বপ্রথম মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম (সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল) আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন মসজিদ (নির্মিত হয়েছিল?) তিনি বললেন, মসজিদুল আকসা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এ দুটি মসজিদের (নির্মিত কাজের) মধ্যে কতদিনের ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। এছাড়া গোটা পৃথিবীই তো মসজিদ। সুতরাং যেখানেই সালাতের সময় হবে সেখানেই সালাত আদায় করে। তাখরিজ: মুসলিম-৫২০
প্রশ্ন: খ। জুমাআর নামাজের জন্য সকলের জন্য আম অনুমতি থাকা আবশ্যক কি?
উত্তর: খ। হ্যাঁ, জুমাআর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মসজিদে/কোন স্থানে সাধারণ অনুমতি থাকবে হবে। দলিল:
إن صلاة الجمعة ظلت تقام في المساجد والمصليات على مرِّ التاريخ، كما اتفق جمهور علماء الإسلام على اختلاف مذاهبهم بالأكثرية المطلقة على هذا الحكم. وبتعبير آخر، فإن علماء الإسلام قد خلصوا إلى أن صلاة الجمعة يجب أن تعقد جماعةً وفي مكان مفتوح للجميع، وذلك عملاً بما طبّقه رسول الله صلى الله عليه وسلم والصحابة الكرام الكرام (السرخسي، المبسوط، اسطنبول، 1983، 2/ 23؛ ابن رشد، بداية المجتهد، القاهرة، 2004، 1/167 وما يليها؛ ابن عابدين، ردُّ المحتار، بيروت، 1992، 2/ 136-140؛ 151 – 152).،
والاتجاه العام بين العلماء والقائل بوجوب إقامة صلاة الجمعة في المساجد أو في الساحات التي تم تخصيصها لها، بحضور ومشاركة جميع المسلمين، حالَ دون طرح هذا الأمر. (الجصاص، شرح مختصر الطحاوي، المدينة المنورة 2010، 2/ 134؛ المرغيناني، الهداية، بيروت، بدون تاريخ النشر (دار إحياء التراث العربي)، 1/ 82؛ الشربيني، مغني المحتاج، بيروت 1994، 1/ 543؛ القرافي، الذخيرة، بيروت، 1994، 2/ 335؛ الصاوي، حاشية على الشرح الصغير، القاهرة، بدون تاريخ النشر (دار المعارف)، 1/ 499-500).
প্রশ্ন: গ। এক্সারসাইজ এলাকা নিজ ইউনিট থেকে ১০ কিলো দূরে?
উত্তর: গ। এক্সারসাইজ এলাকা নিজ ইউনিট থেকে ১০ কিলো দূরে দ্বারা কি বুঝিয়েছেন, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। যদি উদ্দেশ্য হয় কসর-মুসাফির, তাহলে ফিকহি হানাফিসহ অধিকাংশ ওলামাদের মতে মুসাফির শর্ত হলো ৭৮/৮০/১০০ কিলোমিটার দূরে সফর করতে হবে।
তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. শায়েখ ইবনে উসাইমিন রহ. এবং বর্তমানে তাদের অনুসারীদের মতে কোন দূরত্ব শর্ত নাই যেকোনো সফরে কসর পড়া যাবে। এ বিষয়ে আলবুরহানের জিজ্ঞাসা-১৩৪৮ শিরোনামে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। লিংকটি দেওয়া হলো:
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/11/blog-post_20.html
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে পরামর্শ হলো প্রথমে যে এলাকায় থাকবেন, যদি নিকটে জামে মসজিদ থাকে, তাহলে সেখানেই জুমাআর সালাত আদায় করা উচিত। কিন্তু দূরে/নিরাপত্তার স্বার্থে আলাদা জুমাআর সালাত করতে কোন অসুবিধা নেই।
আর নিজেরা আলাদা জুমাআর সালাত আদায় করলে, সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ করার অনুমতি থাকা উচিত। তারপরও যদি নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বসাধারণকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে অসুবিধা নেই। কিন্তু সর্বাবস্থায় জুমাআর নামাজ বড় জামাত কাম্য। সূত্র: আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২০; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৫১; ফাতহুল কাদীর ২/১৫; ইলাউস সুনান ৮/৯১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক