জিজ্ঞাসা-১২৬৩৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, এমন কোন কথা আছে নাকি যে ছেলে বাবু দুই বছর খেতে পারবে এবং মেয়ে বাবু ২ বছর ৬ মাস পর্যন্ত খেতে পারবে❓
জনৈক চাপাইয়ের অধিবাসী ভাবী আমাদের বিল্ডিংয়ে আহলে হাদিসদের ঐ মত প্রচার করেছে যে বাচ্চাকে যতদিন ইচ্ছা দুধ খাওয়ানো যাবে। এখন দুই বছরের পর খাওয়ানো হলে গুনাহ হবে এই মর্মে specific হাদিস বা কোন দলীল আছে❓
তারিখ: ২০/০৬/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ছেলে শিশুদের জন্য দুই বছর এবং মেয়ে শিশুদের জন্য আড়াই বছর এরকম কথা ভিত্তিহীন, কোন নস নেই, সমাজের কুসংস্কার মাত্র। ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই।
দ্বিতীয় কথা হলো, সাহাবা, তাবেয়ি, আইম্মায়ে আরবা, সাহেবাইন, জমহুর ফোকাহা- ওলামাদের মতে শিশু সন্তানকে দুধ পান করানোর মেয়াদ চান্দ্র বছর হিসেবে দুই বছর। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, দুর্বল-অসুস্থ শিশুদের জন্য আড়াই বছর পর্যন্ত দুধ পান করানো যেতে পারে। ইমামে আজম আবু হানিফা রহ. এর একটি মতামত রয়েছে।
অপর পক্ষে শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ. এবং বর্তমান যুগে উনার অনুসারী বলে দাবিদার সালাফি আহলে হাদিসের মতে,
দুধ পানের কোন সময়সীমা নেই।
উল্লেখ্য যে,শায়খ ইবনে তাইমিয়া রহ. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বাহিরে ২৩ টি মাসআলার বিচ্ছিন্ন মতামতের একটি।
দুই বছর দুধ পানের দলিল:
আয়াত নং -০১
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ
আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। সূরা বাকারা-২৩৩
তাফসিরকারকদের মতামত:
০১.
يقول ابن كثير في تفسير هذه الآية : إنها إرشاد من الله تعالى للوالدات أن يرضعن أولادهن كمال الرضاعة ؛ وهي سنتان ، فلا اعتبار بالرضاعة بعد ذلك .
অর্থাৎ আল্লামা ইবনে কাসির এই আয়াত সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার মায়েদের জন্য এরশাদ করেন তার সন্তানদেরকে পরিপূর্ণভাবে দুধ পান
করানোর জন্য আর তা হল দুই বছর। এরপরে দুধ পান করানো জায়েজ নেই। সূত্র: তাফসিরুল কুরআনিল আজিম( তাফসীরে ইবনে কাসির)-১/২৬৬
০২.
ويقول الرازي في (تفسيره) : المقصود بتحديد حولين هو أن للرضاعة حكمـًا خاصـًا في الشريعة ، وهو قوله صلى الله عليه وسلم : [يحرم من الرضاعة ما يحرم من النسب] .
ইমাম রাজি রহ. (তাফসির) গ্রন্থে বলেন: দুই বছর নির্ধারণ করার অর্থ হল, শরীয়তে স্তন্যপান করানোর একটি বিশেষ বিধান রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বংশগতভাবে যা নিষিদ্ধ হবে, বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমও তা হারাম। সূত্র: তাফসিরে রাযি-৬/১২৬
০৩.
ويقول الشوكاني في (تفسيره) : (لمن أراد أن يُتم الرضاعة) أي : ذلك لمن أراد أن يتم الرضاعة ، وفيه دليل على أن إرضاع الحولين ليس حتمـًا ، بل هو التمام ، ويجوز الاقتصار على ما دونه .
আল-শাওকানী তার (ব্যাখ্যায়) বলেছেন: (যে স্তন্যপান সম্পূর্ণ করতে চায় তার জন্য), অর্থ: এটি তার জন্য যে স্তন্যপান সম্পূর্ণ করতে চায়, এবং প্রমাণ রয়েছে যে দুই বছর- পুরানো বুকের দুধ খাওয়ানো অনিবার্য নয়, বরং এটি সম্পূর্ণ, এবং এর চেয়ে কম যা তা সীমিত করা জায়েয। সূত্র: তাফসিরে ফাতহুল কাদীর,লিল-শাওকানি -১/২৮১
আয়াত নং -০২
وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ
‘আর তার (সন্তান) দুধ ছাড়ানো হয় দু বছরে।’ [সূরা লুকমান আয়াত: ১৪]
প্রশ্ন: ক। ইমাম আবু হানিফার রহ এর দলিল কি?
উত্তর: ক। ইমামে আজমের দলিল নিম্নরূপ:
Surah Al-Ahqaf, Verse 15:
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا
তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। সূরা আহকাফ -১৫
নোট: আয়াতের বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে, তবে ইমাম আবু হানিফা রহ এর আয়াত দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
তবে শর্ত হলো, বাচ্চা যদি দুর্বল- অসুস্থ হয় তাহলে আড়াই বছর পর্যন্ত দুধ পান করাতে পারবে।
সারকথা হলো,
الرَّضاعُ الذي يَثبُتُ به التَّحريمُ ما كان في الحَولَينِ، وهو مَذهَبُ الجُمهورِ: المالِكيَّةِ، والشَّافِعيَّةِ، والحَنابِلة، وقَولُ أبي يوسُفَ ومُحمَّدِ بنِ الحَسَنِ مِنَ الحَنَفيَّةِ، وهو قَولُ بَعضِ السَّلَفِ
স্তন্যপান করানো যার দ্বারা নিষেধাজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয় তা হল যা দুই বছরে ছিল এবং এটি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত: মালিকি, শাফেঈ এবং হাম্বলী, এবং আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ বিন আল-হাসানের উক্তি হানাফী মাযহাবের, এবং এটি কিছু পূর্বসূরীদের বক্তব্য। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আড়াই বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবে। সূত্র:আশ-শারহুল কাবির -২/৫০৪
সুতরাং শিশুদের দুধ পান করানোর কোনো মেয়াদ নেই। এ কথা সঠিক নয়, বিচ্ছিন্ন মত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক