জিজ্ঞাসা-১২৬৪০:
মোটিভেশন ক্লাস-০৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।কোরআন হাদিসের আলোকে "নৈতিকতা" বিষয়ে মোটিভেশন লেকচার বিশেষ প্রয়োজন।
তারিখ: ২১/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জামাল হোসাইন" টাংগাইল নাগরপুর থেকে।থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার মোটিভেশন ক্লাসকে দুটি স্তরে ভাগ করছি।
ক. প্রথম স্তর।
খ. দ্বিতীয় স্তর।
ক. প্রথম স্তর:
০১. ভূমিকা: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো, মানুষের জ্ঞান, বিবেক-বিবেচনা ও প্রজ্ঞা আছে। মানুষের আরও আছে বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। যেটা অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অনুপস্থিত। সামাজিক জীব হিসেবে একজন মানুষকে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা নিয়মরীতি মেনে চলতে হয়। এ সব নিয়মরীতি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। সমাজ জীবনে মানুষের মার্জিত ও কাঙ্ক্ষিত আচরণগুলোকে নৈতিকতার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সুন্দর স্বভাব, সদাচার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কল্যাণকামিতা ইত্যাদি।
০২. নৈতিকতার আভিধানিক অর্থ: নৈতিকতা (ইংরেজি: Morality), আরবিতে اخلاق،خصلة،سيرة
যার অর্থ হলো, ভদ্রতা, চরিত্র, উত্তম আচরণ।
ইংরেজি Ethics শব্দটি গ্রীক শব্দ "ethos" থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ "জীবনযাত্রার উপায়"।
০৩. নৈতিকতার পারিভাষিক সংজ্ঞা:
নৈতিকতা হলো কোনো মানদন্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে।
নীতিশাস্ত্র হলো নীতি বা নিয়মের একটি সেট যা একটি নির্দিষ্ট সামাজিক কাঠামোর মধ্যে একজন ব্যক্তির নৈতিক কার্যাবলীকে নির্দেশ করে। এছাড়া এটি নৈতিক বিচার এবং নৈতিক সিদ্ধান্তে মানুষের আচার- আচরণের মানদন্ড নির্দেশ করে।
নীতিশাস্ত্র হল দর্শনের একটি শাখা যা মানব আচরণের সাথে সম্পর্কিত, বিশেষভাবে সমাজে ব্যক্তির আচরণের সাথে সম্পর্কিত। নীতিশাস্ত্র আমাদের নৈতিক বিচারের যৌক্তিক ন্যায্যতা পরীক্ষা করে। এটি নৈতিকভাবে সঠিক বা ভুল, ন্যায় বা অন্যায় অধ্যয়ন করে।
০৪. ইসলামের দৃষ্টিতে নৈতিকতা:
ইসলামের দৃষ্টিতে নৈতিকতার ভিত্তি হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি। এক কথায়, স্রষ্টা ও সৃষ্টির সাথে সুন্দর ব্যবহার, আচরণ, কাউকে কষ্ট না দেওয়া হলো নৈতিকতা।
০৫. নৈতিকতার প্রয়োজন:
শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিত করে; কিন্তু সর্বদা সুশিক্ষিত করতে পারে না। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য নৈতিকতা থাকাটা জরুরি।
মানুষের জীবনের সততা, মহানুভবতা, উদারতা, ন্যায় পরায়ণতা, সভ্যতা, সাধুতা, অখণ্ডতা, একত্রতা, পূর্ণতা সর্বোপরি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, চরিত্র, মহত্ত ও আদর্শিক গুণাবলির সংমিশ্রিত আত্মশুদ্ধির স্বর্ণফসল হলো নৈতিকতা। জীবনচেতনার প্রথম সূর্যসিঁড়ি হলো নৈতিকতা। নৈতিকতা মানুষের জীবনের স্বচ্ছতার দিগন্তবিস্তারী প্লাবন ডেকে এনে দেয়। তাই মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণকেই নৈতিকতা বলা হয়।
মানব জীবনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান নিয়ামক হলো এই নৈতিকতা। চারিত্রিক গুণাবলি ও নৈতিকতা হলো জাতিসত্তা স্বকীয়তা ও সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার চাবিকাঠি। কেননা, জাতির শক্তি সামর্থ্য তাদের বস্তুগত উপাদান ও বৈষয়িক বিষয়-আাশয় দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে না, বরং উত্তম ও নৈতিক চরিত্রের মাধ্যমে তাদের পূর্ণতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রমাণিত হয়। জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি রক্ষার ক্ষেত্রে নৈতিকতা একটি অপরিহার্য উপাদান।
খ. দ্বিতীয় স্তর:
নৈতিকতার প্রকারভেদ:
নৈতিকতার প্রকারের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত নৈতিকতা, সামাজিক নৈতকতা, ধর্মীয় নৈতিকতা এবং ব্যবসায়িক নৈতিকতা, রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক নৈতিকতা ইত্যাদি।
১. ব্যক্তিগত নৈতিকতা: ব্যক্তিগত নৈতিকতা হল এমন যে কোনও ব্যবস্থা যা কোনও নির্দিষ্ট জীবনধারায় নৈতিক নির্দেশিকা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এটি একজন ব্যক্তিকে ধর্ষণ, চুরি, খুন, আক্রমণ, অপবাদ এবং জালিয়াতি থেকে বিরত থাকার যুক্তিসঙ্গত বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। এছাড়া সততা, সহানুভূতি এবং আনুগত্যের গুণাবলী নির্দেশ করে এমন নৈতিক মানগুলিও অন্তর্ভুক্ত করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক নৈতিকতা:
আয়াত নং -০১
Surah Al-Isra, Verse 25:
رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِن تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا
তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল। সূরা ইসরা -২৪
আয়াত নং -০২
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا
Surah Ash-Shams, Verse 10:
وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। সূরা শামস,৯-১০
আয়াত নং -০৩
Surah Al-Isra, Verse 32:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২
আয়াত নং -০৪
Surah Al-Hujraat, Verse 12:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। সূরা হুজুরাত -১২
২. সামাজিক নৈতিকতা: ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য এবং ব্যক্তির অধিকারের মতো বিষয়গুলিতে সমাজের সদস্যরা কীভাবে একে অপরের সাথে আচরণ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক নৈতিকতা। সমাজ বা সম্প্রদায়ের রীতিনীতি এবং নিয়মের উপর ভিত্তি করে এটি গঠিত হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক নৈতিকতা:
আয়াত নং -০১
Surah Al-Hujraat, Verse 13:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। সূরা হুজুরাত -১৩
আয়াত নং -০২
Surah Al-Maeda, Verse 8:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত। সূরা মায়েদা-০৮
হাদিস নং -০১
3475 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ قُرَيْشًا أَهَمَّهُمْ شَأْنُ المَرْأَةِ المَخْزُومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ، فَقَالُوا: وَمَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالُوا: وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، حِبُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ، ثُمَّ قَامَ فَاخْتَطَبَ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ، أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الحَدَّ، وَايْمُ اللَّهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا "
কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, মাখযূম গোত্রের জনৈক চোর মহিলার ঘটনা কুরাইশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুললো। এ অবস্থায় তারা (পরস্পর) বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে কে আলাপ আলোচনা (সুপারিশ) করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসূল (ﷺ) এর প্রিয়তম ব্যক্তি ওসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) এ জটিল ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। (নবীজীর খেদমতে তাঁকে পাঠান হল তিনি এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে) ক্ষমা করে দেয়ার সুপারিশ করলেন।
নবী (ﷺ) বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারিণীর সাজা (হাত কাটা) মাউকুফের সুপারিশ করছ? তারপর নবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অপরদিকে যখন কোন সহায়হীন দরিদ্র সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার উপর হদ (হাতকাটা দণ্ডবিধি) প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদ এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তবে আমি তার হাত অবশ্যই কেটে ফেলতাম। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২২৯ (আন্তর্জাতিক নং ৩৪৭৫)
৩. ধর্মীয় নৈতিকতা: বেশিরভাগ ধর্মের একটি নৈতিক উপাদান রয়েছে, যা প্রায়শই অতিপ্রাকৃত বা নির্দেশিকা থেকে উদ্ভূত হয়। যেমন মুসলমানদের কোরআন, হিন্দুদের বেদ, খ্রিস্টানদের বাইবেল ইত্যাদি। এসকল ধর্মীয় গ্রন্থ সেসকল জাতির বা ধর্মীর সম্প্রদায়ের একটি নীতিশাস্ত্র হিসেবে কাজ করে।
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বাণী -
Surah Al-Baqara, Verse 1:
الم
আলিফ লাম মীম।
Surah Al-Baqara, Verse 2:
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য। সূরা বাকারা,১-২
৪. ব্যবসায়িক নৈতিকতা: ব্যবসায়িক ব্যবসায়িক নৈতিকতা হল ব্যবসায় ভাল এবং মন্দ, সঠিক এবং ভুল এবং ন্যায় ও অন্যায় কর্মের অধ্যয়ন। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নৈতিক ঐতিহ্যগুলি সত্যকথন, সততা, জীবনের সুরক্ষা, অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, ন্যায্যতা এবং আইনের প্রতি আনুগত্য সমর্থন করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসায়িক নৈতিকতা:
আল্লাহ তাআলার বাণী -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। সূরা নিসা -২৯
হাদিসের বাণী -
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ
আবূ সাঈদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমানতদার, সত্যবাদী মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন আম্বিয়া, সিদ্দীক্বীন ও শহীদগণের সাথে অবস্থান করবে।
তিরমিযী ১২০৯, দারেমী ২৫৩৯, হাকেম ২১৪৩, সহীহ তারগীব ১৭৮৩
০৫. রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিকতা:
রাষ্ট্রের দায়িত্বে যারা নিজে থাকবেন, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
Surah Al-Hajj, Verse 41:
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ?2470;ান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত। সূরা হজ-৪১
রাষ্ট্রপ্রধান তিনি জনগণের উপর দায়িত্বশীল সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে-
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَلا كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وولدِهِ وَهِي مسؤولةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنهُ أَلا فكلُّكُمْ راعٍ وكلكُمْ مسؤولٌ عَن رعيتِه»
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর (পরকালে) নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল লোক, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর প্রত্যেক পুরুষ তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি কোনো গোলাম বা চাকর-চাকরাণীও তার মুনীবের ধন-সম্পদের উপর একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।সহীহ : বুখারী ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, আবূ দাঊদ ২৯২৮, তিরমিযী ১৭০৫, আহমাদ ৫১৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২২।
০৬. আন্তর্জাতিক জীবনে নৈতিকতা:
এ পৃথিবীতে কোন বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। আর সারা বিশ্বের অশান্তি যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত। অথচ পৃথিবী অশান্তি সৃষ্টি করা সমস্ত ধর্মে নিষেধ, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে নিষেধ। যেমন, পবিত্র কোরআনের বাণী-
وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا
পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। সূরা আরাফ-৫৬
০৭. উপসংহার: মানুষের সম্মান ও মর্যাদা নৈতিকতা অর্জনের ওপর নির্ভরশীল। অনৈতিক কাজকর্ম মানুষকে মনুষ্যত্বের স্তর থেকে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে দেয়। বিবেকহীন, নৈতিকতাহীন মানুষকে আল্লাহ তাআলা
চতুষ্পদ জন্তুর সাথে তুলনা করেছেন। যেমন,
Surah Al-Araf, Verse 179:
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ
আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। সূরা আরাফ -১৭৯
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক